নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস"অরোরা টাউন"পর্ব ৫-নুরুন নাহার লিলিয়ান।

২০ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১২




ধারাবাহিক"অরোরা টাউন"
৫ম পর্ব
নুরুন নাহার লিলিয়ান

দুই সপ্তাহ পর। মার্চ মাস। চারিদিকে শীতেরর প্রচন্ড দাপট। থেমে থেমে তুষাড়পাত। বাইরে বের হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। রাস্তার পাশের সারি সারি সাইকেল আর গাড়ি গুলো বরফস্তুপের নিচে।সমগ্র শহরে যেন তুষাড় খেলা চলছে। এখানে তুষাড়পাতের দিনগুলোতে শপিংমল গুলো দারুন ব্যস্ত থাকে। ক্যাফে, রেস্তরাঁ আর কফিশপ গুলো যেন সব সময় জমজমাট।
মানুষজন নিজ বাড়িতে থাকতে চায় না। বিদেশি ছাত্র ছাত্রীরা অধিকাংশ সময় ল্যাবে থাকে। তরুন তরুনিরা নিজেদের কর্মক্ষেত্র অথবা বাইরের কোন ক্যাফেতে অনেকটা সময় কাটিয়ে দেয়। আর এই সময় গুলোতে তারা নিজেদের কাজ গুলো সেরে নেয়। শৈত্য প্রবাহ আর বরফ হোক্কাইডো আইল্যান্ডের সমস্যা। কিন্তু হিম হাওয়া আর তুষাড় ছোয়াঁয় বেড়ে উঠা মানুষ গুলো এই জীবনকে ভালবেসেছে। প্রতিনিয়ত এর মধ্যেই জীবন খুজেঁ চলেছে। ব্যয় বহুল জীবন যাপন। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হয় জীবনের খুজেঁ।

একটু তুষাড়পাত কমলেই মূহূর্তে সব কিছু আগের মতো কর্মব্যস্ত আর চঞ্চল হয়ে উঠে। কিছু সবজি আর মাছ কিনতে হবে। অরুনিমা তাই আজ এইয়ন নামের শপিংমলে এসেছে। হোক্কাইডো বিশ্ব বিদ্যালয়ের খুব কাছেই এই সুপার শপ। বিদেশি এবং স্থানীয় জাপানিরা সবাই এখানে রাত নয়টার দিকে ভিড় করে।
বুড়ি, নিশেং, শ্যামন, কাই আর হোক্কে অনেক রকমের জাপানি মাছ কম মূল্যে ছাড় দেয়।
জাপানিরা তরতাজা এই মাছ গুলো কাচাঁ খেয়ে নেয়। পৃথিবীর সব জায়গায় জাপানি কাঁচা মাছের সুশি কিংবা সাশেমি ব্যাপক কৌতূহল উদ্দীপক।
অনেক দেশের মানুষের কাছেই জনপ্রিয়। এই শপিংমলে চিংড়ি মাছটা তুলনামূলক অন্য শপিংমলের চেয়ে কম। তাছাড়া এইয়ন শপিংমলের আলাদা বৈশিষ্ট্য হলো এটা রাত বারোটা পর্যন্ত খোলা থাকে। ব্যস্ত মানুষগুলো তাই রাতের দিকেই আসতে শুরু করে। অরুনিমা মোবাইলে রঙিন সাজানো সুশিগুলোর ছবি তুলতে লাগলো।

সারি সারি নানা রকমের বাহারি সামুদ্রিক মাছ। সেই সাথে ঐতিহ্যবাহী কাঁচা মাছের সুশি কিংবা সাশেমি রঙিন আদলে সাজানো। খুব মনোযোগ সহকারে অরুনিমা মাছ গুলো দেখছিল। হঠাৎ যেন মনে হল কোথাও কেউ বাংলা ভাষায় কথা বলছে। হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিদেশি ছাত্র ছাত্রী। পর্যটন শিল্পের জন্য প্রচুর বিদেশির পদচারনায় মুখর হোক্কাইডো আইল্যান্ড।
কানের কাছে বাতাসে ভেসে আসা শব্দ গুলো বেশির ভাগই চাইনিজ, জাপানিজ কিংবা অন্য কোন বিদেশি শব্দ।
বাংলা ভাষা শুনে অরুনিমার বুকের ভিতরটা কেমন করে উঠলো। পিছন ঘুরে চোখ দুটো খুজতেঁ লাগলো কোথায় আছে বাংলাদেশি। কয়েক মিনিট পর কেনাকাটা প্রায়ই শুরু করেছে। হঠাৎ একজন ভদ্র মহিলা তার কানের সামনে এসে জানতে চাইলো, "আপনি কি এশিয়ান? মানে ইন্ডিয়ান?
অরুনিমা বলল," হুম। আমি বাংলাদেশি। "
তিনি ফের প্রশ্ন করলেন," আপনি কি হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অথবা গবেষক?"
অরুনিমা আন্তরিকতার সাথে বলল," আমি মাস্টার্স করছি। কয়েক মাস হলো এসেছি
কিতাকু ওয়ার্ডে থাকি। "
তিনি চিৎকার করে বলতে লাগলেন, " ও মাই গড! কয়েক মাস! আপনি বাংলাদেশি কমিউনিটি সম্পর্কে জানেন না? "
অরুনিমা একটু বিনয় নিয়ে বলল," না। আসলে আমিও বাংলাদেশি কমিউনিটির কথা ভেবেছিলাম। যোগাযোগটা হয়ে উঠেনি। "

দুজনের উষণ আন্তরিকতায় কয়েক মূহূর্তে পারস্পারিক একটি সুন্দর সম্পর্কে রূপ নিলো। কিছুক্ষনের মধ্যে মহিলার সাথে একজন পুৃরুষ ও দেখা গেলো। তিনি পরিচয় করিয়ে দিলেন যে সে তার স্বামী।
আধা ঘন্টার মধ্যে জানা হয়ে গেলো তার পুরো পরিচয়। মহিলার নাম শর্মিলা আর সবামীর নাম ওয়াহিদ। তার স্বামী ফার্মেসীতে পোষ্ট ডক্টরাল করছেন। তারা এক যুগের বেশি সময় ধরে হোক্কাইডোতে আছেন। তাদের একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে ও আছে। তাদের সাথে কথা বলতে বলতে আরো চারজন বাংলাদেশি ছেলে মেয়ে এসে পাশে দাড়ালো। ডান পাশের ছেলেটির নাম স্বপ্নদ্বীপ তার সাথে মেয়েটির নাম চন্দনা। তারা দুজনেই একই ল্যাবে পিএইচডি করছে। বাম পাশের দম্পতি দুজনেই পোষ্ট ডক্টরাল করছেন। তারা বাংলাদেশে কোন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ভদ্রলোকের নাম সাজিদ আর স্ত্রীর নাম ইয়াসমিন। তারা সবাই ভীষন হাসি খুশি আর প্রানখোলা। তারা জানালো যে নয়টা বাংলাদেশি পরিবার আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোয়েনের নির্ধারিত বাস ভবনে।

হোক্কাইডো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা ক্যাটাগরির নির্ধারিত বাসা।সেখানে অনেক গুলো বাংলাদেশি সুখে দু:খে আত্মিয় তার আন্তরিকতায় সুন্দর জীবন উপভোগ করছে।
মিষ্টিমুখ ছোট খাটো মেয়ে চন্দনা খুব আন্তরিকতা নিয়ে জানতে চাইলো, " আপু আপনি বিশ্ব বিদ্যালয়ের বাসার জন্য আবেদন করেননি?"
অরুনিমা উত্তর দিল," না। আমি জেনেছি বাসা গুলো ছয় মাসের জন্য বরাদ্দকৃত।পরবর্তীতে সময় বাড়লেও এক বছরের বেশি থাকা যায় না। "
চন্দনা বলল," এটা সত্যি। তবে কেউ কেউ দেড় বছরও থাকতে পারে। "
অরুনিমা বলল," আমি মাস্টার্স করতে এসেছি। বার বার বাসা পাল্টানো ঝামেলা। তাই আর করিনি। "
শর্মিলা একটু এগিয়ে এসে জানতে চাইলো, "কেনো পিএইচডি করবেন না?"
অরুনিমা বলল," আমি নিশ্চিত না। আগে মাস্টার্সটা শেষ করি।"
স্বপ্নদ্বীপ নামের ছেলেটি বলল," আপু নেক্সট ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ।১লা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে বর্ষ বরন অনুষ্ঠান করতে যাচিছ। আপনি জয়েন করতে পারেন।"
অরুনিমা জানালো, " সবার সাথে পরিচিত হতে পেরে ভাল লাগছে। অবশ্যই জয়েন করবো।"
শর্মিলা বলল," আপনি সোয়েনে আসবেন। অনেক বাংলাদেশি আছে। কথা বললে আপনার ভালো লাগবে। "
অরুনিমা বলল," আপু অনেক ধন্যবাদ। আপনাদের সবাইকে দেখে খুব ভালো লাগছে। এই কয়মটস খুব নিঃসঙগতায় ভুগেছি।"
চন্দনা বলল," প্রবাসি জীবন মানে সব কিছুর মাঝে নি:সঙগ মন। সবারই হয়তো প্রিয় দেশ আর মানুষের কাছে মন পড়ে থাকে। আমরা সবাই ছুটির দিন গুলো খুব উপভোগ করি। "
অরুনিমা বলল," আমি ছুটির দিনে ফেসবুকে দেশে সবার সাথে যোগাযোগ করি। ফোনে কথা বলি। কেনাকাটা আর রান্না করে কাটাই।"
স্বপ্ন দ্বীপ আন্তরিকতা নিয়ে বলল," আপু হোক্কাইডো বিশ্ব বিদ্যালয় থেকে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা ভিজিট করার জন্য আয়োজন করে। অনেক সেচ্ছাসেবী দল ফ্রি সৃূযোগ দেয়।"
অরুনিমা অবাক হয়ে বলল," ফ্রি! জাপানে কিছু ফ্রি আছে? সত্যি মজা পেলাম।"
কথাটা বলেই হাসতে লাগলো। তার সাথে সবাই হেসে দিলো। অরুনিমা সবার সাথে কথা বলতে বলতে একটা বিষয় আবিস্কার করলো। ইয়াসমিন নামের ভদ্র মহিলা তেমন কোন কথা বলছে না। অরুনিমা কে পা হতে মাথা পর্যন্ত একবার ভালো করে পরখ করে নিলো।

পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি উচ্চতার অরুনিমা মহিলার অদ্ভূত চাহনিতে ভিতরে ভিতরে অস্বস্তিবোধ করতে লাগলো। ভদ্র মহিলার চাহনি এমন যে ছাকনি দিয়ে কিছু একটা ছেকেঁ নিচেছ।
শ্যামলা মেয়ে অরুনিমা। নিজের পোষাক এবং অবয়ব নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস আছে। তবুও ইয়াসমিন নামের মহিলার চাহনিটা যেন সারা শরীরে খুচিঁয়ে যাচিছলো।মনের ভিতরটা কেমন যেন সংকুচিত হয়ে গেলো। একজন নারী কিভাবে আরেকজন নারীর দিকে এতোটা কুৎসিত আর নিম্ন রুচি নিয়ে তাকাতে পারে!
মানুষের চোখের ভাষা কেমন করে এতোটা নোংরা হতে পারে। মূহূর্তে অনেক ভাবনা মাথার মধ্যে ঘুরপাক করতে লাগলো।
বেশ কয়েকবার কথা বলতে বলতে ইয়াসমিনের সাথে অরুনিমার দৃষ্টি বিনিময় হয়। অরুনিমা তার প্রশ্নবিদ্ধ চাহনি ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না।
হঠাৎ ইয়াসমিন নিজ থেকে কেমন হালকা বাঁকা কণ্ঠ স্বরে জিজ্ঞেস করলো, " আপনি কি বিবাহিতা নাকি অবিবাহিতা? "
অরুনিমা সাধারনভাবে উত্তর দিলো, " আপু বিয়ে নিয়ে এখনও কিছু ভাবিনি। আগে মাস্টার্সটা শেষ করি। "
ইয়াসমিন বলল," বিয়েটা করে ফেলেন। নিঃসঙগতা থাকবে না। আপনার নাম কি? "
অরুনিমা বলল," আমার নাম অরুনিমা আযাদ।"
চন্দনা বলল," আপু আমাদের ফেসবুকে আর স্কাইপিতে এ্যাড করে নিবেন। মোবাইলে ও কথা বলা যাবে। "
অরুনিমা বলল,"অবশ্যই। আজই বাসায় গিয়ে আপনাদের সবাইকে ফ্রেন্ড লিস্টে করবো। ম্যাসেঞ্জারে মোবাইল নাম্বার জানাবো। "
স্বপ্নদ্বীপ বলল," তাহলে আপু আবার দেখা হবে। আমাদের একটু দোতলায় যেতে হবে। কেনাকাটা আছে।"
চন্দনা আর স্বপ্নদ্বীপ চলে গেলো। ধবধবে ফর্সা ছোট খাটো মেয়েটার পাশে লম্বা কালো ছেলে। দেখতে কেমন যেন একটু বেমানান। পারস্পারিক সম্পর্কের যে ভাষা প্রকাশ পাচেছ তাতে যেকোন সমালোচকের ঠোঁট থামিয়ে দিবে। ঝরঝরে প্রানবন্ত একজোড়া কপোত কপোতি। মানুষের মনের অজানা স্থানে থাকা এক টুকরো ভালোবাসা এই পৃথিবীর সকল বেমানান কে তুচ্ছ করে দিয়ে ভালোবাসাকে সার্থক করে তোলে।

আজকাল পৃথিবীর আকাশে বাতাসে অসহিষনু দাবদাহ আর মানুষের হৃদয় গুলো নিষ্ঠুরতায় ভরপুর। স্নেহ, মায়া আর মমতা একটু বেশি এক ঘরে হয়ে আছে।
জীবনের জটিলতার আর ঘোরপ্যাঁচের কাছে মানুষ খুব অসহায়।
জোড়ায় জোড়ায় নতুন মানুষ গুলোর মাঝে অরুনিমার নিজেকে কেমন যেন একা আর অসহায় লাগছে।
শর্মিলা স্বামী ওয়াহিদ সবার কথার মাঝে হঠাৎ বামদিকের কারও দিকে তাকিয়ে হাসছিলেন। কোন এক বাংলাদেশি ভদ্রলোক এই দিকেই আসছেন।অরুনিমা ও সবার সাথে সেদিকে তাকালো। এই ভদ্রলোক এতটু বয়স্ক। ঠিক তরুন নয়। লম্বা,, ফর্সা আর সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী। এই লোকের নাম পাপন। ওয়াহিদ ভাই এই নামেই তাকে ডাকছিলেন।
ভদ্রলোক এসেই বাঁকা চোখে একবার অরুনিমার দিকে তাকিয়ে নিলেন। অরুনিমা ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো। পাপন নামের লোকটার শারিরীক ভাষা আর হাসির শব্দ যেন ভীষন অভদ্রোচিত।
কয়েক মূহূর্তে পাশে এসে দাড়ানো লোকটা সম্পর্কে এমন ধারনা হলো কেনো অরুনিমা নিজেই বুঝলো না।
মনের ভিতরটা কেমন অসহ্যকর একটা কিছু কাজ করতে লাগলো।

হঠাৎ ওয়াহিদ ভাই পরিচয় করিয়ে দিলো ডা: পাপন। তিনি কুকসাই শহরে থাকে। তইয়োহিরা নদী পার হয়ে যেতে হয়।
ডা: পাপন হাতটা বাড়িয়ে দিলো হ্যান্ড শ্যাক করার জন্য। অরুনিমাও নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিলো। তবে হ্যান্ডশ্যাক নয় সালাম দিয়ে।
ডা:পাপন হ্যান্ডশ্যাক করার জন্য যে হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছিলো সে হাতটা সেভাবেই ফিরিয়ে নিলো। তারপর একটু আলাদা দৃষ্টি নিয়ে অরুনিমার দিকে তাকিয়ে হালকা করে সালামের উত্তর দিলো। এই ভদ্রলোক সম্পর্কে অরুনিমার জানার তেমন আগ্রহ তৈরি হলো না।

শর্মিলা এবং ওয়াহিদ ভাইয়ের আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে জানা গেলো লোকটা একজন সরকারি ডাক্তার। জাপানে ছুটি নিয়ে এসেছে পিএইচডি করতে। খুব বেশি সময় নষ্ট না করে সবার কাছ থেকে বিদায় নিলো। তারপর বাসায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.