নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পন্ডিত, রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলীর ১১৪তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০২


আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পন্ডিত, বাঙালি সাহিত্যিক, রম্যরচয়িতা ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মুজতবা আলী। সৈয়দ মুজতবা আলীর জীবন বিচিত্র অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। জীবন নামক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলেন, সেগুলোকেই তিনি সাহিত্যে রূপদান করেন। একাধারে তিনি ভ্রমণ-সাহিত্য রচয়িতা, ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও প্রবন্ধকার। তাঁর বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমনকাহিনী। এছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। সাহিত্যকর্মে বিশেষ অবদানের জন্য সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৪৯ সালে নরসিং দাস পুরস্কার, লাভ ১৯৬১ সালে আনন্দ পুরস্কার এবং ২০০৫ সালে মরনোত্তর একুশে পদক লাভ করেন। ১৯০৪ সালের আজকের দিনে সৈয়দ মুজতবা আলী সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। আজ এই মহান লেখকের ১১৪তম জন্মবার্ষিকী। জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।

সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯০৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সিলেট জেলার অন্তর্গত (বর্তমানে ভারতের আসামে) করিমগঞ্জ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সৈয়দ সিকান্দার আলী। পিতার বদলীর চাকরি হওয়ায় মুজতবা আলীর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী, চঞ্চল ও পড়ুয়া। ১৯১৯ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেট সফরে এলে সৈয়দ মুজতবা আলী কবির বিশেষ অনুগ্রহ লাভ করেন এবং তার ভক্ত হয়ে যান। তিনি শান্তিনিকেতনে পড়ালেখায় আগ্রহী ছিলেন এবং এ জন্য তিনি ১৯২১ সালে বিশ্বভারতীতে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথম দিকের ছাত্র। এখানে তিনি সংস্কৃত, ইংরেজী, আরবী, ফার্সি, হিন্দী, গুজরাটি, ফ্রেঞ্চ, জার্মান ও ইটালিয়ান ভাষাশিক্ষা লাভ করেন। শান্তিনিকেতনে পাঁচ বছর অধ্যয়নের পর ১৯২৬ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। আলীগড়ে অধ্যয়নকালে তিনি আফগানিস্তানের শিক্ষা বিভাগে চাকরি নিয়ে কাবুল গমন করেন। পরে ১৯২৯ সালে তিনি উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য জার্মানিতে যান।

কর্ম জীবনে সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৩৫ সালে বরোদার মহারাজার আমন্ত্রণে বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৪-৪৫ সালে সৈয়দ মুজতবা আলী আনন্দবাজার পত্রিকায় কিছু দিন সাংবাদিকতা করেছেন এবং সত্যপীর, ওমর খৈয়াম, টেকচাঁদ, প্রিয়দর্শী ছদ্মনামে আনন্দবাজার, দেশ, সত্যযুগ, শনিবারের চিঠি, বসুমতী, প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখতেন। ১৯৪৮ সালে সিলেটের কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের আলোচনা সভায় পূর্ববঙ্গের রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি উর্দু ভাষার সপক্ষ শক্তির হাতে নাজেহাল হয়েছিলেন। ১৯৪৯ সালে বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদান করেন সৈয়দ মুজতবা আলী। প্রিন্সিপালের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে তিনি ভারতে চলে যান এবং কিছু দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পরে উপমহাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মালানা আবুল কালাম আজাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইন্ডিয়ান ‘কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স’-এর সচিব পদে নিযুক্ত হন। অত:পর তিনি ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’-এর স্টেশন ডাইরেক্টর পদে কিছু দিন চাকরি করেন এবং সেই চাকরিতেও ইস্তফা দেন ১৯৫৬ সালে। ১৯৬১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ফিরে যান। অতঃপর তিনি বিশ্বভারতীতে কয়েক বছর অধ্যাপনা করেন

সৈয়দ মুজতবা আলী বিচিত্র রসের নানান গল্প লিখেছেন। কখনো হাস্যরসের গল্প, কখনো করুণ রসের গল্প, কখনো মধুর রসের মিষ্টি প্রেমের গল্প, আবার কখনো বা ভয়ঙ্কর রসের গল্প তিনি লিখেছেন। সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন লঘু নিবন্ধকার তথা রম্যপ্রবন্ধ রচনায় ছিলেন বিশেষভাবে পারদর্শী। তিনি ভ্রমণ-সাহিত্য রচয়িতা এবং রম্যরসিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। সামগ্রিকভাবে তিনি উভয় বঙ্গে সমান জনপ্রিয় ও সমাদৃত লেখক ছিলেন। বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মঃ

ভ্রমনকাহিনীঃ ১। দেশে বিদেশে (১৯৪৯), ২। জলে ডাঙ্গায় (১৯৬০)
উপন্যাসঃ ১। অবিশ্বাস্য (১৯৫৪), ২। শবনম (১৯৬০), ৩। শহরইয়ার (১৯৬৯)
ছোটগল্পঃ ১। চাচা কাহিনী (১৯৫২), ২। টুনি মেম (১৯৬৪)
রম্যরচনাঃ পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২), ২। ময়ূরকন্ঠী (১৯৫২)
গল্প মালাঃ ১। রাজা উজির, ২। ধূপছায়া, ৩। বেচে থাক সর্দি-কাশি, ৩। পুনশ্চ, ৪। পাদটীকা, ৫। তীর্থহীনা, ৬। কর্ণেল, ৭। রাক্ষসী, ৮। বিধবা বিবাহ, ৯। ক্যাফে-দে-জেনি, ১০। মা জননী, ১১। বেল তুলে দু-দু'বার, ১২। স্বয়ংবরা এবং ইংরেজীঃ দ্য অরিজিন অব খোজাস এ্যান্ড দেয়ার রিলিজিয়াস’ ও রস-গোল্লা (ইংরেজি) ইত্যাদি।

সৈয়দ মুজতবা আলী সম্পর্কে একটি মজার তথ্য। বিশ্বভারতীতে পড়াশুনা করার সময় একবার রবীন্দ্রনাথের হাতের লেখা নকল করে ভুয়া নোটিশ দিলেন, “আজ ক্লাশ ছুটি” .. ব্যাস যায় কোথায় সবাই মনে করল রবীন্দ্রনাথ ছুটি দিয়ে দিয়েছেন। “সব কিছু যে পণ্ড করে সে পণ্ডিত” এটা অবশ্য সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষ্য। ১৮টি ভাষা যার দখলে, যে ভাষায় তিনি কথা থেকে শুরু করে লিখতে পর্যন্ত পারেন, রাশিয়ান ভাষায় “প্রেম” উপন্যাস এর বাংলা অনুবাদ, জার্মান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট, বিশ্বভারতী থেকে স্নাকত, আল-আজহারে পড়াশুনা, তুলনাত্নক ধর্মচর্চা যার নখদর্পনে, গীতা যার সম্পূর্ণ মুখস্ত আর রবীন্দ্রনাথের গীতিবিতান টপ টু বটম ঠোঠস্ত তাকে যদি পণ্ডিত বলা হয় তাহলে কি আপত্তির থাকতে পারে?

অসাধারণ প্রতিভাধর রম্য রচয়িতা এবং পণ্ডিত সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মারা যাওয়ার ৩১ বছর পর অর্থাৎ ২০০৫ সালে তাকে একুশে পদক দেয়া হয়। ১১৪তম জন্মবার্ষিকী।বাংলা সাহিত্যের অন্যতম রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলীর জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নুর মোহাম্মদ নুরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১১

সনেট কবি বলেছেন: তিনি আমার প্রিয় লেখক।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আমারও অনেক প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় লেখক,
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ কবি।

২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: শ্রদ্ধেয় সৈয়দ মুজতবা আলীর ১১৪ তম জন্মবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।


ধন্যবাদ নূর মোহাম্মদ ভাই।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আশরাফুল ভাই
শ্রদ্ধায় সৈয়দ মুজতবা আলীকে স্মরণ করার জন্য।

৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৭

ঢাকার লোক বলেছেন: উনি আমার প্রিয় লেখকদের একজন, উনি ছিলেন উভয় বাংলায় সমভাবে সমাদৃত। আল্লাহ উনাকে জান্নাত দান করুন !!

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ ঢাকার লোক!
আল্লাহ তাঁকে জান্নাত দান করুন !!
আমিন

৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৯

রাকু হাসান বলেছেন: শবনম লেখক কে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখবে। জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাকু হাসান ভাই
কিংবদন্তি লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর
জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।

৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: ১৯৪৭ সালের ৩০শে নভেম্বর এক সাহিত্য সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন- ‘পৃথিবীর কোন শিক্ষিত সভ্য দেশ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য মাধ্যমে শিক্ষা দিচ্ছে? এমন কোন দেশ আছে সেখানকার লোক আপন মাতৃভাষাকে অবমাননা করে আপন দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে?’

৬| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



সৈয়দ মুজতবা আলী ছিলেন আমাদের পরিবারের নিকটাত্মীয়; করিমগঞ্জ শহরে আমার দাদার সাথে উনাদের ব্যবসা ছিল; শুনেছি বহুবার তিনি আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন৷আমাদের বাড়ি থেকে করিমগঞ্জের দূরত্ব ৭ কিলোমিটার হলেও যোগাযোগের জন্য পাকা রাস্তা না থাকায় হেঁটেই আসা যাওয়া করতেন৷তিনি খুব ভোজন রসিক ছিলেন; এছাড়া তিনি মানুষকে মাতিয়ে রাখতে পারতেন; সারাক্ষণ তাঁর মুখে হাঁসি লেগে থাকতো৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.