নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নূর মোহাম্মদ নূরু (পেশাঃ সংবাদ কর্মী), জন্ম ২৯ সেপ্টেম্বর প্রাচ্যের ভেনিস খ্যাত বরিশালের উজিরপুর উপজেলাধীন সাপলা ফুলের স্বর্গ সাতলা গ্রামে

নূর মোহাম্মদ নূরু

দেখি শুনি স্মৃতিতে জমা রাখি আগামী প্রজন্মের জন্য, বিশ্বাস রাখি শুকনো ডালের ঘর্ষণে আগুন জ্বলবেই। ভবিষ্যৎকে জানার জন্য আমাদের অতীত জানা উচিতঃ জন ল্যাক হনঃ ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। প্রতিদিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনা কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভাল, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ। তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জি মানুষের কাছে সবসময় গুরুত্ব বহন করে। এই গুরুত্বের কথা মাথায় রেখে সামুর পাঠকদের জন্য আমার নিয়মিত আয়োজন ‘ইতিহাসের এই দিনে’। জন্ম-মৃত্যু, বিশেষ দিন, সাথে বিশ্ব সেরা গুণীজন, এ্ই নিয়ে আমার ক্ষুদ্র আয়োজন

নূর মোহাম্মদ নূরু › বিস্তারিত পোস্টঃ

মঞ্চ ও টেলিভিশন অভিনেতা আতাউর রহমানের ৭৯তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা

১৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:১৮


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী মঞ্চনাটক আন্দোলনের অগ্রদূত আতাউর রহমান। এ দেশের মঞ্চ নাটকে আতাউর রহমান একটি সুপরিচিত নাম। একাধারে তিনি অভিনেতা, নাট্য সমালোচক, রবীন্দ্র গবেষক মঞ্চ নির্দেশক, আবৃত্তিকার। মঞ্চ নাটকের নির্দেশনার পাশাপাশি তিনি অভিনয়ও করেছেন সমানতালে। নাগরিকের হয়ে অভিনেতা হিসেবে তিনি এক হাজারের অধিক সময় মঞ্চে অবতীর্ণ হয়েছেন। একাধারে মঞ্চ, রেডিও ও টেলিভিশনে সমান পদচারণা তার। সেই সঙ্গে নাট্য বিষয়ক বই রচনা, নাট্যসমালোচনা, উপস্থাপনা, নাট্য শিক্ষক হিসেবে পাঠদান, টেলিভিশন নাট্যকার, প্রবন্ধকার, বক্তা সব ক্ষেত্রেই রয়েছে তার সরব পদচারণা। নবনাট্য আন্দোলন, গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনসহ দেশের সকল সংস্কৃতিক আন্দোলনে রয়েছে তার অসামান্য অবদান। আতাউর রহমান বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য একুশে পদকসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। তার নির্দেশিত নাটক বিদেশেও মঞ্চস্থ হয়েছে বহুবার। সর্বাধিক মঞ্চনাটক নির্দেশনার রেকর্ডও তার ঝুলিতে। স্কুলজীবনেই সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রাখেন তিনি। ছোট থেকেই রবীন্দ্রসাহিত্যে খুব বোঝাপড়া। ছেলেবেলা থেকেই নাটকের প্রতি তার ছিল বিশেষ দুর্বলতা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নটীর পূজা’ নাটক দেখে তার মঞ্চপাঠ শুরু। একইভাবে সংগীতেও। সংগীতের প্রতি ছিল অনেকটা প্রতিবেশী প্রবণতা। ১৯০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত যত রবীন্দ্র সঙ্গীত রেকর্ড হয়েছে তার একটি বড় সংগ্রহ আছে তার। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল থেকে আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ আতাউর রহমান প্রথম মঞ্চ নাটকে অভিনয় করেন। ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন আতাউর রহমান। ১৯৭২ সালে ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এর মাধ্যমে তার নাট্য নির্দেশনা শুরু। এর পর তিনি নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের লেখা ‘বাকি ইতিহাস’। এর মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাটক প্রদর্শন শুরু হয়। এর পর নিজের দলে ও অন্য দলের হয়ে অসংখ্য নাটকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। মঞ্চ নাটকের নির্দেশনার পাশাপাশি আতাউর রহমান অভিনয়ও করছেন সমানতালে। রেডিও, টেলিভিশনেও রয়েছে তার সদর্প উপস্থিতি। এছাড়া নাট্য বিষয়ক বই, নাট্যসমালোচনা, উপস্থাপনা, শিক্ষকতা, টেলিভিশন নাট্যকার, প্রবন্ধকার, বক্তা সব ক্ষেত্রেই রয়েছে আতাউর রহমানের সরব পদচারণা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান। গত বছর একইসাথে দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মনোনীত হয়েছেন তিনি। মঞ্চনাটকে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০১ সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক ভূষিত করে। আজ নাট্যজন আতাউর রহমানের ৭৯তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪১ সালের আজকের দিনে তিনি নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। মঞ্চ সারথি আতাউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

আতাউর রহমান ১৯৪১ সালের ১৮ জুন তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) নোয়াখালী জেলায় নানা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। নিজেদের বাড়ি থেকে নানার বাড়ির দূরত্ব অল্পখানি। নোয়াখালীর বাড়ি দুটির মনোরম পরিবেশে তার শৈশবের স্মৃতিময় মধুমাখা অতীত। তার পিতা ছিলেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের স্নাতক। তার মাতাও সংস্কৃতিমনা ছিলেন। তার মায়ের কাছেই তিনি বাইরের বই পড়ার শিক্ষা লাভ করেন। তার শৈশব কাটে নোয়াখালীতে তার মামার বাড়িতে। সেখানেই তিনি প্রথম জুল ভার্ন রচিত টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দ্য সি পড়েন। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্য, উপন্যাস, ছোটগল্প, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনাবলি, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচনাবলির সাথে পরিচিত হন। আতাউর রহমান চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তিনি বর্তমানের শহীদুল্লাহ হলে থাকতেন। সে সময় ২৬ মার্চ উপলক্ষে এ হল থেকে আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তিনি প্রথম মঞ্চে অভিনয় করেন। আতাউর রহমান অভিনীত প্রথম নাটক আজিম উদ্দিনের ‘মা’। এ নাটকে তিনি কবি আসাদ চৌধুরীর সঙ্গে অভিনয় করেন। পরবর্তীকালে আবদুল্লাহ আল মামুনের রচনা ও আরিফ হায়দার নির্দেশিত ‘শপথ’ নাটকের মূল চরিত্রে কাজ করে ব্যাপক আলোচিত হন আতাউর রহমান। তখন নাটকের জন্য অডিশন হতো, বাছাই করে নাট্যকর্মী নেওয়া হতো। নির্দেশক হিসেবে তখন থেকেই আবদুল্লাহ আল মামুনের ভালো একটা পরিচিতি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়ার পর তার বন্ধু জিয়া হায়দার আমেরিকার ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টার থেকে পাস করে দেশে এসে তাকে মঞ্চনাটক করার প্রস্তাব দেন। ১৯৬৮ সালে ফজলে লোহানীর বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয় "নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়"। তিনি হন এর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।পছন্দমত মৌলিক নাটক না পাওয়ায় প্রথম নাটক মনস্থ করতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। ১৯৭২ সালে রহমান তার প্রথম নাটকের নির্দেশনা প্রদান করেন। তার নির্দেশিত প্রথম মঞ্চনাটক মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত প্রহসন বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো-এ অভিনয় করেন লাকি ইনাম, আবুল হায়াত, ইনামুল হক, আলী যাকের, ও ফখরুল ইসলাম। পরের বছর ১৯৭৩ সালে তিনি বাদল সরকার রচিত এবং আলী যাকের পরিচালিত বাকি ইতিহাস মঞ্চনাটকে অভিনয় করেন। এটি ছিল নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের হয়ে তার প্রথম অভিনয়। এটি ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনী।

আতাউর রহমান ৩৫টির বেশি মৌলিক এবং অন্য ভাষা থেকে অনুবাদ করা মঞ্চনাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গ্যালিলিও, পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, রক্তকরবী, বাংলার মাটি বাংলার জল, নারীগণ, ঈর্ষা, অপেক্ষমাণ, এবং ওয়েটিং ফর গোডো। মঞ্চে তার নির্দেশিত প্রতিটি প্রযোজনাই যেন অর্জন করেছে সমতালের জনপ্রিয়তা। তার নির্মিত উল্লেখযোগ্য মঞ্চ নাটক হলো- ‘মাইল পোস্ট’, ‘সাজাহান’, ‘কবর দিয়ে দাও’, ‘গডোর প্রতীক্ষায়’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ঈর্ষা’, ‘হিম্মতি মা’ প্রভৃতি। নিজ দলের বাইরে ‘নারীগণ’, ‘রুদ্র রবি ও জালিয়ানওয়ালাবাগ’ প্রভৃতি নাটক নির্দেশনা দেন তিনি। তার নির্দেশিত নাটক বিদেশেও মঞ্চস্থ হয়েছে বহুবার। সর্বাধিক মঞ্চনাটক নির্দেশনার রেকর্ডও তার ঝুলিতে। এর বাইরেও আতাউর রহমান বাংলাদেশ সেন্টার অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক এবং পরে সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সভাপতি থাকাকালীন ২০১১ সালের মে মাসে ১০ দিন ব্যাপী ১ম ঢাকা আন্তর্জাতিক থিয়েটার উৎসবের আয়োজন করেন। তিনি বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনে প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন। মঞ্চের পাশাপাশি রহমান কবিতা লিখেন। তার লেখা কয়েকটি কবিতা হল লেখা 'স্বপ্নের পাহাড়', 'রাতদিন', 'ভালো আছি'। তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে অবদান রাখার জন্য ২০০১ সালে একুশে পদকসহ পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। শহীদ মুনীর চৌধুরী পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ মঞ্চ নির্দেশনার জন্য চক্রবাক পুরস্কার, মঞ্চ নির্দেশনার জন্য লোক নাট্যদল স্বর্ণ পদক, আন্যদিন ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম পুরস্কার,মঞ্চনাটকে অবদানের জন্য অঁলিয়ো ফ্রঁসোয়া পুরস্কার, চ্যানেল আই রবীন্দ্রমেলা আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, কাজী মাহবুবুল্লাহ আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, বাংলা একাডেমির ফেলো। এছাড়া ১৯৯২ সালে পাকিস্তান সরকার কতৃক প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কার প্রদান করেন সাহিত্যে উলেখ্যযোগ্য অবদান এর জন্য। আজ নাট্যজন আতাউর রহমানের ৭৯তম জন্মবার্ষিকী। মঞ্চ সারথি আতাউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা।

নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যমকর্মী
নিউজ চ্যানেল :-& ফেসবুক
[email protected]

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৪৪

কল্পদ্রুম বলেছেন: ওনার অভিনয় ভালো লাগে।ব্যক্তিত্বের ভিতর ভালো মানুষের ছাপ আছে।

১৮ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৫:২৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

যথার্থ বলেছেন
কাছে থেকে দেখার সুযোগ
পাবার কারনে তা বুঝতে
পেরেছি।

২| ১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১৮

কাছের-মানুষ বলেছেন: উনার অভিনয় দেখেছি। ভদ্রলক ভাল অভিনয় করেন।

১৮ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৫:২৭

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

উনি যথার্থই ভদ্র লোক
ইসলাম চেম্বারে একসময় আমাদের
পাশাপাশি অফিস ছিলো। মুখে সর্বদা
হাসি লেগেই থাকতো।

৩| ১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: এই লোকের অভিনয় আমি দেখেছি। ভালো লাগে। হুমায়ূন আহমেদেরও বেশ কিছু নাটক করেছেন উনি।

১৮ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৫:২৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

আপনাকে ধন্যবাদ মন্তব্য
প্রদানের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.