নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বীর মুক্তিযোদ্ধা পপগুরু আজম খানের ৬৭তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪৩


বাংলা পপসংগীতের অবিসংবাদিত সম্রাট বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খান। দেশীয় পপগানের আকাশে তিনি ঘটিয়েছিলেন নতুন সূর্যোদয়। তার হাতে উন্মোচিত হয়েছিল বাংলা গানের এক অন্য ধারা। যে কারণে বাংলাদেশের পপসংগীতাঙ্গনের সব তারকা বিনা দ্বিধায় ভালবাসা আর অসীম শ্রদ্ধায় তাকে বসিয়েছেন পপগুরুর আসনে। সর্বোপরি তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় সংঘটিত কয়েকটি গেরিলা অভিযানে তিনি অংশ নেন। অপরাজেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা আজম খান অস্ত্র হাতে লড়াই করেছিলেন দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য। জীবন বাজি রেখে ছিনিয়ে এনেছিলেন বিজয়। যুদ্ধোত্তর দেশে সূচনা করেছিলেন আরেক সংগ্রামের। সে সংগ্রাম নতুন ধারার সংগীত সৃষ্টির। সংস্কৃতির অচলায়তনে তুমুল আলোড়ন তুলে স্বাধীন দেশে পাশ্চাত্য সংগীতের ধারায় সংগীত রচনা ও পরিবেশনের মধ্য দিয়ে তারুণ্যের দুর্দমনীয় বাঁধভাঙা স্পন্দন বইয়ে দিয়েছিলেন তিনি, বাংলাদেশের পপসংগীতের পথিকৃৎ হিসেবে। তার গান ঠাঁই করে নেয় দেশের সংগীতপ্রিয় কোটি শ্রোতার হৃদয়ে। আজ কিংবদন্তি পপগুরু আজম খানের ৬৭তম জন্মববার্ষিকী। ১৯৫০ সালের আজকো দিনে তিনি ঢাকার আজিমপুরে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মদিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা পপগুরু আজম খানের জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।

আজম খান ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার আজিমপুর কলোনির ১০নং সরকারি কোয়ার্টারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম মাহবুবুল হক খান। তার বাবার নাম মোহাম্মদ আফতাব উদ্দিন খান এবং মা জোবেদা খাতুন। আজম খান ১৯৫৫ সালে প্রথমে আজিমপুরের ঢাকেশ্বরী স্কুলে বেবি শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৫৬ সালে তার বাবা কমলাপুরে বাড়ি বানান। এরপর থেকে সেখানে বসতি তাদের। ১৯৫৬ সালে কমলাপুরের প্রভেনশিয়াল স্কুলে প্রাইমারিতে ভর্তি হন আজম খান। ১৯৬৫ সালে সিদ্ধেশ্বরী হাইস্কুলে বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৬৮ সালে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৯সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে আজম খান পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তখন তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীরসক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীতপ্রচার করেন। ১৯৭০ সালে টিঅ্যান্ডটি কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে এইচএসসি উত্তীর্ণ হন কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর পড়ালেখায় আর অগ্রসর হতে পারেননি আজম খান। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হলে, তিনি পায়ে হেঁটে আগরতলা চলে যান। আগরতলার পথে সঙ্গী হন তার দুই বন্ধু। এসময় তার লক্ষ্য ছিল সেক্টর ২ এ খালেদ মোশাররফের অধীনে যুদ্ধে যোগদান করা। আজম খান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ২১ বছর বয়সে। তার গাওয়া গান প্রশিক্ষণ শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণ যোগাতো। তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ভারতের মেলাঘরের শিবিরে। যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষে তিনি কুমিল্লায় পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সমুখ সমরে অংশ নেয়া শুরু করেন। কুমিল্লার সালদায়প্রথম সরাসরি যুদ্ধ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি পুণরায় আগরতলায় ফিরে আসেন। এরপর তাকে পাঠানো হয় ঢাকায় গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইন-চার্জ। আর সেক্টর কমান্ডার ছিলেন কর্ণেল খালেদ মোশাররফ। ঢাকায় তিনি সেকশান কমান্ডার হিসেবে ঢাকা ও এর আশেপাশে বেশ কয়েকটি গেরিলা আক্রমণে অংশ নেন। আজম খান মূলত যাত্রাবাড়ি- গুলশান এলাকার গেরিলা অপারেশনগুলো পরিচালনার দায়িত্ব পান। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল তার নেতৃত্বে সংঘটিত " অপারেশান তিতাস"। তাদের দায়িত্ব ছিল ঢাকার কিছু গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করার মাধ্যমে বিশেষ করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল (বর্তমান শেরাটন হোটেল), হোটেল পূর্বাণী' রগ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটানো। তাদের লক্ষ্য, ঐ সকল হোটেলে অবস্থানরত বিদেশীরা যাতে বুঝতে পারে যে দেশে একটা যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে তিনি তার বাম কানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। যা পরবর্তীতে তার শ্রবণক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটায়। আজম খান তার সঙ্গীদের নিয়ে পুরোপুরি ঢাকায় প্রবেশ করেন ১৯৭১-এর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি। এর আগে তারা মাদারটেকের কাছে ত্রিমোহনীতে সংগঠিত যুদ্ধে পাক সেনাদের পরাজিত করেন ।

মুক্তিযুদ্ধের পর তার ব্যান্ড উচ্চারণ এবং আখন্দ ভ্রাতৃদ্বয় (লাকী আখন্দ ও হ্যাপি আখন্দ) দেশব্যাপী সংগীত জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ১৯৭২ সালে বন্ধু নিলু আর মনসুরকে গিটারে, সাদেককে ড্রামে আর নিজেকে প্রধান ভোকাল করে অনুষ্ঠান শুরু করেন। ওই বছরই ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ আর ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুটি সরাসরি প্রচার করা হয় বিটিভিতে। ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয় এ দুটো গান। দেশজুড়ে পরিচিতি পেয়ে যায় তাদের ব্যান্ড। আজম খান ১৯৭৪-১৯৭৫ সালের দিকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘রেললাইনের ওই বস্তিতে’ শিরোনামে গান গেয়ে হইচই ফেলে দেন। তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘রেল লাইনের ওই বস্তিতে’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’, ‘অনামিকা’, ‘অভিমানী’, ‘আসি আসি বলে’, ‘হাইকোর্টের মাজারে’, ‘পাপড়ি’, ‘যে মেয়ে চোখে দেখে না’ ইত্যাদি। শুধু সংগীতেই নয়, মিডিয়ার অন্যান্য ক্ষেত্রেও তার বিচরণ ছিল সাবলীল। ১৯৮৬ সালে ‘কালা বাউল’ নামে হিরামনের একটি নাটকে কালা বাউলের চরিত্রে এবং ২০০৩ সালে শাহীন-সুমন পরিচালিত ‘গডফাদার’ চলচ্চিত্রে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। ২০০৩ সালে ক্রাউন এনার্জি ড্রিংকসের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রথম মডেল হন। এরপর ২০০৫ ও ২০০৮ সালে বাংলালিংক এবং ২০১০ সালে কোবরা ড্রিংকসের বিজ্ঞাপন করেন। আরেকটি পরিচয়ে তার বেশ সুনাম ছিল। ক্রিকেটার আজম খান। গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের হয়ে ১৯৯১ থেকে ২০০০ সালে তিনি প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন। শিল্পী আজম খানের স্বপ্ন ছিল একটি আধুনিক, উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখবেন। যেখানে সবাই সুখ-শান্তিতে বসবাস করবে, বাংলাদেশ হবে একটি স্বর্গরাজ্য। স্বপ্ন বুনে যুদ্ধ যাওয়া, যুদ্ধের পর স্বপ্ন আর বাস্তবতার মিল খুঁজতে খুঁজতে পার করে দিয়েছিলেন আরও ৪০টি বছর।

অবশেষে ৬১ বছরে জীবন থেমে যায় পপসম্রাট আজম খানের । দীর্ঘদিন দূরারোগ্য ক্যান্সার ব্যাধির সাথে লড়াই করে ২০১১ সালের ৫ জুন সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকাস্থ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পপ সংগীতের গুরু শিল্পী আজম খান। নিজের স্বপ্নকে স্বপ্নে রেখেই চলে গেলেন দূরে... বহু দূরে...। তবে তার এ যাওয়া শারীরিক প্রস্থানই কেবল। দেশীয় পপগানের আকাশে নতুন সূর্যোদয় ঘটিয়েছিলেন আজম খান। তার সমৃদ্ধ সংগীতভাণ্ডার দিয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মনের মণিকোঠায়। তার কালজয়ী সব গান সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে দোলা দিয়ে যাবে আজীবন। ব্যাক্তিগতে জীবনে আজম খান ১৯৮১ সালে ১৪ই জানুয়ারি সাহেদা বেগমের সঙ্গে বিয়ে হয় আজম খানের। তখন তার বয়স ছিল ৩১ বছর। দুই মেয়ে এবং এক ছেলের (বড় মেয়ে ইমা খান, মেজো ছেলে হৃদয় খান ও ছোট মেয়ে অরণী খান) জনক আজম খা্নের সহধর্মিণী মারা যাওয়ার পর থেকে একাকী জীবন কাটান। আজ কিংবদন্তি পপগুরু আজম খানের ৬৭তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা পপগুরু আজম খানের জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫০

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: ও সালেকা ও মালেকা
কলা পাতার ঝুম
সালামালাইকুম!!

..শুভ জন্মদিন পপগুরু।


যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন!

পোস্টের জন্য থ্যাংকু নুর মেয়াবাই! :)

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: তার গান আমার ভালো লাগে।
বিশেষ করে উনি গানের সময় হাত পা বাঁকা করে অদ্ভুত একটা নাচ দেয়। খুব ভালো লাগে।

৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১৯

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: গুরু তোমায় আজও ভালবাসি

৪| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:২৭

শায়মা বলেছেন: শ্রদ্ধা!

৫| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: শুভেচ্ছার বাণী উনি তো আর শুনতে পাবেন না। তাই তার জন্য মনের ভেতর থেকে অনেক অনেক শ্রদ্ধা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.