নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালবাসার গল্প ; কচুরিপানার ভালবাসা ।

১৯ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৬:৩৯

গুনে গুনে চার সপ্তাহ টিউশনিতে হেঁটে হেঁটে গেলে কিছু টাকা বাঁচানো যাবে। সামনের মাসেই মিতির জন্মদিন । সব মেয়েই সুন্দর চেহারা এবং ছেলের অনেক টাকা আছে দেখে প্রেম করে । আমার তো কিছুই নেই! তবু ঠিক পাঁচ বছর হলো আমার সাথে মিতি আছে । খুব সাধারন একটা সম্পর্ক । এই সম্পর্কের পরিনতি আমরা দুজনই জানি না। আমাদের বন্ধুত্বের ভালবাসা হয়তো সব অজানা বাস্তবতা কে মেনে নিবে ।যাই হোক এক বছর হয়ে যাচ্ছে আমি চাকুরির জন্য চেষ্টা করছি । বড় ভাই এবং আপুর বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর যার যার সংসার নিয়ে ব্যসতো । তাদের ইছে হলে যোগাযোগ করে ,ইচ্ছে না হলে করেনা । বাবা মা বৃদ্ধ আমাকেই তাদের দেখাশুনা করতে হয় । বন্ধু এবং আত্মীয় স্বজনরা স্বাভাবিক নিয়মেই বেকার যুবক কে এড়িয়ে যায় । অনেক টানা পোড়েন দুঃখের মাঝে ও পচা পুকুরে ফুটে থাকা কচুরি পানা দেখে আমি সুখি হই । নিস্তব্ধ খোলা মাঠে এক জোড়া শালিক দেখে সুখী হই । কখনো কখনো বৃদ্ধ বাবা বেঁচে আছে এ কথা ভেবেও সুখী হই ।মিতি আছে জীবনে চলার শক্তি পাই । ভরসা পাই । নিজেকে সান্ত্বনা দেই । অনেক বাঁধা পেরিয়ে মিতি যখন দেখা করতে আসে তখন ওর সাধারন মুখের হাঁসিটা বেঁচে থাকার স্বপ্ন দিয়ে যায় । মাথার মাঝ বরাবর সিঁথি কেটে কপালে ছোট টিপ ।হাজারও দুঃখে কষ্টে মিতির নিস্পাপ মুখটা চোখের সামনে অদ্ভুত ভালোবাসা নিয়ে আঁকড়ে থাকে । যে ভাবেই হোক এই পৃথিবীর সকল মায়ায় জীবনটা বাঁচিয়ে রাখতে হবে ।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কখন যে রাজিব মতিঝিল থেকে ধানমণ্ডি চলে এসেছে মনেই নেই । এখানে টিউশনি করিয়ে যেতে হবে কেরানিগঞ্জ । গুলিস্থান থেকে ঘণ্টা খানিক হাঁটলেই কদমতলি তারপর কেরানিগঞ্জের রাস্তা । সবুজে ঘেরা এতো শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ ঢাকা শহরের কাছে আর কোথাও নেই । তবে যোগাযোগ যানবাহন খুবই খারাপ । ছোট ছোট বেবি ট্যাক্সি চলে। যেতে বিশ আসতে বিশ টাকা । সেটাও প্রতি বেবি ট্যাক্সিতে চারজন না হলে অপেক্ষা করতে হবে। গাড়ি যাবে না ।বাবু বাজার ব্রিজ থেকে একটু কাছেই মিতিদের বাড়ি । যাতায়াত খারাপ হলেও মিতির সাথে দেখা করতে রাজিব প্রতি সপ্তাহে যায় ।এখানে অনেক রকমের মানুষের বসবাস । অনেক অনিরাপত্তায় কাটে মানুষের জীবন । খুব নিরিবিলি আর যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতায় অনেক অপরাধ এখানে সহজে করে যায় অপরাধীরা । কিন্তু এখানকার অধিকাংশ স্থানীয় লোকজন নিজেদের বসত ভুমি কে খুব ভালোবাসে । নিজেদের বসত ভুমির বদনাম তাঁরা সহ্য করতে পারে না । অনেক পুরনো দিনের স্থাপনা আছে এখানে । এখানকার অনেক মানুষ অনেক শিক্ষিত । সবাই নিজেদের চেষ্টা আর পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেছে । সেখানে মিতির সাথে দেখা করতে গেলে অনেকটা সময় মিতির জন্য অপেক্ষা করতে হয় । তখন রাজিব চায়ের দোকানে বসে চা খায় আর স্থানীয় লোকজনের কাছে জীবনের গল্প শুনে।
একেকটা জীবন একেক রঙে আঁকা । বেঁচে থাকার লড়াই । অনেক কষ্ট ।এত সব কষ্ট আর জীবনের গল্প রাজিব কে নতুন নতুন জীবনবোধ দেয় । শ্রদ্ধাবোধ দেয় । স্বপ্ন দেয় । কখনও কখন ও মিতি কে বলা হয়। কখনও কিছুই বলা হয় না । এই সবুজ প্রকৃতি । এই যে কোটি লোকসংখ্যার সমাজ জীবন । মিছে চাকরির পিছনে না ছুটে অনেক কাজ নিজে করলেই হয় । শুধু চিন্তার পার্থক্য । মানসিকতার পরিবর্তন ।ঐ যে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সৎ ভাবে কাজ করতে গেলে নিচে নেমে গেছে । অসৎ ভাবে লুকিয়ে চুড়ি আর প্রতারণা করলেও ভদ্র সমাজ । এই যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী পেটে ক্ষুধা রেখে মুখে হাঁসি । প্রতিদিন কতো যে অভিনয় ।মাঝে মাঝে রাজীব যেন ভীষণ ক্লান্ত হয়ে যায় । মনেহয় এই সব মিথ্যা অভিনয় ছেড়ে দিয়ে সত্যিকারের সাহসী জীবনের ঘোষণা দিতে । ইচ্ছে করে নিজের স্বপ্নের মতো কোন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে । সব দিনের মতো সেদিন ও রাজিব মিতির সাথে দেখা করে ফিরছিল । সাথে দুটো আট আর দশ বছরের ছেলে উঠলো গাড়িতে । বড় ভাইয়ের নাম মতিন ছোট ভাইয়ের নাম মনির । মতিন খবরের কাগজ বিক্রি করে আর মনির গুলিস্থানের এক জুতার দোকানে কাজ করে । আসার পথে জানা গেলো এ দুই জন কাজ করে তাদের বাবা মা কে বাঁচিয়ে রেখেছে । তাদের মা আগে মানুষের বাসায় কাজ করতো এক বছর ধরে এক পা ভেঙ্গে যাওয়াতে কাজ করতে পারে না । আর বাবা অন্ধ । রাজিবের সব ভাবনা কোথায় যেন থেমে গেল । ততক্ষণে গাড়ি গুলিস্থানে চলে এসেছে । মতিন একটা খবরের কাগজ রাজিব কে দিয়ে বিদায় জানালো । স্তব্ধ রাজিবের কণ্ঠস্বর কোন কথা বের হচ্ছিল না । মতিন আর মনির চলে গেল ।কিন্তু ওরা জানিয়ে গেল এ জীবনের অজানা এক সুন্দর বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প । রাজিবের চোখ দিয়ে গভীর নোনা জল গড়িয়ে পড়লো ।।রাজিব কেন পারেনা এ মধ্যবিত্ত তথাকথিত নিয়ম ভেঙ্গে নতুন জীবনের লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়তে ?বুকের কোথায় যেন সব দুমড়ে মুচরে হু হু করে উঠলো ।
কিন্তু জীবন থেমে যাবার নয় । জীবনকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে শিখতে হয় । কিছু কিছু কথা মিতি ও অনুভব করেছে । তবে বুঝতে দেয়নি ।মিতির ব্যাগে রাখা রুমালে রাজিবের কান্নার ছাপ । মিতি তা দেখে দেখে অনেক কষ্ট কে শক্তি তে পরিণত করেছে । নিজেদের জীবন নির্ধারণ করেছে ।ছয়মাস পরের কথা । তারপর কোন একদিন মতিঝিলে দেখা গেল রাজিব আর মিতি কে অনেক বইয়ের সম্ভারে । সেটা হয়তো অন্য কারো ও নয় । ঠিক ওদের দুজনের ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:০৩

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

২| ১৯ শে জুন, ২০১৫ বিকাল ৫:০৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আপনাকে ও ধন্যবাদ । আমার সব গুলো গল্প পড়ার আমন্ত্রন রইল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.