নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস "অরোরা টাউন"পর্ব ১২ নুরুন নাহার লিলিয়ান

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৭




অরোরা টাউন
পর্ব ১২
নুরুন নাহার লিলিয়ান

দরজা খুলেই সবাই জোরে হৈ হৈ করে চিৎকার দিলো। অরুনিমা অবাক হয়ে গেলো। ভিতরে ঢুকেই দেখে মুটামুটি সবাই আছে।

পিংকি,আহেলিয়া,ছন্দা, ইয়াসমিন ভাবি। মনেহল আজকে কোন প্রোগ্রাম। সবাই বেশ উৎফুল্ল।সবার মধ্যে ভীষন প্রানচঞ্চলতা বিরাজ করছে। এমন আন্তরিক হাসি খুশি মুখ গুলো দেখে ভালো লাগলো।

অরুনিমা একবার ভেবেছিল যে বাংলাদেশি কমিউনিটির আর কোন প্রোগ্রামে আর যাবে না। কিন্তু জীবনের কিছু পরিস্থিতি থাকে যেখানে নিজের ব্যক্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক জটিল বাস্তবতার কাছে নিজের উন্নাসিকতা তুচ্ছ হয়ে পড়ে।প্রতিটি পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই জীবন।তবে আজকে এখানে এসে ভালোই লাগছে। ইয়াসমিন ভাবি পিংকি কে জিজ্ঞেস করলো, "শর্মিলা ভাবি কোথায়? "
ছন্দা বলল,"বাসায় একটু কাজ আছে। চলে আসবে। "
ইয়াসমিন বলল,"ও আচ্ছা।আজকে ওয়ান আইটেম ডিস পার্টি হলে ভালো হতো "
ছন্দা বলল," আমি বলেছিলাম। সবাই একটা করে আইটেম রান্না করে নিয়ে আসি। পিংকি না করলো। "
ইয়াসমিন বলল," সেটা করলেই ভালো হতো। খামাখা পিংকির উপর চাপ পড়েছে। "
পিংকি টেবিলে খাবার গুছাতে গুছাতে বলল," আরে কি যে বলেন ভাবি। আজকে সবাই আমার বাসায় এসেছেন তাতেই আমি খুশি। "
ইয়াসমিন বলল," ওয়ান টাইম ডিস করে আনলে সবার রান্নার স্বাদ নেওয়া যেতো "।
সোনালি বলল, " ওয়ান আইটেম ডিস পার্টি তো প্রায়ই করা হয়। আরেকদিন করা যাবে "।
ছন্দা বলল," ও আচ্ছা অরুনিমা আপু আজকে নতুন এলো তো তাই না? "
ইয়াসমিন বলল, " হুম। আমি এটাই বুঝাতে চেয়েছি। "
কথা বলতে বলতে শর্মিলা ভাবি রুমে ঢুকলো । হাতে বেশ বড় মাপের একটা কেক।দুই কেজি ওজনের তো হবেই। শর্মিলা ভাবির হাতে কেকটা দেখে বোঝা গেলো যে আজকে পিংকির বার্থডে। খুব সুন্দর করে নিখূতঁ হাতে কেকটা তৈরি করা হয়েছে। পুরো বিষয়টা ভালো লাগলো। মনে মনে ভাবলো একটু মানিয়ে নিলে বিদেশের মাটিতে এমন একতার চেয়ে বড় শক্তিশালী আর কি বা হতে পারে।সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়লো কেকটা নিয়ে। কেকটা চকোলেট আর ভেনিলার সংমিশ্রণে তৈরি। তবে স্ট্রবেরি ফল দিয়ে খুব সুন্দর করে ডেকোরেশন করা।ডেকোরেশনের কারুকার্য সত্যি অসাধারন।
তবে কেকটা থেকে খুব সুন্দর একটা সুঘ্রাণ বের হচেছ। যে কারনে সবাই শুধু রেসিপি জানতে চাচেছ। শর্মিলা ভাবি তো বলবেই না।
শর্মিলা ভাবি বলল," এটার রহস্য আমার কাছেই থাক। তবে বার্থ ডে লেডির পছন্দ হয়েছে নাকি? "
পিংকি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল," ভাবি দ্য গ্রেট আমি সত্যি ভাষাহীন। ইউ আর রিয়েলি গ্রেট। "
শর্মিলা ভাবি বলল," থ্যাংকস।"
সোনালি বলল," কেকের চেহারা এতোই লোভনীয় যে এটা সামনে রেখে কিছুই ভাবা যাচেছ না।"
ছন্দা কাছে এসে বলল," আপু এতো তাড়াতাড়ি লোভী হইয়ো না।আরও হয়তো কেউ আসবে। "
পিংকি কথা শেষ না হতেই বলল," আরে আর কে আসবে? এই সাপ্পোরো শহরে তোমরা ছাড়া আর কে আছে আমার? "
ইয়াসমিন আন্তরিকতা নিয়ে বলল, " কথা তো ভালোই জানো। কেনো তোমার জাপানি স্কুলের কোন বান্ধবি আসবে না? "
পিংকি বলল," না। ভাবি আজকে সবাই ব্যস্ত ।ওদেরকে অন্য একদিন বলবো। "
শর্মিলা ভাবি একটু অন্য রকম ভাবে বলল,"আসলে আমাদের সাথে ডাকতে চাওনা সেটা বলো । যদি তোমার জাপানি বান্ধবিদের সাথে ভাব হয়ে যায়। তাই না? "
পিংকি মনে মনে একটু বিরক্ত হলো। কিন্তু প্রকাশ করতে পারলো না । শর্মিলা ভাবি ভীষন আন্তরিক এবং সহযোগীতামূলক মনোভাবের মানুষ । কিন্তু কখনও কখনও সে অযথাই বিরক্তিকর অনধিকার চর্চা করে। এই ব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে পারলে তার সঙগটা মন্দ নয়।
সাপ্পোরো বাংলাদেশি ভাবিদের কাছে পিংকি বরাবরই বুদ্ধিমতী এবং পরিশ্রমী হিসেবে পরিচিত।
এখন সে সেই বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ ঘটালো। খুব আন্তরিক হাসি মুখে নিয়ে বলল," আজকে ওদের সবার কাজ আছে। সবাই ব্যস্ত।"
ছন্দা বলল," আমাদের সাথে না ডাকাই ভালো। আমাদের সাথে ওরা সহজ না ও হতে পারে। আমরা নিজেদের মতো করে সময়টা উপভোগ করি। "
সোনালি বলল," ভাষাগত সমস্যার কারনে ওরা আমাদের বুঝতো না। আমরাও ওদের বুঝতাম না।"
পিংকি বলল," এটা ঠিক বলেছো। "
হঠাৎ সোনালির চোখ আহেলিয়া কে লক্ষ্য করলো। পিংকির বাসায় ঢোকার পর থেকে দেখছে আহেলিয়া তেমন কথা বলছে না। প্রথম কিছু সময় হয়তো ভেবে ছিল ব্যক্তিগত ভাবে সোনালির সাথেই নিরব। কিছুটা সময় যাওয়ার পর বুঝা গেলো যে সে সবার সাথেই তেমন কোন ভাবান্তর প্রকাশ হচেছ না। যদি সবার সাথেই সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে তো আজকের পার্টিতে আসার কথা নয়। তাহলে কি? মনে মনে অনেক কথাই এলো মেলো ভাবে ঘুরছিল। আহেলিয়া থাকে মেয়েদের ইন্টারন্যাশনাল হাউজের ডরমিটরিতে। কারন সে এখানে একা। স্বামী এবং পরিবারের সবাই বাংলাদেশে।সে সোয়েনের বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসা ইচ্ছে করেই নেয়নি। সে একদম চুপচাপ। ব্যাপারটা সবাই কম বেশি লক্ষ্য করছিল। ছন্দা দুষ্টামি করে বলল,"আহেলিয়া কি জাপানিদের মতো হিকিকোমোরি হয়ে গেলে নাকি? "
সোনালি জিজ্ঞেস করলো, " হিকিকোমোরি আবার কি? "
ছন্দা উত্তর দিল," হিকিকোমোরি তো জাপানে খুব পরিচিত বিচিছন্নতাবাদী মানসিক রোগ।"
সোনালি আবার ও জিজ্ঞেস করলো, " এটা আবার কি রোগ? "
ছন্দা উত্তর দিল," যে ব্যক্তি সারাদিন বাসায় থাকে। কোথাও বের হয় না। সমাজ এবং সামাজিক কর্মকান্ডে নিজেকে জড়ায় না। স্কুল, কলেজে যেতে চায় না। তাদেরই হিকিকোমোরি বলে।"
সোনালি আবারও জিজ্ঞেস করলো, " কোন বয়সে হয় এই রোগ?"
ছন্দা বলল, " সাধারনত তরুনরাই এই রোগে ভোগে। আমার এক ল্যাব মেটের ভাই এমন আছে। সে কারও সাথে মিশে না সারাদিন একটা রুমে থাকে। সেচ্ছাবন্দি।"
আহেলিয়া সোফা থেকে উঠে এসে টেবিলে রাখা গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলল," আমি তো নিজেকে রুমে রাখিনি। সমাজে মিশেছি। কথাও বলছি। তোমার কেনো এমন মনে হল যে আমি হিকিকোমোরি? "
ছন্দা বলল, "এতো সিরিয়াসলি ব্যাপারটা নিও না। তুমি মোটামুটি সব সময় কথা বলো। চঞ্চল থাকো। আজকে একদম চুপচাপ।"
আহেলিয়া বলল," আসলে মেজাজটা খারাপ। তারমধ্যে শরীরটা সুস্থ যাচেছ না। "
সোনালি জানতে চাইলো, " কি হয়েছে তোমার?
আহেলিয়া বলল,"একজন চাইনিজ আর একজন মেক্সিকান আমার পাশের রুমে থাকে। আমি প্রতিদিন রান্না করি। আর ওরা প্রতিদিনই স্বাদ হয়েছে বলে রুমে এসে ফ্রি খেয়ে আবার ময়লা প্লেট গুলো আমার জন্যই রেখে যায়। "
সোনালি বলল," এক দুই দিন ভদ্রতা করা যায়। সব সময় হলে খুবই অবিবেচক।"
ছন্দা বলল," তোমার সরাসরি বলে দেওয়া উচিত ছিলো যে এখানে তুমি ছাত্রী। আর তুমি কষ্ট করে রান্না করো। ফ্রিজে রেখে দিলে আরেক দিন রান্না করতে হয় না। "
আহেলিয়া বলল,"দেখো এখানে বাজারের জিনিস পত্রের ও কতো দাম। ব্যাপারটা বুঝা উচিত ছিলো। "
সোনালি বলল, " সরাসরি বলে দেওয়া উচিত।"
আহেলিয়া বলল," কি করেছি শোন? আমি মুখে কিছু না বলে দরজায় লিখে নোটিশ দিয়েছি। এক প্লেট ভাতের দাম ৫০০ ইয়েন। এক বাটি ডিমের দাম ২০০ ইয়েন আর প্রতি টুকরো মাছের দাম ৩৫০ ইয়েন। কেউ এই রুমে খেতে আসলে ইয়েন দিয়ে খেতে হবে। হা হা হা "

আহেলিয়ার কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে দিলো।

সোনালি আবার বলল," এটা একদম সত্যি কথা। চাইনিজ গুলো অন্যের উপর ধান্দামিটা ভালোই পারে।"
ছন্দা ও সাথে বলল," মেক্সিকান আর চাইনিজরা প্রায় একই ধরনের স্বার্থপর। "
সোনালি বলল," সব মেক্সিকান এক রকম না। "
ছন্দা বলল, " শোন সব চাইনিজরাও এক না।সব জাতিতে কিছু স্বার্থপর থাকবেই। "

অরুনিমা সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। দেখলো নিজের পরিবারের লোকজনের মতোই সবাই সবাইকে ভালোবেসে সম্মানের সাথেই কথা বলে যাচেছ। আজকে চন্দনা কে দেখা যাচেছ না। কাউকে জিজ্ঞেস করবে কি না মনে মনে ভাবলো।এরই মধ্যে ইয়াসমিন বলে উঠলো, " আচ্ছা চন্দনা কে দেখছি না? "
ছন্দা বলল," ভাবি ও সেদিন বলেছিলো শরীর ভালো না! "
শর্মিলা অবাক হয়ে বলল," তাইতো চন্দনাকে তো দেখছি না। "
পিংকি বলল," আমি ফোন করেছিলাম। আমাকেও অসুস্থতার কথা বলেছে। "
ইয়াসমিন ভাবি পিংকিকে জিজ্ঞেস করলো," ও কি প্রেগন্যান্ট? "
সোনালি বলল, " হতে পারে। বেশ কিছুদিন ধরে ডাক্তারের কাছে যাচেছ। "
শর্মিলা ভাবি বলল," চন্দনা তো মহা ভাগ্যবতী। স্বপ্নদ্বীপ ওকে যে কেয়ার করে। সব ছেলেরাতো এমন ঘরকুনো মেয়েলি স্বভাবের না। "
পিংকি একটু প্রতিবাদী কন্ঠে বলল," ভাবি বউকে সহযোগীতা করলে ঘরকুনো হবে কেনো? সব ছেলেরই এই এমনটা হওয়া উচিত। যাকে ভালোবাসবে তাকে সহযোগীতা করা অন্যায় কিছু নয়। "
ছন্দা ও বলল, " ঠিক। আমাদের সামাজিক দৃষ্টি ভঙিগ পাল্টানো উচিত। "
শর্মিলা ভাবি বুঝতে পারলো তার কথায় কেউ সাপোর্ট করছে না। তখন সে নিজের কথার ভুল স্বীকার করলো। তারপর বলল," ছেলেরা ঘরের বউটাকে সহযোগীতা করলে সেও নিজের ক্যারিয়ার টা গুছিয়ে নিতে পারে। আমার ক্যারিয়ারটা তো বাচচা পালন করতে গিয়েই গেলো। "
সোনালি বলল,” সংসারে পরস্পরের প্রতি সহযোগীতা থাকলে দুজনের মধ্যে মজবুত সম্পর্ক হয়। সংসারে শান্তি শৃংখলা থাকে।”
ছন্দা বলল,” একটা ছেলে তার বউকে সহযোগীতা করবে সেটা আমরা মেয়েরাই সহজভাবে মেনে নিতে পারি না। এই মানসিক দৈন্যতার পরিবর্তন না হলে কোনদিনই সমাজে মেয়েরা এগিয়ে যেতে পারবে না।”
সোনালি বলল, ” সবার মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।আমরা নতুন কিছু ভাবতে পারি না। টিপিক্যাল চিন্তা গুলো আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ গুলো আটকে রাখে।”

সবার মধ্যে নানা রকম বিষয় নিয়ে কথাবার্তা চলতে লাগলো।আর এদিকে
পিংকির সব কাজ গুছানো হয়ে গেছে। টেবিলে সাজানো শেষ ।শর্মিলা ভাবির বাচচা দুটো আরও দুটো বাচ্চাদের নিয়ে রুমে ঢুকলো। পিংকি ওদের কে চেয়ার টেনে বসতে দিলো।ছন্দা ছোট ছোট মোম দিয়ে কেকটাকে সাজালো। সবাই পিংকির পাশে দাড়ালো। পিংকি বাচ্চাদের সাথে নিয়ে কেক কাটলো। আজকের সন্ধ্যাটা এই শহরের কিছু নারীর একান্ত সময়।
তাই এমন ধরনের উপলক্ষ্য পেলে নিজেরা নিজেদের মতো উপভোগ করে। অরুনিমা দেখে ভরা সন্ধ্যায় ছোট ছোট মোম গুলো কেমন করে আলো ছড়াচ্ছে। সে আলো সবার চিবুক ছুয়েঁ যাচেছ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০১

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল।

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। বই মেলায় আসছে দোয়া করবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.