নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০৮


স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সর্বকালের নিকৃষ্ট মানের বিশ্বাসঘাতকতায় কলঙ্কিত হয়েছে বাংলাদেশ। জেলহত্যার পর যখন স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এমনকি দেশ নিয়ে যেকোনো রূপে কোনো কথা উচ্চারণ নিষিদ্ধ প্রায়, সেই সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কান্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। জোহরা তাজ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। আওয়ামী লীগের আহ্বায়িকা নির্বাচিত হয়ে তিনি দেশব্যাপী দলকে নতুন প্রাণে সুসংগঠিত করতে এক অনন্য ভূমিকা পালন করেন। তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের ক্রান্তিকালে যেমন দলের অনেক বড় দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তেমনি মৃত্যুর আগ অবধি আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হয়েই কাজ হয়ে গেছেন। ক্ষমতার মোহ তাকে কোনো দিনই স্পর্শ করতে পারেনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি শুধু দিয়েই গেছেন। নেননি কিছুই। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রাষ্ট্র থেকে জাতীয় পতাকা পেয়েছেন। এমনকি রাজাকারও জাতীয় পতাকা থেকে বাদ পড়েননি। কিন্তু কোনো দিন একটি জাতীয় পতাকার জন্য কাউকে কিছু বলেননি বেগম জোহরা তাজউদ্দীন। তাঁর সততা, প্রজ্ঞা, নির্লোভ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, নিরহংকার জীবনযাপন বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল ও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আজীবন তিনি একটি উদার গণতান্ত্রিক, ন্যায়পরায়ণ বাংলাদেশের স্বপ্ন লালন করে গেছেন। বাংলাদেশ সুন্দর থাকবে এই ছিল তাঁর প্রতিদিনের আশীর্বাদ। আওয়ামী লীগের কর্মী হয়ে রাজনীতি শুরু করে নেতা হয়েই চিরনিন্দ্রায় শায়িত হলেন তিনি। ২০১৩ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন এই বর্ষিয়ান রাজনীতিবীদ। আজ তার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন ১৯৩২ সালের ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জ উপজেলায়। লেখাপড়া, খেলাধুলা, ঘোড়া চালানোসহ সংস্কৃতিমনা পরিবারে বেড়ে উঠেছেন তিনি। অধ্যাপক বাবার সান্নিধ্যে কিশোরী বয়স থেকেই সমাজকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন। ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেব তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন। ১৯৫৯ সালে তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে, স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের সহযোদ্ধায় পরিণত হন। এই সূত্রে সকল আন্দোলনে তাঁর উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত রাজবন্দি সাহায্য কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একজন বলিষ্ঠ সংগঠক হিসেবে অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও গৌরবময় ভূমিকা রাখেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু এবং পরে একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে স্বামী তাজউদ্দীনসহ চার জাতীয় নেতা হত্যার পর দেশের ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে, আওয়ামী লীগের সেই চরম দুর্দিনে দলের হাল ধরেন তিনি। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দের দলের আহ্বায়ক নির্বাচিত হয়ে দলকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ করেন। ওই সময়ই সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে এক অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দলের হাল ধরলে, তাঁকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করা হয়। সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের স্ত্রী ছিলেন তিনি। তাঁদের চার ছেলেমেয়ে রয়েছে, তারা হলেন শারমিন আহমদ রিতি (বড় মেয়ে) সিমিন হোসেন রিমি (মেজো মেয়ে), মাহজাবিন আহমদ মিমি (কনিষ্ঠা মেয়ে) ও তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ (কনিষ্ঠ পুত্র)। উল্লেখ্য বঙ্গতাজ দম্পতির একমাত্র ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ ২০০১ এবং ২০০৮ সালে কাপাসিয়া আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ব্যক্তিগত কারণে ২০১২ সালে তিনি তার দ্বায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করলে তার ছেড়ে দেওয়া আসনে উপনির্বাচনে জোহরা তাজের মেজো মেয়ে সিমিন হোসেন রিমি সংসদ সদস্য নির্বাচিতন হন। তার বড় মেয়ে শারমিন রিপি প্রবাসী ও ছোট মেয়ে মাহজাবিন মিমি এখন দেশে বসবাস করছেন।
২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন বেগম জোহরা তাজউদ্দীন। প্রসঙ্গত ২০১৩ সালের নভেম্বরে বাসায় পড়ে গিয়ে তার কোমরের হাড় ভেঙে যায়। তাকে প্রথমে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ২৭ নভেম্বর তার কোমড়ে একটি অস্ত্রোপচারের পর কিছুটা উন্নতির হলেও ৬ ডিসেম্বর তার শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮০ বছর। জোহরা তাজউদ্দীনের মৃত্যুর পর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকার গুলশানের আজাদ মসজিদে। দ্বিতীয় জানাজা হয় বঙ্গতাজের গ্রামের বাড়ি কাপাসিয়ার দরদরিয়ায়। কাপাসিয়া পাইলট স্কুলে দ্বিতীয় ও গাজীপুর জেলা শহরের রাজবাড়ি মাঠে তৃতীয় জানাজা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়। বনানীতে স্বামী বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদের কবরের পাশেই তাকে চিরসমাহিত করা হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য মরহুমা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন যে অবদান রেখেছেন তা জাতি কোনো দিন ভুলবে না। মরহুমা জোহরা তাজউদ্দিন একজন দক্ষ ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে দেশ ও দেশের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন জাতীয় রাজনীতির একজন অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে একজন সুদক্ষ সংগঠক ও প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। গণতন্ত্রের প্রতি তার আন্তরিক নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র মাত্রা দিয়েছিল। দেশের স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে তিনি ছিলেন সবসময় আপোষহীন। দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য তিনি যে অবদান রেখেছেন তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও এ দেশের স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী মরহুম তাজউদ্দিন আহমেদের সহধর্মীনি সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিনের আজ ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর জ্যেষ্ঠ সদস্য, বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নুরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: ওকে জানলাম।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ দ্বায়িত্ব পালনের জন্য।

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


উনার প্রয়োজন ছিলো, ১৫ই আগষ্ট সকালে তাজুদ্দিন সাহবেকে লুকিয়ে ফেলা, উনি অনুমান করতে পারেননি

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনার ধারণা তাকে লুকিয়ে রাখলে
তিনি বেঁচে যেতেন?

৩| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪০

জাহিদ হাসান বলেছেন: কাপাসিয়া আমার দাদুর বাড়ি।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
একদিন নিমন্ত্রণ করেন
ঘুরে আসি আ্পনর দাদুর বাড়ি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.