নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিংবদন্তি অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যানের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়

২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৭


জোয়ান অব আর্ক খ্যাত সুইডিশ অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যান (ইংরিদ বারিমান)। ক্যাসাব্ল্যাঙ্কার সেই নায়িকা যিনি তিনবার অস্কার জিতেছেন। সর্বকালের সেরা রোম্যান্স ঘরানার সিনেমার যে কোনো তালিকায় একদম উপরের দিকে যে সিনেমাগুলোর নাম ঘুরে-ফিরে আসে, সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো সিনেমাটি হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত ১৯৪২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মার্কিন ক্ল্যাসিক রোমান্টিক ড্রামা ছবি ক্যাসাব্লাঙ্কা। এ সিনেমাটি ১৯৪৩ সালে ১৬ তম অস্কার আসরে আটটি বিভাগে মনোনয়ন পায় আর সেরা সিনেমা, পরিচালক ও চিত্রনাট্য বিভাগে পুরস্কার জয় করে হামফ্রে বোগার্ট ও ইনগ্রিড বার্গম্যান অভিনীত এ সিনেমাটি। ক্লাব মালিক রিক ব্লেইন ও তার প্রাক্তন প্রেমিকা এলসা লুন্ড’কে ফিরে পাওয়ার এক মর্মস্পর্শী গল্প নিয়ে এ ছবির পটভূমি রচিত। ছবিটি পরিচালনা করেছেন Michael Curtiz (মাইকেল কার্টিজ)। এ ছবিতেই প্রথম উঠে এল সেই দর্শন "মহৎ প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়"। বলা হলো সেই দর্শনের কথাও, ‘তোমার প্রেমকে মুক্ত করে দাও। সে যদি তোমার থাকে, তবে অবশ্যই তা আবার তোমার কাছেই ফিরে আসবে। আর যদি ফিরে না আসে, জানবে, সে তোমার কখনোই ছিল না।’সিনেমাটিতে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন ইনগ্রিড বার্গম্যান। সিনেমাটিতে এই তারকা অভিনেত্রীর বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন তার স্বামী রবার্তো রসেলিনি। আজ এত বছর পরেও ক্যাসাব্ল্যাঙ্কা সমান জনপ্রিয়। ক্যাসাব্লাঙ্কা ছবিটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হিসাবে গণ্য করা হয়। এছাড়াও হিচককের নটোরিয়াস, স্পেলবাউন্ড, জর্জ ক্যুকরের গ্যাসলাইট-এর মতো সিনেমাগুলোতে ইনগ্রিড বার্গম্যানের অভিনয় একইসাথে সমালোচকের প্রশংসা এবং দর্শকদের সমাদর দুই-ই কুড়িয়েছিল। ইনগ্রিড বার্গম্যান বিখ্যাত তার কান্না আর হাসির প্রাকৃতিক বৈচিত্রের জন্য। বিখ্যাত অনেক নির্মাতাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন কিংবদন্তি এই অভিনেত্রী। এ তালিকায় উল্লেখযোগ্য জর্জ কুকর, ভিক্টর ফ্লেমিং, আলফ্রেড হিচকক, রবার্তো রোসেলিনি, জ্যঁ রেনোয়ার এবং ইঙ্গমার বার্গম্যান। ১৯৪৬ সালের গ্যাসলাইট চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অভিনেত্রীর অস্কার লাভ করেন তিনি। ১৯৯৯ সালে আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট তাকে ক্ল্যাসিকাল আমেরিকান সিনেমার জগতে সর্বকালের চতুর্থ সেরা কিংবদন্তি হিসেবে মনোনীত করেছে। প্রতিথযশা লাস্যময়ী এই অভিনেত্রকে বলা হয়ে থাকে হলিউডকে দেয়া এক মহাশঙ্খ সুইডিশ উপহার। ইনগ্রিড বার্গম্যান জন্মেছিলেন ১৯১৫ সালের ২৯ আগস্ট আর ১৯৮২ সালের ২৯ আগস্ট মারা যান তিনি। জন্ম-মৃত্যুর হিসেবে আজ তার ১০৩তম জন্মবার্ষিকী আর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী। অমর অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যানের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

(ইনগ্রিড বার্গম্যান এবং রবের্তো রসেলিনি)
ইনগ্রিড বার্গম্যান ১৯১৫ সালের ২৯ আগস্ট সুইডেনের স্টোকহোমে জন্মগ্রহণ করেন। তার সুইডিশ পিতা, জাস্টাস স্যামুয়েল বর্গম্যান, একজন শিল্পী ও ফটোগ্রাফার এবং জার্মান মাতা মাতা ফরিদা হেনরিয়েটা (অ্যাডলার)। বার্গম্যান তার প্রাথমিক বছরগুলিতে বেশ কিছু বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। ২ বছর বয়সে তিনি তার মাকে হারান এবং ১২ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে চাচাদের সংসারে বড় হতে থাকেন। স্কুলের পাট চুকানোর পর নিজেই সিদ্ধান্ত নেন অভিনেত্রী হওয়ার। ১৯৩০ এর দশকের প্রথম দিকে, তিনি স্টকহোমের রয়েল ড্রামাটিক থিয়েটার স্কুলে ভর্তি হন। অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যানের অভিনয় জীবনটা ওলট-পালট হয়ে গেল ইতালির চলচ্চিত্র পরিচালক রবের্তো রসেলিনির প্রেমে পড়ে। রসেলিনির সিনেমা দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকে এক চিঠি লিখেছিলেন বার্গম্যান। চিঠিতে তিনি তাঁকে প্রস্তাব দেন একসঙ্গে একটি সিনেমা তৈরির। ‘আপনি যদি এক সুইডিশ অভিনেত্রীকে চান, যে ভালো ইংরেজি বলতে পারে, যে জার্মান ভাষাটা এখনো ভুলে যায়নি, যার ফ্রেঞ্চ ভালো বোঝা যায় না, যে ইতালিয়ান ভাষায় শুধু একটি কথাই বলতে পারে "তি আমো", আমি প্রস্তুত আপনার সঙ্গে একটি ছবিতে কাজ করতে।’ এই ছিল সেই চিঠির বক্তব্য। তারই ফল ১৯৫০ সালের স্ট্রম্বোলি ছবিটি। আর সেটিতে অভিনয় করতে গিয়েই দুজনের প্রেম। এভাবেই শুরু হলিউডের অন্যতম আলোচিত প্রেমকাহিনীর। বিবাহিত থাকা অবস্থায় আরেকজনের সঙ্গে প্রেম, এমন ঘটনা তো হলিউডে রোজই ঘটছে। তবে মনে রাখুন, সেটা ছিল পঞ্চাশের দশকের কথা। সে সময় এক রাজনীতিবিদ বার্গম্যান সম্পর্কে বলেছিলেন, তিনি নারীত্বের ভয়ংকর উদাহরণ, শয়তানির এক শক্তিশালী প্রভাব আছে তাঁর মধ্যে। প্রেমের একপর্যায়ে সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়েন বার্গম্যান। তাঁর স্বামীও এত সহজে ছাড়ার পাত্র নন। ফলে বিয়ে না করেই রসেলিনির সন্তানের জন্ম দিতে হয় তাঁকে। সে সময় তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘মানুষ আমাকে জোয়ান অব আর্ক হিসেবে দেখে, সন্ন্যাসিনী মনে করে। আমি তা নই। আমি শুধু এক নারী, একজন মানুষই।’ ২ ফেব্রুয়ারি সন্তান জন্মদানের পর একই বছর ২৪ মে বিয়ে করেন তাঁরা। যমজ কন্যার জন্ম হয় তাঁদের সংসারে। এরপর রসেলিনির পরিচালনায় আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন বার্গম্যান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তাদের দাম্পত্যজীবনের। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৭ সাল এই কয় বছরই টিকে ছিল তাঁদের সম্পর্ক। ১৯৫৭ সালে জওহরলাল নেহরুর আমন্ত্রণে ভারতে আসেন রসেলিনি। আর সেখানেই তাঁর পরিচয় সোনালী দাশগুপ্তার সঙ্গে। এই বাঙালি নারীর প্রেমে পড়ে আবার গণমাধ্যমের চক্ষুশূল হন তিনি। সোনালীও তখন অন্যের স্ত্রী, সন্তানের জননী। সব ফেলে তিনি পালিয়ে আসেন রসেলিনির সঙ্গে। রসেলিনির জীবনে ‘ইনগ্রিড’ অধ্যায়েরই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটল, অন্য এক মহাদেশে। ইনগ্রিড ফিরে আসেন হলিউডে।

সত্যিকারের ইন্টারন্যাশনাল স্টার বলতে যা বুঝায় তাই ছিলেন বার্গম্যান। কখনো অভিনয় করেছেন হলিউডে, কখনোবা ইটালিতে আবার কখনো নিজের দেশ সুইডেনে। কিন্তু সব জায়গাতেই ছিল তার সমান দৃপ্ত পদচারণা। আমেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট তাদের সর্বকালের সেরাদের তালিকায় তাকে রেখেছে চারে।অমর অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যানের জন্মশতবর্ষকীতে ২০১৫ সালে তাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সাজানো হয়েছিলোকান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল পোস্টার। ১৯৩২ থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত অনেক ছবি এবং সেগুলোর পোস্টারের শোভা বেড়েছিল ইনগ্রিডের মুখখানার সুবাদে। নানা চড়াই উৎরা্ই পার করে ১৯৮২ সালের আজকের দিনে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি ইংল্যান্ডের লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৬৭ বছর। আজ ২৯ আগস্ট এই অভিনেত্রীর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী এবং ১০৩তম জন্মবার্ষিকী। কিংবদন্তি অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যানের জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকীতে তাকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫৪

লায়নহার্ট বলেছেন: {তাঁকে চিনতে পারলে, আমি খুব খুশি হতাম...........একটা পরামর্শ দেই, বিসিএসে যে সব লোকজনের নাম ধাম চায়, তাদের নিয়ে বেশি বেশি লিখুন, লোকজন উপকৃত হবে}

২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ক্যাসাব্ল্যাঙ্কা ছবিটি সময় করে দেখে নেবেন।
আশা করি ইনগ্রিড বার্গম্যানকে চিনতে কষ্ট হবেনা।

সবার জন্য সব কিছু নয় ! তবে বিসিএসে যে সকল গুণীদের
নাম ধাম জানতে চায় তাদেরকে হয়তো দেখতে পাবেন
আমার কোন এক লেখায়। সাথে থাকুন।

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: তার অভিনীত মুভি আমি দেখেছি।

২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব ভাই।
দেখতে রহো !!

৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:২৫

চাঙ্কু বলেছেন: উনাকে ক্ল্যাসিকেল মুভি প্রেমিক ছাড়া অন্যরা তেমন চিনবে না। ক্যাসাব্ল্যাঙ্কাতে উনি অসাধারণ অভিনয় করেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.