নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালী মুসলিম মহিলা কবিদের অন্যতম কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার ১১১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৭


বিশ শতকে বাঙালি মুসলমানের সামাজিক জাগরণে নারীর অবস্থান যাঁরা নিশ্চিত করেছেন, তাঁদের অন্যতম ছিলেন মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা। এক্ষেত্রে স্বনামধন্যা রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, শামসুন্নাহার মাহমুদ ও সুফিয়া কামাল-এর পর্যায়ভুক্ত ছিলেন তিনি। আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত না হলেও সৃজনশীল মন ও বুদ্ধিবৃত্তিক মনন দিয়ে তিনি স্বকালের স্বসমাজে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি মুখ্যত কবিতাই লিখেছেন। স্বভাবজাত প্রেরণায় মাহমুদা খাতুন অনবরত কবিতা লিখেছেন এবং সেগুলি সমকালীন সাময়িক পত্রিকাসমূহে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর কাব্যপ্রতিভা হয়তো তাঁর কর্মখ্যাতির সমতুল্য ছিল না, কিন্তু নিষ্ঠা ও প্রয়াস তাঁকে রবীন্দ্রানুসারী কবিদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট আসনে সমাসীন করেছে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে বাংলার মুসলিম নারী কবিদের মধ্যে ইতিহাসে যাঁরা অমরত্ব লাভ করেছেন কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা তাঁদের মধ্যে অন্যতম যিনি সরাসরি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সান্নিধ্য লাভ করেছিলেন। মাহমুদা খাতুন ধার্মিক ও কলকাতার পীর সাহেবের মুরিদ হওয়া সত্বেও কুসংস্কার, পর্দা, অশিক্ষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন সব সময়। মুসলিম বাঙালী মহিলা কবিদের মধ্যে তিনিই প্রথম সনেট ও গদ্য ছন্দে কবিতা লিখেছেন। আজ থেকে প্রায় ৮০ বছর আগে মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার প্রথম কাব্যগ্রন্থ পসারিণী প্রকাশিত হয়েছিল। তার পরশমনি কাব্যগ্রন্থের পূর্বে আর কোন বাঙালী মুসলিম মহিলা কবির কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। ১৯০৬ সালের আজকের দিনে পাবনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা। আজ তার ১১১তম জন্মবার্ষিকী। কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার জন্মবার্ষিকীতে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।

মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা ১৯০৬ সালেল ১৬ ডিসেম্বর পাবনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ছয় বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে মাহমুদা ছিলেন দ্বিতীয়। কৈশোরে রচিত কবিতা ও রূপকথায় তাঁর নাম পাওয়া যায় শ্রী রকিবননেছা মহম্মদা খাতুন। তাছাড়া সে সময়ে তাঁর ডাক নাম ছিল বাতাসী। তাঁর পৈতৃক নিবাস কুষ্টিয়া জেলার নিয়াজতবাড়ি গ্রামে। তার পিতার নাম খান বাহাদুর মহম্মদ সোলায়মান। তিনি ছিলেন ডিভিশনাল ইস্কুল ইন্সপেক্টর। পিতার চাকুরীর সুবাদে তিনি রাজশাহী মিশন স্কুল, বরিশাল ও পাপনায় শিক্ষা লাভ করেন। তবে তার প্রদিষ্ঠানিক শিক্ষার শেষ ধাপ ছিলো ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত। রাজশাহী মিশনারী স্কুলে পড়ার সময় তার গৃহ শিক্ষক ছিলেন আনোয়ারা উপন্যাসের প্রখ্যাত লেখব মোহাম্মদ নজিবর রহমান। ১৯২৮ সালে মাহমুদা খাতুন হাইজিনে ডিপ্লোমা এবং রন্ধন প্রণালীতে ডিপ্লোমা ডিগ্রি লাভ করেন। ছবি আঁকা ও সঙ্গীতের প্রতিও ছিলো তাঁর বিশেষ ঝোক। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কালজয়ী কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে ছিলো তার ব্যক্তিগত পরিচয়। ১৯৩৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কলকাতার এলবার্ট হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়ের পক্ষ থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যাকে 'ডক্টর অফ লিটারেচার' উপাধি দেওয়া উপলক্ষ্যে যশোর সাহিত্য সংঘ কর্তৃক দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের মান পত্রটি পাঠ করেছিলেন কবি মাহমুদা খাতুন। এ ছাড়াও ১৯৩৭ সালে তিনি কলকাতা সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দান করেন।

বাঙালী মুসলিম মহিলা কবিদের অন্যতম কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা অল্প বয়স থেকেই বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় কবিতা লিখে পরিচিতি লাভ করেন। এসময় পত্রপত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হতে থাকলে অত্যন্ত অল্প সময়েই তাঁর কবি প্রতিভার স্ফুরণ ঘটে। প্রকৃতির রূপবৈচিত্র তাঁর কবিতায় প্রানের স্পর্শ লাভ করেছে। মাহমুদা খাতুনের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ তিনটি। পশারিণী (১৩৩৮), মন ও মৃত্তিকা (১৯৬০) এবং অরণ্যের সুর (১৯৬৩) তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ। তাঁর কবিতায় মানুষের সুখ-দুঃখ ও আনন্দ-বেদনার আন্তরিক প্রকাশ ঘটেছে। কবিতা ছাড়া কিছু প্রবন্ধ ও ছোটগল্পও তিনি রচনা করেছিলেন, কিন্তু সেগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়নি। সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী ১৯৬৭ সালে তাকে একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৭৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে। কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকাকে বর্তমান প্রজন্মের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে 'যুক্ত' প্রকাশ করেছে "নির্বাচিত কবিতা সংকলন" মাহমুদা খাতুন সনেট এবং গদ্যছন্দেও কিছু কবিতা রচনা করেছেন। প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং মানুষ ও সমাজ তাঁর কবিতায় ঘুরে ফিরে এসেছে। কখনও সাময়িক প্রসঙ্গ হয়েছে তাঁর কবিতার বিষয়বস্ত্ত। দুই মহাযুদ্ধের তান্ডবলীলা তাঁকে শান্তির অনিবার্যতায় আস্থাশীল করেছে। তাই শান্তির স্বপক্ষে তিনি আহবান জানিয়েছেন উদাত্ত কণ্ঠে। যেহেতু তাঁর কাছে কবিতা ছিল ‘হূদয়ের বিশুদ্ধ উচ্চারণ’, সেহেতু তাঁর নিজের কবিতাও ছিল মৌলিক এবং এক প্রশান্ত গতিপথে প্রবহমান। মাহমুদা খাতুন বহু সাহিত্যসভায় অংশগ্রহণ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও কাজী নজরুল ইসলাম-এর স্নেহধন্য হওয়ার সুযোগও তাঁর ঘটেছিল। সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক জীবনযাপন তাঁর জীবনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। আজীবন কুমারী মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা ১৯৭৭ সালের ২ মে ঢাকায় মৃত্যুৃবরণ করেন। আজ কবির ১১১তম জন্মবার্ষিকী। কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার জন্মবার্ষিকীতে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।

সম্পাদনাঃ নূর মোহাম্মদ নূরু

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩২

জাহিদ অনিক বলেছেন:
কবি মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকার কথা জানতাম না। জানা হলো। উনার কোন কবিতাও পড়া হয় নাই।


কবিকে মরণোত্তর জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
এবং আপনাকে অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে জাহিদ ভাই
কবিকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য।

২| ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৫

প্রামানিক বলেছেন: ছোট থাকতে এনার অনেক লেখা আমি বেগম পত্রিকায় পড়েছি। কবির জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
হুম, আমিও তার কবিতা পড়েছি
খুবই উন্নতমানের লেথা।

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১০

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: জানলাম। কবির আত্মার শান্তি কামনা করছি।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে জুনায়েদ
কবির আত্মার শান্তি কামনার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.