নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেহনতি মানুষের নেতা বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মনি সিংহ এর ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৪৪


বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের শোষণমুক্তির লড়াই-সংগ্রামের পুরোধা কমরেড মণি সিংহ। যে নামটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস ও ঐতিহ্য। কমরেড মনি সিংহ ছিলেন এদেশের গণমানুষের নেতা। দেশের স্বাধীনতা অর্জন, গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়। সারাজীবন তিনি লড়াই করে গেছেন এদেশের খেটে খাওয়া-মেহনতী মানুষের জন্য। বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট আন্দোলনের প্রাণপুরুষ মনি সিংহ মেহনতি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি এবং তাদের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সারাজীবন সংগ্রাম পরিচালনা করে গেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ কমরেড মণি সিংহকে 'স্বাধীনতা পুরস্কার ২০০৪ (মরণোত্তর)' প্রদান করা হয়। শান্তি, গণতন্ত্র ও সমাজ প্রগতির সংগ্রামে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে মৈত্রী সুদৃঢ়করণের ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মণি সিংহকে সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার 'অর্ডার অব ফ্রেন্ডশিপ অব পিপলস' পদকে ভূষিত করে। কেবল সোভিয়েত ইউনিয়ন নয় বুলগেরিয়া এবং চেকোশ্লোভাকিয়া সরকারও তাঁকে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৯০ সালের আজকের দিনে তিনি মৃত্যুবরন করেন গণমানুষের নেতা মনি সিংহ। আজ তাঁর ২৯তম মৃত্যুবাির্ষিকী। মেহনতি মানুষের অকৃত্রিমবন্ধু মনি সিংহ এর মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।

কমরেড মনি সিংহ ১৯০১ সালের ২৬ জুন জন্মগ্রহন করেন নেত্রকোনা জেলার সুসং দূর্গাপুরে। বাবা কালীকুমার সিংহ ছিলেন নেত্রোকোনা জেলার পূর্বধলার জমিদারের সন্তান। মণি সিংহের বয়স যখন আড়াই বছর তখন তাঁর বাবা মারা যান। এসময় তাঁরা কিছুদিন ঢাকায় তাঁর মামা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুরেন সিংহের বাড়িতে থাকেন। মা ছিলেন তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোণা মহাকুমার সুসং-দুর্গাপুরের জমিদার বংশের মেয়ে। মণি সিংহের বয়স যখন ৭ বছর সেই সময় থেকে তাঁরা সুসং-দুর্গাপুরে বসবাস শুরু করেন। এখানেই মণি সিংহ প্রাথমিক পড়াশুনা শুরু ও শেষ করেন। তারপর মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য কলকাতায় যান। ওই সময় ব্রিটিশ সরকারের প্রতি ঘৃনা ও ক্ষোভ জমে যায় তাঁর চেতনায়। তাই ১৯১৪ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে ব্রিটিশকে উচ্ছেদের জন্য সশস্ত্র বিপ্লববাদী দল অনুশীলনের সাথে যুক্ত হন। ধীরে ধীরে নিজের সাহস ও দৃঢ়তা দিয়ে সাংগঠনিকভাবে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে দক্ষতার পরিচয় দেন। ১৯২১ সালের অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের ব্যাপকতা তাঁকে সংগ্রামী মানুষে পরিণত করে। এ সময় তিনি ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র জাতীয় সংগ্রামে কৃষকদের সংগঠিত করার জন্য নিজ জেলায় কৃষকদের মধ্যে কাজ শুরু করেন। ১৯২৫ সালে রুশবিপ্লবের প্রত্যক্ষদর্শী ও মার্কসবাদী বিপ্লবী গোপেন চক্রবর্তীর সাথে কমরেড মণি সিংহের সাক্ষাৎ হয়। দিনে দিনে দু'জনের মধ্যে গড়ে ওঠে মার্কসবাদী চেতনার সম্পূর্ক। এ সময় তিনি মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের রাজনীতি, দর্শন ও আদর্শে নিজেকে নির্মাণ করেন। শ্রমিক আন্দোলনের উপায় খুঁজে বের করার জন্য ১৯২৬ সালের শেষের দিকে মণি সিংহ কলকাতায় ক্লাইভ স্ট্রীটের গুপ্ত ম্যানশনে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে 'ওরিয়েন্টাল ট্রেডিং' নাম দিয়ে একটি অফিস খোলেন। ১৯২৮ সালের প্রথম দিকে সেখানেই শুরু করেন শ্রমিক আন্দোলন। ১৯৩০ সালে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে অস্ত্রাগার লুটের ঘটনায় ব্রিটিশ শাসক পাগলা কুকুরের মতো ক্ষিপ্ত হয়ে নির্বিচারে গ্রেফতারের হিড়িক চালায়। শত শত বিপ্লবীকে গ্রেফতার করে। ৯ মে কলকাতায় গ্রেফতার হন মণি সিংহ। টানা ৫ বছর বিভিন্ন জেল-ক্যাম্প ঘুরিয়ে এনে ১৯৩৫ সালে সুসং-দুর্গাপুরে নিজ গ্রামের বাড়িতে নজরবন্দী করে তাঁকে রাখা হয়। এখানে সাধারণ প্রজাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন গড়ে তোলেন তিনি। যার কারণে মণি সিংহকে তিন বছরের কারাদণ্ডে যেতে হয়। আপিলে করলে এ সাজা দেড় বছর কমে আসে। ১৯৩৭ সালে জেল থেকে বের হওয়ার পর পার্টির সভ্য বলে তাঁকে জানানো হয়। দীর্ঘ সাত দশক ধরে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের সার্বিক মুক্তির জন্য, শোষণ- বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে এবং মানুষের চুড়ান্ত মুক্তির জন্য কমিউনিস্ট আন্দোলন ও কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে অবদান তিনি রেখে গেছেন, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে এবং থাকবে। ১৯৪৪ সালে মণি সিংহ সারা বাংলার কৃষাণ সভার প্রেসিডিয়ামের সভ্য নির্বাচিত হন।

১৯৪৫ সালে নেত্রকোনায় অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত কৃষাণ সভার ঐতিহাসিক সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে মণি সিংহ ছিলেন সম্মেলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক। এ সম্মেলনে নেত্রকোণা শহরের নাগড়ার মাঠে একলক্ষ লোকের সামবেশ ঘটে। এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কমরেড মোজাফ্ফর আহমদ, পিসি যোসিসহ ভারত বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতৃবৃন্দ। ১৯৪৭ সালে অনুষ্ঠিত ভারতের সাধারণ নির্বাচনে তিনি নেত্রকোণা জেলার নিজ এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবার পরে পূর্ণ গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত সমাজের আদর্শকে যাঁরা সামনে এনেছেন মণি সিংহ তাদের একজন। টংক মানে ধান কড়ারী খাজনা। হোক বা না হোক কড়ার মত ধান দিতে হবে। টংক জমির ওপর কৃষকদের কোন স্বত্ব ছিল না। ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে কলমাকান্দ, সুসং-দূর্গাপুর, হালুয়াঘাট, নালিতাবাড়ি, শ্রীবর্দি থানায় এই প্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথা বিভিন্ন নামে ঐ সময়ের পূর্ববঙ্গে প্রচলিত ছিল। তাঁর যতটুকু মার্কসবাদ-লেনিনবাদের জ্ঞান ছিল, আর যেটুকু শ্রমিক আন্দোলনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাকেই ভিত্তি করে সমস্ত দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাটিয়ে মনি সিংহ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, টংক আন্দোলনে তিনি সর্বতোভাবে শরিক হবেন। এভাবে মণি সিংহ টংক আন্দোলনের সাথে জড়িত হলেন এবং কালক্রমে এ আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হলেন। দীর্ঘদিন এ আন্দোলন চলছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরও টংক আন্দোলন চলতে থাকে এবং তা সশস্ত্র আন্দোলনে রূপ নেয়। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এলাকায় কৃষক সভা ও কমিউনিস্ট পার্টির শাক্তিশালী তৃণমূল সংগঠনও গড়ে উঠেছিল। সে সময় প্রচলিত গল্প ছিল যে, কমরেড মণি সিংহ একটি সাদা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সশস্ত্র কৃষক বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে এই টংক আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নারী-পুরুষ-শিশুসহ অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কৃষকদের শতশত বাড়ি ধুলিসাৎ ও গ্রাম পুড়িয়ে ছারখার করা হয়েছে। পাকিস্তানের প্রথম মুসলিম লীগ সরকার মণি সিংহের বাড়ি ভেঙ্গে হালচাষ করে এবং তাঁর স্থাবর সম্পত্তি নিলাম করে দেয়। ১৯৫০ সালে টংকের পরিবর্তে টাকায় খাজনা প্রবর্তিত হয় এবং জমিতে কৃষকের স্বত্ব স্বীকৃত হয়।

পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে ষাটের দশকের শেষ পর্যন্ত টানা ২০ বছর তাঁকে বাধ্য হয়ে আত্মগোপনে থাকতে হয়। এ সময় আইয়ুব সরকার তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ১০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৯৫৫ সালে আবু হোসেন সরকারের সময় মাত্র ১ মাস প্রকাশ্যে থাকতে পেরেছিলেন। জেলে থাকা অবস্থায় তিনি ১৯৬৮ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত পার্টির চতুর্থ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে জাতীয় অনেক নেতৃবৃন্দের সাথে কমরেড মণি সিংহকেও গ্রেফতার করা হয়। তবে ১৯৬৯ সালেই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের পর ২২ ফেব্রুয়ারি সকলের সাথে তিনিও মুক্তি পান। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের শাসন-শোষণের হাত থেকে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনে তিনি ছিলেন অন্যতম বিপ্লবী। পাকিস্তানের স্বৈর- শাসন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের জন্য স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাসের অন্যতম মহানায়কও ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি শোষণের অবসান ঘটিয়ে একটি সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যাশা করেছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কমরেড মণি সিংহ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন । মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক শক্তির সমর্থন আদায়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের রাজনৈতিক, কুটনৈতিক সমর্থন ও সাহায্য সহযোগিতা আদায়ে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টির অবদান ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কমরেড মণি সিংহ ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধীর সাথে দেখা করে কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপের সম্মিলিত মুক্তিবাহিনী সংগঠিত করার কাজে সমর্থন আদায়ে সক্ষম হন। যুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ দেয়ার জন্য গঠিত উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম প্রধান সদস্য ছিলেন মণি সিংহ।

(Comrade Moni Singh Monument)
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে রাজশাহী জেলে বন্দী ছিলেন কমরেড মনি সিংহ। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসে বন্দীরা রাজশাহী কারাগার ভেঙ্গে তাঁকে মুক্ত করে। জেল থেকে বেরিয়ে তিনি ভারতে যান। তাঁর প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছিল ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী। যে বাহিনী মূলত যুদ্ধের কৌশলী বাহিনী ছিল। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কমরেড মণি সিংহকে তাঁর বাড়ি- ভিটা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এর উত্তরে কমরেড মণি সিংহ বলেছিলেন, "টংক আন্দোলন ও বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনে লক্ষ লক্ষ মানুষ তার প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে এবং তাদের বাড়ি ঘর উচ্ছেদ হয়েছে। যতদিন পর্যন্ত এই দেশের প্রতিটি মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা ও কর্মসংস্থান না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আমার বাড়ি-ভিটা ফিরিয়ে নেয়ার প্রশ্ন উঠতে পারে না। যে দিন সবার ব্যবস্থা হবে সেদিন আমারও ব্যবস্থা হবে। ১৯৭৩ সালের দ্বিতীয় কংগ্রেসে ও ১৯৮০ সালের তৃতীয় কংগ্রেসে তিনি পার্টির সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কমিউনিস্ট পার্টি আবারও বেআইনী ঘোষিত হয়। ঐ সময় আজীবন সংগ্রামী এ নেতা আবার রাজনৈতিকভাবে নির্যাতনের শিকার হন ও কারাবরণ করেন। জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন ১৯৭৭ সালের মাঝামাঝি সময় একদিন কমরেড মণি সিংহকে গ্রেপ্তার করে বিনা বিচারে ছয় মাস অন্তরীণ রাখা হয়। সেই সময়ে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। ব্যক্তিগত জীবনে কমরেড মণি সিংহ ছিলেন অনাড়ম্বর সাদামাটা জীবনের অধিকারী। কমরেড অণিমা সিংহ ছিলেন মণি সিংহের সহধর্মিনী। সিলেটে মেডিকেল স্কুলের ছাত্রী থাকা অবস্থায় অণিমা সিংহ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও কমিউনিস্ট আন্দোলনে যুক্ত হন। তিনি কৃষক নেত্রী ছিলেন। টংক আন্দোলনের সময় তিনি ঐ আন্দোলনে যোগদান করেন। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে তিনি কমরেড মণি সিংহের সাথে আত্মগোপন অবস্থায় ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। স্বাধীনতার পর তিনি কৃষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদিকা নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালের ১ জুলাই মাত্র ৫২ বছর বয়সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।

১৯৮৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী মণি সিংহ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন থেকে দীর্ঘ ৬ বছর অসুস্থ থাকার পর ১৯৯০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কমিউনিস্ট পার্টির প্রবাদতুল্য এই বিপ্লবী কমরেড মণি সিংহ মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় এই কমিউনিস্ট নেতা, কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষের শোষণমুক্তির লড়াই-সংগ্রামের পুরোধা মণি সিংহ এর আজ ২৯তম মৃত্যু দিবস। গণমানুষের নেতা মণি সিংহ এর মৃত্যুৃদিবসে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে রাজীব ভাই,
বাংলাদেশের কমিউনিষ্ট আন্দোলনের প্রাণপুরুষ
কমরেড মনি সিংহ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.