নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদের ৮৯তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১:১০


উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের এক সাহসী বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদ। আজাদ নামেই তিনি অধিক পরিচিত। বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের আদর্শিক গুরু হিসেবে চন্দ্রশেখর আজাদের পরিচয় আছে। ১৯২২ সালের অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত হওয়ার পর আজাদ বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। তিনি তরুণ বিপ্লবী মনমোহননাথ গুপ্তের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর পর এইচআরএর সক্রিয় সদস্য হন এবং তহবিল সংগ্রহ করেন। বেশিরভাগ তহবিল সংগ্রহ করা হতো সরকারি সম্পত্তি ডাকাতির মাধ্যমে। কংগ্রেসের সদস্য হওয়ার পরও মতিলাল নেহরু নিয়মিত আজাদকে সমর্থন করতেন এবং অর্থ দিতেন। আজ মহান বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদের ৮৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি।

চন্দ্রশেখর আজাদ ১৯০৬ সালের ২৩ জুলাই ধ্যপ্রদেশের -ঝাবুয়া জেলার -ধাওড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম পন্ডিত সীতারাম তিওয়ারি। পন্ডিত বংশের সন্তান ছিলেন চন্দ্রশেখর , তাকে প্রথম জীবনে টোলে পড়াশোনা করতে হয়েছিলো - ওনার পিতার ইচ্ছা ছিলো ছেলে বিখ্যাত সংস্কৃত পন্ডিত হয়ে উঠবেন ।। মাত্র 15 বছর বয়সে বেনারস সেন্ট্রাল কলেজের ছাত্র হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন চন্দ্র শেখর আজাদ ।। সে সময় তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীতে ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে নিয়ে যাওয়া হলে ,ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর নাম জিঞ্জাসা করলে তিনি বলেনঃ তার নাম "AZAD" , তার বাবার নাম "স্বতন্ত্র"(Independence), এবং বাড়ী "Jail"। সেই থেকে ওনার নাম হয় "চন্দ্র শেখর আজাদ" এই সময় পর্যন্ত চন্দ্রশেখর ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর একান্ত অনুগামী। ব্রিটিশদের হাতে নিগৃহীত হবার পর এই পন্থা ত্যাগ করে তিনি সশস্ত্র বিপ্লবী হয়ে ওঠেন। যোগাযোগ হয় বেনারসের বিপ্লবী রাজেন্দ্রলাল লাহিড়ী এবং শচীন্দ্রনাথ বক্সির সঙ্গে। তিনি এই দুই বিপ্লবীর সংস্পর্শে এসে এক নতুন সংগঠনের সদস্য হয়ে ওঠেন । বিপ্লবী রামপ্রসাদ বিসমিলের নেতৃত্বে কয়েকটি রাজনৈতিক ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করেন আজাদ। ১৯২৪ সালে দিল্লিতে 'হিন্দুস্তান সমাজবাদী প্রজাতন্ত্র সংঘের' বৈঠকে যোগ দেন আজাদ। এই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাঁকে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। এরপর এল সেই ঐতিহাসিক ৯ই আগষ্ট ১৯২৫ সাল, কাকোরি ট্রেন লুঠের ঘটনা। এই লুঠে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন আজাদ,এবং ট্রেন লুঠের ঘটনার পর গ্রেপ্তারি এড়ানোর জন্য অনেক দিন তাকে আত্মগোপন করে থাকতে হয়। ১৯২৮ সালের ১৪ ই ডিসেম্বর "ভগত সিং", "রাজগুরু" এবং "জয়গোপালের" সঙ্গে পুলিশ সুপারিনটেন্ডেট 'মিস্টার স্কট' কে হত্যা করতে গিয়ে ভুল করে ডিএসপি 'স্যান্ডর্স' কে হত্যা করেন। এবারেও তাকে দীর্ঘ দিন আত্মগোপন করে থাকতে হয়।

শহীদ ভগত সিং কে ফাঁসির সাজা নির্ধারিত হওয়ার পরে স্বাধীনতা সংগ্রামী চন্দ্রশেখর আজাদ খুব বিচলিত এবং চিন্তিত হয়ে পড়েন। ভগত সিং এর ফাঁসি আটকাতে তিনি ব্রিটিশ সরকারের প্রতি চাপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তার প্রিপ্রেক্ষিতে তিনি মহাত্মা গান্ধীর সাথে সাক্ষাত্‍প্রারথী হিসেবে সময় চান। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী তাঁকে (চন্দ্রশেখর আজা) সময় দিতে অস্বীকার করেন এই বলে যে, তিনি কোনো উগ্রবাদীর সাথে দেখা করতে পারবেন না। মহাত্মা গান্ধী জানতেন যদি ভগত সিং এবং চন্দ্রশেখর আজাদ এর মতো স্বাধীনতা সগ্রামী বেশীদিন জীবিত থাকেন এবং তাদের কার্য্যকলাপ চালিয়ে যান তাহলে তাঁরা যুবসমাজে নায়কের সম্মান লাভ করবেন। সুতরাং মহাত্মা গান্ধী ভগত সিং এর ফাঁসির কোনো প্রকার বিরোধিতাই করেন নি বরং তিনি নির্ধারিত দিনের এক দিন আগে যাতে ফাঁসই কার্য্যকর হয় সেই চেষ্টা করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর কাছে সময় না পেয়ে চন্দ্রশেখর আজাদ পণ্ডিত নেহেরু-এর সাথে দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। ২৭ ফেব্রুয়ারী, ১৯৩১ সাল চন্দ্রশেখর আজাদ পণ্ডিত নেহেরু-এর সাথে দেখা করেন। সেইদিন নেহেরুর সামনে চন্দ্রশেখর আজাদ ফাঁসি স্থগিত (আটকানোর) করার আবেদন করেন। বৈঠকে চন্দ্রশেখর আজাদ নেহেরুর সামনে ভগত সিং কে বাচানোর পুরো পরিকল্পনা পরিবেশন করেন। যা দেখে নেহেরু যার পর নাই আশ্চর্যান্বিত হয়ে যান, কারন এই পরিকল্পনা কার্য্যকর করলে ভগত সিং কে বাচানো যেত। নেহেরু কোনো ভাবে সাহায্য করতে আস্বীকার করেন, যার পরিণাম চন্দ্রশেখর আজাদ খুব রেগে যান এবং নেহেরুর সাথে উনার প্রচণ্ড উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। বিরক্ত চন্দ্রশেখর আজাদ বৈঠক থেকে বের হয়ে উনার সাইকেলে চেপে অলফ্রেড পার্কের উদ্দেশ্যে চলে যান।

পার্কে কিছু সময় বসার পর বিশাল পুলিশ বাহিনী উনাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে, পুলিশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে এসেছিল যেন তারা আগে থেকে জানত যে চন্দ্রশেখর আজাদ এই পার্কে বসে আছে। আজাদ শব্দের বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায় স্বাধীন, বস্তুত তিনি স্বাধীন ছিলেন। শেষ নিশ্বাস আর পিস্তলের শেষ গুলি থাকা অবধি ইংরেজ পুলিশ উনার সামনে আসতে পারেনি। পুলিশ আজাদ কে জীবন্ত ধরতে পারে নি। এখন একটা মূর্খও এটা বুঝতে পারবে যে নেহেরুর ঘর থেকে বের হওয়ার মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে কিভাবে পার্কে আজাদকে বিশাল পুলিশ বাহিনী এত তাড়াতাড়ি এবং পুর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় ঘিরে ধরতে পারে? এটা নেহেরুর বেইমানির ফল, না হলে বিশাল পুলিশ বাহিনী আজাদ কে কখনও মৃত ধরতে পারত না (চন্দ্রশেখর আজাদের টিকির নাগাল কোনোদিন ইংরাজ পুলিশ পায় নি। সেখানে উনাকে এইভাবে ঘিরে ধরা তো ব্রিটিশ সরকারের স্বপ্নের আতীত)। নেহেরু পুলিশকে খবর দেন যে আজাদ পার্কে আছেন এবং কিছু সময় অখানেই থাকবেন। সঙ্গে তিনি এটাও বলেছিলেন যে পুলিশ আজাদকে কোনোভাবেই যেন জীবিত অবস্থায় ধরার ভুল না করে,কারন তাহলে ভগত সিং এর দিকে মামলা গড়িয়ে যেতে পারে আর তার ফাঁসি কার্য্যকর করতে সমস্যা হতে পারে। এতকিছু হওয়ার পরেও স্বাধীনতার পরে কংগ্রেস সরকার পাঠ্যপুস্তকে বেইমান নেহেরুকে চাচা নেহেরু বানিয়ে তার জন্মদিন কে শিশুদিবস ঘোষনা করে। অন্যদিকে শহীদ চন্দ্রশেখর আজাদকে এখনও পাঠ্যপুস্তকে উগ্রবাদী হিসেবে পড়ানো হয়।

চন্দ্রশেখর আজাদ ছিলেন অত্যন্ত তৎপর কর্মী। সবসময়ই কোনো না কোনো অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য ছটফট করতেন বলে ,তাঁর সহকর্মী রা আজাদ কে "কুইক সিলভার " নামে ডাকতেন। ১৯৩১ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় "চন্দ্রশেখর আজাদ" এলাহাবাদের 'আলফ্রেড পার্কে' গাছের ছায়ায় বসে সঙ্গী 'সুখদেব রাজের' সঙ্গে কথা বলছিলেন। সেই সময় এক 'বিশ্বাসঘাতকের' জন্য 'ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী' খবর পেয়ে আজাদ কে ঘিরে ফেলে ,সেখানে ব্রিটিশ পুলিশের বিরুদ্ধে মরনপন যুদ্ধ চালিয়ে যান -আজাদ।
তিনি নিজেকে এবং সুখদেব রাজকে রক্ষা করার জন্য আহত হন এবং তিন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেন। তার কর্মকাণ্ডে সুখদেব রাজাকে পালিয়ে যেতে পারে। শেষ পর্যন্ত তার পালানো অসম্ভব বিবেচনা করে নিজের পিস্তলের শেষ গুলি নিজের কপালে চালিয়ে দেন। ব্রিটিশ শাসকের হাতে ধরা পড়বে না এমনই প্রতিজ্ঞা ছিল চন্দ্র শেখর আজাদের। শহিদ চন্দ্রশেখর বারবার বলতেন " আমার মাউজার শত্রুকে সুযোগ দেবে না আমাকে গ্রেপ্তার করার " এই শপথ তিনি রেখেছিলেন। আজ সেই মহান বিপ্লবী 'চন্দ্র শেখর আজাদের' ৮৯তম মৃত্যুবার্ষিকী। । ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী চন্দ্রশেখর আজাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলিঃ

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা।

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১২

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আাপনাকে ধন্যবাদ খান ভাই
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিপ্লবী
চন্দ্রশেখর আজাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা
জানানোর জন্য।

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: এই পোষ্টে কোনো মন্তব্য নাই কেন?

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
কে বলে মন্তব্য নাই !
আপনিইতো দুইটা মন্তব্য
করেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.