নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ইশপ নই

সাঈদ নওশাদ

কমিউনিস্ট সত্তা, ফাসিস্ত সত্তা, হিন্দু সত্তা, খ্রিস্টিয়ান সত্তা বলে কোনও সত্তার অস্তিত্ব আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। ধর্মীয় গোঁড়ামির কোনও একটা শাসনে সসাগরা পৃথিবী সর্বকালে শাসিত হবে, এ অবাস্তব কল্পনা। হিন্দু পারেনি, বৌদ্ধ পারেনি, খ্রিস্টিয়ান পারেনি, মুসলমান পারেনি, ফাসিস্ত পারেনি, নাৎসি পারেনি। কমিউনিস্টই বুঝি এর ব্যতিক্রম হবে?

সাঈদ নওশাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার দেখা মনপুরা

০৮ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫১


আমার মিশন উপকূল সম্পন্ন করে আসাটা খুব সহজ কোন কাজ ছিলোনা। মেঘনার উত্তাল ঢেউ, বঙ্গোপসাগরে ডিঙ্গি দিয়ে পার হওয়া, রান্না বান্না করে নিজেকে তিন বেলা খাবার দেয়া, জলা জংগল পরিষ্কার করে তাবু বিছানোর জায়গা বের কর, ক্যানেল পার হওয়ার জন্য নিজেরাই সাঁকো বানানো সব কিছুই সহজ, কঠিন কাজটা হলো চরের মানুষকে কনভিন্স করা। প্রতিটা রাতই কিছু না কিছু শিখেছি, কোন না কোন ভয়ে পার করেছি। হয় শেয়ালের ভয়ে, সাপের ভয়ে নয়তো মানুষের!
এর সপ্তমরাত ছিলো সবচেয়ে ভয়ংকর। আল্লাহকে শুধু ডাকছি কখন ভোর হবে, কখন কিভাবে আমি এই চর থেকে বের হবো। গিয়াসউদ্দিন সেলিমের মনপুরার কথা মনে পড়ছিলো বারবার। সেখানে একটা সোনাই ছিলো। এখানে সবাই সেই ল্যান্ডওনার এর ছেলে সোনাই! প্রত্যেকেই কোন না কোন আসামী!
নতুন জায়গায় গেলে আমি দুইটা কাজ করি, প্রথমে চায়ের দোকানে ঢুকি, পরে মসজিদে। তাহলে এলাকার মানুষ সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়া যায়। নতুন চরে কোন চায়ের দোকান নেই, মসজিদ আছে। সেখানে ইমাম দাঁড়িয়ে থাকে মুসল্লির আশায়। আমাদের দেখে আমাদের ২ জন ডেকে জামাত করে। জামাতের পর শুনলাম এই মসজিদে ইমাম বেশিদিন থাকেনা। এলাকার সবাই এই জায়গায় পলিয়ে আছে। এদের সবাই নাম করা ডাকাত, সাগরের মাছের বোটে ডাকাতি করেই জীবিকা চালায়। রেকি করে কিছুই বুঝলাম না।কোন আইডিয়া ছাড়াই রাত যাপনের সিদ্ধান্ত নিলাম।
রাতে আজকে ফিস্ট। একটু খানাপিনা হবে৷ ভাত, রাজহাস খেয়ে পায়েস বানালাম। খেজুরের রস, মহিষের দুধ আর বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া দুই মুঠ পোলাও- র চাল দিয়ে। এমন সময় খবর আসলো গ্রামের সবাই একত্র হয়েছে আমাদের মাইর দিতে! কিছু মানুষের জমায়েতও দেখা যাচ্ছে! আমরা এখনে ঢুকলাম কয়েক ঘন্টা হলো। এর মাঝে ক্যাম্পসাইট থেকে বাইরেও যাইনি, কোথাও কোন অঘটন ঘটবে তার সুযোগও নেই। তবুও ঝামেলাটা কই পাকালাম বুঝার চেষ্টা করছি। মোবাইলে নেটওয়ার্কও পাওয়া যাচ্ছেনা, কোথাও ফোন দিবো সেই উপায় নেই। সাথে সেলফ ডিফেন্সের জন্য একটা ছুরি আছে তাও রাজহাস কাটার পর সালাদও কাটা যাচ্ছিলোনা। পরে আমাদের হোস্ট সাহাবুদ্দিন চাচার এর থেকে শুনলাম ঘটনা, লোকজন ভাবছে আমরা মার্ডার করে চরে চরে ঘুরে বেড়াচ্ছি! পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য। আমরা বলেছিলাম আমরা ঘুরতে আসছি। চরে দেখার মতো কিছুই নাই। আছে বলতে স্বপ্নের মতো সুন্দর সুন্দর খাল আর একটা ম্যানগ্রোভ আছে। কিছু হরিনও বেঁচে আছে তাদের শিকার করে খাওাদাওার পর। দেখার মত কিছুই নেই! এই চরে কখনো কোন "ট্যুরিস্ট" আসেনাই। আমরা যাবো কি দেখতে? তার মানে তারা সমীকরণ মিলালো যে আমরা তাদের মতোই পলাতক।



মাসুম ভাই এর দিকে তাকালাম, এই দূর্গম চরে কোন সার্ভিস বোট নাই। পরিবার ১০টা। মানুষ ৭০ জন! যেকোন সময় ঘিরে ফেলতে পারে আমাদের। নেট যেহেতু নাই লোকেশন শেয়ার করতে পারছিনা। মাথার কোন কিছু কাজ করছিলোনা তখন।
সাহাবুদ্দিন চাচা অভয় দিয়ে বললেন "আমি থাকতে কেউ কিছু করবোনা। আপনারা তাবুত গিয়া ঘুমান।" একটু অভয় নিয়ে ঘুমাইতে গেলাম, তবে কাল সকালেই চর ছেড়ে দিচ্ছি এইটা আমরা দুজনই নিশ্চিত।

সেই দ্বীপের একটা ঘটনা বলি,
আমাদের লোকাল হোস্ট সাহাবুদ্দিন কাকা, যার বাসায় উঠি সেই লোক রাতে আমাদের তিনজন ডাকে। বলে, তার নামে মিথ্যা মামলা দেয়ার গল্প। গল্পটা আমাদের বলার কারন তার ধারনা আমরা শহরের লোক, আমরা হয়তো তাদের এই মিত্থা মামলার গল্প ইন্টারনেটে ছেড়ে দিতে পারবো। আমরা অবশ্যই পারবো, কথাও দিলাম দিবো, তবে সেইটা ফেসবুকে! ঘটনাটা অনেকটা এমন,

চরে একটা মেয়ে থাকে। বাকশক্তিহীন! সেই মেয়ে তার জামাই (সাহাবুদ্দিন চাচার মেয়ের হাসব্যান্ড) কে ধর্ষনের অভিযোগ দেয়, তারপর চরের সবাই তাদের বিয়ে পরিয়ে দেয়। সেই বিয়েকে ছাড়াছাড়িও করায় আমাদের সাহাবুদ্দিন চাচা। তার মতে তার মেয়ের জামাই এই কাজ করেনাই। কিন্তু ঘটনা ত ঘটেছেই কিছু। সেইটার ব্যখাও দিলেন কাকা। -"এই মাগীর লগে জিন আছে। হেতে জিনের লগে মেলামেশা করি মাইন্সের নাম ধরি দেয়। আমার মাইয়ার জামাই ভালা, হেতে এমন কাম করেনাই। এই ছিনালে আমার সম্পদের লোভে হেতেরে ফাসাইসে। আমারেও ফাসাইসে, হেতের কাপড় নষ্ট করছে জিনে। জিনের লগে মেলামেশা করি আমার নাম দিছে। হেতে কাপড় নষ্ট কইরা গেরামের সবার নাম দেয়। যারেই সামনে পায় হেরেরেই দেহায়। আপনি সামনে গেলে আপনের দিকেও আঙ্গুল দিয়া দেহাইবো। মাগীর মাথা ঠিক নাই।"

দূর্গম চরে বাকশক্তিহীন একটা নারীকে ক্রমাগত ধর্ষন করে যাচ্ছে গ্রামের মানুষ, কেউ করছে বিকৃত যৌন চাহিদার জন্য, কেউ ক্ষমতার প্রদর্শন করতে৷ কিন্তু নাম হচ্ছে বেচারা জ্বীন ভুতের৷ অসহায় নারীর মাথায় কি বিচ্ছিরি ট্রমা বেড়ে উঠছে ভাবতেই গা ঠান্ডা হয়ে আসে...

সম্ভবত সেই চরে সবাই কোন না কোন মামলায় জড়িত৷ আমি জানিনা, এতোটা জানার চেষ্টাও করিনি। যেই চরে নিজেরাই মার্ডার কেইস এর পলাতক আসামী, সেখানে কথা না বাড়ানোই ভালো!

(মসজিদের ইমামকে ভুল নাম্বার দিয়ে এসেছিলাম তাৎক্ষণিক বিপদ এড়াতে। তার নাম্বারটা এনেছিলাম। এসে এক সাংবাদিক বন্ধুর মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি মেয়েটাকে বাঁচানো যায় কিনা, ইমাম ফোন ধরলেন। তবে সে সব কিছুই অস্বীকার করে এবং কোন কথা বলতে চায় নি।)

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৫২

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আফসোস।

০৯ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:০৬

সাঈদ নওশাদ বলেছেন: আর কিই বা করবো আমরা আফসোস ছাড়া!

২| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৭

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: আমার উপরে মনপুরার এক পরিবার আছে। তাদেরকে নিরিহ মনে হয়।

০৯ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:০৭

সাঈদ নওশাদ বলেছেন: ঘটনা মনপুরার না। ঘটনাটা অন্য চরের৷ মনপুরা চলচিত্র থেকে শিরোনাম দেয়া...

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:৩০

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: চরের মানুষজন কিন্তু খুবই ভয়ঙ্কর হয়, এইসব জ্বীন-পরী গ্রাম বাংলার মানুষজনকে শেষ করে দিলো।

০৯ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:০৮

সাঈদ নওশাদ বলেছেন: প্রচুর জ্বীনের গল্প এভাবে প্রচলিত আছে। আমাদের দাদী নানীদের জিজ্ঞেস করলেও পাওয়া যায়।

৪| ০৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:৫৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনার লেখা টি দুই বার এসেছে। আমি একটু অবাক হলাম যে উপরের ৩ টি কমেন্টের কেউই বিষয়টি তাদের কমেন্টে উল্লেখ করলেন না। নাকী তারা কেউই পুরো লেখাটা পড়েন নি!!!

সে যাক, দেশে যে একটা চর আছে যেটাতে বহু দাগী আসামী থাকে এটা জানা ছিলো না। বাকশক্তিহীন একটি মেয়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে এটি শুনে গা শিউরে উঠছে। আবার সেই মেয়েটির পিতাই বলছে এটা জ্বীনের কাজ। এ যে এক ভয়ংকর অবস্থা।

০৯ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:১০

সাঈদ নওশাদ বলেছেন: মোবাইল থেকে লেখা পেস্ট করাটা ঝামেলার। আর আমি চাইছিলাম লেখাটার মাঝে ছবি দিতে! কি এক ঝামেলা পাকাইসি!

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২১

মিরোরডডল বলেছেন:




দূর্গম চরে বাকশক্তিহীন একটা নারীকে ক্রমাগত ধর্ষন করে যাচ্ছে গ্রামের মানুষ, কেউ করছে বিকৃত যৌন চাহিদার জন্য, কেউ ক্ষমতার প্রদর্শন করতে৷ কিন্তু নাম হচ্ছে বেচারা জ্বীন ভুতের৷ অসহায় নারীর মাথায় কি বিচ্ছিরি ট্রমা বেড়ে উঠছে ভাবতেই গা ঠান্ডা হয়ে আসে...

কি ভয়াবহ ঘটনা!!!!
এরকম আরও কত ঘটনা হয়তো ছড়িয়ে আছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে, আমরা তার কতটুকুই বা জানি।

লেখাটা দুইবার এসেছে, ঠিক করে নিবে প্লীজ।
থ্যাংকস ফর শেয়ারিং। জীবন থেকে নেয়া গল্প ভালো লেগেছে।


০৯ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১:১৩

সাঈদ নওশাদ বলেছেন: ধন্যবাদ। মোবাইল থেকে লেখা, লেখার মাঝে ছবি পোস্ট করা কি বিরক্তিকর! ঠিক করেছি।

৬| ০৯ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৪

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: আমি ভেবেছিলাম প্রথমে মনপুরা চরের গল্প। পরে বুঝলাম যে না, ভিন্ন কোনো এক জায়গার কথা বলেছেন।

বহু আগে থেকেই শুনে এসেছি, চরাঞ্চলের মানুষজন ভয়ংকর হয়। এমনকি ছেলেবেলা নানা বাড়ি লঞ্চে করে যাবার সময় চাঁদপুরের দিকে আসলে মানুষজন উঠে বসে থাকত, ডাকাতের আক্রমণ হতে পারে এই ভয়ে। কিন্তু এখন তো অবস্থা পরিবর্তন হয়েছে, সভ্যতার আলোকে এরা সভ্য হয়েছে। তবে যা বুঝলাম এখনও বহুজন সেই অসভ্যই রয়ে গিয়েছে, বাকশক্তিহীন এক নারীকে ধর্ষণে সে কিছুই বলতে পারবে না, এই উছিলাম কী বিকৃত বাসনা পূর্ণ করে যাচ্ছে।

০৯ ই মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৫১

সাঈদ নওশাদ বলেছেন: মনপুরার গল্প না। মনপুরার গল্প আরেকদিন লিখবো ভাবছি, সেই চরের অভিজ্ঞতাও ভালোনা আমার। এই চরের গল্প আমাকে বেশ ট্রমায় রেখেছে, সেই মেয়েটার সাথে দেখা হয়নি আমার। কখনো দেখা হোক আমি চাইন। ওর চোখের দিকে তাকাতে পারতাম না কখনো।

৭| ১১ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: চরের মানুষেরা রোহিঙ্গাদের মতো মানবেতন জীবনযাপন করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.