নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রখ্যাত সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও মঞ্চাভিনেত্রী ড. রাজিয়া খানের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩২


রাজিয়া খান আমিন, প্রখ্যাত বাংলাদেশী সাহিত্যিক। লেখালেখি ছাড়াও তিনি দীর্ঘদিন মঞ্চে অভিনয় করেছেন। তার পুরো নাম রাজিয়া খান হলেও তিনি রাজিয়া খান নামে লেখক হিসেবে পরিচিত। যিনি আমাদের সাহিত্যের সূচনা লগ্নে অর্থাৎ পঞ্চাশের দশকে যখন বাংলাদেশের সাহিত্যের একটি গতি নির্দিষ্ট হচ্ছিল, সেই সময়ের একজন প্রতিভাধর লেখক তিনি৷শৈশব কালে তিনি কলকাতায় ছিলেন ১০ বছর। তখন তাঁর বয়স দশ বছর। শৈশবের সেই স্মৃতি, কলকাতার সেই রূপ তাঁর লেখায় বারবার ফিরে এসেছে। সেই সময় কলকাতা ছিল বিরাট মেট্রোপলিটন শহর, কলকাতা শহরের সাংস্কৃতিক অঙ্গন ছিল বিশাল উদার। মুসলমান হিন্দুর বিভেদ তখনও তৈরি হয়নি। বৃটিশরা নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করলেও সাধারণ মানুষের জীবনে তখনও তাঁর কোনও প্রভাব ছিল না। খুব স্বাভাবিকভাবেই কলকাতার সেই উচ্ছল জীবন তাঁর শৈশবে প্রভাব ফেলেছিল এবং তিনি সারাজীবন সেই আনন্দময় স্মৃতি মনে রেখেছেন। তাঁর লেখা ‘বটতলার উপন্যাস' পড়ে যে কেউ বুঝতে পারবেন যে তিনি কতোটা আধুনিক মনস্ক ছিলেন। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার পান৷ এছাড়া একুশে পদক, শিল্পকলা একাডেমী পদক এবং অনন্যা সাহিত্য পুরস্কারসহ তিনি বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেছেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রখ্যাত সাহিত্যিক রাজিয়া খান আমিন ২০১১ সালের আজকের দিনে রাজধানীর গুলশানের একটি হাসপাতালে মারা যান। আজ তার ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও মঞ্চাভিনেত্রী ড.রাজিয়া খানের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

রাজিয়া খান ১৯৩৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম তমিজউদ্দিন খান যিনি অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী, আইন সভার সদস্য এবং জাতীয় পরিষদের স্পীকার ছিলেন। মায়ের নাম রাবেয়া রাহাত খান। তিনি কলকাতা ও করাচিতে স্কুল, কলেজ জীবন শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে অনার্স ও এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম হন। পরে ব্রিটিশ কাউন্সিলের বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ডে পড়তে যান। সেখান থেকে তার পিএইচডি ডিগ্রীর সব কাজ সমাপ্ত করে কলকাতায় আরও কিছু রিসার্চ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিভাগে পিএইচ.ডি. ডিগ্রী লাভ করেন এবং অধ্যাপনা করেন। তিনি ইংরেজি যেমন জানতেন, বাংলা ভাষাও তেমনি জানতেন৷ এই দুই ভাষা জানার ক্ষেত্রে তাঁর কোন ত্রুটি কিংবা দ্বিধা ছিল না। আমরা অনেক সময় ভালো ইংরেজি জানলে হয়তো বাংলা বলতে চাই না। আবার জানলেও এমন ভাব করি যেন বাংলা আমাদের মাতৃভাষা নয়। কিন্তু রাজিয়া আমিনের মধ্যে এমন কিছু কখনই ছিল না। পঞ্চাশ দশকে সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনুরাগী ও প্রগতিবাদী লেখিকা হিসেবে লেখালেখি করেছেন রাজিয়া খান। বাংলাদেশের উপন্যাসে নারীভাবমূর্তি সৃষ্টিতে নারী লেখকদের মধ্যে তাই আকিমুন রহমান তাকে প্রথম দিককার একজন মনে করেন। তার ভাষায় “প্রথমভাগের অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে রাজিয়া খান, রিজিয়া রহমান, সেলিনা হোসেন প্রমুখকে।” তার প্রথম সৃজনশীলতার ঝোঁক প্রকাশিত হয় ছন্দে। আর ১৫ বছর বয়সেই পুরোদস্তুর উপন্যাস লিখতে শুরু করেন তিনি, আর ১৮ বছর বয়সেই লেখা হয়ে যায় ‘বট তলার উপন্যাস’। ১৮ বছর বয়সে তার লেখা 'বটতলার উপন্যাস' জনপ্রিয়তা পায়। তিনি খুব বেশি লিখে গিয়েছেন তেমন নয়, কিন্তু যা লিখে গেছেন তাতে জটিলায়তন নগরজীবন-অন্তর্গত ব্যক্তিমানুষের নৈঃসঙ্গ, বিচ্ছিন্নতা ও আত্মরক্তক্ষরণের শিল্পরূপায়ন করেছেন।তার মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস 'দ্রৌপদী' এপার ওপার দুই বাংলায় বেশ সমাদৃত। রাজিয়া খান আমিনের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১২টির বেশি। লেখালেখির জন্য তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকসহ নানা পুরস্কার পেয়েছেন।

কর্মজীবনে রাজিয়া খান এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পর কর্মজীবনের শুরু করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক হিসেবে। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড থেকে ফিরে তিনি অবজারভার পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীতে যোগ দেন এবং নিয়মিত ভাবে ব্যঙ্গ কলাম- 'কালচার কেটল' লেখা শুরু করেন। ১৯৫৮ সাল থেকে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয় পুনরায় শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেন এবং এই বিভাগের প্রধান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। শিক্ষকতা ছাড়াও তিনি দেশের খ্যাতনামা বিভিন্ন সংবাদপত্রে সাংবাদিক ও সম্পাদক রূপে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি ইউনিভাসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে ইংরেজি বিভাগের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মঞ্চ অভিনয়ে এক সময় রাজিয়া খানের দৃপ্ত পদচারণা ছিল। মাত্র ১৪/১৫ বছর বয়সে নাটক 'পাগল হাওয়া'য় অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি মঞ্চে কাজ শুরু করেন। এরপর 'বিজয়া' নাটকে মালিনী'র ভূমিকায় অভিনয় করেন। স্কটরস ক্লাবের নাটকে। মুনীর চৌধুরী ছিলেন 'বিলাসবিহারী'। এরপর মঞ্চের সঙ্গে জড়িয়ে যান। অভিনয় করেন 'নীলদর্পন', 'মেঘমুক্তি', 'দুইপুরুষ', 'বিদ্রোহী পদ্মা'য় ৷ 'কৃষ্ণকুমারী'তে অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চ অভিনয়ের ইতি টানলেও সত্তরের দশকে ইংরেজী 'রক্তকরবী'তে অভিনয় করেন। 'এছাড়াও বেতারের ভার্সিটি ম্যাগাজিনে 'Oliver Twist, Anthony & Cleopatra, Antigone' এবং 'Mid-Summer Nights Dream -' এ অভিনয় করেন। রাজিয়া খান চলচ্চিত্র অঙ্গনের সঙ্গেও দীর্ঘ দিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আসীন ছিলেন। তিনি চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন। তার 'Youth Film Society' -র সেক্রেটারী ছিল বর্তমানের শিল্পপতি আজম চৌধুরী। চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি, চলচ্চিত্র পুরস্কার কমিটি, সেন্সর বোর্ডে ছিলেন অনেক দিন।'

ড. রাজিয়া খান অনেকবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, মিশর, হংকং জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর ও আরব দেশ সফর করেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ। ১৯৭৮ সালে দিল্লীতে কমনওয়েলথ লেখক সম্মেলনে 'বাংলাদেশের কবিতা' শীর্ষক ইংরেজী প্রবন্ধ পাঠ করেন। ১৯০৫ সালে ভেনিসে পি.ই.এন সম্মেলনে প্রবন্ধ পাঠ করেন। এছাড়া ১৯৮৪ সালে চীন সরকারের আমন্ত্রণে চীনে যান। ড. রাজিয়া খান অনেকবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, মিশর, হংকং জাপান, ভারত, সিঙ্গাপুর ও আরব দেশ সফর করেন। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ। ১৯৭৮ সালে দিল্লীতে কমনওয়েলথ লেখক সম্মেলনে 'বাংলাদেশের কবিতা' শীর্ষক ইংরেজী প্রবন্ধ পাঠ করেন। ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাজধানীর গুলশানের একটি হাসপাতালে মারা যান। আজ তার ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও মঞ্চাভিনেত্রী ড. রাজিয়া খানের মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করুক।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে
সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও মঞ্চাভিনেত্রী
ড. রাজিয়া খানের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার
রুহের মাগফেরাতের জন্য।

২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪২

আমি মিয়াবাড়ির ছেলে বলেছেন: সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা।
তাঁর এই কবিতার লাইনটি এখনও মনে আছে।
শ্রদ্ধা তাঁর প্রতি।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
চাষী-রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণী আর
রাজিয়া খান আমিন এক ব্যাক্তি নহেন।
তার পরেও আপনাকে ধন্যবাদ
রাজিয়া খান আমিনের প্রতি শ্রদ্ধা
জানানোর জন্য।

৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৯

অপর্ণা সেন বলেছেন: খুব আধুনিক নারী ছিলেন।
শ্রদ্ধা রইলো।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:২১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আধুনিক এবং শিক্ষিত নারী ছিলেন।
ধন্যবাদ মন্তব্য প্রদানের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.