নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:২০


গভীর জীবনবাদী, রসজ্ঞ ও বক্তব্যজীবী ভারতীয় বাঙালি সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। তাঁর জীবনবোধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইসলাম ও হিন্দু সংস্কৃতির ভাস্কর্য মেলবন্ধন ঘটেছে। তিনি অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, প্রফুল্ল রায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ঔপন্যাসিকের সমকালীন হলেও স্বতন্ত্র প্রতিভায় ছিলেন উজ্জ্বল। তার লেখক সত্তায় জড়িয়ে ছিল রাঢ়ের রুক্ষ মাটি। মুর্শিদাবাদের পাশের জেলা বীরভূম। যেখানে লাভপুর গ্রামে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। একই জলহাওয়া তাঁদের দুজনকেই প্রাণোন্মাদনা দিয়েছিল। তাই তারাশঙ্কর বলতেন, "আমার পরেই সিরাজ, সিরাজই আমার পরে অধিষ্ঠান করবে।" তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ উপন্যাস অলীক মানুষ। এই উপন্যাস লেখার প্রস্ত্ততিপর্বে ইতিহাস দর্শন, সাহিত্য, নানা ধর্মের ধর্মশাস্ত্র, সমাজতত্ত্ব ইত্যাদি নানা বিষয়ের ওপর তিনি গভীর পড়াশোনা করেছেন। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ মোট ১৫০টি উপন্যাস ও ৩০৬টি ছোট গল্প লিখেছেন। সে-সব বই মূলত উপন্যাস, ছোটগল্প, কিশোরদের রহস্য উপন্যাস। তাঁর গল্প ও একাধিক গ্রন্থ ভারতের প্রায় সমস্ত স্বীকৃত ভাষায় অনূদিত হয়েছে, ইংরেজিসহ বিশ্বের বহু ভাষায়ও প্রকাশিত হয়েছে। সিরাজ ছিলেন ব্যতিক্রমী ধারার সার্থক উপন্যাসলেখক। পূর্বোক্ত উপন্যাসের সঙ্গে বন্যা, নিশিমৃগয়া, নিষিদ্ধ প্রান্তর, প্রেম ঘৃণা দাহ, কামনার সুখ-দুঃখ, আসমানতারা, সীমান্ত বাঘিনী, কৃষ্ণা বাড়ি ফেরেনি, হেমন্তের বর্ণমালা, বসন্ততৃষ্ণা, নিষিদ্ধ অরণ্য, নটী নয়নতারা, প্রেমের নিষাদ, হিজলকন্যা প্রভৃতি অনেক উপন্যাস আলোচনার অপেক্ষা রাখে। তাঁর অনেক কাহিনী চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে, যেমন 'কামনার সুখ দুঃখ' উপন্যাস অবলম্বনে 'শঙ্খবিষ"। দীনেন গুপ্তের পরিচালনায় 'নিশিমৃগয়া'। উত্তমকুমার অভিনীত 'আনন্দমেলা'। অঞ্জন দাশ পরিচালনা করেছেন সিরাজের ছোটগল্প 'রানীর ঘাটের বৃত্তান্ত' অবলম্বনে ফালতু। তার "মানুষ ভূত" কাহিনী চলচ্চিত্র ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে মঞ্চে ক্রমাগত অভিনীত হয়ে চলেছে। আজ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের আজকের দিনে তিনি ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবারণ করেন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। ব্যতিক্রমী জীবনের কথাশিল্পী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ১৯৩০ সালের ১৪ অক্টোবর ভারদের মুর্শিদাবাদের খোশবাসপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম সৈয়দ আব্দুর রহমান ফেরদৌস ছিলেন অত্যন্ত পণ্ডিত মানুষ ছিলেন, ছিলেন গান্ধীবাদী, যোগ দিয়েছিলেন অসহযোগ আন্দোলনে এবং মাতা আনোয়ারা বেগম একসময় কবিতা ও গল্প লিখতেন। জন্মের আট বছরের মাথায় মাতৃহারা হন সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ ছিলেণ আট ভাইয়ের বড়। সিরাজের সব ভাই ছিলেন সাহিত্যিক গুণযুক্ত। প্রথম জীবনে বাড়ি থেকে পলাতক কিশোরের জীবন অতিবাহিত করেছেন। সিরাজ তাঁর প্রথম যৌবনে রাঢ় বাংলার লোকনাট্য "আলকাপের" সঙ্গে যুক্ত হয়ে নাচ-গান-অভিনয়ে নিমজ্জিত হয়ে মুর্শিদাবাদ, মালদহ, বীরভূম, দুম্কা প্রভৃতি অঞ্চলে ঘুরেছেন। তিনি ছিলেন 'আলকাপ' দলের "ওস্তাদ" (গুরু), নাচ-গানের প্রশিক্ষক। নিজে আলকাপের আসরে বসে হ্যাজাগের আলোয় দর্শকের সামনে বাঁশের বাঁশি বাজাতেন নিজের দল নিয়ে ঘুরেছেন সারা পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, এমনকি বিহার-ঝাড়খন্ডেও। তাই পরবর্তী জীবনে কলকাতায় বাস করলেও নিজেকে কলকাতায় প্রবাসী ভাবতেই ভালোবাসতেন। সুযোগ পেলেই বার বার মুর্শিদাবাদের গ্রামে পালিয়ে যেতেন। ঘুরতেন সেই রাখাল বালকের মাঠে, হিজলের বিলে, ঘাসবন ও উলুখড়ের জঙ্গলে, পাখির ঠোঁটে খড়কুটো আর হট্টিটির নীলাভ ডিম -সেই মায়াময় আদিম স্যাঁতসেতে জগতে। সেই পলাতক কিশোর তাঁর চরিত্রের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। সিরাজ তাঁর পিতার সঙ্গে বর্ধমানের কর্ড লাইনে নবগ্রাম রেল স্টেশনের কাছে কিছুদিন ছিলেন। সেখানে গোপালপুর মুক্তকেশী বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন। সেই নবগ্রাম গোপালপুরের প্রেক্ষাপটে তিনি লিখেছিলেন 'প্রেমের প্রথম পাঠ' উপন্যাস। এটি তাঁর লেখকজীবনের প্রথম দিকের উপন্যাস। গোপালপুর থেকে পাশ করে তিনি ভর্তি হন বহরমপুর কলেজে। ১৯৫০ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন তিনি। তখন মেদিনীপুরের পানিপারুলে কয়েক মাস সিভিল সাপ্লাই ডিপার্টমেন্টে চাকরি করেন। তারপর কলকাতায় ইত্তেফাক পত্রিকায় সহসম্পাদক হন। ১৯৬৯ সাল থেকে আনন্দবাজারে (পত্রিকায়) নিয়মিত লেখালেখির সুযোগ হয়। ১৯৭১ সালে আনন্দবাজার পত্রিকার বার্তা বিভাগে চাকরিপ্রাপ্তি। ১৯৭৯ সালে আনন্দ পুরস্কারপ্রাপ্তি। ১৯৮০ সালে চার মাসের আমন্ত্রণে আমেরিকার আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক লেখক শিবিরে যোগদান। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত অলীক মানুষ। উপন্যাসটি ১৯৯০ সালে ভুয়ালকা পুরস্কার পায়। এই ধ্রুপদী উপন্যাসটি ১৯৯৪ সালে সাহিত্য অকাদেমি ও বঙ্কিম উপন্যাস-ধন্য হয়। স্কুল পালানো মানুষটিই পেয়েছিলেন সাম্মানিক ডক্টরেট উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২০০৮ সালে অলীক মানুষ উপন্যাসটি আন্তর্জাতিক সুরমা চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত হয়। ২০০৯ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডি.লিট সম্মাননা জানায়। ২০১০ সালে তিনি বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কারে ভূষিত হন। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মান ছিল প্রবল। সংবাদপত্রে চাকরি করলেও কোনও মালিকানাগোষ্ঠীর কাছে মাথা নিচু করেন নি। বড় পত্রিকায় চাকরি করলেও তাঁর সেরা উপন্যাসগুলি ছাপা হয়েছে ছোট পত্রিকায়। লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকদের প্রতি ছিল তাঁর সস্নেহ পক্ষপাত। মিডিয়ার আলো ও প্রচারের প্রতি তাঁর আকুলতা ছিল না।

বহুমুখী সাহিত্যপ্রতিভার অধিকারী সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন স্থিতধী, নম্রভাষী, আত্মপ্রচারবিমুখ, পরিবার-পরিজনপ্রিয় ও বন্ধুবৎসল মানুষ। তাঁর পাঠকদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল মধুর। তাঁর ব্যবহারে ও আচরণে ছিল পরিশীলিত ভদ্রতা ও আন্তরিকতা। শিকড়সঞ্চারী চেতনায় আমৃত্যু। তিনি জন্মস্থান তথা গ্রামজীবনের সঙ্গে যোগ রেখেছেন।মাথা উঁচু করে থাকার দর্পী মনোভাবের জন্য তাঁকে অনেক মনোকষ্ট পেতে হলেও তিনি দমে যান নি। সাধারণ জীবনের শরিক হওয়ার বাসনায় একদা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের দেওয়া কলকাতার সল্টলেকের বিশাল আবাসন ছেড়ে তিনি পরিচিত বেনিয়াপুকুরের ঘরোয়া পরিবেশে ফিরে এসেছেন এবং আমৃত্যু থেকেছেন। নিজের আত্মসম্মানবোধ নিয়ে প্রায় একা উন্নত গ্রীবায় ছোট ফ্ল্যাটে জীবনকে কাটিয়ে গেছেন। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রানাত হয়ে ২০১২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এই মহান সাহিত্যস্রষ্টার মহাপ্রয়াণ ঘটে কলকাতায়। পরদিন তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় আবাল্যপ্রিয় নিসর্গপ্রকৃতির জন্মস্থান খোশবাসপুরে। বাংলা সাহিত্যের বর্ণিল ব্যক্তিত্ব, বরেন্দ্র বাংলার ‘চারণ কথক’ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের আজ ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। আশৈশোব স্কুল পালানো মেধাবী ছাত্র সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৯

আতোয়ার রহমান বাংলা বলেছেন: অনেক সুন্দর হয়েছে,
ধন্যবাদ
প্রতিদিনের খবর অনলাইনে পেতে চোখ রাখুন আজকের প্রসঙ্গ তে

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাক ধন্যবাদ আতোয়ার ভাই
আপনাদের নিউজ পোর্টাল খুব পছন্দ হয়েছে।
শুভকামনা রইলো।

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৪

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: লেখাটিতে অনেক ভাল লাগল , অনেক কিছু জানলাম ধন্যবাদ ।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনার দৃষ্টিসীমানায়
লেখাটি আসার জন্য।

৩| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১১

প্রামানিক বলেছেন: সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই
শুভেচ্ছা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.