নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০২


বিখ্যাত বাঙালি ভারততত্ত্ববিদ, সংস্কৃত বিশারদ, সংরক্ষণবিদ ও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। তার প্রকৃত নাম শরৎনাথ ভট্টাচার্য। শৈশবে 'হর' বা শিবের প্রসাদে জটিল অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠায় নাম বদলে রাখা হয় হরপ্রসাদ। তিনি ছিলেন একাধারে শিক্ষাবিদ, গবেষক, বহুভাষাবিদ, পুঁথি-সংগ্রাহক-বিশ্লেষক-সম্পাদক, অনুবাদক, শিলালেখ ও তাম্রলিপির পাঠোদ্ধারকারী এবং ঐতিহাসিক। তার সম্পাদিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রকাশিত ‘হাজার বছরের বাঙ্গালা ভাষার বৌদ্ধ গান ও দোহা’ (প্রকাশকাল : ১৯১৬)। তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের আবিষ্কর্তা। ১৯০৭ সালে নেপাল থেকে বাংলাসাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে পরিচিত ‘চর্য্যাচর্য্য বিনিশ্চয়’ বা ‘চর্যাপদ’ তিনিই আবিষ্কার করেন। বাংলাসাহিত্য যে হাজার বছরের পুরনো, তা হরপ্রসাদের এই আবিষ্কারের পথ ধরেই প্রমাণিত হয়। গবেষণা এবং পুঁথি-আবিষ্কার ও সম্পাদনা ছাড়াও তিনি উপন্যাস লিখেছেন (‘কাঞ্চনমালা’, ১৯১৬; ‘বেনের মেয়ে’, ১৯২০); কয়েকজন প্রাচীন মনীষীর জীবন ও কর্মের ইতিবৃত্ত রচনা করেছেন; মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর নাট্যরূপ দিয়েছেন। এছাড়াও তিনি সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত রামচরিতম্ বা রামচরিতমানস পুঁথির সংগ্রাহক। জীবনে হরপ্রসাদ বহু বিদ্যাপ্রতিষ্ঠানের সম্মাননা পেয়েছেন, যার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য- ১৮৮৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন ফেলো মনোনয়ন; ১৮৯৮ সালে সরকারের দেওয়া সম্মান ‘মহামহোপাধ্যায়’ উপাধি (মহারানী ভিক্টোরিয়ার ৬০তম রাজ্যাঙ্কে প্রবর্তিত); ১৯১১ সালে ‘সি.আই.ই’ উপাধি; ১৯২১ সালে ইংল্যান্ডের রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটির অনারারি মেম্বার মনোনয়ন; ১৯২৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ডি.লিট এবং ১৯২৮ সালে পঞ্চম ওরিয়েন্টাল কনফারেন্সের (লাহোর) মূল সভাপতি। আজ ভারততত্ত্ববিদ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৩১ সালের আজকের দিনে তাঁর মৃত্যু হয়। প্রাচ্যবিদ্যা বিশারদ, এবং সংস্কৃতের পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

হরপ্রসাদ ভট্টাচার্য (শাস্ত্রী) ১৮৫৩ সালের ৬ ডিসেম্বর খুলনা জেলার কুমিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার আদি নিবাস ছিল ভারতের চব্বিশপরগনার নৈহাটিতে। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর হরপ্রসাদ কলকাতার সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল ও প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনা করেন। কলকাতায় তিনি তাঁর বড়দা নন্দকুমার ন্যায়চঞ্চুর বন্ধু তথা বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ও পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে থাকতেন। ১৮৭১ সালে হরপ্রসাদ প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৭৩ সালে পাস করেন ফার্স্ট আর্টস পরীক্ষা। ১৮৭৬ সালে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৮৭৭ সালে সংস্কৃতে সাম্মানিক হন। পরে এম.এ. পরীক্ষায় পাস করে তিনি 'শাস্ত্রী' উপাধি লাভ করেন। উক্ত পরীক্ষায় হরপ্রসাদই ছিলেন প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ একমাত্র ছাত্র। পারিবারিক ধারা অনুসরণ করে ১৮৭৮ সালে হরপ্রসাদ হেয়ার স্কুলে ট্রানস্লেশন শিক্ষক হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। একই বছর তিনি কিছুদিন লখনৌ ক্যানিং কলেজে অধ্যাপনা করেন। পরে তিনি ১৮৮৩ সালে কলকাতার সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপক ও একই সাথে বঙ্গীয় সরকারের সহকারী অনুবাদক হিসেবে কাজ করেন। ১৮৮৫ সালে হরপ্রসাদের সহযোগিতায় রমেশচন্দ্র দত্ত ঋগ্বেদসংহিতা-র অনুবাদ প্রকাশ করেন। রমেশ দত্তের প্রভাবে হরপ্রসাদ অর্থনীতি বিষয়ক ইতিহাসেও আগ্রহী হন এবং পাঁচটি প্রবন্ধ রচনা করেন, যার মধ্যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে লেখা ‘নূতন খাজানা আইন সম্বন্ধে কলিকাতা রিভিউর মত’ শীর্ষক প্রবন্ধটি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। সংস্কৃত কলেজে অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে ১৮৮৬ থেকে ১৮৯৪ পর্যন্ত তিনি বেঙ্গল লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৯৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজে সংস্কৃত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এবং ১৯০০ সালে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ হন। ১৯০৮ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। অবসর জীবনে তিনি কিছুদিন সরকারের ‘ব্যুরো অব ইনফরমেশন’-এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২১ সালের ১৮ জুন তিনি নব প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক পদে যোগদান করেন এবং ১৯২৪ সালের ৩০ জুন এখান থেকে অবসর নেন । স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতবিরোধ ও বন্ধুত্ব বিচ্ছেদের কারণে আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সুযোগ পাননি।

হরপ্রসাদের লেখক জীবনের বিস্তার প্রায় ৫৫ বছর। তাঁর সাহিত্য-জীবন বঙ্কিমযুগ থেকে রবীন্দ্রযুগ অবধি প্রসারিত। একটা সময়ের পরে বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যাদর্শ থেকে হরপ্রসাদ সরে আসেন। বঙ্কিমচন্দ্র সাহিত্যকে ধর্মপ্রচারের মাধ্যম করে তোলায় হরপ্রসাদ সরাসরি আপত্তি জানান। সংস্কৃত সাহিত্য, বিশেষভাবে কালিদাসের কাব্য-নাটকের মূল্যায়নে তাঁর এই আধুনিক সাহিত্যরুচির যথার্থ পরিচয় মেলে। প্রাচীন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের পরিচয় উদ্ধারে হরপ্রসাদের অবদান দৃষ্টান্তমূলক। তিনি প্রায় দশ হাজার পুঁথির বিবরণাত্মক সূচি প্রণয়ন করেন, যা এগারো খন্ডে প্রকাশিত হয়। রাজস্থান অঞ্চল থেকে তিনি ভাট ও চারণদের পুঁথি সংগ্রহ করেন। সংস্কৃত পুঁথি সন্ধানের সূত্রেই তাঁর আগ্রহে প্রাচীন বাংলা পুঁথি সংগ্রহের কাজ শুরু হয় এবং এ বিষয়ে তাঁকে সাহায্য করেন দীনেশচন্দ্র সেন এবং মুনশি আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। এশিয়াটিক সোসাইটির গবেষণা প্রকল্পের মধ্যে হরপ্রসাদই প্রথম ‘বাংলা পুঁথি সন্ধান ও বিবরণ প্রকাশ’ কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করেন। ১৯১৬ সালে চর্যাপদের পুঁথি নিয়ে রচিত তাঁর গবেষণাপত্র হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোঁহা নামে প্রকাশিত হয়। হরপ্রসাদ অনেক প্রাচীন গ্রন্থ সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বহু গবেষণাপত্রও রচনা করেন। তিনি ছিলেন এক খ্যাতনামা হিস্টোরিওগ্রাফার। তাঁর বিখ্যাত বইগুলি হল বাল্মীকির জয়, মেঘদূত ব্যাখ্যা, বেণের মেয়ে (উপন্যাস), কাঞ্চনমালা (উপন্যাস), সচিত্র রামায়ণ, প্রাচীন বাংলার গৌরব ও বৌদ্ধধর্ম। তাঁর উল্লেখযোগ্য ইংরেজি রচনাগুলি হল মগধান লিটারেচার, সংস্কৃত কালচার ইন মডার্ন ইন্ডিয়া ও ডিসকভারি অফ লিভিং বুদ্ধিজম ইন বেঙ্গল। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের আবিষ্কর্তা হরপ্রশাদ ১৯৩১ সালের ১৭ নভেম্বর মৃত্যু বরণ করেন। আজ তার ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী। সংস্কৃতের পন্ডিত মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নুর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:১১

নজসু বলেছেন:



শ্রদ্ধা।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ সুজন ভাই।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ রাজীব ভাই
নিয়মিত হাজিরা দেবার জন্য।

৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৫

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: পেপারে একটা আর্টিকেল দেখেই ভেবেছিলাম, আপনি লিখবেন খালু :D

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
তোমার ইনটিউশন ভালো।

৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৬

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: এম এ পরীক্ষায় পাস করলেই শাস্ত্রী টাইটেল পাওয়া যেত :|| ?

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
জ্বি, ইতিহাস তাই বলে !!

৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪২

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। আপনাকে শুভ কামনা।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ প্রভা
উৎসাহ ব্যাঞ্জক মন্তব্যের জন্য।

৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:২৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ধন্যবাদ মুল্যবান লেখাটি উপস্থাপনের জন্য ।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচয়িতা হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মৃত্যুবার্ষিকীতে রইল শ্রদ্ধাঞ্জলি ্

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.