নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে কোনো ভূমিকায় সমানে লড়ে যাই, আপনি যেমন চান আমি ঠিক তাই।

নান্দনিক নন্দিনী

লেখালেখি হচ্ছে প্রেমে পড়ার মতন একটা ব্যাপার, কোনো ধরনের কর্তৃত্ব জাহির করা নয়।

নান্দনিক নন্দিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার জোৎস্না রাতের সুমি…

০৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:০৩

সালটা ২০০৪, হুট করে রুমে এক নতুন মেয়েকে এট্যাচমেন্ট দেয়া হল। শুরুতেই রুমের দুই সিনিয়রের জোর আপত্তি, কারন একটা-ই মেয়েটা চারুকলাতে পেইন্টিং এ পড়তো। তারপরও ফ্লোর এর ম্যাডামের বিশেষ অনুরোধে নেয়া হলো। ছোট্ট একটা মেয়ে। সারাক্ষন কথা বলে।

শুরুটা এমন হলেও সেই ছোট্ট পরীটা রুমটাকে ভরিয়ে দিলো আনন্দে। পৃথিবীর যাবতীয় অদ্ভুত জিনিস ওর হাত ধরে রুমে ঢুকে যেতো। চারুকলার আম, কাঠাল, কলা, জামরুল। অল্প হলেও নিয়ে আসতো।বকুল ফুলের মালা গেথে নিয়ে এসে সে কী গর্ব তার! নিজে হাতে গেথেছি, যত্ন করে রাইখেন। সে ছিলো আমাদের সারা হলের সংবাদ সংগ্রাহক। কম বেশি সবার খবরই রাখতো। হলের সবাই ও’কে এত্তো ভালোবাসতো যে এক্সটেনশন-৮৬ মানেই সুমি।

সুমির চুপি চুপি গোপন কথা, “একটু চারুকলায় যাবেন? আমাকে দুটো ছেলে প্রপোজ করেছে। সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। একটু হেল্প করেন না”। সত্যি সত্যি এই পাগলী আমাকে চারুকলায় নিয়েই ছাড়লো। যথারীতি নির্বাচিত পাত্রের সাথে সুমির পথচলা শুরু হলো।

সুমি কে অনেক বকেছি। অ-নে-ক। কঠিন ধমকের উপর রাখতাম। সারাদিন যেখানে খুশি যাও, রাত্রে দয়া করে ফিরে এসো। রাতে না খেয়ে ঘুমিয়ে গেলে তুলে জোর করে খাওয়ানো হতো বলে তার সেকি রাগ! একটা মানুষ না খেয়ে ঘুমিয়ে যাবে এটা কী মেনে নেয়া যায়?

রোজ সকালে ঘুম থাকতেই বুঝতা্ম, কেউ একজন গুটিশুটি মেরে পাশে এসে শুয়েছে। এজন্য তার ব্যাখ্যা ছিলো, বাসার কথা মনে পড়েছে তো তাই আপনার পাশে এসে শুয়েছি। আমি হেসে বলতাম, তোর কী রোজই বাসার কথা মনে পড়ে? সুমির অমলিন হাসি, ঐটা তো একটা অজুহাত।

ছোট্ট একটা ছবি একেছিল সুমি, জোৎস্না রাতের। ছবিটা আমি খুব পছন্দ করতাম বলে প্রায় বলতো, আপনি ফ্ল্যাট কিনেন, তারপর আপনার বেড রুমের একটা দেয়াল জুড়ে জোৎস্না একে দিয়ে আসবো।

দেয়াল জুড়ে জোৎস্না একে না দিয়েই পাগলী লুকিয়ে গেল।এতো কথা হতো কখনো বলেনি, “কষ্টে আছি”। যেতে যেতে ভালোবাসাকে জিতিয়ে দিয়ে গেলো।

একটা ঠিকানা তো অন্তততো রেখে যেতে পারতিস ……… !! ভালোবাসা নিস। অনেক কিছু থেকে গেলো তোর 'না-থাকা' জুড়ে।

“সব কোলাহলে থেকে গেলি, সব ভালোবাসা রেখে গেলি।
সব-সব-সব অভিমানের বিনিময়ে আবার তোকেই চাই………………

প্রিয় সুমি,

তোকে নিয়ে যতকিছুই লিখিনা কেন, আজ সবই অবান্তর আর বাহুল্য বলে মনে হচ্ছে। কারণ তোর খারাপ সময়ে কী আমি তোর পাশে থাকতে পেরেছিলাম, তোকে আস্থা দিতে পেরেছিলাম? সত্যি কথা বলতে কি, সহানূভুতিরও নিজস্ব আয়ু থাকে। গত ১০ বছরে সেটা ম্লান হতে হতে বিবর্ণ হয়ে গেছে। তোর ‘না-থাকা’ আমাকে যত বেশি কাদিঁয়েছে তার থেকে অনেক বেশি ভাবিয়েছে।

১০ বছর! ভীষণ লম্বা সময়। আজ তোর এই আত্মহনন কোনোভাবেই তোর বেছে নেয়া বিলাসিতা নয়, বরং চাপিয়ে দেয়া । কাউকে হত্যা করা আর তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করার মধ্যে কী খুব বেশি তফাৎ আছে? যে ছেলের জন্য আমাদের ছেড়ে গেলি সে দিব্যি ভালো আছে। এবং হ্যাঁ আমি খুব জোর দিয়ে বলতে পারি “সে ভালো থাকবে”।

তোর কাছে আমার কোন প্রশ্ন নাই, শুধু বলার আছে। ভেতরে ভেতরে তুই ভীষণ রকম কাঙ্গাল ছিলি। কিসের এতো লোভ তোর! একটা ছেলের ভালোবাসা তোর কাছে সবচেয়ে কাংক্ষিত ছিল। অথচ সেই ছেলে কী ভীষণ তাচ্ছিল্য করে গেলো তোকে। তুই কেন এতোটা সহ্য করেছিলি!

তোর কি এখনো লোভ হয়? লোভ হয় সুমন তোকে মিস করুক। ফিরে আসুক।তোর খোঁজ নিক। পাশে বসুক।একবার তোর দিকে তাকিয়ে ভালোবেসে বলুক “কী অবস্থা”।তুই প্রায়শ-ই এক ছেলের গল্প করতি, তোদের চারুকলার কোনো এক বর ভাইয়ের। যিনি তার প্রেমিকার চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি। তার সমস্ত শিল্পকর্ম অসমাপ্ত রেখে নিজেকে শাস্তি দিয়েছিলেন। তোর কাছে এই আত্মত্যাগের আসন অনেক উপরে ছিল। এখন কী তুই-ও মনে মনে আশা করিস, সুমন সব কিছু অসমাপ্ত রেখে তোকে মিস করুক। তুই মুখে শিকার করবি না, কিন্তু আমার কেন জানি মনে হয়, তুই এখন ভীষণ ভাবে এমনটাই আশা করছিস।

সুমন কে এখন আমার অনেক বেশি অপরিচিত লাগে। মনে হয় ওকে আমি কোনো দিনও চিনতাম না। মানুষ এমন কেন হয় রে সুমি। সে তোকে কখনো কিছু দিতে পারলো না। প্রেম না, ভালোবাসা না, ঘর না, সংসার না। এমন কি তোর শেষ দাবী “একটা সন্তান” সেটাও না।

২০০৪ এর সেই বোকা মেয়েটা বোকা-ই রয়ে গেল। যে মিথ্যে করে হলেও দাবী করেছে সুমন তাকে ভালোবাসে। ভালোবাসা পেতে হলে ভাগ্য নিয়ে আসতে হয়। তুই তো সেই ভাগ্য নিয়ে আসিসনি।

স্মৃতিরা বেপরোয়া ভাবে আমাকে যন্ত্রনা দিচ্ছে। তুই অনেক কিছু শিখিয়ে গেলিরে পাগলী! খুব অপরাধী করে গেলি। আমি সবসময় ভাবতাম, ওরা তো আছেই। দেখা তো হবেই।কোথায় আর যাবে। অথচ দেখ, তুই আজ কোথাও নেই। ব-৮৬ তে নেই, রোকেয়া হলে নেই, চারুকলাতে নেই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, নাখালপাড়াতে নেই, কাজী পাড়া তে নেই, মনিপুর স্কুলে নেই, শুটিং-এর সেটে নেই ………………………. কোথাও নেই।

আজ মনে হয়, অধিকার বোধ যখন দেখিয়ে ছিলাম তখন আরেকটু বেশি দেখালাম না কেন? বকলাম-ই যখন আরেকটু বেশি বকলাম না কেন। তোর বার বার চলে যাওয়ার ইচ্ছাটাই তোকে আমাদের কাছ থেকে আড়াল করে নিলো। তুই কী জানতি না, এভাবে চলে যেতে নেই। শুনলাম তুই চারবার মা হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলি। চারবার ! চারবার!! তোকে দিয়ে যখন সেই ইস্যু গুলো কে রক্তের স্রোতধারা করে দেয়া হলো, তুই তো তখন-ই মরে গিয়েছিলি। তুই তারপর যতটুকু বেঁচেছিলি সেটা তো কেবল বয়ে বেড়ানো।

কী ভীষণ ভাল মানুষ ছিলি তুই! সারাদিন ক্লাস করে, স্কেচ করে রুমে ফিরে তোর প্রথম কাজ ছিলো আমাদের দুই বিছানার মাঝখানের আলনার কাপড় সরিয়ে ভাজ করে রেখে জানালা বানানো। তারপর বালিশে উপুর হয়ে শুয়ে ডাকাডাকি করতি, ‘আসেন গল্প করি’। এতো মজা করে রান্না করতে পারতি, মাঝে মধ্যে একটু আধটু যাই রান্না করতি আমরা খেতাম আর তোর পরবর্তী রান্নার অপেক্ষা করতাম।

আমি রুমে বসে জোরে জোরে শব্দ করে পড়তাম বলে তুই প্রায়ই বলতি, “ মানুষ একসাথে অনার্স করে একটা বিষয়ে। আর আমি করছি ২টা বিষয়ে। একটা ড্রয়িং এন্ড পেন্টিং এ আরেকটা জার্নালিজম এ।এত্তো পড়েন কেন হ্যাঁ?” সেই তুই, সেই হাসি খুশি মানুষ টা এভাবে হারিয়ে যাবে কোনোদিন ভাবি নাই। আচ্ছা আমি কেন বার বার বলছি, তুই হারিয়ে গেছিস। তুই তো লুকিয়ে আছিস। তাই না? কেউ যখন আর খুঁজবে না, তুই নিজেই বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে এসে বলবি, “খুঁজছেন না কেন! এতোক্ষণ কী লুকিয়ে থাকা যায়?”। চলে আয় না প্লিজ!!

তোকে আজ শেষ বারের মতো বকবো, “সারা দিন যেখানে খুশি থেকো, রাত হলে দয়া করে অনুরাধার পাশে চলে এসো। যেন আকাশে তাকালে তোমাকে খুঁজ়ে নিতে পারি”।

যেখানে-ই আছিস, ভালো থাকিস, পরী আমার .......................

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:৩৩

নিয়েল হিমু বলেছেন: আপনার হলের লাইফ পড়তেছি মজাই লাগছে । গতকাল দেখলাম নিচ তলার বড় আপুর দেখা পেলেন ব্লগে । ভাল লাগল । একদিন সুমি আপুকেও পেয়ে যাবেন দেইখেন :)

০৬ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:৫৬

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: নিয়েল, আমার পরীটা এখন ঢাকা মেডিকেল এর মর্গে শুয়ে আছে। আর কোনো দিন দেখা হবে না। অনেক অনেক বার চাইলেও না।

২| ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:১৮

নিয়েল হিমু বলেছেন: O.M.G !!
How ? why ?

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২৮

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: আত্মহত্যা, দাম্পত্য কলোহ
:( :(

৩| ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:১৯

নিয়েল হিমু বলেছেন: থাক কিছু আর বলতে হবে না । শুনতে চাই না মনখারাপের গল্প ।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২৯

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: এটা গল্প নয়, সত্যি

৪| ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৭:৪৮

ফেরদাউস আল আমিন বলেছেন: প্রিয়জনের মৃত্যু সব সময়ই বেদনা দায়ক।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩০

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: স হ ম ত

৫| ০৬ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৯:৪২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: লেখাটা পড়ে সত্যিই খারাপ লাগলো ।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩০

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: :( :(

৬| ০৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১:১৮

অতঃপর সোহান বলেছেন: সুমিরা এভাবেই লুকিয়ে যায়! সুমিরা ক্ষনিকের জন্য আসে আর এমন কিছু স্মৃতি উপহার দিয়ে যায় যেগুলো কিনা অসম্ভব ভাল লাগার একই সাথে সেগুলোর অনুপস্থিতি অনেক বেশি কষ্টের উদ্রেককারী! জয়তু সুমি!

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩১

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ধন্যবাদ অতঃপর সোহান,
ভালো থাকবেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.