নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘুরাঘুরির গল্প ; বিউটিফুল দ্বীপ বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জ ,বাংলাদেশ , পর্ব ০১ ; পরিচিতি ।

১০ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:১৮

বিউটিফুল দ্বীপ শহর বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জ । পদ্মা ,মেঘনা ,ধলেশ্বরী আর ইছামতী নদী ঘেরা ছোট্ট দ্বীপ বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জ । কিংবদন্তী ইতিহাস ঐতিহ্য এবং গর্বিত ভূ খণ্ড আজকের এই মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুর । সুপ্রাচীন ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কার এবং সংস্কৃতিতে ঘেরা এই বিচিত্র দ্বীপ বিক্রমপুর ।অতীত ইতিহাস থেকে জানা যায় চন্দ্র রাজাদের তাম্র শাসনের অঞ্জলি থেকে শুরু করে পাল ,সেন ,মোঘল এবং বার ভুঁইয়াদের কৃতিত্বে সমৃদ্ধ এই ভূ ভাগ । আশ্চর্য সব ইতিহাস ,সংস্কৃতি আর কৃতিত্বে উজ্জল স্বাধীন বঙ্গ রাজ্যের রাজধানী বিক্রমপুর কীর্তিময় অংশ যুগ যুগ ধরে বহন করে চলছে । অদ্ভুত সব লোককথা আর রহস্যময় ইতিহাস যেন এখনও মানুষের মনে আর মননে ছুঁয়ে দিয়ে যায় । পৃথিবীর শত কোটি রহস্য আর ইতিহাস এর কোন কোন চিহ্ন যেন বিক্রমপুরে নিভৃতে ঘুমিয়ে আছে । তাই স্বপ্ন ,প্রেম আর রহস্য আজও সহজ সরল মানুষের জীবনে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে । মুন্সিগঞ্জ তাই বাংলাদেশের জন্য গৌরবের ইতিহাস। সৌন্দর্যে ভরপুর এই ভূখণ্ড ৬টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা, ৬৭টি ইউনিয়ন আর ৯৫৭টি গ্রাম নিয়ে ৯৫৪.৯৬ বর্গকিলোমিটারের ঐতিহ্যমন্ডিত হয়েছে ।সময় আর ইতিহাসের পাতায় বিক্রমপুর একটি জ্ঞানী গুণী জনের মিলন কেন্দ্র। এখানে জন্মেছে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, সাহিত্যিক সৈয়দ এমদাদ আলী, সরোজনী নাইডু, ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী ব্রজেন দাস, বৈজ্ঞানিক জগদিশ চন্দ্র বসু, অতীশ দিপঙ্করের মত জগৎ বিখ্যাত ব্যক্তি। আরও আছে বাবা আদম শহীদের মত ইসলামী ব্যক্তিত্বের পদচারণা। আর এমন সব ব্যক্তিদের প্রচেষ্টার ফসল আজ মুন্সিগঞ্জের ইসলাম বা মুসলমান এলাকা মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুর। বর্তমানের অনেক মেধাবী পরিচিতি মুখ মুন্সিগঞ্জ বিক্রমপুরের সন্তান । প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহমেদ ,ডঃ ফখরুদ্দিন আহমেদ ,প্রেসিডেন্ট বদরুদ্দজা চৌধুরী ,এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ,কবি এবং বিজ্ঞানী ডঃ হুমায়ুন আজাদ ,কথা শিল্পী রাবেয়া খাতুন ,ইমদাদুল হক মিলন, চিত্র নায়ক অনন্ত জলিল ,সাংবাদিক মুন্নি সাহা সঙ্গীত শিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ ,হাবিব ওয়াহিদ ,এক সময়ের কৌতুক অভিনেতা টেলি সামাদ সহ নতুন প্রজন্মের অনেক মুখ ।

তবে সুপ্রাচীন বাংলার এক গৌরবময় স্থান বিক্রমপুরের কোন অংশই আজকের এই মুন্সিগঞ্জ । তবে মুন্সিগঞ্জ সে সময়ে ছিল একটি গ্রাম যার পূর্ব নাম ছিল ইদ্রাকপুর। প্রচলিত আছে, মোঘল শাসন চলাকালীন সময়ে এই ইদ্রাকপুর গ্রামে মুন্সী হায়দার হোসেন নামে একজন ব্যক্তি ছিলেন। সেই সময়ে মুন্সি হায়দার মোঘল শাসকদের দ্বারা ফৌজদার নিযুক্ত হয়ে ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বজ্জল ও জ্ঞানহিতৈশী ব্যক্তি । গুণী এই ব্যক্তি মুন্সী হায়দার হোসেনের নামেই পরবর্তীতে ইদ্রাকপুরের নাম হয় মুন্সিগঞ্জ। এরপর ১৯৪৫ সালে বৃটিশ ভারতের প্রশাসনিক কিছু সুবিধার্থে মুন্সিগঞ্জ থানা ও মহকুমা হিসেবে উন্নীত করা হয়। অতীতের সেই বিক্রমপুরই ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ মুন্সিগঞ্জ জেলার নামকরনে রূপান্তরিত হয়।
প্রকৃত পক্ষে মুন্সিগঞ্জ সমতল এলাকা নয়। তবে জেলার কিছু কিছু অঞ্চল যথেষ্ট উচু। এই জেলায় কোন পাহাড়ের সন্ধান আজও কেউ দিতে পারেনি । এই অঞ্চলের বেশির ভাগ এলাকা নিম্ন ভূমি যা বর্ষাকালে পানিতে ডুবে যায় ।তবে এই মুন্সিগঞ্জের জলবায়ু সমভাবাপন্ন। আদ্রতা এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এখানকার জলবায়ু ঋতু বিশেষ পরিবর্তনশীল। এই অঞ্চল বর্ষা প্রধান নিম্ন ভুমি এলাকা। গ্রীষ্মকালে কিছু কিছু স্থান পানি শুন্য হয়ে পড়ে। এখানে ঝড় বৃষ্টির প্রকোপও যথেষ্ট। শীতকালে শীতের তীব্রতা দেশের অন্যান্য স্থানের মত তত প্রবল নয়। এলাকাটি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলভুক্ত।
এই মুন্সিগঞ্জ জেলা ২৩০২৯ মিনিট থেকে ২৩০৪৫মিনিট উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০০১০ মিনিট থেকে ৯০০৪৩ মিনিট পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত।এই অঞ্চলের পূর্বে রয়েছে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি ও হোমনা উপজেলা,আর অন্যদিকে চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলা যা কিনা মুন্সিগঞ্জের সাথে প্রবাহিত মেঘনা নদীর দ্বারা বিভাজিত হয়েছে । এর পশ্চিমে শরীয়তপুর ,মাদারীপুর কেরানীগঞ্জ দোহার উপজেলা এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলা। দক্ষিণে রয়েছে নয়নাভিরাম পদ্মা যার অপর পাশে শরীয়তপুর জেলা।

কাব্যময় নদী ঘেরা সুন্দর দ্বীপ শহর বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জ । রাজধানী ঢাকা থেকে খুব কাছের যাত্রা বাড়ি পার হয়ে পোস্ত খোলা ব্রিজ ।তারপর গাড়ি চলবে পঞ্চবটির রাস্তা ধরে আর সেখান থেকে চর সৈয়দপুর আর মুক্তার পুরের পথে । ঠিক সেই মুক্তার পুর থেকে শুরু হয় হৃদয় ছুঁইয়ে যাওয়া সব রহস্য ইতিহাস ।নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ধলেশ্বরী সেতুকে ঘিরে কতো যে অদ্ভুত সব গল্প আর নদীর গভীর ঢেউ এর মায়াবী প্রেম দেখতে দেখতে কখন শহরে ঢুকে যাবেন টের পাওয়া যায় না ।

অদ্ভুত সব ইতিহাস আর প্রেমময় ঐতিহ্য সমাহারে ভরা গল্প নিয়ে আসছি পরবর্তী পর্বে ......।চলবে ।
ছবি গুলো সংগৃহীত হয়েছে আমার বিক্রমপুর ফেসবুক পেজ থেকে

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৫২

সুমন কর বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম এবং চমৎকার কিছু ছবি দেখলাম।

২| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৫৪

সৌরভ ঘোষ শাওন বলেছেন: মুন্সীগঞ্জের সবচেয়ে ভালো লাগার জায়গা হচ্ছে মুক্তারপুর ব্রীজ। আর লৌহজং এর পদ্মা রিসোর্ট। ইদ্রাকপুর কেল্লাটা ছবিতে যতটা সুন্দর, বাস্তবে অতটা না হয়তো। অন্তত এখনকার সৌন্দর্য অতীত ইতিহাসের তুলনায় অনেক ম্লান।

সুন্দর পোস্ট। ভালো লাগা রইলো। :)

৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার ছবি এবং বর্ননা। ধন্যবাদ

১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০৩

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: সুন্দর মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । এই লেখাটা ধারাবাহিকভাবে চলবে ।এখন গবেষণা এবং তথ্য সংগ্রহ চলছে । আশা করি অনেক সুন্দর কিছু ইতিহাস তুলে ধরতে পারব।

৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৩

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: চমৎকার শেয়ার । যাওয়া হয়নি এইসব স্থানে।

শুভেচ্ছা রইল নুরুন নাহার লিলিয়ান

১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: নাজমুল হাসান মজুমদার অনেক ধন্যবাদ । যাওয়া হয়নি কিন্তু যাবেন ।বাংলাদেশ অনেক সুন্দর একটা দেশ । কিন্তু আমরা জানিনা । আমরা বিদেশে গেলে অনেক সাধারন জায়গা কে অনেক কিছু মনে করি । কিন্তু নিজের দেশের অনেক কিছু অনেক সুন্দর তা অনুভব করি না ,মুগ্ধ হইনা । আসুন নিজের দেশকে ভালভাবে সুন্দর রাখি ।বিশ্ব মানচিত্রে নিজেদের তুলে ধরি ।

৫| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:০৭

এহসান সাবির বলেছেন: চলুক.....

দারুন সব ছবি....

৬| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১২:১২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: এহসান সাবির .।।চলবে .্‌্‌।।মাত্র শুরু হল .।।ছবির চেয়ে ও অনেক বেশি সুন্দর ইতিহাস,স্থাপত্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ।ঘুরে আসুন .।।ধন্যবাদ ।

৭| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:২১

মন্জুরুল আলম বলেছেন: আপনার জেলা নাকি ভাই??
সুন্দর+++

১২ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: মঞ্জুরুল আলম ।।জি ভাই আমার জন্ম স্থান ।মানুষ জন্ম গ্রহন করে এক জায়গায় ,বড় হয় আরেক জায়গায় ,জন্ম দেয় আরেক জায়গায় আর মৃত্যু বরন করে আরেক জায়গায় । আমার জন্ম স্থান বলে নয় । সব জেলার প্রতি আমার আগ্রহ । জানার অনেক ইচ্ছে আমার । সব দেশের মানুষই তাদের সংস্কৃতি এবং প্রকৃতি কে তুলে ধরে । পর্যটন এর ধারনা আমাদের দেশে তেমন করে জনগণ এর কাছে পরিচিত করে তুলে ধরা হয় না । আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর এই ধারণাটা আমি দিতে চাই ধীরে ধীরে । মানুষ বিদেশ বিদেশ করে ।নিজেদের দেশের সৌন্দর্য আমরা প্রান ভরে উপভোগ করি না ।ধন্যবাদ ।

৮| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:১২

শাহাদাত হোসেন বলেছেন: ছবি গুলো অনেক চমৎকার ।

৯| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:১১

আমিনুর রহমান বলেছেন:

ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক জনপদ মুন্সীগঞ্জ - এই লেখাটি কি আপনার???


- এই ছবিটা মুন্সিগঞ্জের?

আপনার প্রশ্নের উত্তর পেলে আবার আসবো।

১০| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:১৮

আমিনুর রহমান বলেছেন:



আরেকটা প্রশ্নঃ বিনয়-বাদল-দীনেশ এর ভাস্কর্যটা তো কলকাতায়, তাই নয় কি?

১২ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৬:১৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আমিনুর রহমান .।অনেক ধন্যবাদ । এখন বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জ নিয়ে অনেক গবেষণা শুরু হয়েছে । নিজের জন্মস্থান নিয়ে জানতে গিয়েই এই পরিচিতি ভূমিকাটা লিখেছি । আমি খুব বিশদ বর্ণনায় যাব । লেখা উপস্থাপনায় কিছু ঘাটতি আছে ।আশা করি সহযোগিতা করবেন । আমি ব্লগ নতুন শুরু করেছি । বিনয় বাদল দীনেশ ভাস্কর্যটা কলকাতায় কিন্তু ব্যক্তি বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত এর জন্ম মুন্সিগঞ্জ । .।.।দীনেশচন্দ্র গুপ্ত (৬ ডিসেম্বর, ১৯১১ - ৭ জুলাই, ১৯৩১) ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একজন স্বনামধন্য বাঙালি বিপ্লবী। তিনি দীনেশ গুপ্তনামেই সমধিক পরিচিত। তিনি ঢাকা ও মেদিনীপুরে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তুলেছিলেন। মেদিনীপুরে তাঁর সংগঠন পরপর তিন জন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে হত্যা করেছিল।১৯৩০ সালের ৮ ডিসেম্বর বিপ্লবী বিনয় বসুর নেতৃত্বে তিনি ও বাদল গুপ্ত কলকাতার রাইটার্স বিল্ডিং (বর্তমান মহাকরণ) ভবনে অভিযান চালিয়ে কারা বিভাগের অত্যাচারী ইন্সপেক্টর জেনারেল সিম্পসনকে হত্যা করেন। রাইটার্স বিল্ডিং-এর অলিন্দে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ইউরোপীয় কর্মচারী গুরুতরভাবে আহতও হন। এরপর তাঁরা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অপর দুই বিপ্লবী আত্মহত্যায় সমর্থ হলেও মৃতপ্রায় দীনেশকে পুলিশ বাঁচিয়ে তুলতে সক্ষম হয়। বিচারে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়। মৃত্যুর পূর্বে জেলে বসে তিনি কয়েকটি চিঠি লিখেছিলেন। এই চিঠিগুলি ভারতের বিপ্লবী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল এবং সাহিত্যিক বিচারেও অত্যন্ত মূল্যবান। স্বাধীনতার পর তাঁর ও তাঁর অপর দুই সহবিপ্লবীর সম্মানার্থে কলকাতার প্রসিদ্ধ ডালহৌসি স্কোয়ারের নাম বিনয়-বাদল-দীনেশ বাগ (সংক্ষেপে বিবাদীবাগ) রাখা হয়।
বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের জন্ম হয় ১৯১১ সালের ৬ ডিসেম্বর (বাংলা ১৩১৮ সনের ২০ অগ্রহায়ণ) তদনীন্তন ঢাকা জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মুন্সিগঞ্জ জেলা) যশোলঙে। তাঁর পিতার নাম সতীশচন্দ্র গুপ্ত ও মায়ের নাম বিনোদিনী দেবী। দীনেশ গুপ্তের ডাকনাম ছিল নসু। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে দীনেশ ছিলেন পিতামাতার তৃতীয় সন্তান। সতীশচন্দ্র ছিলেন ডাক বিভাগের কর্মচারী। চাকরির সূত্রে তিনি কিছুকাল গৌরীপুরে অবস্থান করেন। গৌরীপুরের পাঠশালাতেই দীনেশের শিক্ষারম্ভ। পরে নয় বছর বয়সে ভর্তি হন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে। প্রথম দিকে দীনেশ ঢাকার গ্যান্ডারিয়া অঞ্চলে দাদুর বাড়িতে বাস করতেন, পরে উয়াড়িতে পৈত্রিক বাসভবনে চলে আসেন। বাল্যকাল থেকেই দীনেশ ছিলেন নির্ভীক, বেপরোয়া ও বাগ্মী। এই সময় থেকেই তাঁর মনে স্বদেশ চেতনা ও ব্রিটিশ বিরোধিতার আদর্শ সঞ্চারিত হয়েছিল।
কৈশোরে দীনেশ বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স (বিভি) নামে একটি গুপ্ত বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হন। ১৯২৬ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনিমেদিনীপুরে কর্মরত তাঁর বড়োদাদা যতীশচন্দ্র গুপ্তের কাছে বেড়াতে আসেন। এই সময় থেকেই মেদিনীপুর শহরে বিপ্লবী সংগঠন গড়ে তোলার সুপ্ত বাসনা তাঁর মনে জাগে। কিন্তু দলের নির্দেশে সেবার তাঁকে ঢাকায় ফিরে আসতে হয়েছিল বলে তিনি মেদিনীপুরে বিশেষ কিছুই পরে উঠতে পারেননি।
১৯২৮ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে আইএসসি পরীক্ষা দেন। কিন্তু এই পরীক্ষায় তিনি কৃতকার্য হতে পারেননি। এরপর তিনি মেদিনীপুরে গিয়ে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন। দলের তরফ থেকে দীনেশকে মেদিনীপুরে বিভির শাখা স্থাপনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মেদিনীপুরে এসে দল সংগঠন ও সদস্য সংগ্রহের পাশাপাশি পড়াশোনাও চালিয়ে যান তিনি।
ঢাকা কলেজে পড়ার সময় ১৯২৮ সালে দীনেশ 'ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস'-এর কলকাতা সেশনের প্রাক্কালে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সংগঠিত 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সে যোগদান করেন। শীঘ্রই বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স একটি সক্রিয় বিপ্লবী সংগঠনে পরিবর্তিত হয় এবং কুখ্যাত ব্রিটিশ পুলিশ অফিসারদেরকে হত্যা/ নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে। স্থানীয় বিপ্লবীদের আগ্নেয়াস্ত্র চালনা শেখানোর জন্য দিনেশ গুপ্ত কিছু সময় মেদিনীপুরেও ছিলেন।তাঁর প্রশিক্ষিত বিপ্লবীরা ডগলাস(Douglas), বার্জ(Burge) এবং পেডি(Peddy)--এই তিনজন জেলা ম্যাজিস্ট্রটকে পরপর হত্যা করেছিল।
সংগঠনটি জেলের ইন্সপেক্টর জেনারেল কর্নেল এনএস সিম্পসনকে টার্গেট করেছিল যে কিনা জেলখানার বন্দীদের উপর পাশবিক নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত ছিল।এই বিপ্লবীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তাঁরা শুধু সিম্পসনকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হবেন না, বরং কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ারে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসকদের সচিবালয় রাইটার্স ভবনে আক্রমণ করে ব্রিটিশ অফিস পাড়ায় ত্রাস সৃষ্টি করবেন । ১৯৩০ সালের ৮ই ডিসেম্বর দীনেশ তাঁর দুই সঙ্গী বিনয় বসু এবং বাদল গুপ্তসহ ইউরোপীয় পোশাকে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রবেশ করেন এবং সিম্পসনকে গুলি করে হত্যা করেন। ব্রিটিশ পুলিশ গুলি শুরু করে।যার ফলশ্রুতিতে এই তিন তরুণ বিপ্লবীর সাথে পুলিশের একটি সংক্ষিপ্ত বন্দুকযুদ্ধ হয়।টোয়াইনাম (Twynum), প্রেন্টিস(Prentice) এবং নেলসন(Nelson)-এর মত অন্য কিছু অফিসার গোলাগুলিতে আহত হয়। পুলিশ দ্রুতই তাঁদেরকে পরাভূত করে ফেলে।কিন্তু এই তিনজনের গ্রেফতার হওয়ার কোনো ইচ্ছে ছিল না। বাদল গুপ্ত পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে নিয়েছিলেন, অন্যদিকে বিনয় এবং দিনেশ নিজেদের রিভলবার দিয়ে নিজেদেরকেই গুলি করেছিলেন।বিনয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তিনি ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ (১৯৩০ সাল) মৃত্যুবরণ করেন।
দীনেশ কোনোরকমে এ চরম আঘাত থেকে বেঁচে ওঠেন।তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছিল এবং বিচারের রায় ছিল সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং খুনের জন্য ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু। ১৯৩১ সালের ৭ই জুলাইআলীপুর জেলে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৯ বছর।
বাংলাসহ ভারতের অন্যান্য অংশে বিনয়, বাদল এবং দিনেশকে শহীদ হিসেবে সম্মান করা হয়। ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে বিনয়-বাদল-দীনেশের নামানুসারে কলকাতার ডালহৌসি স্কয়ারের নাম পালটে রাখা হয় বি-বা-দী বাগ।
আমি নিজে এখন বাংলাদেশের বাইরে অবস্থান করছি । যেহেতু শুরু করেছি নিজের চেষ্টা থাকবে পরিস্কার করে তুলে ধরা । ইতিহাস খুব জটিল বিষয় । অতীত ইতিহাসের উপর বর্তমানের অনেক রকমের দাবী থাকে । কখন সে দাবি এতো বেশি পরিপূরক থাকে যে কোন টা কে কোন টা থেকে আলাদা করা যায় না আবার অস্বীকার ও করা যায় না ।অনেক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ ।

১১| ১১ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮

ব্লগার মুস্তাকিম বলেছেন: ভাল লাগল

১২ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৬:২৩

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: এই লেখাটা ধারাবাহিক ভাবে লেখার ইচ্ছে আছে ।বিক্রমপুর মুন্সিগঞ্জ নিয়ে পড়াশুনা চলছে ।আশা করি খুব শীঘ্রই পরের পর্ব শুরু করব । অনেক ধন্যবাদ ।

১২| ১২ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:১৫

আমিনুর রহমান বলেছেন:



আপনি আমার কথা বুঝেনই সম্ভবত। আমি আগে থেকেই বি-বা-দী সম্পর্কে জানি। আর আপনি উনাদের সম্পর্কে যে কথাগুলো কমেন্টে লিখেছেন তা উইকিতেই পাওয়া যায়। তা যে কেউ খুজে পাবে। যেহেতু গবেষনা করছেন তাই নিজের মতো করে সাজিয়ে লিখা উচিত বলে আমার মনে হয়। কপি পেষ্ট করে নয়।

আসলে আমার মুল প্রশ্নটা আপনি এড়িয়ে গেছেন

ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক জনপদ মুন্সীগঞ্জ - এই লিঙ্কের লেখা কি আপনার???

আর উপরের কমেন্টে আপনার পোষ্টের দেয়া যে ছবিটা আমি উল্লেখ করেছি সেটা রাজশাহী'র পদ্মার পারের ছবি সম্ভবত।

১২ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: Click This Link মুন্সিগঞ্জ টাইমস এ আমি এমন কয়েকটা লেখা দিয়েছিলাম । এই লেখাটায় আমার নাম আছে কিন্তু আপনার পাঠানো লিঙ্ক তাতে নাম দেখছি না । আপনি আমার বেশ উপকারই করলেন বটে ।আর সেখানে লেখা দেওয়া যাবে না ।কে যে কারটা কপি করল । আমার এখন হাঁসিই পাচ্ছে । আপনার প্রথম প্রশ্ন এর উত্তর -
আমরা সবাই নিশ্চয়ই সারাদিন ব্লগ নিয়ে থাকিনা । একটু ধৈর্য নিয়ে থাকা উচিত প্রতি উত্তর পেতে হলে । আমার এখানে সব লিঙ্ক ল্যাপটপ থেকে ওপেন হয় না । আমি খুব ব্যস্ত ।ব্লগিং আমার শখ আর একটু দেশের সাথে যোগাযোগ । তাই কয়েক ঘণ্টা দেরি ।দ্বিতীয় উত্তর -
আপনি বি-বা-দি সম্পর্কে যেহেতু অনেক জানেন সেটা আগেই উল্লেখ করা উচিত ছিল । তাহলে আমার মতো সবাই জানতো আপনার কাছ থেকে ।আমার আর সময় নষ্ট করতে হতো না ।
আর ছবি প্রসঙ্গ।।বিক্রমপুর শ্রীনগর বাঘরা বাজারের সামনে পদ্মা সেখানে দাঁড়ালে একই চিত্র দেখতে পাবেন । জায়গার নাম
ঘোড় দোর এখন পদ্মা রিসোর্ট হয়েছে ।এক সময় লৌহজং উপজেলা এর এল জি ডি ভবন ছিল সেখানে দাঁড়ালে একই ছবি
পাবেন ।
অনেক সম্মানের সাথে জানাতে চাচ্ছি আপনি মনে হয় আমার লেখা বুঝতে পারেননি । আমি লেখেছি আমার টাইটেল ঘুরাঘুরি গল্প । এটা একটা ভুমিকা গল্প ।যাইহোক দোষ ত্রুটি নিয়েই আমরা মানুষ ।পৃথিবীর সব দেশেই নিজেদের দেশ এবং সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করে । বাংলাদেশ এমন একটা জায়গা যেখানে কেউ কিছু করার চেষ্টা করলেই শুরু হয়ে বাঁকা দৃষ্টি ভঙ্গি । ভাই আমি খুব কম জানি এবং জানার চেষ্টা করছি । আর নিজের ছোট ছোট জানা আর দেখার জগৎ কে আমার ভাষা দিয়েই প্রকাশ করি ।যাদের ভাল লাগবে তারাই আমার লেখা পরবে আর যাদের ভাল লাগবে না তাদের সময় নষ্ট করা উচিত নয় । সময় অনেক মূল্যবান ।

১৩| ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:০৯

আমিনুর রহমান বলেছেন:


একটু ধৈর্য নিয়ে থাকা উচিত প্রতি উত্তর পেতে হলে ।
আপনার এই কথার জবাবে বলি আমি কি কোথাও বলেছি আপনাকে এখন উত্তর দিতে হবে???
আমি প্রথমেও বলেছি আপনার প্রশ্নের জবাব পেলে আবার আসবো। আপনি জবাব দিয়েছেন তাই কিন্তু অর্ধেক।


আমি জানতে চেয়েছি এই ছবিটা মুন্সিগঞ্জের আপনি হ্যা না না তে উওর দিতে পারতেন। আপনি এতো ব্যস্ত মানুষ কিন্তু অহেতুক উত্তর কেনো দিতে গেলেন? আমার বোধগম্য হলো না।

আপনি বি-বা-দী নিয়ে আমাকে এতো কথা লিখলেন কেনো? আমার প্রশ্ন কি ছিলো? প্রশ্নটা ছিলো -
আরেকটা প্রশ্নঃ বিনয়-বাদল-দীনেশ এর ভাস্কর্যটা তো কলকাতায়, তাই নয় কি?

আপনি - হ্যা বলেই পারতাম। আপনি এতো জ্ঞানী মানুষ বুঝা উচিত ছিলো আপনার "বিনয়-বাদল-দীনেশ" সম্পর্ক কিছুটা জানি বলেই ভাস্কর্যটা মুন্সিগঞ্জে না সেটা বলতে পেরেছি।

আপনি আমাকে কি উত্তর দিলেন?

আপনি বি-বা-দি সম্পর্কে যেহেতু অনেক জানেন সেটা আগেই উল্লেখ করা উচিত ছিল । তাহলে আমার মতো সবাই জানতো আপনার কাছ থেকে ।আমার আর সময় নষ্ট করতে হতো না ।

আপনাকে কে বলেছে সময় নষ্ট করতে শুনি? আমি জানতে চেয়ে একটা কথায় উত্তর দেয়া যেতো সেখানে কথা বাড়িয়ে তো লিখেছেন আবার আমাকে উলটো দোষ দিচ্ছেন।

দেখুন আপনার ব্লগে আপনি যা খুশি লিখুন আমার কিছু যায় আসে না। আপনি নতুন ব্লগার বলেই আপনাকে প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করেছিলাম যেনো আপনি কিছু ভুল কারেকশন করতে পারেন। প্রতিটি ভালো ফিচার লিখার সাথে তথ্যসুত্র থাকলে ফিচার আরো সমৃদ্ধশালী হয়। ফিচারের মান কমে যায় না।

ভালো থাকবেন নিরন্তর।

১৪| ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬

মৈত্রী বলেছেন: নিচের দিক থেকে ১ম, ২য় এবং ৫ম ছবির যায়গার নাম জানতে চাই...

১৩ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ৫ম ছবি ; নগর কসবা ,মুন্সিগঞ্জ ,২৫০ বছরের পুরনো বাড়ি
২য় ছবি ;পানাম জোড়ার দেউল মসজিদ ।মুন্সিগঞ্জ থানার জোরার দেউল নামক গ্রাম এ এই মসজিদ
প্রথম ছবি কলকাতায় স্থাপত্যটা কলকাতায় কিন্তু বিখ্যাত এই ব্যক্তির জন্ম বিক্রমপুর ।

১৫| ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪৪

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: সন্দেহ নেই , অনেক পড়াশুনা আর পরিশ্রম করে আপনি পোস্টটা লিখায় মনোনিবেশ করছেন ।
অভিনন্দন রইল ।
@আমিনুর রহমান ভাই একজন সিনিয়র গুণী ব্লগার , উনাদের কাছে শিখবার অনেক কিছু আছে । তবে শিক্ষক হিসেবে উনাদের আরও সহনশীলতার পরিচয় আশা করছি । নতুনরা পুরনোদের নেতিবাচক মন্তব্য পেলে মনোবল ধরে রাখতে পারেনা ।
রিপ্লাই গুলিও হওয়া উচিত সৌজন্যতা পূর্ণ ।

লেখিকাকে সময় করে সব কমেন্টের সিরিয়ালি রিপ্লাই দেয়ার অনুরোধ করছি । স্কিপিং করলে যার কমেন্ট এড়িয়ে যাওয়া হয় তিনি নিজেকে কম গুরুত্বপূর্ণ ভেবে মনঃক্ষুণ্ণ হতে পারেন ।
পরবর্তী পর্ব পড়ার অপেক্ষায় রইলাম । শুভ কামনা ।

১৫ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:০২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: গিয়াস লিটন ভাই আপনাকে ধন্যবাদ ।তবে ভাইয়া এক পরিবারের ভাই বোনের অযৌক্তিক অনেক মত পার্থক্য হয় ।আর এই গুলোর মধ্যেও অনেক জানার আছে । বোঝার আছে । পারস্পারিক বোঝাপড়া হতে একটু সময়ের প্রয়োজন । সময় পরিস্থিতিতে মানুষের মুড ও বিভিন্ন মাত্রায় উঠা নামা করে । সহনশীলতা ,শ্রদ্ধা ,সম্মান সব উপস্থিত আছে । ব্লগ পরিবার তাদের সুন্দর চিন্তা দিয়ে দেশ কে এগিয়ে নিয়ে যাবে । ভাল থাকুন । অনেক কৃতজ্ঞতা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.