নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংবাদপত্রের দুঃসময়ঃ বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের হত্যার হার তুলনামূলক কমলেও বেড়েছে গ্রেফতার, হয়রানির পরিমাণ

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:০৭


সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতা দুটো বিষয় যে কোনো রাষ্ট্র বা সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলো ছাড়া রাষ্ট্র-সমাজ অচল। পৃথিবীতে রাষ্ট্রিয় উত্থান-পতন এবং যুদ্ধ বিগ্রহের পেছনে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকরাই অগ্রণী ভুমিকা রেখে চলেছে। এই ভারতবর্ষ থেকে বৃটিশদের তাড়ানো থেকে শুরু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত সবখানে সংবাদপত্র আর সাংবাদিকদের কলমের ভূমিকা ছিল অন্যতম। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, ‘অসির চেয়ে মসি বড়’। কথাটি কিন্ত এমনি এমনি চালু হয় নি। সাংবাদিকরা যেখানে কলম ধরেছেন, সেখানে হয় সাম্রাজ্য ধসে পড়েছে না হয় নতুন সাম্রাজ্যের উত্থান হয়েছে। আজকের তথ্য প্রযুক্তির যুগে যত সহজে সংবাদ বের হচ্ছে পূর্বে এমনটি ছিল না। সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা ছিল রীতিমতো কঠিন। বিশেষ করে এ ভারতবর্ষে সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়েছে। ১৭৮০ সালে জেমস হিকি নামে একজন ইংরেজ প্রথম ‘বেঙ্গল গেজেট’ পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। এর প্রায় ৮০ বছর পূর্বে ইংল্যান্ডে দৈনিক পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। ভারতবর্ষেও সাংবাদিকতার পূর্বের ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। বৃটিশ রাজ হঠাতে সাংবাদিকরা কলম ধরতে গিয়ে অনেকে নাজেহাল হয়েছেন চরমভাবে। উপরের কথাগুলো এ জন্য বললাম সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা কোন সময় নিরাপদ ছিল না। রাষ্ট্র, সমাজ বা প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কলম ধরলে সংবাদপত্র বা সাংবাদিকরা হুমকির মূখে পড়েন। বৃটিশ ভারতের সাংবাদিকরা কলম ধরে দীপান্তরিত হলেও এখনকার সাংবাদিকদের অনেকে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে নির্মম হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে তুরস্কে। তুরস্কের সৌদি দুতাবাসের ভেতরে টুকরো টুকরো করে কেটে সৌদি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাসোগীতে হত্যা করা হয়েছে। বিশে^ তোলপাড় হলেও এ হত্যাকান্ডের পেছনে যে সৌদি রাজপরিবার জড়িত তা প্রকাশ্যে উঠে এসেছে। জামাল খাসোগী সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ট মিত্র ছিলেন, সেই হিসেবে রাজপরিবারের অনেক গোপন কথা তিনি জানতেন। যেমন ভারতবর্ষের বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গোপন কথা জেনে হুমকির মূখে পড়েছিলেন বাকিংহাম। বাকিংহাম হত্যাকান্ডের শিকার হতে বেচেঁ গেলেও রক্ষা পায় নি খাসোগী। তাই সাংবাদিকতা ঝুঁিক যেমন রয়েছে তেমনি এ ঝুঁকি এড়ানো কোনক্রমে সম্ভব নয়। সব সময়, সব কালে ঝুঁকি থাকবে। বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় নানা ধরনের ঝুকিঁ প্রায় সময় সাংবাদিকদের তাড়িয়ে বেড়ায়। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের হত্যার হার তুলনামূলক কমলেও বেড়েছে গ্রেফতার, হয়রানির পরিমাণ।
২০১৯ সালে এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কাজ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ৪৯ সাংবাদিক। গত ১৬ বছরে এই সংখ্যা সর্বনিম্ন। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে। সংবাদকর্মীদের নিয়ে কাজ করা প্যারিসভিত্তিক অলাভজনক এ সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, গত দুই দশকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৮০ জন সাংবাদিক পেশাগত কাজে নিহত হয়েছেন। ২০১৮ সালেও বিশ্বজুড়ে ৮৭ সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে এসে এই সংখ্যা ৪৪ শতাংশ কমেছে। চলতি বছর নিহত সাংবাদিকদের মধ্যে ৪৬ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। এ বছর মেক্সিকো, সিরিয়া, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। সংস্থাটি এই দেশগুলোকেই সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বর্তমানে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ফরাসি ভাষায় রিপোর্টার্স সান ফ্রন্টিয়ার্স (আরএসএফ) নামে পরিচিত সংস্থাটি সাংবাদিকদের নিহতের হার কমার কারণও উল্লেখ করেছে। তারা বলছে, গত এক বছরে যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে সাংবাদিকরা কম কাজ করেছেন। সিরিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যারা গেছেন, তাদের প্রস্তুতি ছিল বেশি। আফগানিস্তানের মতো দেশেও সাংবাদিকরা অনেক বেশি সতর্ক হয়ে কাজ করছেন। একবারে অনেকটা রাস্তা একা পাড়ি দিচ্ছেন না। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর এক দেশ থেকে অন্য দেশে কাজ করতে গিয়ে কার্যত একজন সাংবাদিকেরও মৃত্যু হয়নি। গত এক দশকে যে সংখ্যাটা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে সংস্থাটি বলছে, মৃত্যুর হার কমলেও দেশে দেশে সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচার কমেনি। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর সবচেয়ে বেশি সাংবাদিককে বিভিন্ন কারণে আটক করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ৩৮৯। এক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে চীন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আটক সাংবাদিকের সংখ্যা ১২০। শুধু চীন নয়, তথাকথিত গণতান্ত্রিক দেশেও সাংবাদিকদের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে সরকার। ভারতেও গত কয়েক বছরে এই অভিযোগ বারবার উঠেছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেও সাংবাদিকদের কাজে বাধা দেয়ার হার বেড়েছে। পিছিয়ে নেই লাতিন আমেরিকাও। সেখানেও বারবার সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছে।

এডমান্ড বার্ক বৃটিশ রাজনীতিবিদ, একইসাথে একজন লেখকও। প্রায় ১৫০ বছর আগে সংবাদপত্র নিয়ে হাউস অব কমন্স এ দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, পার্লামেন্টের তিনটি রাষ্ট্র রয়েছে। কিন্ত ঐ যে দূরে সাংবাদিকদের আসনসারি, সেটি হচ্ছে পার্লামেন্টের ‘চতুর্থ রাষ্ট্র’ বা ফোর্থ এস্টেট এবং আগের তিনটি রাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন ডিলানো রুজভেল্ট এর উক্তি ছিল এ রকম, ‘যদি কখনো সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কার্যকরভাবে খর্ব করা হয়, তবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শিক্ষার স্বাধীনতা, বক্তব্য রাখার এবং জনসমাবেশের অধিকার প্রভৃতি গণতান্ত্রিক মৌল অধিকার অর্থহীন হয়ে পড়বে। সাংবাদিকরা যেখানে কলম ধরেছেন, সেখানে হয় সাম্রাজ্য ধসে পড়েছে না হয় নতুন সাম্রাজ্যের উত্থান হয়েছে। আজকের তথ্য প্রযুক্তির যুগে যত সহজে সংবাদ বের হচ্ছে পূর্বে এমনটি ছিল না। সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা ছিল রীতিমতো কবাদপত্র এবং সাংবাদিকতা দুটো বিষয় যে কোনো রাষ্ট্র বা সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এগুলো ছাড়া রাষ্ট্র-সমাজ অচল। পৃথিবীতে রাষ্ট্রিয় উত্থান-পতন এঠিন। বিশেষ করে এ ভারতবর্ষে সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক চড়াই উৎরাই পার হতে হয়েছে। ১৭৮০ সালে জেমস হিকি নামে একজন ইংরেজ প্রথম ‘বেঙ্গল গেজেট’ পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। এর প্রায় ৮০ বছর পূর্বে ইংল্যান্ডে দৈনিক পত্রিকার প্রকাশনা শুরু হয়। ভারতবর্ষেও সাংবাদিকতার পূর্বের ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। বৃটিশ রাজ হঠাতে সাংবাদিকরা কলম ধরতে গিয়ে অনেকে নাজেহাল হয়েছেন চরমভাবে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘দ্য কমিটি টু প্রটেক্ট র্জানালিস্ট (সিপিজে)’ এর রির্পোট মতে, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি হতে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশে^ও বিভিন্ন দেশে ৫৩জন সাংবাদিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। বেশিরভাগ সাংবাদিককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ সময়ে গ্রেফতার হয়েছেন আড়াই’শ সাংবাদিক। গত ২০১৭ সালে ৪৭ সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৮ জনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সব দেশে কোন না কোনভাবে সাংবাদিকরা হেনস্থার শিকার। হয় সরকারী দলের হাতে, না হয় রাষ্ট্রযন্ত্রের হাতে সাংবাদিকরা অহরহ হামলার শিকার হচ্ছে। ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সমালোচনা করায় কিশোরচন্দ্র নামের একজন টেলিভিশন সাংবাদিককে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। মিয়ানমার জান্তার বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ করায় রয়টারের দু’জন সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সোয়েকে গ্রেফতার করে বিচার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে সম্প্রতি তথ্য প্রযুক্তি আইনে আন্তর্জাতিক ফটো সাংবাদিক শহীদুল আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে জামিনে বেরিয়ে এলেও তার বিরুদ্ধে মামলা চলছে। চীনে আন্তর্জাতিক ফটো সাংবাদিক লু গুয়াংকে আটক করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মারিয়া রেসা নামের এক সাংবাদিককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির হত্যাকান্ডে সোচ্চার হলেও তার দেশে ২০১৮ সালে ৬৮ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশাপাশি মিসরে ২৫ জন, সৌদিআরবে ১৬ জন, ইরিত্রিয়ায় ১৬ জন, আজারবাইজানে ১০ জন, ভিয়েতনামে ১১ জনসহ ২৫১ জন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুসলিম দেশগুলোতে আশঙ্কাজনকহারে সাংবাদিকদের গ্রেফতার হয়রানি চলছে। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত সারা বিশ্বে সাংবাদিকরা নানা ধরনের হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। ফলে হুমকির মূখে পড়ে অনেকে সাংবাদিকতাবপেশায় ইতি টানছেন। অন্যদিকে অব্যাহত তথ্য প্রযুক্তির দাপটে সাংবাদিকতা পেশায় ক্রান্তিকাল শুরু হয়েছে।

বর্তমানে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। মুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রিয় যন্ত্র কেড়ে নিচ্ছে। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কলেবর দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। তথ্য প্রযুক্তি বিকাশের সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রিন্ট মিডিয়ার অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সারা বিশ্বে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ক্রান্তিকাল চলছে। সেটা উন্নত দেশ হোক বা অনুন্নত। সব দেশের সাংবাদিকরা অহরহ চাকরি হারাচ্ছে। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন যত হচ্ছে ততই সাংবাদিকতা পেশা হুমকির মূখে পড়ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সংবাদপত্র। বিশেষ করে প্রিন্ট মিডিয়ার অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। ২০১৭ অস্ট্রেলিয়াতে যখন সাংবাদিকদের চাকরির উপর খড়গ নেমে আসে তখন ‘দি গার্ডিয়ান’ এ একটি রিপোর্ট হয়েছিল। সাংবাদিক মার্গারেট সাইমনস এর ‘জার্নালিজম ফেইসেস এ ক্রাইসিস ওর্য়াল্ড ওয়াইড, উই মাইট বি এন্টারিং এ নিউ ডার্ক এইজ’ শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে বিশ^ব্যাপি সাংবাদিকদের চাকরি হারানোর প্রতিযোগিতা চলছে। তথ্য প্রযুক্তি কেড়ে নিচ্ছে সাংবাদিকতার প্রান। এ যেন অন্ধকার যুগের ছায়া। উন্নত, উন্নয়নশীল ও দরিদ্র সব দেশেই প্রযুক্তির ছোয়ায় পাল্টে যাচ্ছে সাংবাদিকতার সার্বিক চিত্র। একদিকে কমছে সাংবাদিকদের চাকরি, অন্যদিকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক সংবাদপত্র। লোকসানের কারনে গুটিয়ে নিতে হচ্ছে সংবাদপত্র কোম্পানি। ছাটাই চলছে সব দেশে। ছোট হয়ে আসছে কলেবর। একই সাথে তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবের ঢেউয়ে বাড়ছে অপসাংবাদিকতা। বিশেষ করে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোতে এমন এক ধরনের সাংবাদিকতার কাজ চলছে যাদের সাথে সাংবাদিকতা পেশার বিন্দুমাত্র সর্ম্পক নেই। ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব এক্ষেত্রে ভুমিকা রাখছে। যে যেভাবে পারছে সংবাদচিত্র গণমাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে। এসব সংবাদের কোন গভীরতা নেই। হালকা বা চটুলভাবে উপস্থাপন কওে বাহ্বা নেয়ার চেষ্টা চলছে। ফলে সাংবাদিকতা শিল্পের সম্মানের জায়গাটি মূখ থুবড়ে পড়ছে। ফেসবুক, গুগল বা ইউটিউব নির্ভর সাংবাদিকতা বেড়ে যাওয়ার কারনে সংবাদপত্র প্রকাশনার সাথে জড়িত মালিকপক্ষ একের পর এক কর্মী ছাটাইয়ে ব্যস্ত। ফলে গত দু’দশক ধরে ধীর গতিতে সংবাদপত্র শিল্পের মরণদশা চলছে। এটি কোথায় গিয়ে দাড়ায় এ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। বর্তমান বিশ্বে সংবাদপত্রের জায়গা দখল নিচ্ছে অনলাইন সাংবাদিকতা। কি এই অনলাইন সাংবাদিকতা। এটি আসলে এমন এক ধরনের সংবাদপত্র যা ইন্টারনেটকে কেন্দ্রকরে গড়ে উঠেছে। অনলাইন সংবাদপত্র ট্র্যাডিশনাল সংবাদপত্রের মতোই। ফিচার, ছবি, অডিও, ভিডিও সব কিছুর প্রকাশ থাকে এ অনলাইন সংবাদপত্র ঘিরে। ১৯৯০ সালের দিকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (ডব্লিও ডব্লিও ডব্লিও)-নামের একটি শব্দগুচ্ছের প্রচার প্রসার বাড়তে থাকে। ক্রমশ এর জনপ্রিয়তা এমন জায়গায় গিয়ে দাড়ায়, যার ফলে সারা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ইন্টারনেট জগত বা তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। ই-মেইল থেকে গুগল, ফেসবুক এবং অনলাইন জগতে সব কিছু ঢুকে পড়ে। শুরু হয় অনলাইন সাংবাদিকতার পথচলা। তবে অনলাইন সংবাদপত্রের যে ইতিহাস জানা যায়, তাতে দেখা যায় ১৯৭৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ইলিনয়েস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ‘নিউজ রিপোর্ট’ নামে প্রথম একটি অনলাইন নিউজপোর্টাল বের হয়। তাদের সাফল্য দেখে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রগুলো অনলাইন সংস্করণ চালু করতে শুরু করে। যুক্তরাজ্য থেকে ‘সাউথপোর্ট রিপোর্টার’ নামের একটি অনলাইন তুলনামূলকভাবে আধুনিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের সংবাদ জগতও ধীরে ধীরে অনলাইনে ঢুকে যেতে থাকে। গত ২০০৪ সালে বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ২৪.কম এর যাত্রা শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় গত এক যুগ ধরে অনলাইনের যাত্রা থেমে যায়নি। তথ্য প্রযুক্তির জোয়াওে এখন মানসম্পন্ন এবং মানহীন উভয় অনলাইন সংবাদপত্র দেশ জুড়ে ছড়িয়ে আছে। তাদের এ জোয়ারের কারনে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াও বাই প্রোডাক্ট হিসেবে অনলাইন ভার্সন চালু করে দিয়েছে। তবে ইন্টারনেট আর অনলাইন সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তার লাভের সময়ের এই প্রজন্মকে নিয়ে একটি কথা প্রচলিত আছে, তারা সংবাদপত্র পড়ে না। এমনকি পাঠককে আকৃষ্ট করতে সংবাদপত্রগুলোর আকার ছোট, প্রতিবেদন পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত করা হলেও আকৃষ্ট হচ্ছে না প্রজন্ম। সবচেয়ে মজার বিষয় যে, যে পত্রিকাগুলো অনলাইনে পাঠক আগে ফ্রি তে পড়তো এখন তা আর হচ্ছে না। সাবস্ক্রাইব করে টাকা দিয়ে এগুলো পড়তে হচ্ছে। আগামিতে বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোও আর অনলাইনে ফ্রি তে পড়া যাবেনা। সাবস্ক্রাইব করে টাকা দিয়ে এগুলো পড়তে হবে।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: সংবাদ পত্রের মান উন্নত করতে হবে। স্বতন্ত্র পত্রিকা তো নাই। নিরপেক্ষ মানুষ যেমন নাই, পত্রিকাও নাই।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এখন নিরপক্ষ খুজতে গেলে
লোম বাছতে কম্বল উধাও
হবার সম্ভবনা প্রচুর।
তবে নিরপেক্ষ হতে হলে
মেধার প্রয়োজন। শিক্ষিত
হলেই মেধা থাকবে তার
কোন মানে নাই।

২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:২৮

তারেক ফাহিম বলেছেন: সাংবাদিক নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে সর্তকর্তা জরুরী।

বর্তমান গনমাধ্যম কর্মীগুলো বেশির ভাগই কপি-পেস্ট।

২ মিনিটে সংবাদ রেডি করে পাঠায়!
ঘটনাস্থলে না গিয়েও ঘরে বসে যার যার মত করে সংবাদ তৈরি করে বেড়াচ্ছেূ।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৩১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সেই জন্যই সম্মান ও নাই।
আর সম্মান নাই বলে দ্বায়িত্বও
নেয়না কেউ। তবে 'গণমাধ্যমকে
বাদ দিয়ে কোনো দেশ উন্নতির
শিখরে পৌঁছাতে পারে না'
সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও
প্রশাসন একে অপরের পরিপূরক।
সবার উদ্দেশ্য সমাজ ও
দেশের কল্যাণে কাজ করা।

৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৩৪

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:





সাংবাদিক গ্রেফতার কেনো হয়েছেন? এরা কোন ধরণের সাংবাদিক? সাংবাদিকতা করতে হলে সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করতে হয়। আমার মনে হয়না এরা একজনও সাংবাদিকতায় পড়ালেখা করে এসেছেন। এই দেশে বেশী পত্রিকা হয়ে গেছে পত্রিকা অফিস বন্ধ করে চা সিঙ্গারা চপ এর দোকান দেওয়া উচিত - এরা বাংলাদেশে আনাচে কানাচে গড়ে উঠা বিশ্ববিদ্যালয়ে চা সিঙ্গারা চপ সরবরাহ করবে - সেটাই ভালো হবে।

সংবাদপত্র ভর্তি থাকে গুজব সংবাদ। এদের গ্রেফতার না করে ঠেঙ্গার চরে নির্বাসন দেওয়া উচিত।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৩৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ঠাকুর ভাই চোখ কান থাকলেই যেমন সবাই মানুষ হয়না
তেমনি কলম হাতে নিলেই সবাই সাংবাদিক হয়না। তবে
বাংলাদেশের সংসদে পাশ হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা
আইনে কোন পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশকে গ্রেফতারের
যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সেটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতা
মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করবে ।
সাংবাদিকরা বলছেন পুলিশ অফিসারের হাতে
এই পরিমাণ নির্বাহী ক্ষমতা থাকলে সাংবাদিকদের
কাজের স্বাধীনতা খর্ব ও নিরাপত্তা ব্যাহত হওয়ার
পাশাপাশি হয়রানিরও সম্ভাবনা থাকে।

৪| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


সাংবাদিক হওয়ার জন্য বিশ্ব সম্পর্কে আধুনিক জ্ঞান থাকতে হয়: এনালাইটিক্যাল জ্ঞান, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, লেখায় দক্ষতা, ভাষায় দখল, টেকনোলিজীতে দক্ষ, সর্বোপরি সাবলীল ব্যক্তিত্ব; এসব গুণের অধিকারী বাংগালী খুবই কম।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সংবাদকর্মী বা সাংবাদিকগণকে কার্যক্ষেত্রে সংবাদপত্র প্রতিনিধি,
টেলিভিশন সংবাদদাতা বা বেতার সাংবাদিক ইত্যাদি বিভিন্ন
পর্যায়ে বিভাজন ঘটানো হয়েছে। সবাই না হলেও সাংবাদিকদের
বৃহত্তর অংশ নিয়মিত জার্নালিজম বিভাগে অধ্যয়ন করে দেশের
সেরা নাগরিকের মর্যাদা নিয়ে সাংবাদিকতা করে থাকেন। সুতরাং
সবাইকে এক কাতারে ফেলে বিচার করা অনুচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.