নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের ভয়াল বীভৎস ও বিভীষিকাময় গ্রেনেড হামলায় হত্যাযজ্ঞের ১৪তম বার্ষিকীতে বীর শহিদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

২১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:১৪


আজ ভয়াল-বিভীষিকাময় ও রক্তাক্ত ২১ আগস্ট। ইতিহাসের সেই মর্মস্পর্শী বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের এক অতি কলংকময় দিন। বারুদ আর রক্তমাখা বীভৎস রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের দিন। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার ১৪তম বার্ষিকী। বিএনপি-জামায়াত জোটের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার চূড়ান্ত নিদর্শন প্রদর্শিত হয়েছিল এইদিন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে দেশ থেকে চিরতরে নির্মূল করে দেয়ার হীন উদ্দেশ্য নিয়ে হায়েনা রুপী ‘হাওয়া ভবন’ গং তার হিংস্রতম রুপ দেখিয়েছিল। গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগের সমাবেশে। অথচ আওয়ামীলীগের সেই সমাবেশ ছিল সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ বিরোধী শান্তিপূর্ণ সমাবেশ। সভ্যজগতের অকল্পনীয় এক নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালানো হয় ২০০৪ সালের এই দিনে। গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। রক্ত-ঝড়ের প্রচন্ডতায় মলিন হয়ে গিয়েছিলো বাংলা ও বাঙালীর মুখ। বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ এদিন মুহূর্তেই পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট দেশের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা এবং নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত মিছিলপূর্বক সন্ত্রাস-বিরোধী শান্তি সমাবেশে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে পরিকল্পিতভাবে মানবতার শত্রু সন্ত্রাসী ঘাতকচক্র আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা এবং গুলিবর্ষণ করে বলে অভিযোগ আছে। বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ছিলেন কুষ্টিয়ার মাহবুব। তিনিই সেদিন নিজের জীবন দিয়ে শেখ হাসিনা কে বাঁচিয়েছিলেন। প্রকৃত অর্থে সুপরিকল্পিত এ হামলার উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রধান দল আওয়ামী লীগ, যারা এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং অসম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক আদর্শের পতাকা বহন করে তাকে নেতৃত্বহীন এবং বিনাশ করে দেওয়া।

২০০৪ সালেল ২১ শে আগস্টের এই গ্রেনেড হামলা কোন বিচ্ছিন ঘটনা ছিল না। এটা ছিল ৭৫ এর ১৫ই আগস্টেরই পরবর্তী রুপ। আওয়ামীলীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে চিরতরে নেতৃত্ব শূন্য করে দেয়াই ছিল এর লক্ষ্য। অবিলম্বে এই গ্রেনেড হামলার পিছনে দায়ী ব্যাক্তিদের খোজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া উচিত। তা না হলে স্বাধীনতা বিরোধী জঙ্গী শকুনেরা আবারও হামলা চালাবে। ক্ষতবিক্ষত করবে এদেশের মানচিত্রকে, রক্তরঞ্জিত হবে লাখ শহীদের রক্তে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা। সে দিনের সেই গ্রেনেডের হিংস্র দানবীয় সন্ত্রাস আক্রান্ত করে মানবতাকে। ভয়াল-বিভীষিকাময় সেই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের দিনটির কথা মনে হলে আজও বুক কেঁপে ওঠে। তেরটি গ্রেনেড বিস্ফোরণে এক নারকীয় তান্ডবের সৃষ্টি হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণ। সেদিন গ্রেনেড হামলার প্রচন্ডতায় মুহূর্তেই ওই স্থানটি পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় শহীদদের শরীরের অঙ্গপ্রতঙ্গ ও মসত্মিষ্ক ছিন্নভিন্ন অংশ, রক্তাক্ত শরীর, অস্বাভাবিক ও বীভৎস জিহ্বা বের হয়ে যাওয়া, কারও পা নেই, দেহ আছে মস্তিস্কের অধিকাংশ নেই এমন চিত্র আমরা দেখেছি পত্র-পত্রিকাও টেলিভিশনের সংবাদ চিত্রে। বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রত্যৰ মদদ ও সহায়তায় স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুর উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গীগোষ্ঠীর বর্বরতা কতটা যে হায়েনার রূপ নিতে পারে ছবিগুলো না দেখলে তা বোঝার উপায় নেই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই হিংস্র সাপদের ভয়াল ছোবলে তথা নৃশংস বর্বরোচিত হামলায় নেতা-কর্মীদের মানবঢাল ও পরম করুনাময় আল্লাহতায়ালার রহমতে প্রাণে বেঁচে গেলেও এই নিষ্ঠুর আক্রমণে শহীদ হন আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নারী নেত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী। এ হামলায় আরো আহত হন অগনিত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী সমর্থক ও সাধারণ মানুষ। তাদের অনেকেই আজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে আজ ও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। নয় বছর পেরিয়ে গেলেও তাদের কষ্টের তীব্রতা এতটুকুও কমেনি। হাত-পাসহ গোটা শরীর ক্ষত-বিক্ষত, জোড়াতালি দেয়া অনেকের শরীর। এখনও সর্বাঙ্গে বিঁধে থাকা গ্রেনেডের তীব্র যন্ত্রণা কাউকে বলে বোঝাতে পারছেন না। ঘুমের ওষুধ খেয়েও রাতে ঘুমাতে পারছেন না তারা। জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে থাকা গ্রেনেড হামলায় আহদের একটাই দাবি, “প্রকাশ্য দিবালোকে যারা এভাবে হত্যাযজ্ঞ চালাল, সেই ঘাতকচক্র ও তাদের মদদদাতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হোক”। ভয়াল ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুজাল ছিন্ন করে প্রাণে বেঁচে যাওয়া পঙ্গুত্ববরণকারী বেশ কজন নারী নেত্রীর কণ্ঠে ছিল এমনই দাবি।

২১ আগস্টের হামলার সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। অভিযোগ, আহতদের সাহায্যে এগিয়ে না এসে পুলিশ উল্টো তাদের হেনস্তা করে। ওই সময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি সরকারের ভূমিকা নিয়েও নানা বিতর্ক ও প্রশ্ন রয়েছে। গ্রেনেড হামলার পর তদন্তে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছিল তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে। জজ মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে দিয়ে গ্রেনেড হামলার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল। ২০০৭ সালের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ওই হামলার ঘটনায় পুনরায় তদন্ত হয়। সেই তদন্তে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান এবং তৎকালীন বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর নাম বেরিয়ে আসে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে পুনরায় এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। সেই তদন্তে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামও উঠে আসে।এ ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও আজও বিচারকার্য সম্পন্ন হয়নি।সব মিলিয়ে ন্যাক্কারজনক এ গ্রেনেড হামালার বিচারকার্যক্রমে চলছে এক ধরনের দীর্ঘসূত্রীতা। মামলার ৫২ আসামির মধ্যে মৃত্যুজনিত কারণে এখন আসামির সংখ্যা ৪৯ জন। এর মধ্যে বিএনপি নেতা তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. হানিফ, ডিএমপির সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান, ডিএমপির সাবেক ডিসি (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, গ্রেনেড সরবরাহকারী মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ১৮ জন আসামি পলাতক আছেন। তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে চাঞ্চল্যকর এ মামলায় গ্রেফতার হয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সামরিক গোয়েন্দা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক আবদুর রহিম, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২২ জন আসামি কারাগারে রয়েছেন। যুদ্ধাপরাধসহ অন্য মামলায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গি নেতা মুফতি হান্নান ও জেএমবির সদস্য শহিদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এখন ২২ আসামির বিচার চলছে।

বীভৎস গ্রেনেড হামলায় হত্যাযজ্ঞের ১৪তম বাষির্কীতে আজ দেশবাসীর প্রত্যাশা এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সত্য উৎঘাটন হোক। প্রকৃত পরিকল্পনাকারী, তদানীন্তন ক্ষমতাসীনদের ষড়যন্ত্র, হত্যাকারীদের কারা আড়ালে করতে চেয়েছিল এসব জানা আজ জাতীয় নিরাপত্তা ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে জরুরি। তাই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রকৃত অপরাধী এবং হুকুমের আসামীদের যথোপযুক্ত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা আজ সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। এই নির্মম ট্র্যাজেডির সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ বিচার হোক, সত্যের আলোয় বেরিয়ে আসুক অপরাধীদের যাবতীয় কর্মকান্ড। এটাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন অপরাধী সে যত বড় ক্ষমতাধরই হোক না কেন শাস্তি যেন অপরাধীরা এড়াতে না পারে। মৃত্যু-ধ্বংস-রক্তস্রোতের নারকীয় গ্রেনেড হামলার ১৪তম বার্ষির্কীতে সকল শহীদদের আত্মার শান্তি ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: খুব মর্মান্তিক ঘটনা।
সিনেমাতে এমন টা দেখা যায়।

২| ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:২৯

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: একটা ছবি প্রচন্ড গ্রাফিক!

৩| ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:৪১

বাকপ্রবাস বলেছেন: প্রতিশোধ পর্ব চলমান, জনগণ যাতে তার স্বীকার না হয় সেটাই কাম্য। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির কথাটা যেন সাম্প্রদায়িক না হয় সেটাই কাম্য।

৪| ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১৩

যুক্তি না নিলে যুক্তি দাও বলেছেন: মর্মান্তিক, বর্বর পিসাচ।

৫| ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৫৯

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
এটিও পড়ুন
গ্রেনেড হামলার মুল হোতা যারা

৬| ২২ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ৮:৪৭

স্রাঞ্জি সে বলেছেন:



@প্রীশু নিবেন। ঈদ মোবারক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.