নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস " মারিজুয়ানা" পর্ব ৫ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬



উপন্যাসঃ মারিজুয়ানা পর্ব ৫
নুরুন নাহার লিলিয়ান

মানুষ না চাইলে ও অনেক কিছু ঘটে যায় জীবনে । তারপর ও সেই অনাকাঙ্ক্ষিত জীবন বয়ে বেরাতে হয় । কেন জানি মনে মনে মারিজুয়ানার জন্য একটু মায়া লাগতে শুরু করল । বেশ কিছুক্ষন সময় ধরে গুঞ্জন আর পেছনের সিটে বসা মারিজুয়ানার দিকে তাকাল না । হয়তো গরীবের জন্য জীবনের চলমান থাকা নিয়তি অনেক বেশি স্বেচ্ছাচারী হয় ।নিয়তি কে মানতে না চাইলে ও কখন ও কখন ও জীবন বাধ্য করে নিয়তি কে মেনে নিতে ।গাড়ি চলছে বেশ ভাল গতিতে । বার বার স্পীড ব্রেকারের ধাক্কা লাগছে । মাঝে মাঝেই মারিজুয়ানা বলছে , ড্রাইভার মামা একটু আস্তে । ধাক্কা লাগলে অনেক খারাপ লাগে । বমি হয়ে যাবে ।
শফিক সাহেব একবার জিজ্ঞেস করল , “খুব বেশি খারাপ লাগছে নাকি ? নাতালি কি করছে ?”
মারিজুয়ানা বলল ,”ঘুমাচ্ছে । উনাকে একটু আস্তে চালাতে বলেন ।”
প্রায় এক ঘণ্টা সাঁই সাঁই করে চলতে লাগল । চেনা ব্যস্ত ঢাকা শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে এসেছে সবাই । গুঞ্জন এক বুঝতে পারছে না । গভীর ক্লান্তিতে নেশাম ঘুমাচ্ছে । জেগে থাকলে জিজ্ঞেস করা যেতো । কিন্তু বাইরে তাকালে শুধু অবারিত ফসলের মাঠ। সবুঝ মাঠ আর ছোট ছোট কৃষকের ঘরবাড়ি মনে হচ্ছে ছবিতে আঁকা ক্যানভাস ।সকালের ঘুম ঘুম অলস শরীরে বাইরের ফুরফুরে বাতাস অন্য একটা ভাল লাগা ছুঁয়ে দিচ্ছিল মনে । নিজের ও ঘুম পাচ্ছিল । এমন সময় শফিক সাহেব পেছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল ,”কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি ?”
মারিজুয়ানা বলল , “ফ্রেস হওয়ার জন্য কোথাও থামলে ভাল হতো ।”
শফিক বলল , ” সামনেই আমরা ভাল রেস্তোরাঁ পেলে থামব । অল্প কিছু সময় অপেক্ষা কর । ”
উনাদের কথা শুনে ডঃ নেশাম ঘুম থেকে উঠলেন । গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন ,” ভ্রমনে ঘুমালে চলবে ! কি শফিক সাহেব কোথায় থামা যায় বলেন?
শফিক সাহেব বললেন ,” এই দিকে খুব ভাল রেস্তোরাঁ পাওয়া যাবে না । মুটামুটি ভাল হলে থেমে ব্রেকফাস্ট করে নিতে হবে “।
নেশাম বললেন , আচ্ছা আমাদের হাতে যেহেতু সময় আছে আমরা কিন্তু সুন্দরবন ঘুরে আসতে পারি “।
শফিক বলল,” সেটাও করা যায় । এক কাজ করি আমরা প্রথমে মংলা যাই । সেখান থেকে সুন্দরবন । তারপরে খুলনা হয়ে সাতক্ষীরা যাওয়া যাবে “।
এর মধ্যে নাতালিকে বেশ কয়েক বার শফিক ডাকলেন ।
“নাতালি ! নাতালি! আমরা অল্প কিছু সময়ের মধ্যে কোথাও ব্রেকফাস্ট করব ।”
নাতালি ও চোখ খুলে হেসে দিল । কারন সবাই ওর দিকে তাকিয়ে ছিল । এতো ডাকে ও ওর ঘুম থেকে উঠছিল না । সবাই মিলে ডাকার পর সে ঘুম থেকে উঠল । স্বাভাবিক ভাবে জাপানিরা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠলে ও সে রিয়েল জাপানিদের মতো নয় । তাঁর জীবন যাপনে বাঙালির অনেক কিছু আছে । সে টোকিও বিদেশি ভাষা বিশ্ব বিদ্যালয়ে বাংলায় পড়ে । সে দিক দিয়ে বাংলা সংস্কৃতির অনেক কিছুই তাঁর আত্মস্থ হয়েছে । রবি ঠাকুরের “রক্ত করবী “নাটকে অনেক বার বাংলায় অভিনয় করেছে ।
বাংলাদেশি খাবার থেকে শুরু করে অনেক কিছুই সে জানে । বাংলা ভাষাটা ও বেশ গুছিয়ে বলার চেষ্টা করে ।
মধ্যম মানের একটা রেস্তরাঁর কাছে গাড়ি থামল । এক টেবিলে নাতালি , গুঞ্জন আর মারিজুয়ানার জন্য খাবারের ব্যবস্থা হল । অন্য টেবিলে শফিক আর নেশাম । পেছনের এক টেবিলে ড্রাইভার খেতে বসল । রেস্তোরাঁয় ঢুকলে সবাই নাতালির দিকে তাকিয়ে আছে । নাতালি বাংলাদেশী সালোয়ার কামিজ পরলেও তাকে সেই জাপানিই মনে হচ্ছে । শফিকের চেহারার সাথে সামান্য মিল থাকলেও নাতালি দেখতে পুরোই জাপানি । নাতালির বয়স যখন ষোল তখন সে মায়ের কাছ থেকে বাবার তথ্য নিয়ে বাবাকে খুঁজে নিয়েছে । এর মাঝের সময় গুলো সে বাবাকে পায়নি । মায়ের সাথে কোন এক মানসিক সমস্যার সময়ে সে বাবার খোঁজ করে । সে এক ভিন্ন দুঃখময় শোকগাধা । কখনও সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতার থেকে মৃত্যু অধিক সৌন্দর্য বহন করে । ষোল বছর বয়স থেকে সে বাবার ভালবাসা পুনরায় পেতে শুরু করে । শফিক তখন থেকেই মেয়েকে বাংলা সংস্কৃতির প্রতি তাকে আগ্রহী করে তুলেছে । তাই মেয়ে হাই স্কুল পাস করার পর বাংলায় আন্ডার গ্রাজুয়েশন করার জন্য অনুপ্রাণিত করে ।
শফিক একবার টেবিলে দেখে গেল । আর মারিজুয়ানাকে বলল ,” তুমি ওকে খাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করো ।নাতালি হাত দিয়ে পরাটা খাওয়ার অভ্যাস নেই ”
মারিজুয়ানা মুখে কিছু বলল না । শুধু মাথা নেড়ে উত্তল দিল ।

ড্রাইভার শুধু খাওয়ার সাথে এই দিকের টেবিলেই তাকিয়ে আছে । বার বার নাতালির শরীরের কোন একটা জায়গায় ড্রাইভারের চোখ ঘুরপাক খাচ্ছে ।বিষয়টা মারিজুয়ানা আর গুঞ্জন দুজনেই লক্ষ্য করেছে । কিন্তু কিছুই বলার নেই । এদিকে নাতালি বুকের ওড়না খুব ভাল করে নিতে শিখেনি ।তাছাড়া কামিজের সাথে ওড়না পরাটাকে সে অনেকটা অপ্রয়োজনিয় মনে করে । সে মনে করে কাপরের একটা অংশ যেখানে শরীর ঢেকেছে তাহলে কেন এই অতিরিক্ত কাপড় আলাদা করে ব্যবহার করা । এই কথা গুলো যতো সহজে বলা যায় কিন্তু বাস্তবতা অনেক আলাদা । এই বাস্তবতা বুঝতে হলে এই দেশে অনেক দিন থাকতে হবে ।
গুঞ্জন চোখের ইশারা করে দেখিয়ে বলল , ভাবি আমাদের ড্রাইভার মামা অনেক দূরে বসেছে । তাঁর হয়তো নাস্তা খেয়ে পেট পূর্ণ হয়নি । ”
মারিজুয়ানা খুব জোরে হেসে দিল ।তারপর বলল ,” একদম ঠিক বলেছেন ।কিছু কিছু মানুষের জন্য পুরো সমাজের দোষ হয় ।”
গুঞ্জন চেয়ার থেকে উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল , আমি ওয়াশ রুমে যাচ্ছি । আপনারা যাবেন কেউ ?”
মারিজুয়ানা বলল ,” আমি যাব না । নাতালি কি যাবে?
নাতালি বলল ,’ আমি যেতে চাই ।”
গুঞ্জনের সাথে নাতালি যাওয়ার দাঁড়াল । মারিজুয়ানা খুব সুন্দর করে গায়ের ওড়না সেপটি পিন দিয়ে সেট করে দিল । দুজন এক সাথে টয়লেটের দিকে গেল ।কিন্তু টয়লেটের ভেতর গিয়ে আবার কেন জানি নাতালি ফিরে এল । এসেই একটু বিরক্ত হয়ে বলল ,” আমাকে সাহায্য করুন প্লিজ । এটা খুলে দিন । আমার সমস্যা হচ্ছে । ”
নাতালি এমন করে টয়লেটের ভেতর থেকে বাইরে বের হয়ে এসেছে পুরো রেস্তোরাঁর চোখ যেন নাতালির দিকেই । গুঞ্জন মনে মনে ভীষণ অস্বস্তিবোধ করতে লাগল । খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি । মারিজুয়ানা দূর থেকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে বলল ,” কোন সাহায্য লাগবে ?”
গুঞ্জন জানাল ,” না । সব ঠিক আছে ।”
গুঞ্জন নাতালি কে বুঝিয়ে বলল ,” তুমি এটা ব্যবহার করতে না পারলে আর গায়ে নিয়ো না ।”
নাতালি লাজুক হাসি দিয়ে বলল ,” এই ড্রেসটা আমার পছন্দ । ধিরে ধিরে আমি এর ব্যবহার শিখে নিব ।”
গুঞ্জন বেশ আন্তরিকতা নিয়ে বলল,” গুড গার্ল ।”
তারপর দুজন হাসি মুখে চেয়ারে এসে বসল। এদিকে শফিক আর নেশাম খাওয়া শেষ করে টাকা পরিশোধ করতে কাউন্টারে গেল । যাওয়ার সময়ে শফিক বলে গেল তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করতে । এদিকে মারিজুয়ানা ,নাতালি আর গুঞ্জন অনেক রকমের গল্পে মেতে উঠল । গল্পে থাকলেও গুঞ্জনের মনে সামনে বসা মানুষ দুটো কে নিয়ে অনেক প্রশ্ন । মারিজুয়ানা খুব যত্ন করে পরাটা ছেঁড়া আর ডিম অমলেট খাওয়া দেখিয়ে দিচ্ছে । গুঞ্জন তা বেশ মনোযোগ দিয়ে দেখছে ।
হঠাৎ গুঞ্জন জিজ্ঞেস করল , “আচ্ছা নাতালি আপনাকে কি নামে ডাকে? ”
মারিজুয়ানা বলল , “আমাকে ও জিজ্ঞেস করেছিল কি নামে আমাকে ডাকবে । আমি বলেছি মা বলে ডাকতে। মা ডাক টা খুব শুনতে ইচ্ছে করে আজকাল । তের বছর অনেকদিন”।
গুঞ্জনের মনটা বিষাদে ভরে উঠল । তারপর বলল,” এখনও তো অনেক সময় আছে । আল্লাহ্‌ আপনার ইচ্ছে পূর্ণ করুন ।”
মারিজুয়ানা বাঁকা ঠোঁটে রহস্যময় হাসি দিল । যা কেবল দুঃখের আকাশ কে আর স্পষ্ট করে তুলল । তারপর বলল ,” আল্লাহ্‌ আপনার কিংবা আমার ইচ্ছে পূর্ণ করবে । কিন্তু ইচ্ছেটা তো থাকতে হবে । উনি চায় না আমাদের সংসারে কোন বেবি আসুক ।”
এমন একটি অপ্রত্যাশিত কথায় গুঞ্জন যেন কোথাও ভয়াবহ ভাবে ধাক্কা খেল ।তারপর সে কপাল কুচকাল আর মহা কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল , ” কিন্তু কেন ?"

আগের পর্ব ৪
http://www.somewhereinblog.net/blog/nurunnaharlilian/30235745

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:১৫

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: আগের কয়েকটি পর্ব মিস করেছি। ওগুলো আগে পড়তে হবে:(

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ব্লগের নিচেই আছে আগের পর্ব গুলো । আন্তরিক ধন্যবাদ ।

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:০০

রাজীব নুর বলেছেন: বোন, 'বাঁকা ঠতে রহস্যময় হাসি'টা কেমন হয়?
মারিজুয়ানা এই হাসি দেয়।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: বুঝলাম না ভাইয়া । কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ ।

৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বেশ ঝরঝরে!

ভালই লাগছে। মনে হচ্ছে আহা শেষ হয়ে গেল :)

+++++

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ । ভাল থাকুন নিরন্তর ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.