নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস " মারিজুয়ানা" পর্ব ৩ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩০



মারিজুয়ানা পর্ব ৩
আজকে মারিজুয়ানার মন ভীষন খারাপ। মাঝে মাঝে মনেহয় জীবনের সব কিছু ছুড়ে ফেলে নিখোঁজ হয়ে যেতে। জীবনের কঠিন জটিলতা গুলো মাঝে মাঝে চোখের সামনের পৃথিবীটাকে অনেক বেশি দূর্বোধ্য করে তুলে।এই পর্যন্ত যতোবার শফিকের মেয়ে নাতালি সুজুকি বাংলাদেশে এসেছে ততোবারই তার আত্মহনন হয়েছে। মেয়ে বাংলাদেশে এলে শফিক যেনো মারিজুয়ানাকে চিনেই না। একটা মানুষ পৃথিবীতে কতো রকমের রূপ ধারন করতে পারে তা কেবল শফিক কে দেখলেই বুঝা যায়।মেয়ের সাথে শফিকের ন্যাকামি গুলো দেখলে মনেহয় শফিক আর মেয়েটাকে মেরে ফেলতে। আর কতো দিন এই ভাবে নিজেকে বঞ্চিত করবে।জীবনটা এমন হওয়ার কথা ছিল না। একটা অদ্ভুত ফাঁদে মারিজুয়ানার জীবন কেটে যাচ্ছে। একমাত্র মৃত্যুই পারে এই জীবন থেকে মুক্তি দিতে। কিন্তু জীবন যুদ্ধের চেয়েও কঠিন মরনের রূপ।বেঁচে থাকাটা দিনের পর দিন অভিশপ্ত হয়ে উঠছে । নাতালি আসার পর থেকে শফিক যেভাবে জুয়ানা কে এরিয়ে যাচ্ছে কিংবা অবহেলা করছে তা কোন ভাবে মেনে নেয়া যায় না । নিজেকে কোন অন্যায়ের কাছে এই ভাবে সঁপে দেওয়া যায়না । তবু ও ইচ্ছের বিরুদ্ধে মেনে নিতে হচ্ছে । শফিকের জীবনে কতো নারী ছিল বা আছে সে হয়তো নিজেই বলতে পারবে না ।অদ্ভুত এই মানুষটাকে আবিস্কার করা অনেক কঠিন । এই বয়সে জীবনের অভিজ্ঞতা গুলো অন্যরকম হতে পারতো । কিন্তু জীবন যেন পথে পথে নতুন নতুন কান্নার সমুদ্র দেখাচ্ছে । তারপর ও এই জটিল মানুষটার সাথে কতো সহজে তের বছর কেটে গেছে । এই নিয়ে নাতালি চারবার এসেছে বাংলাদেশে । নাতালির বয়স যখন তিন বছর তখন তার মায়ের সাথে শফিকের ডিভোর্স হয়ে যায় ।এই ঘটনা গুলো মারিজুয়ানা শাশুড়ি আর নাতালির মুখেই শুনেছে । বিভিন্ন ঘটনা আর বাস্তবতায় । এর আগের বার যখন নাতালি বাংলাদেশে এসেছিল তখন থেকে একটু একটু করে মারিজুয়ানার সাথে কথা হয় ।এর আগের দুই বার এলেও তেমন কোন কথা হয়নি । কিংবা নাতালি কে জানানো হয়নি মারিজুয়ানার পরিচয় । নাতালি যখন তৃতীয়বার এলো তখন শফিক মারিজুয়ানা কে সাথে নিয়ে উত্তরা থাকত । সেদিন হঠাৎ দুপুরে শফিক হম্বি তম্বি করে ঘরে ঢুকল ।মারিজুয়ানা তখন বারান্দায় নয়ন তারা গাছে পানি দিচ্ছিল ।বাইরের পরিবেশটা একটু গুমোট থাকলে ও অনেক গরম ছিল । সকালে একবার বৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল ।তাই রাস্তা ঘাট একটু ভেজা । তখন মারিজুয়ানারা পাঁচতলায় থাকত । পাঁচতলা থেকে নিচের রাস্তা ঘাট দেখতে বেশ ভাল লাগত । মারিজুয়ানা বারান্দা থেকে দেখল শফিক বেড রুমে ঢুকেই বারান্দায় এসে বলল , ‘এই নাও পাঁচশ টাকা। কোথাও ঘুরে আসো ।’ আমার মেয়ে বাংলাদেশে আসছে । তোমাকে দেখলে ওর মন খারাপ হবে।’
মারিজুয়ানা হতবাক হয়ে গেল । শুধু বলল , ‘আপনার মেয়ে আসবে আমি কেন আমার ঘর ছেড়ে চলে যাব।আপনি পরিবার নিয়া বিয়া করছেন না ? আল্লাহ্‌র নাম নিয়া কবুল বলছেন না ? তাইলে এখন ক্যান সব আমারেই সহ্য করতে হইব? ‘
শফিক তার ভয়ংকর চেহারাটা দেখিয়ে বলল, ‘যাও বলছি । নয়তো লাথি মেরে পটুয়াখালী পাঠাইয়া দিব । ভাল করে বলছি । দুই তিন দিন পর আসো । নয়তো গাজীপুর তোমার ভাইয়ের বাড়ি ঘুরে আসো ।’
মারিজুয়ানা রেগে গিয়ে বলে, শুনেন একদিন আমি আপনার সামনে গায়ে আগুন দিয়া মরমু নয়তো ফাঁসি দিমু।
শফিক কঠিন দৃষ্টি নিয়ে মারিজুয়ানার দিকে তাকায় । তারপর কাছে এসে দুহাত দিয়ে মারিজুয়ানার গাল দুটো শক্ত করে চেপে ধরে ।

তারপর বলে, এই! এই! এই! তুই আমাকে ভয় দেখাস। তোকে আমিই মেরে ফেলব ।গ্রাম্য পেত্নী !তোর মতো গ্রাম্য ভূত কে দুনিয়া থেকে সরাতে দুই মিনিটের ব্যাপার । কথা না শুনলে পরিনতি অনেক খারাপ হবে ।

মারিজুয়ানার ভিতরের মানুষটার উপর পাহাড় ভেঙে পরেছে ।এক ভয়ঙ্কর জলোচ্ছ্বাসে তার স্বপ্ন গুলো ডুবে যাচ্ছে । মারিজুয়ানা শুধু শুনতে পাচ্ছে তার ভেতরে তুমুল ভাঙচুর ।
শফিকের মনের বিরুদ্ধে বা মতামতের বাইরে গেলে তার চেয়ে ভয়ংকর মানুষ পৃথিবীতে একটাও নেই।সে হল নেশায় ডুবে থাকা এক মানসিক প্রতিবন্ধী । কোন ন্যায় নীতি নিয়ম কানুন তাকে প্রতিহত করতে পারে না । মারিজুয়ানা সেদিন একটা সিএনজি ভাড়া করে সারাবেলা গন্তব্যহিন ঘুরে। এক সময় গাজীপুর ও ভাইয়ের বাসায় যায় । কিন্তু ভাইয়ের বাসায় ও তার অনিশ্চিত ভয়াবহতার কথা ভেবে থেমে যায় । বাসার সামনে থেকেই ফিরে আসে । সন্ধ্যার দিকে শফিক ফোন দিলে নিজেই ফিরে আসে উত্তরা। তারপর পনের দিন কথা ছাড়া নিজ বাসায় থেকেছে । কাজের মানুষের মতো শুধু রান্না করেছে ।কেউ কখন ও জিজ্ঞেস ও করেনি সে খেয়েছে নাকি খায়নি ।

না। মারিজুয়ানা আর কিছু মনে করতে চায় না । পুরো দৃশ্যটা মারিজুয়ানার চোখের সামনে অনেক বেশি স্পষ্ট ।অনেক বেশি অসহায় লাগছিল সেদিন । মনেহচ্ছিল কোন পাপে মাত্র পনের বছর বয়সে এমন বুড়া শয়তানের সাথে বসবাস করতে হচ্ছে । ভয়ংকর এক স্বার্থপর মানুষ । কি যে অসহায় লাগছিল । অনেক প্রতিবাদী মন থাকলে ও মারিজুয়ানা কেন জানি এই সংসার নামের কারাগার থেকে বের হতে পারছে না । মনের ভেতরটা সব কিছু ভেঙ্গেচুরে তীব্র প্রতিবাদী হয়ে উঠে । তারপর কোথাও এসে থেমে যায় । একবার ভেবে ছিল ফুলের টবটা দিয়ে শফিকের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে । কিন্তু না পারেনি । যখন জীবন প্রতিবাদী হতে বলে বাস্তবতা তখন স্বপ্ন সুখের টুকরো টুকরো গল্প গুলোকে ডেকে নিয়ে আসে।জীবনের জটিল সব প্রশ্নে হেরে যায় মারিজুয়ানা।

তারপর টাকাটা নিয়ে মারিজুয়ানা নিজের রুমের দিকে যায় । শফিক বলল ,” বারান্দা থেকে তোমার জামা কাপড় গুলো ভিতরে রেখে যাও ।তোমার কাপড় চোপড় দেখলে নাতালির মনে প্রশ্ন জাগবে। ”
মারিজুয়ানা আবার ফিরে এসে রাগে কট কট করতে করতে জামা কাপড় গুলো নিজের বেড রুমে রেখে এক কাপড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল ।
কিভাবে সম্ভব হয়েছে । তের বছর ধরে এমন সব নির্যাতন সহ্য করে এই অমানুষের সাথেই জীবন যাপন করছে । এখন মারিজুয়ানারা ধানমণ্ডি থাকে । আজকের বাইরের পরিবেশটা ও ঠিক সেদিনের মতো । গভীর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে জানালা দিয়ে ব্যস্ত ঢাকার ছুটে চলা মানুষের দিকে তাকায় । কিছুক্ষনের মধ্যেই নাতালি আর শফিক ফিরেছে । নাতালির কিছু কাগজ পত্র জমা দেওয়ার জন্য জাপান দূতাবাসে গিয়েছিল ।শফিক সিরিয়াস মুডে বলল , রাতে আমরা খাবোনা । দুজনেই খেয়ে এসেছি । তুমি খেয়ে সব কিছু গুছিয়ে ঘুমিয়ে পড় । আর কাল সকালে সাতক্ষীরা যাচ্ছি প্রোজেক্ট লোকেশন ভিসিটে । আমাদের সাথে ডঃ নেশাম এবং তার ওয়াইফ ও যাচ্ছে । তুমি যেতে চাইলে সব এখনি গুছিয়ে রেখো ।
মারিজুয়ানা বলল , যেতে চাই । আমরা কি আগামিকাল থাকব ।
শফিক বিরক্তি নিয়ে বলল , হুম। সকাল সাত টায় রওয়ানা করব । দুইদিন থাকা হবে ।
মারিজুয়ানা কিচেনে গেল । দশ মিনিট না যেতেই শফিক কিচেনে এসে ফিস ফিস করে বলল , শোন নাতালি রুমের দরজা বন্ধ করলে তুমি বেড রুমে এসো ।
মারিজুয়ানা গভীর দীর্ঘশ্বাস দেয় । কিছুই বলেনা । কিছু বলতে পারে না । শুধু বুক ফেটে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসের সাথে স্বার্থপর সময়ের দিকে তাকায় ।

চলবে …

আগের পর্ব ২
http://www.somewhereinblog.net/blog/nurunnaharlilian/30235664

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫০

প্রামানিক বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: জি ভাইয়া শীঘ্রই দিব । আন্তরিক ধন্যবাদ ।

২| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫

এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: আপনি বেশ পরিশ্রম করে জাপানের ভূপ্রকৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরছেন লেখায়, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু বানানের ব্যাপারে আপনি বা আপনার প্রকাশকগণ এত অবহেলাকারী কেন?
ভীষণ, মনে হয়, সবকিছু, জটিলতাগুলো, দুর্বোধ্য, যতবার...

পাঠকনন্দিত হওয়ার প্রথম শর্ত, লেখা সুন্দর ও শুদ্ধ হওয়া। আপনার অনেক বানান ভুল একটু যত্ন নিলেই দূর হয়ে যাবে। চেষ্টা করুন পাঠকদের জন্য।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আপনার সুন্দর সুপরামর্শের জন্য অনেক অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ ।

৩| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:১৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: হুম। এবার সেটিংটা স্পষ্ট লাগছে। সাথেই আছি আগামী পর্বের। ভাল থাকবেন।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ । আশাকরি সামনের পর্ব গুলোতে আপনার আরও আগ্রহ তৈরি হবে ।

৪| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: মারিজুয়ানা কি কাল্পনিক চরিত্র?

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৩৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: রাজিব ভাই গল্প উপন্যাস কখন ও পুরোপুরি বাস্তবতা নির্ভর কিংবা একেবারেই কল্পনা থেকে হয় না । হতে পারে চোখে দেখা সহস্র চরিত্র ভিড়ের মধ্য থেকে পাওয়া কোন কাল্পনিক চরিত্র কিংবা কল্পনায় থাকা কোন বাস্তব চরিত্র । তবে পাঠকদের আগ্রহী করে তুলবে এই উপন্যাস পড়তে । আপনাকে ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.