নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রহস্য গল্প ; ইকেবানা ।

১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২৩

ইকেবানা । জাপানিজ এই শব্দের অর্থ হল ফুলের শিল্প । জাপানিজ শব্দ ইকেরু অর্থ জীবন আর হানা অর্থ ফুল । ইকেরু এবং হানা এই দুই শব্দ নিয়ে সম্ভাব্য অর্থ হল ফুল কে জীবন দাও । প্রকৃতি এবং মানুষের সাথের গভীরতম সৌন্দর্য এবং ভালবাসার সম্পর্কের সৃষ্টিশীল প্রকাশই ইকেবানা । ইকেবানা তৈরির সময় প্রতিটা মানুষকে নিরবতা পালন করতে হয় । যা মানুষের ভিতরের স্বপ্ন ,সৌন্দর্য ,সহ্য এবং ধৈর্য কে অনুশীলন করা হয় । বিভিন্ন ধরনের ইকেবানা আছে । বিশ শতক থেকে ইকেবানার আধুনিকায়ন হয় । ইকেবানায় স্বর্গ ,পৃথিবী আর মানুষ এই বিষয় গুলোই বেশি পরিস্ফুটিত হয় ।অধ্যাপকের স্ত্রীর মুখে ইকেবানার রোমাঞ্চকর ইতিহাস শুনে খুব ভাল লাগল। গত সপ্তাহে বৃষ্টির অধ্যাপকের বাসায় দাওয়াত ছিল । বাসায় ঢুকেই বৃষ্টি অবাক ! পুরো বাসা কাঁচা পাকা নানা ফুলের সমন্বয়ে অদ্ভুত সুন্দর সব রঙে সাজানো । প্রায় ছয়শ বছরের বেশি সময় ধরে জাপানের এই ইকেবানা বা ফুলের শিল্প চর্চা চলছে ।পরে জানা গেল অধ্যাপকের স্ত্রী ইকেবানার শিক্ষক । সে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অনেক জায়গায় ইকেবানা সহ বিভিন্ন জাপানিজ সংস্কৃতি বিনিময়ের কাজ করেন ।গত বছর বৃষ্টি হোক্কাইডো বিশ্ব বিদ্যালয়ে অক্টোবর সেশনে এসেছে । উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ে দুই বছরের মাস্টার্স কোর্স । প্রথম ছয় মাস বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক আর বন্ধুদের সাথে পরিচিত হতেই কেটে গেছে । বৃষ্টির একাকীত্বের কথা শুনে অধ্যাপকের স্ত্রী তাকে ইকেবানা শিখাতে চাইল ।এই সুযোগ সে কোনভাবেই হারানো যায়না । এখানে তেমন বাংলাদেশি বড় কোন সংগঠন নেই । বেশির ভাগ বাংলাদেশিরা উচ্চ শিক্ষা এবং গবেষণার জন্য আসে ।তবে খুব বেশি কেউই স্থায়ী হয়না । কালে ভদ্রে বাংলাদেশিদের সাথে দেখা হওয়াটা যেন ভীষণ আনন্দের । চারিদিকে এখন এপ্রিলের তুষার বিলাস । এক অদ্ভুত সুন্দর সফেদ শুভ্রতায় ভীষণ মায়াচ্ছন্ন হয়ে আছে হোক্কাইডো দ্বীপ ।মন শুধু ফেলে আসা অতীত স্মৃতির সমুদ্রে সাঁতার কাটে । মনের অসহায় অনুভূতি গুলো গভীর এক বিচ্ছিন্ন একাকীত্বে নিমগ্ন হয় । বাইরের পৃথিবীর সব নিয়ম ছেড়ে অনেক দূরে নিয়ে যায় । বৃষ্টি তার বিচ্ছিন্নতায় পৃথিবীতে রেখে যেতে চায় জীবনের প্রতি ভালবাসা আর সৌন্দর্যের গল্প । যে সময় বৃষ্টির অন্য কোন মানুষের ভালবাসার সঙ্গী হয়ে ভিন্ন অধ্যায় রচনা করার কথা । ঠিক সে একই সময় এই পৃথিবীর চেনা নিয়ম ভেঙ্গে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে একা চলে আসে হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ে । মায়ের ভালবাসার নির্ভরতা থাকলেও অজানা ভবিষ্যৎ মাঝে মাঝে অন্তহীন দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয় । একটি উন্নয়নশীল দেশের মানুষ হয়ে জন্ম নেওয়া বৃষ্টির জীবনের গল্প আর চেনা নিয়ম গুলো খুব বেশি মিশ্র অসহায় । বৃষ্টি তুষার স্নান করতে করতে বাসার সামনের একটি মারুতা নামের রেস্টুরেন্ট যায় । যখন মন খুব বেশি ক্লান্ত হয়ে যায় অজানা ভবিষ্যৎ এর বোঝা নিয়ে তখন নিজের ভিতরের সৌন্দর্য কে ধরে রাখতে ইকেবানায় মনোযোগ দেয় । খুব অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অনেক ধরনের ইকেবানা বৃষ্টি শিখে নিয়েছে । তাই সেদিন ও বাসায় ফেরার পথে কয়েকটা গোলাপ এবং জাপানিজ লিলি ফুল কিনে নিল । মারুতা রেস্টুরেন্ট এ ঢুকার আধা ঘণ্টা পরের কথা । ফুল গুলো নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা মাথায় ঘুরছিল । হঠাৎ একটি জাপানিজ তরুন হাতে কিছু ফুল নিয়ে বলল , শুভ জন্মদিন । শুভ হউক ।
বৃষ্টি অবাক বিস্ময় নিয়ে সামনে বসা জাপানিজ ছেলেটির দিকে কয়েক পলক চেয়ে রইল । কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারল না ।
কিছুটা সময় নিয়ে জানাল , আপনাকে ধন্যবাদ । কিন্তু আমি পুরো ব্যপারটা বুঝতে পারছি না । আমাকে কি পরিষ্কার করে বুঝাবেন ?
জাপানিজ তরুণটি তার হাতের ফুলের তোরাটি টেবিলে রেখে বলল , জাপান যে কেউ কোন রেস্টুরেন্ট কিংবা শপিং মলে নিয়মিত যায় সে একটা পয়েন্ট কার্ড পায় ।
বৃষ্টি বলল , ঠিক । আমার ও একটি পয়েন্ট কার্ড আছে ।
জাপানিজ তরুণটি বলল , সে পয়েন্ট কার্ড নেওয়ার সময় নাম ,ঠিকানা এবং ইমেল এই সব তথ্য দিতে হয় । কিন্তু অনেক স্থানীয় জাপানিজ ইংরেজি না জানায় আপানার মতো বিদেশিকে সাহায্য করার জন্য
আমিই এগিয়ে এসেছিলাম ।
বৃষ্টি হেঁসে দিয়ে বলল , আসলেই জাপানিজ ভাষা না জানলে এখানে জীবন খুব কঠিন । আপনাকে ধন্যবাদ । আপনার নামটা কি জানা যাবে ?
জাপানিজ তরুণটি বলল , মরি কাওয়া । মরি অর্থ বন এবং কাওয়া হল নদী । আপনাদের বাংলা ভাষায় আমাকে মিঃ বন নদী বলে আমাকে ডাকতে পারেন । হা হা হা ।
বৃষ্টি ও আবার হেঁসে দিল । আপনি ভাল বাংলা বলেন । এটা শিখেছেন কিভাবে ?
মরি কাওয়া বলল , আমি জাপানিজ একটি কোম্পানির হয়ে বাংলাদেশে তিন বছর কাজ করেছি । বাংলাদেশের জীবনকে উপভোগ এবং বাংলাদেশিদের জীবন জানতেই আমি বাংলা শিখেছি ।
বৃষ্টি বলল , জাপানিজরা মনে হয় একটু বেশি প্রকৃতি প্রেমী । বেশির ভাগ সময়ে জাপানে সব কিছুরই নাম গুলো প্রকৃতি নির্ভর ।
এবার মরি কাওয়া হেঁসে দিল , মানুষ হল প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ উপাদান । আপনার নাম বৃষ্টি । এটাও কিন্তু প্রকৃতি নির্ভর । মানুষ তার মনের অজান্তেই প্রকৃতির মাঝে জীবন এর রহস্য খুঁজে । প্রকৃতির মাঝে বেঁচে থাকে ।
বৃষ্টি বলল ,মানুষ পৃথিবীর রহস্য এর কাছে খুব অসহায় ।
মরি কাওয়া বলল , এটা খুব সত্যি কথা । খুব অদ্ভুত ভাবে মানুষ প্রকৃতির আপন খেয়ালের উপর চলে । যদি কোন মানুষ এই বিশ্বভূমণ্ডলের উপর আস্থা রাখে এবং ন্যায় বিচার করে ।ঠিক প্রকৃতি ও তাকে নিরবে ছায়া হয়ে ভালবাসা দিয়ে দেয় । প্রকৃতির পৃষ্ঠা থেকে কিছুই হারায় না ।
বৃষ্টির মনটা হারিয়ে গেল ,বাহ !খুব সুন্দর কাব্যিক কথা ।
মরি কাওয়া বলল , কেন নয় ? এতো সুন্দর তুসারস্নাত সন্ধ্যায় একটি অপূর্ব নিভৃত সুন্দর মানুষ একাকী বিশেষ মুহূর্ত অনুভব করবে! প্রকৃতি নিজেই বন্ধু হয়ে ধরা দিয়েছে ।
বৃষ্টি বলল , আপনার হাতের ফুল গুলোর নাম কি ?
মরি কাওয়া ফুল গুলো সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল , এই ফুল গুলোর নাম লোটাস । ইকেবানায় এই ফুল গুলো মানুষের ভিতরের খাঁটি হৃদয় এবং অমরত্ব কে প্রকাশ করে । এই ফুল গুলো আপনার বর্তমান ,খোসা গুলো অতীত আর বীজ গুলো ভবিষ্যৎ । সব মিলে একটি দীর্ঘস্থায়ী খাঁটি হৃদয় নিয়ে সুন্দর জীবনের শুভ কামনা ।
বৃষ্টি ভিতরে খুব আবেগ আপ্লুত হল । আবার লজ্জা ও পেল । কিছুই বলতে পারল না । একটুখানি হাঁসি দিল ।
সেদিন মরি কাওয়ার সাথে খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা বিনিময় হল । মাঝ পথে দুইটা দিন আরও কিছু ব্যস্ততায় কেটে গেল । হঠাৎ বাংলাদেশ থেকে মা শীতের পোশাক পাঠিয়েছে । সাথে একটি ছেলের ছবি । বৃষ্টি কে বিয়ে দিতে পারলে মা যেন শান্তিতে মরতে পারে । কিন্তু কোন কারনে সেই ছবির ছেলেটির সাথে মরি কাওয়ার কোথায় যেন একটা চেহারায় মিল । বৃষ্টির হাত পা কাঁপা শুরু হল । খুব দ্রুত সে মারুতা রেস্টুরেন্ট গেল । আসলে মরি কাওয়া নামের কেউ সেদিন ছিল না । তথ্য গুলো পূরণ সে ম্যানেজার এর সহযোগিতায় করেছিল । তাহলে টেবিলে রাখা ইকেবানা তৈরির জন্য যে লোটাস ফুল গুলো ! সারা রাত ঘুম হল না । পরের দিন সকালে জীবনের নিয়মে দরজা খুলল । আরও একবার ফুল গুলোকে ছুঁয়ে অস্তিত্ব অনুভব করল । ফুল গুলো অদ্ভুত রহস্য হয়ে তার দিকে চেয়ে রইল । একটা মিষ্টি স্নিগ্ধ ছোঁয়া সমগ্র অস্তিত্ব কে ভিন্ন বিশ্বাস এর গন্ধ দিয়ে গেল । সহস্র প্রশ্ন রহস্য হয়ে সমগ্র মস্তিষ্কের নিউরন গুলো কে কাঁপিয়ে দিয়ে গেল ।হয়তো প্রকৃতির বুকে কোন মানুষই একা নয় । মানুষের ভিতরের গভীর ভালবাসার অনুভূতি গুলোই মানুষকে নানা রঙে ছুঁইয়ে দিয়ে যায় ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২৮

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:২৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: প্রামানিক ভাই আপনাকেও ধন্যবাদ ।

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: একি!

সত্যি! নাকিগো!
প্রথম তো বুঝতেই পারিন! পরে দেখি ওমা!!! এ যে সাংঘাতিক ভুতুরে!! ;) =p~ =p~ =p~

গল্পে ভাললাগা ++++++++++++++++++++++++++

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৩:৫৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: বিদ্রোহী ভৃগু ।। ধন্যবাদ ।

৩| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:০৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: শুরুটা ভালো লাগে নাই। প্রবন্ধ মার্কা লাগতেছিলো। পরে এসে এটা গল্পের আকার নেয়। ভালোই।

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৪:০১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: হাসান মাহবুব ভাই .।মার্কা ????????? এটা আবার কি ভাই ? হুম !অধ্যাপকের স্ত্রী প্রবন্ধই বর্ণনা করছিল । ধন্যবাদ ।

৪| ২০ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: নুরুন নাহার লিলিয়ান ,

নামের সাথে মিলিয়ে নিতে পারছিলুম না কাহিনীটি , গল্পের শেষের আটটি লাইনের আগ পর্য্যন্ত ।

আসলেই - মানুষের ভিতরের গভীর ভালবাসার অনুভূতি গুলোই মানুষকে নানা রঙে ছুঁইয়ে দিয়ে যায় , জীবনের শেষ লাইনে এসে ।

২০ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৯:২৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আহমেদ জী এস .।।। আজকাল আমরা সবাই বুঝাতেই চাই কিন্তু বুঝতে চাই না .।।।যাক শেষ লাইনে হলেও বুঝতে পেরেছেন ।কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.