নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক, সুরকার ও সংগীতশিল্পী অজিত রায়ের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১২


বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভুবনে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তিত্ব, প্রথিতযশা সঙ্গীতজ্ঞ কিংবদন্তি কন্ঠ শিল্পী অজিত রায়। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক। রবীন্দ্রসংগীতের এই নামি শিল্পী গণসংগীতও গেয়েছেন সমান দাপটে। চার দশক কালেরও অধিক সময় ধরে তাঁর দৃপ্ত পদচারণায় মুখরিত ছিল আমাদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল। বরেণ্য এই সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়কাল হতে তিনি প্রতি বছর ভাষা আন্দোলনের বিশেষ দিন হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারীকে স্মরণ করে একটি করে নতুন গান করে আসছেন। এছাড়াও্ ষাটের দশকে রবি ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আমার সোনার বাংলা গানটিকে তিনি মাঠে-ময়দানে গেয়ে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। আজ এই বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১১ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবারণ করেন। প্রথিতযশা কন্ঠ শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ অজিত রায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

১৯৩৮ সালেল ২৯ জুন অধুনা বাংলাদেশের রংপুরের উলিপুরে জন্মগ্রহণ করেন অজিত রায়। বাবা মুকুন্দ রায় ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা, মা জলপাইগুড়ি জমিদার পরিবারের মেয়ে কনিকা রায় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী ও স্কুল শিক্ষয়িত্রী ৷ খুব ছোটবেলা থেকেই মায়ের কাছে গানে তালিম নেন তিনি। ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন তিনি। মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে ষাটের দশকে অজিত রায় চলেআসেন ঢাকায়। কৈশোরেই তবলা বাজানো শিক্ষা গ্রহণ করেন অজিত রায়। তার গান শেখার প্রেরণা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এরপর ১৯৬৩ সাল থেকে রেডিওতে গান গাইতে শুরু করেন । পরে টেলিভিশন প্রচলনের পর থেকে সেখানেও গান গেয়েছেন অজিত রায় যার বেশির ভাগই রবীন্দ্রসংগীত। সহকর্মী শিল্পীদের ডাকে সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের জুন মাসে তিনি কলকাতায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দেন। এসময় তাঁর সতীর্থ হিসেবে ছিলেনঃ আপেল মাহমুদ, আব্দুল জব্বার, সমর দাস, কাদেরী কিবরিয়া, সুজেয় শ্যাম-সহ অন্যান্য শিল্পীরা। এদেরকে আমরা সম্মানার্থে বলি শব্দসৈনিক। এঁরা হয়ত অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করেননি, কিন্তু যারা অস্ত্র হাতে রণাঙ্গনে ছিলেন তাদের প্রেরণার বাণী তো এরাই শুনিয়েছিলেন। এরাও তো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহান যোদ্ধাই।

এ সময়ে তাঁর রচিত ও সুরারোপিত বিখ্যাত গানগুলো রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীসহ সাধারণ মানুষদেরকে স্বদেশকে ঘিরে চিন্তা-চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল। পাশাপাশি রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুল গীতি, দেশাত্মবোধক গান, গণসঙ্গীতও পরিবেশন করেছিলেন তিনি। তার জনপ্রিয় গানগুলো হলোঃ ও আমার দেশের মাটি, একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতা, আমি যুগে যুগে আসি, বিজয় নিশান উড়ছে ঐ, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি ইত্যাদি। নেপথ্য গায়ক হিসেবে অনেক বিখ্যাত চলচ্চিত্রে অজিত রায় অংশগ্রহণ করেছেন। এগুলো হলোঃ রিপোর্টার, জীবন থেকে নেয়া, যে আগুনে পুড়ি, জন্মভূমি, কোথায় যেন দেখেছি এবং কসাই। তাছাড়াও তিনি সুরুজ মিয়া চলচ্চিত্রে বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ১৯৭২ সালে অজিত রায় তৎকালীন বাংলাদেশ বেতারের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এবং ১৯৯৫ সারের ৯ অক্টোবর, চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য ১৯৭২ সালেও বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে ভারত গমন করেছিলেন এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৭৪ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর করেন। ১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতী আয়োজিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‌১২৫তম জন্ম জয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হয়ে কলকাতায় সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। সঙ্গীতে অসমান্য অবদানের জন্য ২০০০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক স্বাধীনতা পদক পেয়েছিলেন অজিত রায়। এছাড়াও, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন অজিত রায়।

সঙ্গীতশিল্পী ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অজিত রায় ২০১১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুপুর ১:০৫ মিনিটে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ফুসফুস সংক্রমণ ব্যাধিতে ভুগছিলেন। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের পরে পোস্তগোলা শ্মশান ঘাটে তাঁকে দাহ করা হয়। তার বয়স হয়েছিলো ৭৩ বছর। মৃত্যুকালে স্ত্রী বুলা রায়, পুত্র রোমাঞ্চ রায় এবং কন্যা শ্রেয়সী রায় মুমুসহ অগণিত ভক্ত-গুণগ্রাহীসহ রেখে গেছেন তাঁর সুরারোপিত গানের এক বিরাট সম্ভার। কীর্তিমানদের মৃত্যু নেই। তারা বেঁচে থাকেন অনন্তকাল তাদের কীর্তি দিয়ে। রাষ্ট্র, সমাজ, সংসারের সর্বত্রই তাদের রেখে যাওয়া কর্মকাণ্ড তাদেরকে উজ্জ্বল করে রাখে। অজিত রায় ছিলেন এমনই একজন কীর্তিমান মানুষ। গায়ক, সুরকার ও সংগীত পরিচালক অজিত রায় তাঁর সংগীতের মধ্য দিয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বাংলার আপামর জনতার মনে। আজ এই বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পীর ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী। প্রথিতযশা কন্ঠ শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ অজিত রায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২০

সামিয়া আক্তার শেহা বলেছেন: তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
জ্ঞানের কথা

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৬

সারমিন আক্তার শেহা বলেছেন: তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
কৃষকের হাসি

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০১

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.