নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প ; প্রাক্তন সহকর্মী - নুরুন নাহার লিলিয়ান ।

১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:১২




প্রাক্তন সহকর্মী ;

তিনি আমার আমার প্রাক্তন সহকর্মী । বাংলাদেশের অন্যসব ব্যস্ত কর্মজীবীদের মতোই খুব ব্যস্ততা নিয়ে অফিসে আসে । তাঁর ক্লান্তি মাখা ঘুম ঘুম চোখ দিয়ে যেন অনেকটা সময় অফিস ব্যস্ততার সরষে ফুল দেখে । অনেকটা সময় এমন করেই কাটে । তারপর মধ্যাহ্নের কিছু আগে তার নরম কন্ঠ শোনা যায় । কারন টা হল তিনি মধ্যাহ্ন ভোজের এবং প্রার্থনার বিরতিতে যাবেন ।
আমি স্বাস্থ্য এবং রূপ সচেতন নাগরিক ।কাজের ফাঁকে এক কাপ চা আর সামান্য সালাদেই আমার ক্ষুধা মিটে যায়।তাই আমার মধ্যাহ্ন ভোজ নেই ।আর ব্যস্ত সময়ে কাজে ফাঁকি দিয়ে বেশি সময় প্রার্থনায় মগ্ন হতেও সবাই পারে না । কিছু মানুষ প্রার্থনার উছিলায় অতিরিক্ত সময়টুকু নিজেকেই দেয়।
তাই সে সময়টা তাঁর কাজ গুলো আমাকেই দেখতে হয় । সে সুবাদে আমি যে তাঁর কাছে মন গলে যাওয়ার মতো কিছু পাই তা কিন্তু নয় ।তবে একটা ভ্রম বা আকর্ষণ তো আছে । কিংবা ওই যে মানুষের প্রতি মানুষের মায়া । হতে পারে তার প্রতিদিনের সকাল সন্ধ্যা বুক ফাটা আর্তনাদ । যা পাশে বসে কাজ করতে করতে শোনায় । আমি বিস্মিত হয়ে তাঁর আর্তনাদ গুলো একটু একটু করে কুড়িয়ে নেই । তারপর গভীর মায়া নিয়ে তাঁর দিকে তাকাই । দেখি তার উজ্জ্বল শ্যামলা চেহারায় অপরিপক্ক হাতের মেকাপের ছাপ । ভীষণ বেমানান কম দামী ফাউন্ডেশণটা কেমন ভেসে উঠেছে । ঠোঁটের লিপস্টিকটা কোনা বেয়ে গড়িয়ে পড়তে চাইছে ।

এক চোখে কাজল গভীর করে আঁকা ।তো আরেক চোখে যেন হাল্কা হাতের ছোঁয়া লেগেছে । আমি তার পুরো অবয়বে মনে মনে হেসে উঠি । তবে কিছু বলিনা । যদি ভুল বুঝে মিছে কষ্ট পায় । তবে পুরো চেহায় নকশি কাঁথার মায়া বুনা আছে । সংসারের হাজারও ক্লান্তিকর গল্পের ভিড়ে জানা যায় তিনি দুই সন্তানের জননী । কোন একসময়ে পিতা বিয়োগে ভাইদের সংসারে ভীষণ অসহায় হয়ে পড়েন ।

ভাইরা খরচ বাঁচাতে হাতের কাছে থাকা এক ব্যবসায়ীর হাতে বোনকে তুলে দেন । যাও কন্যা নিজের সংসার দেখো । দুই মাসের মাথায় বুঝলেন পাত্রের আগে একজন ভালবাসার মানুষ ছিল । সেই মেয়েটি প্রবাসে স্বামীর সাথে । দ্বিতীয় বাচ্চা কন্যা সন্তান জন্মের পর আরও স্পষ্ট হল তার স্বামী ফেলে আসা প্রেমে নতুন করে হাবু ডুবু খাচ্ছে । বাবা মা হীন অসহায় এই নারী কোথায় যাবে ।তার উপর অবুঝ দুই ছেলে মেয়ে ।

প্রতি দিন রাত এটা সেটা নিয়ে যুদ্ধ হয় । অনেক তাবিজ কবজ হয় । স্বামীর পুরনো প্রেম কিছুতেই যায় না । মনের দিক দিয়ে যে নারী অসহায় একটা কর্পোরেট চাকরি কি তাকে সব টুকু নিরাপত্তা দিতে পারে । তাই মনে আর শরীরে সব সয়ে যেতে হয় ।
মানুষ মাঝে মাঝে ভীষণ ক্লান্ত হয় তার জীবন এবং জগত নিয়ে ।আমি তাকে দেখে অনুভব করি । মানুষ শুধু ক্লান্ত নয় কেমন দিগভ্রম ও হয় । আমাকে তার কাজ গুলো করে দেওয়ার নিয়মিত অন্যায় আবদারে পরিনত হল। কিছুই বলতে পারি না । একটা অদম্য বিরক্তি আমাকে ও অসহ্য করে তুলে । কিন্তু একটা ভদ্রতা আমাকে থামিয়ে দেয় । আমি বাধ্য হয়ে তার প্রতিদিনের বঞ্চনার গল্প শুনি ।

তার জীবনে প্রথম পুরুষ তাঁর স্বামী ।আর তার স্বামীর জীবনে সে দ্বিতীয় নারী । বিয়েই সব নয় ।সামাজিক রীতি সমাজ চালায় ।আর মনের স্বীকৃতি জীবন চালায় ।অমন অগোছালো নারীর মুখে এমন উচ্চমার্গের কথা আমাকে হতবাক করে ।এমন অগোছালো জীবনে কেমন গোছালো দুঃখের পসরা সাজানো । তার শিল্পিত আর স্বেচ্ছাচারী স্বামীর একটা কাল্পনিক অবয়ব আমার মনের গল্প শুনতে শুনতে অঙ্কিত হয় ।
আমি মনে মনে ভাবি হয়তো কোন রূপবান এবং সুপুরুষ । যে কিনা এই বিধ্বস্ত মায়াবী নারীকে অযোগ্য মনে করে ।
এমন করে প্রায় ছয় মাস আমরা পাশাপাশি কাজ করি। সে ব্রাঞ্চ ট্রান্সফার হয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে । কোন একটা প্রয়োজনে এক ভদ্রলোক অফিসে ঢুঁকে কাউকে খুঁজতে থাকে । তখন আমার সহকর্মী মাগরিব নামাযের প্রার্থনায় । ছোট খাটো রোগাটে ভদ্রলোকের সামান্য ঘাড় বাঁকা । কম দূরত্বে মুখোমুখি থাকায় অনিচ্ছা স্বত্বেও তার দিকে আমার চোখ গেল । আমার সামনের পিয়ন কে বললাম চেয়ার টেনে দিতে তাকে বসার জন্য।

কিছুক্ষন পর তিনি নামাজ থেকে ফিরে এলেন । সুপ্রিয় স্বামীকে দেখে আবেগে আপ্লুত হলেন । তাদের দুজনের হঠাৎ প্রেম দেখে আমি বোকা হয়ে গেলাম । আর বুঝলাম পরক্রিয়ায় আসক্ত হতে রূপ , অর্থ কিংবা ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন হয়না । আমরা জন্মগত কিংবা স্বভাবগত ভাবেই দ্বিচারিণী । একটা দ্বিমুখী মন আমাদের সবার ভিতরেই লতার মতো প্যাচিয়ে থাকে । যা খুব গোপনে সুযোগ পেলেই নিজের মতো আচরন করে ।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১:৫৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


মোটামুটি

১৭ ই মার্চ, ২০১৭ দুপুর ২:২৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: মোটামুটি ধন্যবাদ।

২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৪১

নতুন নকিব বলেছেন:



অনেক ধন্যবাদ,
বোন লিলিয়ান। লেখাটি ভাল লাগল। অামার কাছে বাস্তব কিছু মনে হয়েছে। তবে দু'টি প্রশ্ন এসে গেছে লেখাটি পড়ার পরে-

আর ব্যস্ত সময়ে কাজে ফাঁকি দিয়ে প্রার্থনায় মগ্ন হতেও আমি পারি না ।

-যে মালিক আমাকে এই অমূল্য জীবন দিয়ে, সুন্দরতম আকৃতি-প্রকৃতি দিয়ে, আকর্ষনীয় দৈহিক সৌষ্ঠবে আমাকে সাজিয়ে এত সুন্দর, নয়নাভিরাম এই বসুন্ধরা দেখতে দিলেন, সেই আসল মালিকও তো আমাকে কিছু কাজ দিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন। তাঁর কাজে ফাঁকি দেয়া কি ঠিক হবে?

আমরা জন্মগত কিংবা স্বভাবগত ভাবেই দ্বিচারিণী ।

-সম্ভবত: এ কথাটা আপনি আপনার নিজেকে নিয়ে কিংবা নিজের চেনা জানা দেখা পরিবারকে নিয়ে বলে থাকবেন! নিশ্চয়ই এই দেশের, ভাষার কিংবা জাতির সকলের উদ্দেশ্যে বলেন নি! তাই তো?

আবারও ধন্যবাদ।

ভাল থাকুন।

১৭ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আপনার প্রশ্ন দুটো আসতেই পারে আপনার নিজস্ব চিন্তা থেকে । জহুর নামাজ ৪,৪,২ মোট দশ রাকাত পড়লেই কিন্তু হয় । যেটা আমি সহ অন্য সহকর্মীদের দেখেছি । যখন আপনি আপনার হতাশার কথা বলে ্‌্‌নিজের ব্যক্তিগত ঝামেলার কথা বলে বলে প্রার্থনায় বেশি সময় থাকবেন এটা নিশ্চয়ই ঠিক নয় । আল্লাহ্‌ এটা বলেছেন হালাল করে খেতে । তাহলে কাজ বা চাকরি টা উনার হালাল হলো কি .।।চাকরি কিন্তু তার পরিশ্রমের বিনিময়ে বেতন .।।তাই নয় কি .।।অফিসে এসে ২ ঘণ্টা ধ্যান করার জন্য নয় । ধ্যান করতে হলে নিজের বাড়িই উত্তম জায়গা .।অফিস নয় ।


আর দ্বিতীয় প্রশ্ন .।।যেহেতু গল্প টা আমার অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছি ।তো সেটা আমার দেখার জগত থেকেই লেখা হয়েছে । পাঠক তার চিন্তা অনুযায়ী গ্রহন অথবা ত্যাগ করবেন ।

ভাল থাকুন । ধন্যবাদ ।




৩| ১৭ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৩

নতুন নকিব বলেছেন:


বোন লিলিয়ান,
প্রতিমন্তব্যে ধন্যবাদ।

হ্যা, ঠিক আছে। আমি তো স্পেশালি আপনার "আর ব্যস্ত সময়ে কাজে ফাঁকি দিয়ে প্রার্থনায় মগ্ন হতেও আমি পারি না।" -বাক্যের পারি না কথাটার দিকেই দৃষ্টি আকর্ষন করতে চেয়েছিলাম।


ভাল থাকবেন।

১৭ ই মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ভাই শুনেন মহান আল্লাহ্‌ সব কিছুর মধ্যে পরিমিতি বিষয়ে ও বলেছেন .।।। আমি মগ্ন একটা শব্দ ব্যবহার করেছি । ভেবে দেখুন কি বুঝায় .।।যুদ্ধ ক্ষেত্রেও নামায পরতে হবে তবে সেখানে পরিস্থিতি বুঝে .। যুদ্ধ রেখে নয় । সেজন্যই আল্লাহ্‌ ফরজ এবং ওয়াজিব ,নফল বিষয় গুলোর কথা বলেছেন । আর প্রার্থনা মহান আল্লাহ্‌র সাথে মানসিক যোগাযোগ আর আল্লাহ্‌ প্রেমে নিজেকে উৎসর্গ করা .।।ভরা মজলিসে.।অফিস আদালতে বেশি সময় ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর বিষয় নয় । নিজের দুঃসময় মানুষকে দেখিয়ে সহানুভূতি আদায় করা .।নিজের কাজ আরেকজনের উপর চাপিয়ে তাকে মানসিক কষ্ট দেয়া নয় ,এই পৃথিবীতে আমরা নিজের বিবেচনা বোধ আর মানবিক বোধ কে অনুভব করি না । অথবা করতে চাই না ।
ধন্যবাদ ।

৪| ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:৪৭

নতুন নকিব বলেছেন:



ধন্যবাদ বোন, ও আপনি 'মগ্ন' ছিলেন! সরি, 'মগ্ন' দিয়ে অন্য কিছু মিন করাতে চেয়েছিলেন।

মানুষের হক বা অধিকারগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ন বিষয়। কর্মক্ষেত্রে কাজে ফাঁকি দিয়ে প্রার্থনার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় নেয়া অথবা এর মাধ্যমে কারও সহানুভূতি আদায়ের দিকে মনযোগী হওয়ার বিষয়টি নিসন্দেহে নিন্দনীয়।

কিন্তু, আমাদের এদিকটাতে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন, যাতে অফিস কিংবা কর্মক্ষেত্রে নিজেকে অধিক কর্মঠ, সময় সচেতন, দায়িত্বশীল ইত্যাদি প্রমান করতে গিয়ে যেন সত্যিকারের মালিক, যার দয়ায় বেঁচে থাকি প্রতিটি মূহুর্ত তার আদেশ-নির্দেশের তোয়াক্কা না করে, তাঁকেই যেন ভুলে না বসি। ব্যক্তিগতভাবে আমি এরকম অনেক সচেতন পাবলিককে দেখেছি, যারা অবলিলায় এসব করে অভ্যস্ত ছিলেন। বস্তুত: আল্লাহর হক আদায় করা বলতে যা বুঝায় সেটা আমাদের পক্ষে কিংবা কোন মানুষের পক্ষেই কখনও পুরোপুরিভাবে সম্ভব নয়। তবু সাধ্যমত চেষ্টা করে যাওয়া আর কি!

যুদ্ধ ক্ষেত্র যুদ্ধ ক্ষেত্রই। সেখানের জন্য অবশ্যই আলাদা নিয়ম। কিন্তু অফিস, কর্মস্থল, বাসা বাড়ি ইত্যাদির সাথে যুদ্ধ ক্ষেত্রের সাযুজ্য কি? আপনি আমি না করলেও এগুলোকে দেখবেন, অনেকে ইচ্ছা করেই যুদ্ধ ক্ষেত্র বানিয়ে নেয়ার বেহুদা চেষ্টায় ব্যপৃত হয়ে ওঠেন।

ভাল থাকুন।

২১ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: @অনেকে ইচ্ছা করেই যুদ্ধ ক্ষেত্র বানিয়ে নেয়ার বেহুদা চেষ্টায় ব্যপৃত হয়ে ওঠেন...............

ভাই আপনি নিজেই বলে দিয়েছেন । মহান আল্লাহ্‌ সব কিছুই সুন্দর করে নিয়ম ভাবেই তৈরি করেছেন । অথচ উনাকেই আমরা ভুলে যাই .।আজকাল সব কিছুই মানুষকে দেখানো .।।জানি না মানুষ কেন জানি দিনে দিনে অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে ।

যাইহোক আমি ,আপনি আমাদের সবার গোনাহ মাফ হউক .।সত্যিকারের মহান আল্লাহ্‌র প্রতি মানুষের আনুগত্য তৈরি হউক । সকল কে হেদায়েত করুক । ধন্যবাদ।

৫| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ ভোর ৫:৪৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: লিখাটি ভাল লাগর পাঠে ।
শুভেচ্ছা রইল

২১ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।

৬| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৩৪

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন আপি!:)

২১ শে মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.