নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস "অরোরা টাউন"১৬- নুরুন নাহার লিলিয়ান।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:১১



উপন্যাস " অরোরা টাউন"
পর্ব ১৬
নুরুন নাহার লিলিয়ান

তারপর বেশ কয়েকটা মাস অরুনিমা নিজের ভেতর নিজেকে লুকিয়ে রাখলো।গভীর ভালোবাসার ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া দু:খে ভেজা কাকটাকে ও সবাই বুঝতে পারে। অরুনিমা চায়নি তার ভেতরটা কেউ জেনে যাক। কেউ তার আচমকা জলোচ্ছ্বাসে পাওয়া বেদনার নীল রংটার কথা বুঝে যাক। তাই বাংলাদেশি কমিউনিটির কারও সাথে সে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করেনি। সামাজিক কিংবা পারিবারিক অনুষ্ঠান কোন কিছুতেই নিজেকে প্রকাশ করেনি।
এই সেপ্টেম্বরে শেষ হয়ে যাবে মাস্টার্স। ফাইনাল ডিফেন্স পরীক্ষার জন্য খুব মনোযোগে পড়াশুনা করেছে। নিজের সবটুক পরিশ্রম দিয়েছে। ফিল্ড ওয়ার্ক, প্রেজেন্টেশন, স্লাইড তৈরি করা, প্রফেসরের সাথে মিটিংয়ে বসা অন্য কিছু নিয়ে ভাবার এক সেকেন্ড সময় নেই।

সময় ঘুরতে ঘুরতে সেপ্টেম্বর চলে এলো। প্রচন্ড দৃঢ়তা আর আত্ম প্রত্যয় নিয়ে অরুনিমা ডিফেন্স পরীক্ষা অতিক্রম করল। চারিদিকে শুধু তাকে অভিনন্দন জানানোর শব্দ।কনফারেন্স হল থেকে বের হওয়ার পর সে আচমকা একজন কে দেখে বিস্মিত হলো।ওয়াহিদ এবং সাজিদ ভাইয়ের সাথে নাদভি ফুল হাতে দাড়িয়ে আছে। তাদের সাথে সোনালি,আহেলিয়া এবং ছন্দা ও আছে।
সাজিদ ভাই বলল," আরে এই দিকে আসো। আমরা সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি।"

অরুনিমা সবার আন্তরিকতা এবং ভালোবাসায় লজ্জা পেয়ে গেলো। অপ্রস্তুত কন্ঠে বলল, " আসলে এই কয়দিন এতো ব্যস্ত ছিলাম। সবার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারিনা। "
ওয়াহিদ ভাই দুষ্টামি করে বলল, " তোমাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য সেই টোকিও থেকে নিজের পিএইচডির কাজ ফেলে নাদভি চলে এসেছে। তাকে ধন্যবাদ দাও।"
অরুনিমা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। ভেতরে কেমন একটা অনু্ভূতি কাজ করতে লাগলো।নাদভি নিজ থেকে এগিয়ে এসে বলল," আমরা ঠিক করেছি সবাই এক সাথে কোথাও লাঞ্চ করবো। আপনার কোন সমস্যা নেই তো? "
ওয়াহিদ ভাই বলল," আসলে ক্ষুধায় পেট চৌচির করছে। "
অরুনিমা লাজুক কন্ঠে মাথা নিচু করে বলল," সত্যি আমি সবার কাছে সরি। "
সাজিদ ভাই বলল," হয়েছে সরি ও বলতে হবে না। লজ্জা ও পেতে হবে না । আমরা জানি তুমি ব্যস্ত। এখন খেতে চলো "
ওয়াহিদ ভাই ও বলল," চলো। চলো। আমাদের লাঞ্চ করে আবার ল্যাবে ফিরতে হবে। "
সোনালি বলল," কোথায় যাবেন ভাইয়া? "
আহেলিয়া বলল," কোন ইন্ডিয়ান রেস্তরাঁ হলে ভালো হয়। "
সাজিদ ভাই বলল," ইন্ডিয়ান রেস্তরাঁয় খেতে গেলে সময় লাগবে। সাপ্পোরো স্টেশনের আট তলায় বাফেট আছে। আমি ইয়াসমিনকে আসতে বলেছি। "
ছন্দা বলল," অল্প সময়ে এটাই ভালো হবে। "
ওয়াহিদ ভাই জিজ্ঞেস করলো, " ইয়াসমিন ভাবি কি এখানে আসবে নাকি রেস্তরাঁয়?"
সাজিদ ভাই হাসি মুখে বলল,"রেস্তরাঁয় আসতে বলবো। "

ওয়াহিদ একটু সময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো, " অরুনিমা চুপচাপ কেনো? আজকে এতো সুন্দর একটা দিন। "
অরুনিমা বলল," এইতো ভাইয়া সবার কথা শুনছি। "

তারপর সবাই মিলে সাপ্পোরো স্টেশন গেলো। দাইমারু শপিংমলের আট তলায় চাইনিজ বাফেট রেস্তরাঁয়। সবাই কেমন নাদভি আর অরুনিমা কে প্রাইভেসি দিতে চাচেছ। অরুনিমার ভেতরে কেমন একটা মিশ্র অনু্ভূতি কাজ করছিলো। তবে নাদভি কেও অনেকটা নার্ভাস মনে হচেছ। সবাই যে যার মতো করে টেবিলে বসলেও অরুনিমা এবং নাদভি কে এক সাথে বসার সৃূযোগ করে দিচ্ছে।বিষয়টাকে হয়তো নাদভি মনে মনে ইনজয় ও করছে।
কিছুক্ষনের মধ্যে ইয়াসমিন ভাবি চলে এলো। তার হাতে সাতটা সাদা গোলাপ।ফুল গুলো খুব আন্তরিকতার সাথে অরুনিমা কে দিয়ে বলল," অভিনন্দন। আমার ল্যাবে কিছু কাজ ছিলো। তাই তোমার ডিফেন্সে প্রেজেন্ট থাকতে পারিনি। বলো নতুন সুখবর কবে ঘটবে। "
সাজিদ ভাই হাত ধরে ইয়াসমিনকে বসাতে বসাতে বলল," আরে বসতো। ওকে সময় দিবে তো। সব সুখবর এক সাথে চাও নাকি?"
ইয়াসমিন চঞ্চল হয়ে বলল," আমার হাতে সময় নেই। ল্যাবে চলে যেতে হবে। নাদভি সহ সবাই আজকে রাতে আমার বাসায় খাবে। "
ওয়াহিদ ভাই বলল," আজকে রাতে সাজিদ ভাইয়ের বাসায় পার্টি হলে কালকে কিন্তু আমার বাসায়। "
ইয়াসমিন ভাবি বলল," আপনারা সবাই সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যেই চলে আসবেন। তাহলে গল্প গুজব করতে সময় পাওয়া যাবে। "
ওয়াহিদ ভাই বলল," রান্না কিন্তু অরুনিমা করবে। "
অরুনিমা হেসে দিলো। সবার আন্তরিকতা আর উচ্ছ্বাস দেখে ভীষন ভালো লাগা কাজ করতে লাগলো। সবাইকে নিজের পরিবারের মতো আপন মনে হলো। টুকটাক ভাল মন্দ নিয়েই একটা মানব সমাজ।তবে যাইহোক সকল বিচিত্রতার মধ্যে সব সমাজেই কিছু ভালো মানুষ থাকে।
দাইমারু শপিংমলের এই The Buffet রেস্তরাঁটি বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছে খুব জনপ্রিয়। চাইনিজ কুইজিন বেশি পাওয়া গেলেও জাপানি,, কোরিয়ান, ম্যাক্সিকান এবং কিছু ইন্ডিয়ান খাবারও থাকে। বাফেটে এতো আইটেম থাকে যে মনের মতো আইটেম পছন্দ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
অরুনিমা খাবারের কাছে গিয়ে দেখছিল। চাইনিজ কুইজিনের মধ্যে Gong Bao Chicken এবং Ma Po Tofu বেশি পছন্দ। দুই একটা খাবার প্লেটে নিয়ে অন্য খাবার গুলো দেখছিল। হঠাৎ নাদভি ও প্লেট হাতে নিয়ে পাশে দাড়ালো। রহস্যময় ভরাট কন্ঠে বলল,"যাক আমরা দুজনেই Gong Bao Chicken এবং Ma Po Tofu পছন্দ করি। দুজনের পছন্দ এক "
পাশের দাড়ানো নাদভির কথাটা কেমন অরুনিমার কানটাকে ভারী করে তুলল।ভেতরে ভীষন একটা লজ্জাবোধ মনটা কে সংকুচিত করে দিতে লাগলো। তারপর মনের জড়তা কাটাতে অরুনিমা বলল," হট টেস্টি ডিস হিসেবে চাইনিজ Ma Po Tofu আমার পছন্দ।চাইনিজ এই খাবারটার ইতিহাস প্রায় একশ বছরের। ওয়েস্টার্নরা ও Ma Po Tofu খায় কিন্তু ওদের প্রস্তুত প্রনালী আলাদা। "
নাদভি উৎফুল্ল হয়ে বলল, "বাহ! আপনি খাবারের ইতিহাসও জানেন। "
অরুনিমা বলল," বিদেশে একজন মুসলিম হিসেবে হারাম হালাল বাছাই করা কঠিন। এসব করতে গিয়ে কিছু ইতিহাস ও জানা হয়ে যায়। "
নাদভি বলল,"ও আচ্ছা!খাবারের সাথে জ্ঞান অর্জন"
দুজনের কথার মাঝখানে ইয়াসমিন ভাবি এসে প্লেট হাতে দাড়ালো। তারপর বলল," এই রেস্তরাঁয় রাতে ডিনারের সময়টা খুব রোমান্টিক থাকে। খাবার খেতে খেতে সাপ্পোরো শহরের নাইট ভিউটা উপভোগ করা যায়। "
নাদভি মজা করে বলল," খুব শিঘ্রই রাতে আসতে হবে।"

অরুনিমা দুজনের কথা শুনছিল আর প্লেটে খাবার তুলছিল। এরপর নিজের জানালার পাশের সিটে এসে বসলো। কিছুক্ষন পর নাদভি ও অরুনিমার পাশে বসলো।তারপর জানালা দিয়ে সাপ্পোরো শহরটাকে দেখে বলল,"সাপ্পোরোর মধ্যাহ্নের ভিউটা ও কিন্তু কম সুন্দর নয়!"
ইয়াসমিন ভাবি বলল," বুঝেছি পৃথিবীর সব সৌন্দর্য এখন তোমার চোখে। এখন যা দেখবে সবই সুন্দর মনে হবে। আমাদের এমন সময় গেছে। "

ইয়াসমিন ভাবির কথায় সবাই হেসে দিলো। অরুনিমা ও একবার বাইরের সৌন্দর্যময় সাপ্পোরো শহরটা দেখলো। আজকের আকাশটা আর চোখে দেখা মানুষগুলো একটু বেশি সুন্দর। কারন হয়তো একটা সুন্দর গল্প রচনায় দুজনেই স্বপ্নিল জগতে ভেসে বেড়াচ্ছে।আজ দুজন তাই মনে মনে গভীর ভালোবাসার একান্ত জগতে নতুন প্রতিজ্ঞা আর প্রত্যাশায় বিভোর হতে চায়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩১

তিসান বলেছেন: বেশ ভাল লাগল।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৫৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.