নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস " মারিজুয়ানা" পর্ব ৪ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫১



ভোর সাড়ে ছয়টায় শফিক স্ত্রী মারিজুয়ানা এবং মেয়ে নাতালি কে নিয়ে গবেষনাগারের ক্যাম্পাসে ডঃ নেশামের বাস ভবনের নিচে চলে এলো। ড্রাইভারের পাশে শফিক বসেছে। মাঝের সিটে ড:নেশাম এবং তার স্ত্রী গুঞ্জন। পেছনে মারিজুয়ানা আর নাতালি পাশাপাশি বসেছে। ওদের দেখে গুঞ্জন মনে মনে ভীষন খুশী। মারিজুয়ানার জীবনচিত্র মনের ভেতর ভীষন কৌতুহল তৈরি করেছে। বার বার পেছনে সৌজন্য হাসি নিয়ে মারিজুয়ানার দিকে তাকায়। সেও হাসি দেয়। নাতালি ঘুমাতে থাকে। এতো ভোরের ভ্রমণ সত্যি কষ্টের।হঠাৎ মারিজুয়ানা হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল , ভাবি নাস্তা করার সময় পেয়েছেন ?
গুঞ্জন আন্তরিকতা নিয়ে বলল , না ভাবি । ঘুম থেকে উঠে আপনার ভাইকে সব গুছিয়ে দিতে দিতেই সময় চলে গিয়েছে?
মারিজুয়ানা বলল , ভাবি আমরা ও করিনি । সামনে কোথাও থামতে হবে ।
গুঞ্জন বলল , হ্যাঁ ।অবশ্যই কোথাও তো ফ্রেস হওয়ার জন্য থামতে হবে । আরে আমরা নাস্তা করতে পারতাম । ও কে সব আমার গুছিয়ে দিতে হয় । নিজের হাতে কিছু করবে না ।
কথা শুনে মারিজুয়ানা হেসে দেয় ।তারপর বলে, বাঙালি ছেলেরাই এমন । স্ত্রী নির্ভরশীল প্রাণী ।
গুঞ্জন হাসতে হাসতে বলে , যেসব দম্পতির ছেলে মেয়ে থাকে না ।তাদের স্ত্রীর কাছে স্বামীই বাচ্চা হয়ে থাকে । তাঁর জামা জুতা কোথায়? তাঁর ঘড়ি কোথায় ? তাঁর মোবাইল কোথায়?
সব স্ত্রীকেই করে দিতে হবে ।
এই কথা গুলো মারিজুয়ানা কে ভীষণ মজা দেয় । খুব হাসতে থাকে । হাসতে হাসতে বলে ,বাহ ! ভাল তো । আপনার অনেক মজা ।
গুঞ্জন বলল , হুম । অনেক মজা । অন্য কারও কাছে হলে বিরক্তির হতো ।এই বিরক্তির বিষয়টাই আমার মজা হয়ে গেছে ।
মারিজুয়ানা বলল , তা অবশ্য ঠিক ।
এই দিকে গাড়ি সাই সাই করে চলছে । ড্রাইভার ভাই ভীষণ ভাবে বেপরোয়া ।ময়মনসিংহের ভাষায় সাথে বসা শফিক সাহেব কে কিছুক্ষন পর পর কি যেন বুঝাচ্ছে । পেছনে যে তিন জন নারী আছে সেদিকে তার খেয়াল নেই ।মনেহয় তিন জন টগবগে তরুণীকে দেখে তাঁর গতি বেড়ে গেছে ।
গুঞ্জন মনে মনে একটা জিনিস খেয়াল করল মারিজুয়ানা কখন ও বরিশালের টোনে কখন ও ঢাকার প্রচলিত সাধারন ভাষায় কথা বলছে ।মারিজুয়ানা মেয়েটির গভীর শূন্য চোখ দুটি যে কোন মানুষকে আকর্ষণ করবে । গুঞ্জনের ভেতরের কৌতূহল গুলো বেশ স্বস্তি পেল এই ভেবে যে সে নিজ থেকেই গুঞ্জনের সাথে বন্ধুত্ব করেছে ।গাড়িতে কথা বলেছে । গুঞ্জনের লেখালেখির অভ্যাস আছে । মানুষের জীবন কে রঙ পেন্সিলে আঁকতে তাঁর শিল্পিত মন নিয়ে । সেই মনটাই হয়ত গল্প লিখতে শুধু নতুন নতুন জীবন খুঁজে বেড়ায় । গুঞ্জনের স্বামী নেশাম ও ঘুমাচ্ছে । গাড়িতে এসি চললে ও কেমন জানি একটা ভ্যাপসা গরম লাগছিল গুঞ্জনের ।তাঁর ডান পাশের জানালার কাঁচটা খুলে দিল ।তখনই হঠাৎ সামনের সিট থেকে শফিক সাহেব চিৎকার দিয়ে উঠল ।
“ভাবি ওই গ্লাসটা খুলার দরকার নেই । বাইরের বাতাসের ঝাপটায় গলা বসে যাবে। ”
গুঞ্জন লাগিয়ে দিয়ে আবার মারিজুয়ানার সাথে গল্প করা শুরু করল । কিন্তু কিছুক্ষন পর আবার ও কেমন জানি ভ্যাপসা গরম আর খারাপ লাগছিল । তখন এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ চলছে । প্রকৃতির আলাদা রাগ আর অভিমান যেন সারা আকাশজুড়ে ।
মারিজুয়ানা ইশারা করে বলল কাঁচটা টেনে দিতে । গুঞ্জন শফিকের দিকে একবার তাকিয়ে অল্প করে কাঁচটা টেনে দিল । শফিক আবার ও বলল ,ভাবি কাঁচটা বন্ধ করে দিন । অথচ তার পাশের বাম দিকে কাঁচটা খোলা।
শফিকের এই ধরনের স্বার্থপর আচরনে গুঞ্জনের মনে মনে বিরক্ত লাগতে শুরু করল ।পেছন থেকে মারিজুয়ানা বিষয়টা বুঝতে পারল । হাত দিয়ে ইশারা করে বুঝাল যে , শফিক লোকটা এই ধরনেরই । মনে হয় নাতালির বেশি বাতাস লাগবে সেজন্য হয়তো । নাতালি এই দেশে এই ধরনের অতিরিক্ত যত্নে শফিক মহা ব্যস্ত থাকে । নতুন পরিচয় গুঞ্জনের সাথে এই পরিবারের । কিছু বলা ও যাচ্ছে না । তবে শফিকের উপর চরম বিরক্ত লাগছিল । এইদিকে নেশাম গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন । সামনের সিটেই ড্রাইভার । ডানদিকের আয়নাটা বাঁকা করে রেখেছে । যেন পেছন দিক থেকে মেয়েদের দেখা যায় । এই চিত্র আর আচরন বাংলাদেশের ড্রাইভার সমাজের কাছে খুব সাধারন । অথচ আয়নার মধ্য দিয়ে মধ্য দিয়ে তাঁরা অনেক সময়ই নারীদের আলাদা দৃষ্টি দিয়ে ভিন্ন ভাবে উপভোগ করে । ড্রাইভারটা তার উপর আবার পান খায় । পুরো গাড়িতে পান জর্দার গন্ধ । সব কিছু মিলে ভ্রমণটা অসহ্যকর লাগছে । কিন্তু মারিজুয়ানার সঙ্গটা তাকে নতুন গল্পে নিয়ে যাচ্ছে । বিষয়টা বেশ উপভোগ্য ।

হঠাৎ গুঞ্জন জিজ্ঞেস করল , “আচ্ছা আপনার নামটা বেশ । কে রেখছে এই মাদকের নামে নাম । অবশ্য আপনি মাদকের মতোই আকর্ষণ করেন ।”
মারিজুয়ানা খিল খিল করে হেসে দিল । তারপর বরিশালের ভাষায় বলল ,ওম্মা ভাবি সাব এইডা কি কইলেন । এইডা যদি হেয় হুনে জীবনে ও স্বীকার লইবে না যে আমি সুন্দরি । তয় নামডা হেরই দেওয়া ।
গুঞ্জন ও বেশ মজা পেয়ে হেসে দিল । ওয়াও! ইউ আর এক্সিলেন্ট লেডি । এমাজিং! আপনার সঙ্গ মজার। তাহলে আপনার আসল নাম কি ?
মারিজুয়ানা আর ও মজা করে বলল , “ভাবি সাব হুনেন আমার আসল নাম হইল গিয়া মারজান । অনলি মারজান । আগে পরে কিচ্ছু নাই । তয় সুন্দরি কিন্তু হেই ছোডো কাইল থিকা হুনি । হ্যাঁগো বাড়ি এইডা কেউ স্বীকার যাইবে না ।”
গুঞ্জন একটু কপাল কুচকে জিজ্ঞেস করল , মানে কি ? আপনি সুন্দরি এটা ভাইয়াদের বাসায় কেউ স্বীকার করতে চায় না । তাই তো ?
মারিজুয়ানা দুই হাতে তালি দিয়ে বলল , ” এক্কেবারে ধইরা ফালাইছেন ।খুব দুঃখ লাগে”।
গুঞ্জন সিরিয়াস মুডে বলল ,এটা বাংলাদেশের কমন চিত্র । কেউ ছেলের বউয়ের ভাল গুন কে এপ্রিসিয়েট করতে চায় না । আর এসব নানা কারনে ডিভোর্স এর সংখ্যা ও দিন দিন বেড়েই চলেছে ।
মারিজুয়ানা হাতের ইশারা দিয়ে বুঝাল , নাতালির মা আর শফিকের একটা দাম্পত্য জীবনের অবসান হয়েছে এসব কারনেই ।
গুঞ্জন একটু ফিস ফিস করে জানতে চাইল উনাদের “কি কারনে ডিভোর্স হয়েছিল?”
মারিজুয়ানা একটা দীর্ঘশ্বাস দিয়ে বলল , ” ভাইরে সে অনেক কারন । একটা কারনে কি আর সম্পর্ক শেষ হয় ? নাতালির মায়ের ও মাথায় সমস্যা ছিল । রেগে গেলে বাসার সামনে একটা নদীতে একটা একটা করে বাসার সব জিনিস নদীতে ফেলে দিত ।সেটা প্রয়জনীয় জিনিস কিংবা অপ্রয়জনীয় বুঝত না । তারপর ড্রিঙ্ক করে চিৎকার করে কান্না করত । ”
গুঞ্জনের মনটা খারাপ হয়ে গেল । তারপর বলল , “সো সেড । উনি কি এখন ও একা নাকি অন্য কার ও সাথে আছে ?”
মারিজুয়ানা বলল , “শুনেছি বয় ফ্রেন্ড আছে । কিন্তু বিয়ে করেনি । উনারা সমবয়সী ছিল ।”
গুঞ্জন জিজ্ঞেস করল , আপনার সাথে বিয়ের কতো বছর হল?
মারিজুয়ানা বলল , “এই তো তের বছর ।”
গুঞ্জন অবাক হল । তারপর বলল , তের বছর অনেক দিন । তাহলে আপনাদের বেবি নেই ?
মারিজুয়ানার মুখটা কাল হয়ে গেল । খুব শীতল কন্ঠে বলল , আমাদের বেবি হচ্ছে না !
কথাটা গুঞ্জনের ও খারাপ লাগল । তাই গুঞ্জন আর কথা বাড়াল না । এবার নিজের সিটে ঠিক করে বসে বাইরের প্রকৃতি দেখতে লাগল । একবার বাম পাশের সিটে বসা ডঃ নেশামের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন । নেশামের ঘুমন্ত হেলে পড়া মাথাটা সিটে ঠিক করে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল । তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস দিয়ে বাইরের ছুটে চল পৃথিবী দেখতে লাগল । আর মনে মনে নিজের সাথে কথা বলতে লাগল । আহা! আহা! জীবন! মানুষের জীবন! এই একটা জীবন কতো কষ্টের ভার বইতে পারে !

চলবে …।

আগের পর্ব ৩

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫৭

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: একটু বড় উপন্যাস । আশাকরি সামনের পর্ব গুলো আরও ভাল লাগবে । আন্তরিক ধন্যবাদ ।

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:১২

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: টাচি

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: হুম । খুব কষ্টের উপাখ্যান! কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ ।

৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:০৫

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ! বেশ তো!

অনেক গুলো মিন হয়ে গেছে! পিছু ফিরতে হবে ;)

++++্

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: জি ভাইয়া । আন্তরিক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.