নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

যেতে নাহি দিব! হায় তবু চলে যায়ঃ ২০১৯ সালে যাদের হারিয়েছি আমরা (২০১৯ইং সালের শেষ পোস্ট)

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৫


দরজায় কড়া নাড়ছে নতুন বছর। কালের পরিক্রমায় আরও একটি বছর শেষ হওয়ার পথে। মহাকালের অমোঘ নিয়মকে লঙ্ঘন করার কোন সুযোগ নেই। বিদায়ের ঘন্টা বাজিয়ে বিদায় নেবে ২০১৯। রাত পোহালে ২০২০ সাল। আনন্দ-বেদনা, আশা-নিরাশার ভেলায় চড়ে সবাই ২০১৮ সালকে বিদায় জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে আর নতুন বছরকে নিয়ে বুনছে নানা স্বপ্ন। বছর শেষে হিসেব করতে গেলে দেখা যায় কেউবা হয়েছে সফল কিংবা আবার দেখা যায় কেউ হারিয়েছেন অনেক কিছুই। অনেক স্বপ্ন অর্জনের পাশাপাশি ২০১৯ আমাদের দিয়েছে কিছু হারানোর ক্ষত। ২০১৯ সালে আমরা এমন সব মানুষকে হারিয়েছে যাদের কাছে ঋণী হয়ে থাকবে পৃথিবীর বাকি ইতিহাস। বিজ্ঞান, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য, উদ্ভাবনে যাদের অবদানের কারণে আমাদের সভ্যতা এগিয়ে গেছে বেশ কয়েক ধাপ। হঠাৎ করেই এসব মানুষ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন চিরজীবনের মতো। তাদের আমরা আর কখনোই খুঁজে পাবো না। ‘যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়’। এই অমোঘ সত্যের কাছে হার মেনে গত বছর কালের গর্ভে হারিয়ে গেছেন আমাদের অনেক কীর্তিমান মানুষ যারা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে রেখে গেছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তাদের কর্ম তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে সহস্র শতাব্দী। ২০১৯ সালে রাজনীতি, চলচ্চিত্র, শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেককে হারিয়েছে বাংলাদেশ। মৃত্যু মানুষের অমোঘ নিয়তি। যাঁরা তাঁদের সৃজনশীল চিন্তা, মনন ও মেধা দিয়ে শান্তি, মানবতা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন এবং এখনও যাচ্ছেন, যাঁরা তাঁদের লেখনী, শব্দমালা, বৈজ্ঞানিক আবিস্কার ও শিল্পকর্ম এবং অন্যান্য সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন, আমাদের প্রিয় জন্মভূমির এসব গুণী ব্যক্তিবৃন্দকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করে তোলার একটি প্রয়াস। ২০১৯ সালে চলচ্চিত্র, সংগীত ও সংস্কৃতি অঙ্গনের অনেকেই চলে গেছেন না ফেরার দেশে। এসব মানুষের শূন্যতা কখনও পূরণ হয় না। এ বছরে চলে যাওয়া বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মোয়াজ্জেম আলীঃ
ভারতে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী গত কাল ৩০ ডিসেম্বর সোমবার বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। ভারতে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করে সম্প্রতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ঢাকায় ফেরেন। মোয়াজ্জেম আলী ১৯৪৪ সালের ১৮ জুলাই সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণীবিদ্যায় এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস এক্সামিনেশনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানের ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী বিদ্রোহ করে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর তিনি ওয়াশিংটনে স্বাধীন বাংলাদেশের দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব সামলে ২০০১ সালের ডিসেম্বর মাসে অবসর গ্রহণ করেন। সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে ভুটান, ইরান ও ফ্রান্সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ওয়াশিংটন, ওয়ারশ, নয়াদিল্লি ও জেদ্দায় বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠে নিয়মিত কলাম লিখতেন।বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক 'দ্য ডেইলি স্টার' এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রয়াত এসএম আলী ছিলেন তার বড় ভাই। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামানঃ
বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামান গত ২৮ ডিসেম্বর ২০১্৯ ইং শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। অধ্যাপক ড. তালুকদার মনিরুজ্জামানকে হৃদরোগের কারণে গত ২ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। তালুকদার মনিরুজ্জামানের জন্ম সিরাজগঞ্জের তারাকান্দি গ্রামে ১৯৩৮ সালের ১ জুলাই। ১৯৫৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে অনার্সে প্রথম শ্রেণি এবং মাস্টার্সে দ্বিতীয় শ্রেণি লাভ করেন তিনি। এরপর ১৯৬৩ সালে বৃত্তি নিয়ে চলে যান কানাডায়। সেখানে পড়াশোনা করেন কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে। ১৯৬৬ সালে দেশে ফিরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। সাত বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শেষে ১৯৭৪ সালে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অবসর নেন ২০০৬ সালে। তালুকদার মনিরুজ্জামান ৯টি বই লিখেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক তিনি।

ফজলে হাসান আবেদঃ ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
বাংলাদেশ ও এর বাইরে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিতে ও মর্যাদা পেতে অসাধারণ অবদান রেখেছেন স্যার আবেদ। বাংলাদেশের ব্র্যাককে তিনি সারাবিশ্বে সবচেয়ে বড় ও সম্মানিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গড়ে তুলেছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক ব্যাংক, বিকাশ ও আড়ংয়ের মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বিশেষত নারী ও শিশু উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় স্যার আবেদকে গত ২০ নভেম্বর নেদারল্যান্ডের রাজার পক্ষ থেকে নাইটহুড ‘অফিসার ইন দ্য অর্ডার অফ অরেঞ্জ-নাসাউ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। তিনি দারিদ্র্য বিমোচনে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের রানি কর্তৃক ‘নাইট’ উপাধিতে ভূষিত হন।

মঈন উদ্দিন খান বাদলঃ মুক্তিযোদ্ধা, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সংসদ সদস্য মঈন উদ্দিন খান বাদল গত ৭ নভেম্বর ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। বাদল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। চট্টগ্রাম -৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে তিনি তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বাদল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। বাঙালিদের ওপর আক্রমণের জন্য পাকিস্তান থেকে আনা অস্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে খালাসের সময় প্রতিরোধের অন্যতম নেতৃত্বদাতা ছিলেন বাদল। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বাদল সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হন। জাসদ, বাসদ হয়ে পুনরায় জাসদে আসেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠনেও তার ভূমিকা ছিল। বাদলের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী গ্রামে। তার স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

সাদেক হোসেন খোকাঃ অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ৪ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। খোকা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছিলেন গেরিলা যোদ্ধা। তিনি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে (ন্যাপ) যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন। ২০০২ সালে তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি প্রায় ৯ বছর ধরে এ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

কালিদাস কর্মকারঃ একুশে পদক বিজয়ী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী কালিদাস কর্মকার গত ১৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। গ্যালারি কসমসের একজন উপদেষ্টা ছিলেন কালিদাস কর্মকার। কালিদাস কর্মকার বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা চিত্রশিল্পী যিনি নিরীক্ষাধর্মীতার জন্য বিখ্যাত। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুরে তার জন্ম। শৈশবেই তিনি আঁকতে শুরু করেন। স্কুল জীবন শেষে ঢাকা ইনস্টিটিউট অব ফাইন আর্টস থেকে তিনি ১৯৬৩-৬৪ খ্রিস্টাব্দে চিত্রকলায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন। পরবর্তীকালে কলকাতার গভর্নমেন্ট কলেজ অব ফাইন আর্টস অ্যান্ড ক্রাফট থেকে ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান নিয়ে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইয়োরোপীয় আধুনিকতার ঘরানার শিল্পী। চিত্র, ছাপচিত্র, স্থাপনা ও মিশ্রমাধ্যমে তার অসামান্য নিরীক্ষাপ্রবণতার কাজ বাংলাদেশের চিত্রকলার ইতিহাসে তাকে অমর করে রাখবে। চারুকলায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে কালিদাস কর্মকার ২০১৬ সালে শিল্পকলা পদক ও ২০১৮ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। তার বিচিত্র সব শিল্পকর্ম দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত হয়েছে।

এইচ এম এরশাদঃ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ ১৪ জুলাই ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টির প্রধান ও সাবেক সেনাশাসকের ঘটনাবহুল জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
১৯৮২ সালে সেনাপ্রধান থাকাকালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তারের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেন এরশাদ। পরে তিনি জাতীয় পার্টি গঠন করেন এবং ১৯৮৬ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে জয়লাভ করেন। পরে ১৯৯০ সালে স্বৈরাচারবিরোধী প্রবল গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।

এই ধারাবাহিকতায় চিরবিদায় জানাতে হয়েছে বিনোদন ও সংস্কৃতি অঙ্গনে অবদান রাখা বেশ কজন কৃতি ব্যক্তিত্বকে। তারা আজ চিরদিনের জন্য পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। বছর শেষে ফিরে দেখার এই আয়োজনে শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি তাদের।

আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলঃ
মুক্তিযোদ্ধা, প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল গত ২২ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মঙ্গলবার ভোর চারটায় ঢাকার আফতাব নগরে হার্ট অ্যাটাকে তাঁর মৃত্যু হয়। বাসায় হার্ট অ্যাটাক করার পর তাকে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জনাব বুলবুল গত প্রায় এক বছর ধরে নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ২০১৮ সালের জুন মাসে তাঁর হৃদযন্ত্রের ধমনীতে দুটি স্টেন্ট লাগানো হয়েছিল।৭০ দশকের শেষ লগ্ন থেকে আমৃত্যু সংগীতজগতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এই তারকা। তাঁর লেখা এবং সুরকরা বহু জনপ্রিয় গানের শিল্পী ছিলেন রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, অ্যান্ড্রু কিশোর, খালিদ হাসান মিলু, কনকচাঁপা এবং সামিনা চৌধুরী। 'সব কটা জানালা খুলে দাও না', 'আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন', 'পড়ে না চখের পলক', 'আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে', 'আম্মাজান আম্মাজান', 'ঘুমিয়ে থাকো গো সজনী', 'চিঠি লিখেছে বউ আমার', 'জাগো বাংলাদেশ জাগো' - এরকম অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গানের সুর করেছেন তিনি।জনাব বুলবুল মাত্র ১৫ বছরে বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।বাংলাদেশে সংগীতাঙ্গনে অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক এবং জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার পেয়েছেন। শাহনাজ রহমতউল্লাহকে ১৯৯২ সালে একুশে পদক দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে ‘ছুটির ফাঁদে’ ছবিতে গান গেয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি। এ ছাড়া ২০১৬ সালে ‘চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ আয়োজনে আজীবন সম্মাননা, ২০১৩ সালে সিটি ব্যাংক থেকে গুণীজন সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাঁকে। এ ছাড়া গান গেয়ে আরও অসংখ্য পুরস্কার আর সম্মাননা পেয়েছেন তিনি।

মুহম্মদ খসরুঃ
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ মুহম্মদ খসরু। খসরু দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিক, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও হৃদ্‌রোগে ভুগছিলেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বারডেম হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। গত ২১ জানুয়ারি শ্বাসকষ্ট ও হৃদ্‌রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মুহম্মদ খসরু। তাঁর নিকটতম সহচর ইমন জানান, মুহম্মদ খসরু দীর্ঘদিন ডায়াবেটিক, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও হৃদ্‌রোগে ভুগছিলেন। হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁর নিউমোনিয়া ধরা পরে। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের এই প্রবাদতুল্য মানুষটি উৎসাহিত করেছেন দেশের খ্যাতনামা অনেক চলচ্চিত্রকারদের। তারেক মাসুদ তাঁদের অন্যতম। চলচ্চিত্রকে মানুষের অধিকারের পক্ষে কাজে লাগাতে লেখালেখি করেছেন তিনি। তাঁর বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন’, ‘বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ভূমিকা’, ‘সাক্ষাৎকার চতুষ্টয়’। ‘ধ্রুপদি’ ছাড়াও তিনি সম্পাদনা করেছেন ‘চলচ্চিত্রপত্র’, ‘ক্যামেরা যখন রাইফেল’, ‘সূর্যদীঘল বাড়ী’ বিশেষ সংখ্যা। ১৯৭৫ সালে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনার ‘পালঙ্ক’ ছবিটি নির্মাণের সময় মুহম্মদ খসরু ভারতীয় চলচ্চিত্রকার শ্রী রাজেন তরফদারের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশে দীর্ঘ ৫০ বছর নিরবচ্ছিন্ন অবদানের জন্য মুহম্মদ খসরু ‘হীরালাল সেন’ আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। এ ছাড়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘সুবর্ণ জয়ন্তী পদক’ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র সংসদ থেকে আজীবন সম্মাননা-২০১৭ দেওয়া হয় তাঁকে।

শাহনাজ রহমতউল্লাহঃ
গত ২৩ মার্চ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় গত ২৩ মার্চ শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় বারিধারায় নিজ বাসায় মারা গেছেন শাহনাজ রহমতউল্লাহ । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন। স্বামী মেজর (অব.) আবুল বাশার রহমতউল্লাহ ব্যবসায়ী, মেয়ে নাহিদ রহমতউল্লাহ থাকেন লন্ডনে আর ছেলে এ কে এম সায়েফ রহমতউল্লাহ যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করে এখন কানাডায় থাকেন।দীর্ঘ ৫০ বছরের সংগীতজীবনে অসংখ্য কালজয়ী গান গেয়েছেন। সংগীতে অবদানের জন্য একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কারসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের গানের জগতে অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম শাহনাজ রহমতউল্লাহ। ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করা এ শিল্পী ১০ বছর বয়স থেকেই গান শুরু করেন। প্রায় সেই বয়সেই গান করেন চলচ্চিত্র, টেলিভিশন আর বেতারে। খেলাঘর থেকে শুরু করা এ শিল্পীর কণ্ঠ শুরু থেকেই ছিল বেশ পরিণত। গজলসম্রাট মেহেদি হাসানের শিষ্য হয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গানের দিকটা ধরতে গেলে সবার আগেই চলে আসে শাহনাজ রহমতউল্লাহর নাম। তাঁর ভাই আনোয়ার পারভেজ ছিলেন সুরকার, তাঁর আরেক ভাই চিত্রনায়ক জাফর ইকবালও করতেন গান। গানের ক্ষেত্রে তাঁদের মায়ের অনুপ্রেরণাই ছিল বেশি।

টেলি সামাদঃ
বরেণ্য কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ গত ৬ এপ্রিল স্কয়ার হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। শুধু অভিনয় নয়, গান ও ছবি আঁকাতেও পারদর্শী ছিলেন তিনি। ১৯৪৫ সালের ৮ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জের নয়াগাঁও এলাকায় টেলি সামাদ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৩ সালে পরিচালক নজরুল ইসলামের ‘কার বউ’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। গত শতকের সত্তরের দশক থেকে টেলি সামাদকে পর্দায় দেখেছেন দর্শকেরা। এযাবৎ অসংখ্য চলচ্চিত্র ও নাটকে নানা ধরনের চরিত্রে তাঁর দুর্দান্ত অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কেটে আছে দারুণভাবে। নিজের অভিনয়শৈলী দিয়ে দর্শকদের বিনোদন ও হাসিতে সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখেন টেলি সামাদ। একসময় কৌতুক অভিনেতা বললেই চলে আসত তাঁর নাম। সমানতালে অভিনয় করেছেন সিনেমায়, টেলিভিশনে। পেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয়তা।চার দশকে প্রায় ৬০০ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। টেলি সামাদ শেষ কাজ করেছেন অনিমেষ আইচের ‘জিরো ডিগ্রি’ ছবিতে। তবে তিনি দর্শকদের কাছে ‘পায়ে চলার পথ’ ছবির মাধ্যমে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা পান। অভিনয়ের বাইরে অর্ধশতাধিক চলচ্চিত্রে তিনি গান গেয়েছেন।

সালেহ আহমেদঃ
টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের বর্ষীয়ান অভিনেতা সালেহ আহমেদ গত ২৪ এপ্রিল রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে ৮৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কয়েক বছর ধরেই সালেহ আহমেদ বার্ধক্যজনিত নানান রোগে ভুগছিলেন। ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসাসেবা নিচ্ছিলেন তিনি। ৮৩ বছর বয়সী এই অভিনেতার শারীরিক অবস্থা দিনের পর দিন অবনতি ঘটছিল। সালেহ আহমেদের জন্ম বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের চাকরির পাশাপাশি ময়মনসিংহে অমরাবতী নাটমঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯১ সালে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর হুমায়ূন আহমেদের নাটকে ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। ধারাবাহিক ‘অয়োময়’ নাটক এবং ‘আগুনের পরশমণি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিনয় জগতে তাঁর পদচারণ শুরু। এরপর অসংখ্য নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক। মৃত্যুকালে সালেহ আহমেদ স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।১৯৯১ সালে হুমায়ূন আহমেদের নাটক ও চলচ্চিত্রে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন তিনি। এরপর অসংখ্য নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক।

আনিসুর রহমান আনিসঃ
বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা আনিসুর রহমান আনিস গত ২৯ এপ্রিল রাজধানীর টিকাটুলীর অভয় দাস লেনের বাসায় মারা যান। আনিসুর রহমান রাতে খাওয়া শেষে নামাজ পড়েন। এরপর তিনি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সোমবার সকালে টিকাটুলি মসজিদে জানাজার পর ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার বল্লবপুর গ্রামে তাকে দাফন করা হবে। ১৯৬০ সালে ‘বিষকন্যা’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন আনিস। কিন্তু ছবিটি মুক্তি পায়নি। ১৯৬৩ সালে মুক্তি পায় আনিস অভিনীত প্রথম ছবি জিল্লুর রহমান পরিচালিত ‘এই তো জীবন’। তারপর থেকে তিনি অভিনয় করেই গেছেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি অভিনয় করছেন।
‘নবাব সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে গোলাম হোসেন চরিত্রে অভিনয় করে তিনি মঞ্চে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। আড়াই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।আনিস চলচ্চিত্রে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন অভিনেতা নয়, চিত্রসম্পাদক হিসেবে। আনিসুর রহমান আনিস ১৯৬৪ সাল থেকে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হাসির খোরাক জুগিয়েছেন তিনি।

সুবীর নন্দীঃ
গত ৭ মে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের এমআইসিইউতে মারা যান বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী। এর আগে সুবীর নন্দীর শারীরিক অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন হয়ে ওঠে। পরপর দুইদিন হার্ট অ্যাটাক হয় তার। হার্টে চারটা ব্লক ছিল। চারটা রিংও পরানো হয়। টানা ১৮ দিন অজ্ঞান থাকার পর সুবীর নন্দী চোখ খোলেন গত শুক্রবার। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩০ এপ্রিল তাকে সিঙ্গাপুর নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস, কিডনি ও হৃদরোগে ভুগছেন তিনি। গত ১৪ এপ্রিল শ্রীমঙ্গলে একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে উত্তরায় কাছাকাছি আসতেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে সুবীর নন্দীর। এর পর সেখান থেকে সরাসরি সিএমএইচে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পরই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল। নন্দিত কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দী ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গেয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি গান। বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রেও উপহার দিয়েছেন অসংখ্য জনপ্রিয় গান। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ ডিসকো রেকর্ডিংয়ের ব্যানারে বাজারে আসে। তবে চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে। বর্ণাঢ্য সংগীত ক্যারিয়ারে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ ৪০ বছরের ক্যারিয়ারে আড়াই হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী।চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন তিনি। চলতি বছরে সংগীতে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার সুবীর নন্দীকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করেছে।

মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেত্রী মায়া ঘোষঃ
দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে অবশেষে হার মানলেন মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী মায়া ঘোষ । গত ১৯ মে না ফেরার দেশে চলে গেলেন মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেত্রী মায়া ঘোষ। ২০০০ সালে মায়া ঘোষের শরীরে প্রথম ক্যান্সার ধরে পড়ে। ২০০১ সাল থেকে কলকাতায় কয়েক দফা চিকিৎসা নেওয়ার পর ২০০৯ সালের দিকে তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু ২০১৮ সালের অক্টোবরে আবারও তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এ সময় কলকাতার সরোজ গুপ্ত ক্যান্সার হাসপাতালে আবারও কয়েকদফা চিকিৎসা দেওয়া হয় মায়া ঘোষের। সর্বশেষ গত ২২ মার্চ চিকিৎসার জন্য মায়া ঘোষকে কলকাতা নেওয়া হলে দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠেন তিনি। পরে এক রকম বাধ্য হয়েই গত ১৫ এপ্রিল তার ছেলেরা দেশে ফিরিয়ে আনেন মায়া ঘোষকে এবং যশোরের কুইন্স হাসপাতালে ভর্তি করেন। মাত্র আট বছর বয়সেই অভিনয়ে যুক্ত হলেও ১৯৮১ সালে ‘পাতাল বিজয়’ মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন মায়া ঘোষ। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে তিনি দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। পাশাপাশি টিভি নাটক ও মঞ্চেও শক্তিশালী অবস্থান গড়ে নিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। সর্বশেষ ২০১৬ সালে এটিএন বাংলার জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘ডিবি’-তে অভিনয় করেছেন এই অভিনেত্রী।১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কলকাতায় বাংলাদেশি শরণার্থী শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের রেঁধে খাওয়ানোর কাজ করেছেন মায়া ঘোষ, কখনোবা সময় কেটেছে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায়। ১৯৪৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর যশোরের মণিরামপুরের প্রতাপকাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন মায়া ঘোষ। ১৯৮৪ সালে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা, অভিনেত্রী।

নজরুলসংগীত শিল্পী খালিদ হোসেনঃ
বরেণ্য নজরুলসংগীত শিল্পী খালিদ হোসেন গত ২২ মে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চলে যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। হৃদরোগের পাশাপাশি তিনি কিডনি রোগসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গুরুতর অসুস্থ খালিদ হোসেন রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার রাত সোয়া ১০টার দিকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হন গুণী এই শিল্পী। বরেণ্য এই শিল্পী গত পাঁচ দশক নজরুল গবেষণা এবং নজরুলগীতির শুদ্ধ স্বরলিপি প্রণয়নে কাজ করছিলেন। ছয়টি নজরুলগীতি ও ১২টি ইসলামী সংগীতের অ্যালবাম রয়েছে খালিদ হোসেনের। ‘চম্পানদীর তীরে’শিরোনামে একটি আধুনিক গানের অ্যালবামও রয়েছে তাঁর। গুণি এই শিল্পী ১৯৪০ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন খালিদ হোসেন।তিনি একুশে পদক, নজরুল একাডেমি পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন।

মমতাজউদদীন আহমেদঃ
প্রখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমেদ আর নেই। গত ২ জুন রোববার বিকেল ৩টা ৪৮ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। এর আগে তিনি একাধিকবার লাইফ সাপোর্ট থেকে ফিরে এসেছিলেন। বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ মমতাজউদদীন আহমদ ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সালে নাট্যকার হিসেবে একুশে পদক লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন সরকারি কলেজে বাংলা ভাষা সাহিত্য ও নাট্যতত্ব নিয়ে দীর্ঘদিন পড়িয়েছেন।এছাড়া ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করেছেন। এছাড়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়নে কাজ করেছেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরিচালকও ছিলেন। ১৭ বছর বয়সে রাজশাহী সরকারি কলেজের ছাত্রাবস্থায় ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন মমতাজউদদীন। বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী সরকারি কলেজে ইট কাদামাটিতে যে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল, তাতে মমতাজউদদীনও ভূমিকা রেখেছিলেন। মমতাজউদ্‌দীনের লেখা নাটক ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ এবং ‘রাজার অনুস্বারের পালা’ কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়েছিল। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, আলাউল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। তার রচিত নাটকের মধ্যে ‘নাট্যত্রয়ী’, ‘হৃদয়ঘটিত ব্যাপার স্যাপার’, ‘স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’, ‘জমিদার দর্পণ’, ‘সাত ঘাটের কানাকড়ি’ উল্লেখযোগ্য। নাটকে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৬ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ১৯৯৭ সালে একুশে পদক লাভ করেন।

নাজমুল হুদা মিন্টুঃ
চলচ্চিত্র নির্মাতা নাজমুল হুদা মিন্টু গত ২ জুন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় লন্ডনের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নাজমুল হুদা মিন্টু তার স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে তিনি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। মিন্টুর ছেলে-মেয়েরা লন্ডনে বসবাস করেন। তারা সেখানেই মিন্টুকে একটি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসা চলাকালীনই মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের এই নির্মাতা। নাজমুল হুদা মিন্টু চলচ্চিত্রে আগমন করেন ‘সূর্য ওঠার আগে’ সিনেমার মাধ্যমে। এরপর ‘চৌধুরী বাড়ী’, ‘ডাক পিয়ন’, ‘অনেক প্রেম অনেক জ্বালা’, ‘দিনের পর দিন’, ‘সংঘর্ষ’, ‘মধুমালতি’, ‘ঘরে বাইরে’সহ বেশকিছু সিনেমা নির্মাণ করে প্রশংসিত হন তিনি। ছবি পরিচালনার পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ নেতাও ছিলেন। ১৯৮৯-৯০ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন নাজমুল হুদা মিন্টু। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে ছিলেন।

বাবরঃ
চলচ্চিত্র অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক বাবর ৬৭ বছর বয়সে গত ৬ আগস্ট সকাল ৯টা ১০ মিনিটে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাংরিন (পচন রোগ) সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গত ৯ জুন অপারেশন করে তার বাম পা অপসারণ করা হয়। এর আগে বাবরের বাঁ পায়ের তিনটি আঙুল গ্যাংরিন রোগে আক্রান্ত ছিল। গত ৩ মে চিকিৎসকের পরামর্শে আক্রান্ত তিনটি আঙুল কেটে ফেলা হয়। ক্রমেই তার হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আক্রান্ত হতে থাকে। চিকিৎসক তার পুরো শরীর বাঁচাতে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলার পরামর্শ দেন। এ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্ট ও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন বাবর।সম্প্রতি স্ট্রোক করলে বাবরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এবারের যাত্রা ছিলো তার শেষ যাত্রা। আর বাসায় ফেরা হয়নি। প্রসঙ্গত, আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘বাংলার মুখ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন বাবর। খল অভিনেতা হিসেবে বাবরের যাত্রা শুরু রাজ্জাক প্রযোজিত ও জহিরুল হক পরিচালিত ‘রংবাজ’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে। বাংলার মুখ', 'রংবাজ'সহ তিন শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। প্রায় এক যুগ আগে মনোয়ার হোসেন ডিপজলের ‘তের গুণ্ডা এক পাণ্ডা’ চলচ্চিত্রে সর্বশেষ অভিনয় করেছিলেন তিনি। বাবর ‘দাগী’ নামের একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন।

হুমায়ুন সাধুঃ
তরুণ নাট্য নির্মাতা ও অভিনেতা হুমায়ুন সাধু। মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ অক্টোবর মারা যান তিনি। এর আগে ৫ অক্টোবর অসুস্থ হওয়ার পর হুমায়ূন সাধুকে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় বলে দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়৷ ১৩ অক্টোবর তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়৷ প্রথমে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতাল এবং পরে গত রোববার স্কয়ার হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা কয়৷ সেখানে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন৷ হুমায়ুন সাধু মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পরিচালনায় ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ দিয়েই অভিনয়ে পথচলা । ‘ঊনমানুষ’ নাটকে অভিনয় দিয়ে দর্শকদের নজর কেড়ে নেওয়া সাধু এরই মধ্যে পরিচালনা করেছেন অনেকগুলো নাটক।

অভিনেতা কালা আজিজঃ
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা আজিজ গত ২৩ নভেম্বর রাত দশটায় উত্তরায় নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। অনেকদিন থেকেই ডায়াবেটিস ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। অভিনেতা কালা আজিজের স্ত্রী ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যান কয়েক বছর আগে। চলচ্চিত্রে 'কালা আজিজ' নামে পরিচিত ছিলেন গুণী এই শিল্পী
প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাকে সর্বশেষ দেখা গেছে ‘পদ্মার প্রেম’ সিনেমায়। চলতি মাসের প্রথম দিন মুক্তি পেয়েছিল সিনেমাটি।

মোবারক হোসেন খানঃ
প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী আয়েত আলী খানের ছেলে সংগীত ব্যক্তিত্ব মোবারক হোসেন খান গত ২৪ নভেম্বর রোববার সকালের কোনে একসময় ঘুমের ভেতর মারা যান। বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। মোবারক হোসেন খান ১৯৩৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী। মা উমার উন-নেসা। তাঁর চাচা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মোবারক হোসেন খান সবার ছোট। তাঁর বড় তিন বোন আম্বিয়া, কোহিনূর ও রাজিয়া এবং বড় দুই ভাই প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ আবেদ হোসেন খান ও বাহাদুর হোসেন খান। ১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পরে তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক হিসেবে ৩০ বছর কর্মরত ছিলেন। তিনি একুশে পদক ছাড়াও পেয়েছেন স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার।

মাহফুজুর রহমানঃ
দশবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান গত ৬ ডিসেম্বর মারা যান। অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমার চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। মাহফুজুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও ফুসফুসের জটিলতায় ভুগছিলেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ২৫ নভেম্বর রাতে তাকে রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। তার অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসকরা তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখার সিদ্ধান্ত নেন। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় গুণী এই মানুষটিকে বৃহস্পতিবার রাতে সেখানেই তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মাহফুজুর রহমান খান ৯বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। চিত্রনায়ক রাজ রাজ্জাক পরিচালিত ‘অভিযান’ (১৯৮৪) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক বিভাগে মাহফুজুর রহমান খান প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান।

পৃথ্বীরাজঃ
গত ১৫ ডিসেম্বর নিজের স্টুডিও 'জিলাপি'তে কাজ করার সময় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন তরুণ গায়ক, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক পৃথ্বীরাজ। জানা যায়, পৃথ্বীরাজ কিছুদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকলেও বর্তমান সময়ে বেশ সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। রবিবার হঠাৎ করেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিনি। স্টুডিও’তে কাজ করার সময় কোন সাড়া না দিলে তরুণ শিল্পী পৃথ্বীরাজকে সেখান থেকে উদ্ধার করে রাজধানীর সিটি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বছরের একেবারে শেষের দিকে তরুণ শিল্পী, সুরকার, সংগীত পরিচালক পৃথ্বীরাজের না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার খবরে মিডিয়া অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।

এ ছাড়া চলচ্চিত্র নির্মাতা হাসিবুল ইসলাম মিজান, মোহাম্মদ জাকির খান, সাইফুল আজম কাশেম, শাহেদ চৌধুরী, মঞ্চ ও ছোট পর্দার অভিনয়শিল্পী তমা খান, মডেল অভিনেত্রী সূচনা ডলি, গীতিকার আহমেদ কায়সার, প্রযোজক ইফতেখারুল আলম, প্রযোজক আওলাদ হোসেন চাকলাদার চলে গেছেন না ফেরার দেশে। পরপারে চলে যাওয়া বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
[email protected]

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৬

চাঁদগাজী বলেছেন:



জেনারেল এরশাদ, মেয়র খোকা ও জাসদের বাদলকে অন্যদের সাথে দেয়াতে মন্তব্য করতে অসুবিধা হচ্ছে।

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৩৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এরা সকলেই প্রয়াত মৃত্ ব্যক্তিদের কোন দল,মত থাকেনা।
তাদের মাগফেরাত কামনা করা জীবিতদের কর্তব্য।
মৃতদের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা একটি নেক আমল।
হাদিস শরিফে এ আমলের তাগাদা দেওয়া হয়েছে এবং
এ প্রসঙ্গে অনেক দোয়া হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে।
অতএব মরহুমের জন্য মাগফিরাতের দোয়া করা উচিত।

২| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩০

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: অনেক বড় সংগ্রহ। অজানা তথ্যগুলোর দিকে একটু চোখ বুলিয়ে নেওয়ার সুযোগ দানের জন্য ধন্যবাদ।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৪

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ ইবরাহীম আই কে আপনার মন্তব্যের জন্য।
তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ-বিদায়।
মাত্র তিন অক্ষর। কিন্তু শব্দটির আপাদমস্তক বিষাদে ভরা।
শব্দটা কানে আসতেই মনটা কেন যেন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে।
এমন কেন হয়? কারণ এই যে,বিদায় হচ্ছে বিচ্ছেদ। আ
র প্রত্যেক বিচ্ছেদের মাঝেই নিহিত থাকে নীল কষ্ট।
বিদায় জীবনে শুধু একবারই নয়, এক জীবনে মানুষকে
সম্মুখীন হতে হয় একাধিক বিদায়ের।

৩| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৫৪

আমি তুমি আমরা বলেছেন: অনেকের মৃত্যুর খবরই জানতাম না। আপনার পোস্টের মাধ্যমে জানা হল।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ লেখায়
মন্তব্য করার জন্য।
শুভেচ্ছা রইলো।

৪| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


কিছু মানুষের ভালো জীবন একটা জাতির ক্ষতির জন্য যথষ্ট; জেনারেল এরশাদ, মেয়র খোকা ও জাসদের বাদল সেই ধরণের মানুষ

০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
শেষ বিদায় যেহেতু সবচেয়ে কষ্টের, সবচেয়ে বিষাদের
তাই জীবনের অন্যান্য বিদায়ের সময় শেষ বিদায়ের
কথা স্মরণ করতে হবে। যাতে তখন কোনোরূপ
পরিতাপ নিজেকে দগ্ধ না করে অতীত জীবনের
কর্মের জন্য। তাহলেই জীবনের খন্ড খন্ড
বিদায়গুলো সার্থক হয়ে উঠবে নিশ্চয়।

৫| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০১

রাজীব নুর বলেছেন: পুরান ঢাকায় যারা আগুনে মারা গেল, তাদের তো স্মরন করলেন না!!!!

০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সবাইকে স্মরণ করা সম্ভ্বব
তবে সবাইকে নিয়ে লেখা
সম্ভব কি ?

৬| ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০২

রাজীব নুর বলেছেন: তবে পোষ্ট টা খুব ভালো হয়েছে।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ধন্যবাদ রাজীব ভাই
মানুষকে খুশী করা খুবই
কষ্টকর ব্যাপার। আপনার
ভালো লেগেছে বলে খুশী
হয়েছি।

৭| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:৩৮

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: চমৎকার একটি পোস্ট | এরশাদকে লিস্টে রাখাটা অস্বস্থিকর | তবে বাংলাদেশে বর্তমানে এরশাদের চাইতে অনেক নিম্নমানের চরম অসাধু নেতা/পাতিনেতার সংখ্যা প্রচুর |

০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কালের অমোঘ নিয়মে
জন্মিলে মরিতে হয়। যেহেতু এরশাদ সাহেব মৃত্যুবরণ করেছেন
তাই স্বাভিক ভাবেই তার নাম লিষ্টে এসেছে। এতে মনঃক্ষুন্ন হবার
কারণ নাই।
প্রিয়জনকে আমরা হয়তো কখনোই বিদায় দিতে চাই না।
পারলে কলিজার ভেতর, অন্তরের গহিনে তাকে বেঁধে রাখি।
কিন্তু চাইলেই কি তা পারা যায়? প্রিয় মানুষরাও তো জীবন
শূন্য করে দিয়ে বিদায় নেয়। তাদের অভাবে আমাদের জীবন
মুহূর্তের জন্য নীরব-নিথর, নিস্তব্ধ হয়ে যায়।

৮| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:৩৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সত্যি অনেক বরেণ্য ব্যক্তিকে হারিয়েছি আমরা । সুবীর নন্দীকে হারানোটা ছিল আমার কাছে সবচে বেদনা দায়ক। কত চমৎকার গান তিনি উপহার দিয়েছেন । দিন যায় কথা থাকে আহ মনে থাকে স্মৃতি ।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
মানবজীবনের সর্বশেষ যে বিদায় অবধারিত হয়ে আসে তার নাম মৃত্যু।
মৃত্যু এমন এক বিদায়ের নাম, যার দিন-তারিখ কেউ বলতে পারে না।
বলা সম্ভব নয়। কুরআন মজিদে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন ...
‘কোনো মানুষ জানে না, সে আগামীকাল কী উপার্জন করবে এবং কোনো
মানুষ জানে না, সে কোন স্থানে মৃত্যুবরণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক অবহিত।’-সূরা লোকমান ৩৪

৯| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৫২

জাহিদ হাসান বলেছেন: আমি আমার দাদাকে হারিয়েছে।
মৃত্যুকালে উনার বয়স হয়েছিল অনুমানিক ৮০ বছর।
দোয়া করবেন আমার দাদার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.