নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস "অরোরা টাউন"১৫-নুরুন নাহার লিলিয়ান।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:২০




ধারাবাহিক উপন্যাস
"অরোরা টাউন"
পর্ব ১৫
নুরুন নাহার লিলিয়ান

অরুনিমা লেটার বক্সে হাত দিতেই একটা পোষ্ট কার্ড পেলো।পোষ্ট কার্ডের কোনায় একটা পরিচিত নাম দেখে থামলো। কার্ডটা হাতে নিতে নিতে সেই পরিচিত চেহারাটা চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। কিছুক্ষন পর বুঝতে পারলো বুকের ভেতরটায় কেমন একটা শূন্যতা ডুকরে উঠছে। মাসাহিকো আগের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছে। তার জাইকায় নতুন চাকরি হয়েছে। সে হয়তো পোষ্ট কার্ডটা অনেক আগে পাঠিয়েছিলো। অরুনিমা লেটার বক্স না খুলাতে এতোদিন পায়নি। কিছুক্ষন কার্ডটা নিয়ে নাড়া চাড়া করে ব্যাগে রাখলো। এরপর সাইকেল নিয়ে ল্যাবের দিকে রওয়ানা হলো।

মাঝ খানে অনেক গুলো সময় বেশ ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই কেটে গেছে। সামনের সেপ্টেম্বরে মাস্টার্স শেষ হয়ে যাবে। প্রফেসরের অনুমতি পেলে পিএইচডিও শুরু করবে। গ্রীষ্মকালের এই সময়গুলোতে বৃষ্টিজল আর তীর্যক সূর্যের লুকোচুরি দেখেও মাঝে মাঝে মনটা প্রশান্ত হয়।অনেক ধরনের নতুন নতুন স্বপ্ন মনে ভালো লাগার অনু্ভূতি দিয়ে যায়।

নাদভি আহমেদ টোকিও থেকে মাঝে মাঝে দুই একদিনের জন্য হোক্কাইডো ঘুরতে আসে।ওয়াহিদ ভাইয়ের পারিবারিক অনুষ্ঠানে দেখাও হয়। নিজেদের মধ্যে অনেক ধরনের বিষয় নিয়ে কথাও হয়।সপ্তাহে দুই একদিন মোবাইলে কিংবা ফেসবুকে ও চ্যাট হয়। নিজেদের মধ্যেকার অনেক কিছু জানা শোনা ও হয়।

তিনি টোকিও বিশ্ব বিদ্যালয়ে বায়োকেমিস্ট্রিতে মাস্টার্স করার পর একই বিশ্ব বিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। মা বাবা সহ সেখানেই অনেক বছর যাবৎ বসবাস করছেন। কারন তার বড় ভাইও ঐ বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

সেদিন শর্মিলা ভাবি দুষ্টুমির ছলে বুঝিয়ে দিলো যে নাদভি তাকে বিয়ে করতে চায়। এরপর আরেক দিন ওয়াহিদ ভাই ও জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছে। অরুনিমা বলেছে ভেবে জানাবে।

অনেক দিন ধরেই তিনি উপযুক্ত বাংলাদেশি পাত্রী খুজঁছে। তাই পাত্রী দেখার জন্যই হোক্কাইডো আসে।একজন পাত্র হিসেবে নাদভি সব দিক থেকেই ভাল। হয়তো অরুনিমার মধ্যেই কিছু মানসিক ঘাটতি আছে। গতকাল রাত থেকে নাদভির বিষয়টিও মাথায় চিন্তার উদ্রেক করছে।অনেক দিন ধরে বাসা থেকে বিয়ের জন্য প্রেসার দিচিছলো। তাছাড়া নিঃসঙগ ভূস্বর্গে একা জীবন রচনাও কঠিন। নোয়েলের প্রতারনা বার বার কাউকে বিশ্বাস করতে থামিয়ে দেয়। অন্যদিকে মাসাহিকোর লাজুক ভালবাসা নতুন করে ভালবাসতে শেখায়। কিন্তু যাপিত জীবনের সব যন্ত্রনা স্বপ্নের পথ আঁকড়ে ধরে।

সকল জটিলতা আর সমাজকে উপেক্ষা করে মনের চাওয়া পাওয়া সব সময় পূরন হয়না। তারপরও কখনও কোন দৃঢ় সিদ্ধান্তে পৌছতে হয়। বেচেঁ থাকার প্রয়োজনে খুজঁতে হয় বিশ্বাস আর ভরসা।সব সময় স্বপ্নের সাথে বাচঁতে হয়।মানুষের নিয়তি বড় বেশি অদ্ভূত।নাদভির ব্যাপারটা মা কে জানানো হয়েছে। মা বাবার অনেক কিছু নিয়ে সংশয়। কোন মানুষের সব টুকু জানা সম্ভব নয়। আর অযৌক্তিক জানার চেষ্টা করা শুধুই সময় নষ্ট। যতোটুকু জানলে বিশ্বাস করা আর ভালোবাসা যায়। ঠিক ততোটুকু এই ছোট জীবনটার জন্য যথেষ্ট। দূর থেকে মা বাবা কে এতো কিছু বোঝানো সম্ভব নয়।তারা খুজেঁ জীবনের নিরাপত্তা আর নির্ভরতা।

মা বাবার চেয়েও নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়াটা আরও বেশি পরিস্কার হওয়া দরকার।
নিজের চাওয়া কিংবা পাওয়া গুলোর ভাষা বুঝা দরকার।
মাথায় নানা রকম চিন্তা এক সাথে ঘুরছে। পিএইচডি শুরু করতে চাইলেও মা বাবা রাজি হবেন না। এতো দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে একা থাকা কোন ভাবেই মেনে নিবেন না। শুধু মাস্টার্স শেষে দেশে ফিরলে সব কিছু আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নটাও হয়তো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। জীবনে কঠিন বাস্তবতার কোন নিশ্চয়তা নেই। যেকোন সময়ে তা জীবনের গতি পরিবর্তন করে দিতে পারে।জীবনের পথে পাওয়া প্রাপ্তি টুকু বুঝে নিতে হয়।

এসব চিন্তা করলে মনের মধ্যে অনেক জটিলতা আঁকড়ে ধরে। কোন একদিন তো বিয়ে নামক সম্পর্কে জড়াতেই হবে। যদি মনের একান্ত অনু্ভূতি গুলোর সাথে বোঝাপড়া ও দরকার। নারী ও পুরুষের গভীর ভালোবাসা হয়তো একদিনে ও হয়না। খুব ধীরে ধীরে আবিস্কার করতে হয়।
যদি সব কিছু মিলে যায় এই সিদ্ধান্তটি মা বাবার মেনে না নেওয়ার কারন নেই।
কিন্তু মাসাহিকোর প্রতি যে একটা হৃদয় হতে আসা টান শৈল্পিক ভালোবাসার ইথারে ঝনঝন করছে।মাসাহিকো কি কোন দিন সে ভালোবাসার শব্দ শুনতে পেয়েছে? নাকি অরুনিমার ভালোবাসার অর্থ সে বুঝতে পারে না। তবে না বুঝারই কথা। কারন অরুনিমা সেভাবে তার ছেলে মানুষী গুলো কে প্রশ্রয় দেয়নি। ভালোবাসায় প্রত্যাখ্যান হওয়ার ভয় যেকোন ব্যক্তিত্ববান মানুষের মধ্যে কাজ করে।

ভালোবাসায় প্রত্যাখ্যাত হওয়ার চেয়ে অনুক্ত থাকা ও ভালো। এমন অনেক ভাবনা অরুনিমা কে দিশেহারা করে তুললো। তবে কেনো মাসাহিকো চলে যাওয়ার পরও যোগাযোগ রেখেছে।গভীর ভালোবাসার অনু্ভূতি কখনও কখনও সমূদ্রজল বুকে নিয়ে উথাল পাথাল হয় কিন্তু তীড়ে ভিড়তে পারে না।
যদি অরুনিমাই মাসাহিকো কে সত্যিই ভালোবেসে থাকে তাহলে কেনোইবা সে বলতে পারছে না। ভালোবাসা প্রকাশের কিছু ভাষা এবং পরিবেশের প্রয়োজন হয়।দুজনের সম্পর্কের মাঝে কখনই তেমন পরিবেশ আপন হয়ে ধরা দেয়নি। আসলে মাস্টার্সের পড়াশুনার চাপ আর চারপাশের সামাজিক মানুষের মাঝের ব্যস্ততা মাসাহিকোর প্রতি অনু্ভূতিটাকে আড়াল করে রেখেছিল। আজকে পোস্ট কার্ডে মাসাহিকোর নামটা যেনো ভাবনার গভীরে টেনে নিলো।
যে চলে গেছে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়তো কোন ভাল অভিজ্ঞতা না ও হতে পারে।
ভাবনা গুলো সাথে নিয়ে অরুনিমার সাইকেল এসে থামলো ল্যাবের কাছে। নিজের অফিস রুমে ঢুকতেই দেখে টেবিলে একটা টেডি বিয়ার ডল, চকোলেট,ডায়মন্ড ব্রেসলেট আর একটা কার্ড।সেখানে লেখা -
Love is like playing music.
First you must learn to play by the rules.
Then you must forget the rules and playing from your heart.
You are the best music in my life.
Friends forever.

মাসাহিকো গিটার নিয়ে প্রায়ই ক্যান্টিনের বাম পাশের রাস্তার পার্কে অপেক্ষা করতো। কিংবা একা একা গাছের নিচে বসে গিটার বাজাতো। অরুনিমা কে দেখে বলতো, "তোমাকে দেখলেই নতুন সুর বেজে উঠে আমার গিটারে। "
তারপর আনমনা হয়ে কোন একটা জাপানি গানের সুর গুনগুন করতো। দৃশ্যগুলো এতো আবেগ নিয়ে চোখের সামনে পরিস্কার ভাবে ভেসে উঠলো। অরুনিমা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না। ডুকরে কেদেঁ উঠলো।খুব চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হলো,"
মাসাহিকো আমিও তোমার ভেতর জীবনের ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলাম।কেনো সবটুকু সুর নিয়ে হারিয়ে গেলে। কেনো বলে গেলে না যে তুমিও আমাকে ভালোবাসো।"

জীবনে এমন কিছু ভালোবাসা আসে তা হয়তো হিসেবে মিলে না। কিন্তু হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে আপন আবেগে জড়িয়ে থাকে।

সব কিছুই একান্ত মনের গভীরে রেখে মানুষকে এগিয়ে যেতে হয়। জীবন যতোটুকু প্রাপ্তি হাতে নিয়ে সামনে দাড়ায় তা নিয়ে সুখি হতে হয়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৬

শাহরিয়ার কবীর বলেছেন:
অপ্রাপ্তিতে দুঃখী হওয়ার চেয়ে সামান্য প্রপ্তিতে সুখ অনেক ।

গল্প পড়ে অনেক ভালো লাগলো আপু।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: গল্প নয় এটা উপন্যাস। বই মেলা ২০১৭ তে বই আকারে শিখা প্রকাশনিতে আসছে। বই পড়ার আমন্ত্রণ রইল।

২| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৭

এডওয়ার্ড মায়া বলেছেন: উপন্যাসের দাম কত রাখছেন ??
বই পত্রের আজকাল যা দাম ?

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: বই মেলায় যাবেন বই কিনবেন। বই কিনলে কেউ দেওলিয়া হয়না। ধন্যবাদ।

৩| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:০৯

নেক্সাস বলেছেন: একটা মাত্র বই কেনার ইচ্ছা হল। মনে হচ্ছে বেশ ইন্টেরষ্টিং উপন্যাস

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: হোক্কাইড আইল্যানড নিয়ে মানুষ জানতে পারবে। শিখা প্রকাশনীতে পাওয়া যাবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.