নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের কন্যা, ভারতবর্ষের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৩


বাংলা সিনেমার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক নায়িকা বাংলাদেশের কন্যা সুচিত্রা সেন। আজীবন যিনি ভক্ত-অনুরাগীদের হৃদয়ে অবাধে বিচরণ করে গেছেন। সুচিত্রা সেন মূলত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। হরিণীর মতো চপল, কখনও সরল, কখনও তীর্যক চাহনির জাদুস্পর্শে ১৪ থেকে ৭৪ বছর বয়সী সবাই তাঁর বাঁকা ঠোঁটের হাসির ঝলকে বিমোহিত। সুচিত্রা সেনের সরস মাধুর্য, অভিব্যক্তি, দৃষ্টির কারিশমা মুগ্ধ করেছে অজস্র জনকে, বাঁধা পড়েছে অসংখ্য রুচিশীল হৃদয়। সবার কল্পনার রাণী,চিরযৌবনা, চিরঅধরা স্বপ্নচারিণী। যাকে ছাড়া কল্পনা করা যায় না বাংলা চলচ্চিত্র। চিরতারুণ্যের অধিকারী, চিরসবুজ এই স্বপ্নচারিণী ৩৫ বছর স্বেচ্ছায় পর্দার আড়ালে থেকেও সবার হৃদয় সিংহাসনে রাণী হয়ে দুর্দান্ত দাপটে রাজত্ব করে গেছেন। ১৯৩১ সালের আজকের দিনে তিনি পাবনায় (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলা) জন্মগ্রহণ করেন। বাংলা তথা বাংলা ছবির শেষ রোমান্টিক ‘আইকন’ সুচিত্রা সেনের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। জন্মসূত্রে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের পাবনার মেয়ে। বাংলাদেশের কন্যা ভারতবর্ষের বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের জন্মদিনে আমাদের ফুলেল শুভেচ্ছা।

সুচিত্রা সেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের পাবনায় (বর্তমান সিরাজগঞ্জ জেলা) এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সুচিত্রা সেনের বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত একজন গৃহবধু। তিনি বাবা-মায়ের পঞ্চম সন্তান এবং তৃতীয় কন্যা ছিলেন। উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন তার বাবা মা, এক ভাই ও তিন বোনকে সাথে নিয়ে শৈশব কৈশর কাটিয়েছেন পাবনা শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের বাড়িতে। সুচিত্রা সেনের প্রকৃত নাম রমা দাশগুপ্ত। বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ে আসার পর তাঁর নাম হয়েছিল সুচিত্রা সেন।পাবনাতেই তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষাদীক্ষা শুরু হয়। পাবনা মহাখালি পাঠশালায় শুরু এবং পরবর্তী তে পাবনা গার্লস স্কুল এ ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেন । এর পর তার আর পড়াশোনা হয়েছে বলে জানা যায়নি। পাবনা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেনীতে পড়া কালীন সময়ে ১৯৪৬ সালের ১৫ আগষ্ট পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে স্বপরিবারে ওপার বাংলায় পাড়ি দেয়। কিংবদন্তি নায়িকা সুচিত্রা সেন বাঙ্গালী এবং তার জন্ম বাংলাদেশে এ জন্য আমরা গর্ববোধ করি।

সুচিত্রা সেন ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। যিনি মহানায়িকা হিসেবেও পরিচিত। বিশেষ করে উত্তম কুমারের সাথে অভিনয়ের কারনে তিনি সারা বাংলায় প্রচন্ড জনপ্রিয় হন। মহানায়কখ্যাত অভিনেতা উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তম জুটি হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন উত্তম-সুচিত্রা। উত্তম-সুচিত্রা জুটি আজও বাংলা চলচ্চিত্রের শ্রেষ্ঠ জুটি হিসেবে পরিগনিত। সুচিত্রা সেন ৫০ থেকে ৭০ এর দশকে বাংলা ছবির কিংবদন্তী অভিনেতা উত্তম কুমারের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে একের পর এক সুপার হিট ছবি উপহার দিয়েছেন । চলচ্চিত্রে উত্তম কুমার যদি হন মহা নায়ক তা হলে সুচিত্রা সেন মহা নায়িকা। মহা নায়িকা সুচিত্রা সেনই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পান (শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পুরস্কার - সাত পাকে বাঁধা ১৯৬৩ ছবির জন্য, মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব)। তিনি কয়েকটি হিন্দী ছবিতেও অভিনয় করেছেন। ১৯৫২ সাল,ভাগ্য দেবী বড় বেশি ভর করেছিল জেন সুচিত্রা সেন এর উপর। “শেষ কোথায়” নামের একটি চলচ্চিত্র দিয়ে শুরু হোল স্বপ্নের রাণীর ক্যারিয়ার। কিন্তু বিধি বাম! শুরুতেই কঠিন ধাক্কা খেলেন।ছবিটি রিলিজ হলনা। কিন্তু তাতে কি? স্বয়ং বিধাতা যাকে স্বপ্ন রানী বানিয়ে রেখেছেন সে কি পেছনে যেতে পারে? তাতে যতই বাধা আসুক। এ বছরই তিনি মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে অভিনয় করেন। আর তাতে ই শুরু হোল ইতিহাস। বাংলা চলচ্চিত্রের নুতন জুগের সুচনা শুরু হোল। বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিল “ সাড়ে চুয়াত্তর” শুরু হয় উত্তম সুচিত্রার হিরন্ময় অধ্যায়। এর পর আর পেছনে তাকাতে হইনি রমা নামের মেয়েটিকে। বাংলা ছবির এই অবিসংবাদিত জুটি পরবর্তী ২০ বছরে ছিলেন আইকন স্বরূপ।

উত্তম কুমারের সাথে তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্রের তালিকাঃ
১। সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩), ২। ওরা থাকে ওধারে (১৯৫৪), ৩। অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), ৪। শাপমোচন (১৯৫৫), ৫। সবার উপরে (১৯৫৫), ৬। সাগরিকা (১৯৫৬), ৭। পথে হল দেরি (১৯৫৭), ৮। হারানো সুর (১৯৫৭), ৯। দীপ জ্বেলে যাই (১৯৫৯), ১০। সপ্তপদী (১৯৬১), ১১। বিপাশা (১৯৬২), ১২। চাওয়া-পাওয়া, ১৩। সাত-পাকে বাঁধা (১৯৬৩), (এই ছবিতে তিনি মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন), ১৪। হসপিটাল.১৫। শিল্পী (১৯৬৫), ১৬। ইন্দ্রাণী (১৯৫৮), ১৭। রাজলক্ষী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), ১৮। সূর্য তোরণ (১৯৫৮), ১৯। উত্তর ফাল্গুনি (১৯৬৩) (হিন্দিতে পুনঃনির্মিত হয়েছে মমতা নামে), ২০। গৃহদাহ (১৯৬৭), ২১। ফরিয়াদ, ২২। দেবী চৌধুরানী (১৯৭৪), ২৩। দত্তা (১৯৭৬), ২৪। প্রণয় পাশা, ২৫। প্রিয় বান্ধবী

ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৪৭ সালে দিবানাথ সেনের সঙ্গে সাতপাঁকে বাধা পড়েন সুচিত্রা। কথিত আছে উত্তম-সুচিত্রা এত বেশি একসাথে অভিনয় করেছিলেন তারা একসময় দুজনের প্রতি দুজনে দুর্বল হয়ে পড়েন। তবে সেটা পরিণয় এর দিকে পা বাড়ায়নি। উত্তম যখন মারা যান তখন উত্তম এর স্ত্রী নাকি সুচিত্রা সেনকে বলেছিলেন, “ সারা জীবন তো তুমি উত্তম এর গলায় মালা পড়ালে, আজ সৎকার এর পূর্বে তুমিই প্রথম ওর গলায় মালা পরাও”। সুচিত্রার মোট ৬৩ টি ছবির মধ্যে ৩২ টির নায়ক ছিল উত্তম কুমার। সুচিত্রা সেনের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেনও পরবর্তীতে অভিনয়ে সুখ্যাতি পান। মুনমুন সেনের দুই কন্যা রিয়া এবং রাইমা সেনও অভিনয়ের সাথে যুক্ত আছেন। ১৯৫৫ সালের দেবদাস ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। উত্তম কুমারের সাথে বাংলা ছবিতে রোমান্টিকতা সৃষ্টি করার জন্য তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী। ১৯৬০ ও ১৯৭০ দশকে তার অভিনীত ছবি মুক্তি পেয়েছে। স্বামী মারা যাওয়ার পরও তিনি অভিনয় চালিয়ে গেছেন, যেমন হিন্দি ছবি আন্ধি। এই চলচ্চিত্রে তিনি একজন নেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বলা হয় যে চরিত্রটির প্রেরণা এসেছে ইন্দিরা গান্ধী থেকে। এই ছবির জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এবং তার স্বামী চরিত্রে অভিনয় করা সঞ্জীব কুমার শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার জিতেছিলেন। ২০০৫ সালে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের জন্য সুচিত্রা সেন মনোনীত হন, কিন্তু ভারতের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে সশরীরে পুরস্কার নিতে দিল্লী যাওয়ায় আপত্তি জানানোর কারনে তাকে পুরস্কার দেয়া হয় নি। দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার নিতে অস্বীকার করলেও বাংলার কিংবদন্তী অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন রাজ্য সরকারের দেয়া বঙ্গবিভূষণ সম্মান নিতে অস্বীকার করেননি। অন্তরাল ভেঙে মঞ্চে আসেননি ঠিকই, তবে তার হয়ে মঞ্চে হাজির ছিলেন কন্যা মুনমুন ও নাতনি রাইমা। তারাই সুচিত্রা সেনের হয়ে বঙ্গবিভূষনের মানপত্র ও দুই লাখ রুপির চেক গ্রহণ করেন। বর্তমানে তার মেয়ে মুনমুন সেন এবং নাতনী রিয়া সেন ও রাইমা সেন চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
কথায় বলে, যা নিষিদ্ধ, যার সবটা জানা যায় না, তাই নিয়ে কৌতূহল কখনও কমে না। তাই সুচিত্রার এই অন্তরাল যাপন তো শুধু রহস্য নয়, কিন্তু একটা বড় কৌতূহল থেকে গেছে, বন্দি জীবনে ঠিক কী করতেন সুচিত্রা?
নিজেকে ইহজগতের মোহ থেকে মুক্ত করার দীক্ষামন্ত্র সুচিত্রাকে দিয়েছিলেন ভরত মহারাজ। শোনা যায়, ১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবি ফ্লপ করার পরে সুচিত্রা ছুটে গেছিলেন ভরত মহারাজের কাছে।
ভরত মহারাজ বলে দেন “মা, লোভ কোরো না”। ওই মন্ত্রই যেন সুচিত্রা নিজের শেষ জীবন অবধি চলার পথে পাথেয় করে নেন। সমস্ত লোভ ত্যাগ করার জন্য ঘরে বন্দি করে ফেলেন নিজেকে।
সেই সময়ে দুই নাতনি নয়না (রাইমা) ও হিয়া (রিয়া) সঙ্গে থাকত। মহানায়িকা নিজেকে মুড়ে রাখতেন বোরখায়, কোনও ভাবেই যেন তাকে দেখা না যায়। নিজের মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে রাখতেন সর্বদা।
শোনা যায়, তার পরিবারের লোকজনদের কাছে, ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধবদের মধ্যেও তার অবাধ যাতায়াত ছিল। কারও বান্ধবী সুচিত্রা, কারও সুচিত্রা ফুপু, কারও মা, আম্মা, কারও সুচিত্রা খালা তিনি। তিনি “মেশো কিন্তু মিশে যেওনা”-তে বিশ্বাসী ছিলেন।
তাই যাদের সঙ্গে মিশতেন, সেখানেও একটা সীমারেখা টেনে রাখতেন। তাই জন্যই শেষ জীবন পর্যন্ত থাকতে পেরেছিলেন অন্তরালে।
অথচ না কোনও অবসাদ, না কোনও রোগ, না কোনও বিকার। কেবল অবসর। সুচিত্রা নিজের সেরা সময়টা ধরে রাখতে চেয়েছিলেন। তাই হয়তো সংবাদমাধ্যমগুলোর কৌতূহল কখনও কম পড়েনি তাকে নিয়ে।
শোনা যায়, সুচিত্রা সেন ছিলেন এমনিতেই ‘ভেরি প্রাইভেট পার্সন’। যখন ফিল্মে কাজ করতেন, তখনও তাকে সামনাসামনি কম জনই দেখতে পেতেন, শ্যুটিংয়ের বাইরে। নিজের কাজের বাইরে পার্টিও করতেন না তিনি। এড়িয়ে চলতেন মিডিয়া।
সুচিত্রা সেন যে সারাদিন পূজা করতেন, এটা একটা মিথ। এমনটা মোটেই নয়, এ কথা বলেছেন তার কন্যা মুনমুন সেনই। রমার নিজের শোয়ার ঘরেই পাশেই ছিল তাদের ‘ঠাকুরঘর’। ঠাকুর রামকৃষ্ণ, মা সারদা, বিবেকানন্দর ছবি। গোসল সেরেই পূজায় বসতেন তিনি।
পূজা বলতে ধ্যান, আর ঠাকুরের সিংহাসন ফুল দিয়ে সাজানো। কিন্তু তার মানে এই নয় সারাদিন ঠাকুরঘরে পড়ে থাকতেন। বরং তার সময় কাটত ধর্মপুস্তক পড়ে। রীতিমতো ধর্মীয় সাহিত্য নিয়ে চর্চা করতেন। তার বাড়িতেও আসতেন বেলুড় মঠের মহারাজরাও। চলত আধ্যাত্মিক আলোচনা।
একবার তো দক্ষিণেশ্বরে ভিড়ের মধ্যেই ঘোমটা দিয়ে ভবতারিণী দর্শনে মন্দিরে চলে গিয়েছিলেন। প্রণাম করেন হাঁটু গেড়ে। ততক্ষণে লোক জড়ো হয়ে গেছে। কোনও মতে বেরিয়ে আসেন। রামকৃষ্ণর মন্দিরে গিয়ে একমনে ধ্যান করতেন, তার পরে ভরত মহারাজের সঙ্গে দেখা করে ফিরে আসতেন।
রিয়া-রাইমা স্কুল থেকে ফিরে সোজা চলে যেত দিদিমা সুচিত্রার কাছে। তখন তো মুনমুন ছবি করছে টলিউড-সহ সাউথেও। রাইমা-রিয়া তাই সুচিত্রাকেই মা বলে ডাকত। মুনমুনকে মাম কি মাম্মি।
নাতনিদের নিয়ে সুচিত্রা বিকেলে যেতেন লাভার্স লেনের ক্লাবে। সঙ্গে থাকতেন কখনও সাংবাদিক বন্ধু। নাতনিদের স্কেচ পেন কিনতে নিয়ে যেতেন থিয়েটার রোড এসি মার্কেটে। লম্বা কালো চুড়িদার বা শাড়ি, কিন্তু মুখ ঢাকা বড় গোগো সানগ্লাস সঙ্গে রুমালে।
মানুষের ছেঁকে ধরা এড়াতেই তার এই পন্থা। বহু উকিল বন্ধু, ডাক্তার বন্ধুর বাড়ি যেতেন যখন তখন তাদের সঙ্গে মুখ না ঢেকেই গল্প করতেন। এভাবেই নিজের জগতে নিজের পছন্দের লোকদের মাঝে আনন্দে করেই জীবন কাটিয়েছেন সুচিত্রা।
মৃত্যুর পরেও যাতে আড়াল বজায় থাকে, তাই তার শেষযাত্রা যাতে সুষ্ঠু ভাবে হতে পারে, সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও সুচিত্রা দেখা করেছিলেন বলে মনে করেন অনেকে। তার ইচ্ছে মেনেই, শেষযাত্রাতেও কফিনে মুড়ে বের করা হয় সুচিত্রার দেহ। ইচ্ছানুসারে চুল্লিতে নয়, চন্দনকাঠের দাহতে সুচিত্রার দেহ পোড়া ধোঁয়া মিশে যায় আকাশে।

১৯৫৩ সাল থেকে টানা ২৫ বছর তিনি বহু সফল ছবিতে অভিনয় করার পর ১৯৭৮ সালে তিনি চলচ্চিত্র থেকে অবসরগ্রহণ করেন। এর পর তিনি লোকচক্ষু থেকে আত্মগোপন করেন এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সেবায় ব্রতী হন এবং আজ পর্যন্ত তাঁকে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক, মেয়ে মুনমুন, মেয়ে জামাই,আর দুই নাতনি রাইমা, ও রিয়া ছাড়া কেউ তাঁকে আর দেখেনি। তার স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকার কী কারণ? কী রহস্য?- এসব প্রশ্নের উত্তর বহুবার খোঁজার চেষ্টা করেছে প্রচারমাধ্যম। একেক জন এক-এক ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রকৃত কারণ জানা যায়নি। কারো কারো মতে সুচিত্রা সেন ষাট ও সত্তর দশক পর্যন্ত তার অভিনীত প্রায় প্রতিটি চলচ্চিত্র জনপ্রিয়তার শীর্ষ ধারা অব্যাহত রাখে। তবে ৭৬ এর শুরু থেকে ৭৭ এর শেষ অবধি তিনি কিছুটা জনপ্রিয়তা হারান। এবং সেখান থেকে তিনি আস্তে আস্তে করে বিদায় নেন। যদিও ব্যর্থতার গ্লানি খুব বেশি তাঁকে স্পর্শ করেনি। তার মায়াবি লক্ষী টেরা চোখ, মায়া ভরা মুখ, লজ্জাবতী হাসি, সময় এর আবর্তে আজ হয়তো হারিয়ে গেছে। বয়স হয়েছে তার অনেক। কিন্তু দর্শক তাঁকে যেই ভাবে চিনতো ঠিক সেই ভাবেই মনের মনি কোঠায় লালন করুক এই চিন্তা থেকে তিনি বোধ হয় কারো সামনে আর আসেন না। কারন কারো সামনে আসলে তাঁকে হয়তো দেখতে হবে নানি কিংবা দাদি হিসাবে, এটা কি সম্ভব? এটা মহারানী কি করে মানবেন? তাই তিনি হয়তো এটাই ভেবেছেন দর্শক এর মনের মাঝে হৃদয় রানী থাকা অবস্থায়ই তিনি বিদায় নিবেন। সব রহস্যের যবনিকাপাত করে নিয়তির অমোঘ নিয়মে ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ২৫ মিনিট কলকাতার বেল ভিউ হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় রুপালি পর্দার কিংবদন্তি নায়িকার।

একজন শিল্পীর কোন দেশ, জাতী, ধর্ম, কিছুই নেই। একজন শিল্পী গোটা পৃথিবীর সম্পদ। তেমনি সুচিত্রা সেন ও আমাদের! তার জন্ম আমাদের এই বাংলাদেশে। এই বাংলার ধুলি কণায় তার বিচরন ছিল প্রায় ১৬ টি বছর। পাবনায় যেই বাড়িতে রমা নামের মেয়েটি জন্ম নিয়ে ছিলেন সেই বাড়িটি আজ ও আসেন তিনি। কালের বিবর্তনে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে তার বাড়িটি। কেউ কেউ এই মহারানীর সৃতি বিজড়িত বাড়িটি দখলেরও পায়তারা করেছে। উল্লেখ্য ১৯৪৬ সালে সুচিত্রা সেনের বাড়িটি জেলা প্রশাসন উর্দ্বতন সরকারী কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য বাড়িটি রিক্যুইজিশন করেন। পরে ১৯৮৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক সাইদুর রহমানের সহযোগিতায় সুকৌশলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ পাবনা শাখার লোক জন অর্পিত সম্পত্তিতে পরিনত করে লীজ নিয়ে ইমাম গাজ্জালী ইনিষ্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। তিনদশক পর অবশেষে দখলমুক্ত সুচিত্রা সেনের পাবনার বাড়ি। গত বছর জুলাই মাসে সব বাধা কাটিয়ে সুচিত্রা সেনের পাবনার বাড়ি জামাতে ইসলামির দখল থেকে মুক্ত করে বর্তমান সরকার। ওই জমিতে সুচিত্রা সেনের স্মৃতিতে সংগ্রহশালা গড়ে তোলা হবে। নাম হবে, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংগ্রহশালা। বহু লড়াইয়ের পর মহানায়িকার পাবনার ভিটে দখলমুক্ত হওয়ায় খুশি দুই বাংলার মানুষ। কিংবদন্তি এই মহানায়িকার স্মৃতি বিজরিত পৈতৃক বাড়ি এবং শ্বশুড়বাড়িটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় তিনি আমাদের।

উপমহাদেশের বাংলা ছায়াছবির মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী। কিংবদন্তি এই মহা নায়িকার জন্ম বাংলাদেশে এবং তিনি বাঙ্গালী এ জন্য আমরা গর্ববোধ করি। স্বপ্নচারিণী মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্ম দিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক লিংক
[email protected]

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



উনার অনেক মুভি দেখেছেন?

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:০৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনি সময় কলে অন্ধের অভিনয় কেন করেন?
আপনার জন্য যে লেখা সেখানে আপনাকে দেখিনা
অথচ বলেন সময়ের কথা বলেন, বাস্তবতা নিয়ে
লেখেন মানুষকে নিয়ে লেখেন!!
আমি আমার ট্রাকেই থাকতে চাই
তবে মাঝে মাঝে বদলাই শুধু
আপনদের জন্য।

২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:


খারাপ সময়ে ভুল যায়গায় আছি

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:১৯

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
উপরের লিংকে ক্লিক করে
সঠিক যায়গায় আসুন।

৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: মুরুব্বী মসজিদে নামাজ পড়তে পারবেন না।
ঘরে বসে নামাজ পরুন।

০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:৫৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
আমরা মসজিদে ছিলাম এখন ঘরে।
আপনি আগে থেকেই ঘরে, এখন কোথায়?

৪| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০৯

শের শায়রী বলেছেন: উনাকে যত বার দেখি ততবার মুগ্ধ হই, মনে হয় ওটা কোন অভিনয় না, উনি যেন ওই চরিত্রের বাস্তব রূপ যা সেলুলয়েডে আবদ্ধ করছে। শ্রদ্ধা।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৫

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

এখানেই শিল্পীর স্বার্থকতা।
তার অভিনয়ে কোন মেকী ভাব
অনুভূত হতো না। মনে হতো
বাস্তব্।
আপনাকে ধন্যবাদ শের শায়রী ভাই।

৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৪৬

ইফতি সৌরভ বলেছেন: আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়, তাঁর বাড়ি দখল করে ইমাম গাজ্জালী ইনস্টিটিউট বানিয়ে কার সম্মান বৃদ্ধি করল আর কাকে অপমান করল মাথামোটা দখলদার গ্রুপ?
ভাবতে ভালোই লাগে, যার চাহনিতে সব পাড়ের বাঙালিরা অন্ধ, মুগ্ধ- উনি আমাদের বাংলাদেশের ।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

কি আর করবেন।
এটাই বাংলাদেশের কালচার
জোর যার মুল্লুক তার !!
ধন্যবাদ মন্তব্য প্রদানের জন্য।

৬| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০০

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: অবসর গ্রহণের পর উনি সমাজ কল্যাণমূলক কাজে জড়াতে পারতেন। লুকিয়ে থাকাটা আসলে ওনার অহমিকার বহিঃপ্রকাশ। সাধারণের সাথে মেশার কোনও আগ্রহ ওনার কখনই ছিলনা। পৃথিবীতে বিখ্যাত মানুষ আরও আছে। তারা অবসর গ্রহণকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছেন।

০৭ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৩১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

যে কো্ন একটি কারন বা বহুবিধ কারণ থাকতে পারে তার
লোক চক্ষৃুর অন্তরালে থাকার। তিনিই ভালো জানতেন কেন
তিনি অন্তরালে ছিলেন। তবে তার অন্তরালে থাকার বেশ
কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে লেখায়। আপনি যে কোন
একটা মিলিয়ে নিতে পারেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.