নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালি সাহিত্যিক, গীতিকার ও শিক্ষাব্রতী প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর ১১৫তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৫ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১৩


বাঙালি সাহিত্যিক, গীতিকার ও শিক্ষাব্রতী প্রভাবতী দেবী সরস্বতী। উত্তর কলকাতার সাবিত্রী শিক্ষালয়ের তিনি প্রতিষ্ঠাত্রী ও শিক্ষিকা ছিলেন। প্রভাবতী দেবীর নামের সঙ্গে ‘সরস্বতী’ যুক্ত ছিলো না। তার অসাধারণ সাহিত্য প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নবদ্বীপের পণ্ডিতসমাজ তাকে ‘সরস্বতী’ উপাধি দেন। মাত্র ১১ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা ‘গুরুবন্দনা’ প্রকাশ পায় তত্ত্বমঞ্জরী পত্রিকায়। প্রথম গল্প ‘টমি’ প্রকাশ পায় অর্চনা পত্রিকায় ১৯২২ সালে। প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর বলিষ্ঠ লেখনী সেই সময় খুব নাম করেছিল। সামাজিক বিষয় ছিল তাঁর লেখার মূলধন। হিন্দু ধর্মের আদর্শ ও মূল্যবোধও পাওয়া যায় তাঁর লেখায়। সমকালীন বাঁশরী, সারথি, উপাসনা, উদ্বোধন, সম্মিলনী, মোহাম্মদী, ভারতবর্ষ প্রভৃতি পত্রিকায় তিনি লেখালেখি করতেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস বিজিতা ১৯২৩ সালে ভারতবর্ষে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি পরে বাংলায় ‘ভাঙাগড়া’, হিন্দিতে ‘ভাবী’ ও মালয়ালম ভাষায় ‘ফুলদেবম্’ নামে চিত্রায়িত হয়। এছাড়া তাঁর পথের শেষে উপন্যাসের নাট্যরূপ ‘বাংলার মেয়ে’ কলকাতার রঙ্গমঞ্চে দীর্ঘকাল অভিনীত হয়েছিল। গল্প, উপন্যাস ও শিশুতোষ রচনা মিলিয়ে তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা তিনশতাধিক। সেগুলির মধ্যে ব্রতচারিণী, মহীয়সী নারী, ব্যথিতা ধরিত্রী, ধূলার ধরণী, রাঙ্গা বৌ, জাগরণ (১৯৩৩), বিধবার কথা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। চলমান সমাজজীবন, সনাতন আদর্শ ও মূল্যবোধ তাঁর উপন্যাসের কেন্দ্রীয় বিষয়। তিনি প্রথম বাংলা সাহিত্যে মেয়ে ডিটেকটিভের চরিত্র উপস্থাপনা করেন। কৃষ্ণা সিরিজের কৃষ্ণা নামের একটি মেয়ে ডিটেকটিভের সাহস ও দক্ষতা নিয়ে তিনি অনেকগুলি বই লিখেছিলেন। সেই সময় তাঁর ‘ইন্টারন্যাশনাল সার্কাস’ ছোটদের মধ্যে আলোড়ন তুলেছিল। সঙ্গীত রচনায়ও তাঁর খ্যাতি ছিল। খ্যাতিমান সাহিত্যিক ও গীতিকার প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর ১১৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯০৫ সালের আজকের দিনে তিনি অবিভক্ত বাংলার চব্বিশ পরগনা জেলার গোবরডাঙায় জন্মগ্রহণ করেন। বাঙালি সাহিত্যিক, গীতিকার ও শিক্ষাব্রতী প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর ১১৫তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

১৯০৫ সালের ৫ মার্চ অবিভক্ত বাংলার চব্বিশ পরগনা জেলার গোবরডাঙার কাছে খাঁটুরা গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্য-বিবাহ তখন সমাজের প্রথা। এমনই এক সময়ে জন্মগ্রহণ করেন প্রভাবতী। প্রথাগত শিক্ষা লাভ তাঁর হয়নি ঠিকই, তা সত্ত্বেও পারিবারিক প্রভাবে ছোট থেকেই ছিল সাহিত্যচর্চার মন। মাতৃভাষা ছাড়াও ইংরেজি কাব্যের রসাস্বাদন করেন বাবার সান্নিধ্যে। পরবর্তী জীবনে পরিচিতি পান সাহিত্যিক হিসেবে। স্কুল শিক্ষক হিসেবেও ছিলেন সমান দক্ষ। তার পিতা গোপাল চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন আইনজীবী। বাবার বদলির চাকরি ও খুব অল্প বয়সে বিয়ের জন্য স্কুলে গিয়ে পড়া হয়নি প্রভাবতীর। তার পরেও প্রভাবতী দেবী একজন শিক্ষাব্রতী ছিলেন। তিনি ব্রাহ্ম গালর্স ট্রেনিং কলেজ থেকে টিচার্স ট্রেনিং সার্টিফিকেট অর্জন করে উত্তর কলকাতার সাবিত্রী স্কুলে শিক্ষকতা করেন ও পরে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের উদ্যোগে তিনি কলকাতা পুরসভা পরিচালিত বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। সাবিত্রী স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সান্নিধ্য লাভ করেন। কবিগুরুও তাঁকে সাহিত্য রচনাতে যথেষ্ট উৎসাহিত করেন। ‘মাটির দেবতা’ উপন্যাসটি হয়ত সেই উৎসাহের ফসল। প্রভাবতী দেবীর প্রথাগত শিক্ষা ততটা না থাকলেও খুব অল্প বয়েসেই পিতার উৎসাহে কীটস, শেলী, বায়রন প্রভৃতি কবির কবিতা পড়ে ফেলেন। মাত্র ৯ বছর বয়েসে তার বিয়ে হয় কিন্তু বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না। তাই তিনি বিয়ের অল্প সময়ের মধ্যেই পিতার কাছে ফিরে আসেন। নিজের বাল্যবিবাহের কারনে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাননি কিন্তু স্ত্রী শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন তিনি। খাঁটুরার বঙ্গ বালিকা বিদ্যালয়কে নিজের প্রতিভা ও কর্মদক্ষতায় তাকে খাঁটুরা বালিকা বিদ্যালয় নামে পুনরুজ্জীবিত করে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্বভার নেন। সমাজসেবা, দেশপ্রেম ও নারী প্রগতিতে উৎসাহী ছিলেন। ঐ অঞ্চলে সরোজ নলিনী নারী মঙ্গল সমিতির শাখা কেন্দ্রের সভানেত্রী ছিলেন। তাঁর সাহিত্য প্রতিভার স্বীকৃতি হিসেবে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নবদ্বীপের পণ্ডিতসমাজ তাঁকে ‘সরস্বতী’ উপাধি দেন। এ ছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘লীলা পুরস্কার’ পান।

১৯৭২ সালের ১৪ই মে কলকাতার পাতিপুকুরে নিজ বাসগৃহে প্রায় মাস তিনেক গলব্লাডারের অসুখে ভুগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্রভাবতী দেবী সরস্বতী। নিজের সময়ে প্রভাবতী দেবী সরস্বতী ছিলেন দুর্দান্ত জনপ্রিয় সাহিত্যিক। কিন্তু এখন আর কেউ সে ভাবে মনেই করতে পারেন না প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর নাম। বর্তমান প্রজন্ম তাকে একেবারেই চেনে না বললে চলে। নারী শিক্ষায় তার অবদান অসাধারণ। তিনি সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় করে গেছেন নানা রকম কাজ। তার লেখায় বার বার নারীর অবস্থাই উঠে এসেছে। চিরদিন বঞ্চিত নারী সমাজের কথাই বলে গেছেন তিনি তার লেখনির মাধ্যমে। সমাজসেবা, দেশপ্রেম ও নারী প্রগতিতে তিনি বিশেষ ভাবে উৎসাহী ছিলেন। ‘বিপ্লবীর স্বপ্ন’ উপন্যাসটি প্রভাবতীর স্বদেশপ্রেমের সাক্ষ্য বহন করে। খ্যাতিমান সাহিত্যিক ও গীতিকার প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর ১১৫তম জন্মবার্ষিকী আজ। বাঙালি সাহিত্যিক, গীতিকার ও শিক্ষাব্রতী প্রভাবতী দেবী সরস্বতীর ১১৫তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:



ইনি তো স্বয়ং সরস্বতী!

০৬ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
স্বয়ং না, অপরের আর্শিবাদে সরস্বতী!!

২| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ফুলের শুভেচ্ছা

০৬ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ আলি ভাই।
শুভেচ্ছা জানবেন।

৩| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো।

০৬ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

শুধু ভালো নয়,
খুব ভালো!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.