নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস " মারিজুয়ানা" পর্ব ৬ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০৩



উপন্যাসঃ মারিজুয়ানা পর্ব ৬
গুঞ্জনের কথা শুনে মারিজুয়ানা চুপ হয়ে গেল । সমস্ত চেহারায় যেন বেদনার কাল পাহাড় ভেঙে পরেছে।কিছুই বলল না। হয়তো এই বিষয়টা নিয়ে ভীষন কষ্টে আছে। যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে সে খুব কষ্ট পায় আজ গুঞ্জনের কাছে সে বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে । মারিজুয়ানা আর কোন উত্তর দিল না । গুঞ্জন ও আর বেশি কৌতূহল দেখাল না । এই দিকে হাত দিয়ে পরাটা আর ডিম খেতে নাতালির ভীষণ বেগ পেতে হচ্ছে । মারিজুয়ানা দেখাচ্ছে কিভাবে পরাটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে ডিম দিয়ে খেতে হয় । চামচ দিয়ে ভাঁজি তুলে মুখে দিতে হয় । আসলে আমেরিকান কিংবা ইউরোপিয়ানরা ও হাতের বদলে স্পুন এবং ফোক ব্যবহার করে । ওরা এশিয়া মহাদেশের দেশ গুলোতে এলে হাত দিয়ে খেতে এতোটা বেগ পেতে হয় না । যতোটা জাপানিজ এবং চাইনিজদের পেতে হয় । কারন জাপানিজ ,চাইনিজ আর কোরিয়ানরা এতো বেশি চপস্টিকের উপর নির্ভরশীল । যা অন্য কোন জাতিতে দেখা যায় না । গুঞ্জন দেখছিল নাতালি কেমন করে ঝাল সবজি আর ডিমের সাথে পরাটা খাচ্ছে । বিষয়টা বেশ দেখার মতো । গুঞ্জনের কাছে খুব মজার লাগছিল । এদিকে শফিক অস্থির হয়ে এসে জিজ্ঞেস করল ,” কি ব্যাপার হল তোমাদের ? ”
মারিজুয়ানা বলল,” আমার আর ভাবির শেষ । নাতালির আর অল্প কিছু সময় লাগবে । ”
শফিক জাপানি ভাষায় মেয়েকে বলে গেল যেন তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে । সময় কম । গন্তব্যে পৌঁছতে হবে । গুঞ্জন জাপানি ভাষা খুব ভাল বুঝে । সেটা হয়তো শফিক জানে না । গুঞ্জন বলল ,” চিন্তা করার কিছু নেই । তুমি তোমার মতো খাও । তাড়াতাড়ি করলে গলায় আটকাতে পারে ।”
নাতালি হাসে । তারপর বলে,” খেতে গেলে আমি অনেক ধীর হয়ে যাই । ”
মারিজুয়ানা বলল,” আর বেশি নেই । পুরোটা শেষ কর ।”
জাপানিরা খাবার খেতে খুব ভালবাসে । খাবার নষ্ট করা তাদের নিয়মে নেই । নাতালি সব টুকু খাবার মনোযোগ দিয়ে শেষ করল ।
গুঞ্জন জিজ্ঞেস করল ,” রেস্তরাঁর খাবার মজা লেগেছে?”
নাতালি বলল ।” অল্প স্পাইসি ।কিন্তু অনেক সুস্বাদু ।”

তারপর তারা গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে । দুপুর আড়াইটার মধ্যে তাঁরা সবাই মংলার বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল পশুরে পৌঁছে যায় । ডঃ নেশাম এবং তাঁর স্ত্রীর জন্য একটা ডাবল বেডের রুম , নাতালির জন্য সিংগেল রুম ঠিক করা হল । কিন্তু মারিজুয়ানা আর তাঁর জন্য ডাবল বেডের রুম পাওয়া গেল না । হোটেল পশুরের দুতলায় যে রুমটা ডঃ নেশাম আর গুঞ্জনের জন্য ঠিক হল সে পাশটায় অনেক ফুল গাছ । রুমে ঢুকতেই বাগান বিলাস ফুলের বিলাসিতা ভীষণ মুগ্ধকর । গুঞ্জনের খুব ভাল লাগল । রুমে ঢুকেই আনন্দে আত্মহারা ।ক্লান্তিকর লং জার্নির পর এমন ফুলে ঘেরা রুম সত্যি বিধাতার সেরা উপহার ।গুঞ্জন সব কিছুতে আনন্দ খুঁজে পায় ।সব কিছুই যেন তাঁর মন ছুঁয়ে যায় । গুঞ্জন পেছনের জানালা খুলে বলল ,” দেখো দেখো এই দিকে ও অনেক ফুল আর ফলের গাছ । নেশাম বিরক্ত হয়ে বলল ,” আরে হয়েছে । দেখেছ দরজার লকার ঠিক নেই । টয়লেটে সাবান শ্যাম্পু রাখেনি । টাওয়ালে গুলো ও কেমন পুরনো । ”
গুঞ্জন একটু আহ্লাদি হয়ে নেশামের গলা জড়িয়ে ধরে বলল ,” আরে সোনা এতো নেগেটিভলি দেখো কেন ? এগুলো তো কম বেশি রেস্তোরাঁয় ও হয় ।ওদের বললেই ওরা ঠিক করে দিবে । ”
নেশাম বিরক্ত নিয়ে বলল , ” তুমি কি যে বল। এক রাতের জন্য এসেছি । এখন ওদের সাথে ঝামেলা করার ইচ্ছে নেই ।”
গুঞ্জন সামনের বেডে কাত হয়ে শুয়ে পড়ে বলল ,” তবে যাইহোক বেডে কোন সমস্যা নেই । বেড ভাঙা কিংবা চাদরে দাগ থাকলে কি যে হতো? ”
নেশাম বলল ,” কি আর হতো ! হোটেল ত্যাগ করতাম ”
গুঞ্জন বলল , ” আশে পাশে যা দেখলাম । মনে হয়না তেমন কিছু হলে হোটেল পাল্টাতে পারতে । কবে যে সরকার পর্যটনের দিকে গুরুত্ব দিবে ।”
নেশাম বলল ,” সবাই নিজের ধান্দা নিয়ে ব্যস্ত । দেশটার উন্নতি নিয়ে কার ও মাথা ব্যথা নেই ।”
গুঞ্জন বলল , ” ফেসবুক আসার পর এখন মানুষ অনেক জায়গায় ঘুরে । ফেসবুকে ছবি আপলোড কিংবা মেমোরি রাখার জন্য হলেও ঘুরে । পর্যাপ্ত নিরাপত্তা আর সুযোগ না দিলে কেমন ভ্রমনে মানুষ বের হবে ।”
নেশাম বলল ,” আসলেই । কোথাও ঘুরতে বের হয়ে যদি শান্তি না পাওয়া যায় । লোকজন কেনই বা ঘুরতে বের হবে । ”
গুঞ্জন বলল ,” চল । এবার নিচে নামতে হবে । লাঞ্চের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে ।”

ফ্রেস হয়ে সবাই এক সাথে নিচ তলায় নামল ।হোটেলের সবাই কৌতূহল দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে নাতালির দিকে ।নাতালির দিকে তাকানোর অনেক কারন আছে । এমনিতেই সাদা চামড়ার কাউকে দেখলে বাংলাদেশি সাধারন মানুষের কৌতূহল তৈরি হয় । তার মধ্যে এখানে শফিক নাতালি কে মেয়ে বলে পরিচয় দিচ্ছে । কিন্তু মেয়ের মা কোথায় ? আবার মেয়ের মায়ের একজন যিনি আছে সে প্রায়ই তাঁর বয়সী । হিসাব নিকাশটা একটু এলোমেলো । স্টাফ গুলো নিজেদের মধ্যে ফিস ফিস করছিল । গুঞ্জন দেখল মারিজুয়ানা ভীষণ ভাবে মুখটা ভার করে আছে । কথা কম বলছে । এই দিকে শফিক শুধু একটার পর একটা হুকুম দিয়ে যাচ্ছে ।
গুঞ্জন কে নেশাম বার বার জিজ্ঞেস করছিল । আর কি খাবে ? কোনটা পছন্দ ? মারিজুয়ানার সামনে স্বামীর কাছ থেকে যত্ন নিতে ও গুঞ্জনের কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিল । কোন রকমে খেয়ে রুমে ফিরে এলো ।

সামান্য বিশ্রাম নেওয়ার পর সবাই ঘুরতে বের হবে ।শফিক মানুষ হিসেবে যাই হোক কাজের ব্যাপারে সিরিয়াস । কোথায় কোথায় কি করতে হবে সেটা ভাল জানে । বিকেলে চারটার দিকে গাড়ি বের হবে মংলার চারিদিকের পরিবেশ দেখার জন্য । তাই নিজেদের রুমের সব ব্যক্তিগত কাজ গুছিয়ে বের হল ।
দুপুর থেকেই অনেক পিকনিকের বাস এবং প্রাইভেট কার দেখা গিয়েছে মংলার রাস্তায়।
পশুর নদীর ধারে সবাই নামল প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে । পশুর নদী থেকে ধেয়ে আসা বিকেলের শান্ত বাতাস বার বার মনের কোথাও এসে গভীর শীতলতা ছুঁয়ে দিচ্ছে । সারি সারি নারিকেল গাছ আর অশান্ত বালুকনা বাতাসের সাথে মিলে এক ভিন্ন খেলায় মেতেছে । যে দৃশ্য অবলোকনে সবার মন হিল্লোলিত হবে । তীরে বাঁধা বড় বড় জাহাজ পশুর নদী বন্দরে আলাদা নান্দনিকতা দিয়েছে । তবে মানুষের জীবন মান খুব নিম্নমানের । বিশুদ্ধ পানির ভীষণ অভাব ।

নদী তীরে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগের জন্য সবাই অপেক্ষা করছিল । এর মধ্যে নাতালি , মারিজুয়ানা আর গুঞ্জন নিজেদের মতো ছবি তুলতে লাগলো । শফিক মেয়ের সাথে জাপানি ভাষায় বাংলাদেশের সৌন্দর্য আর সমস্যা গুলো সুন্দর করে বলল । আর মেয়ের ইচ্ছে অনুযায়ী ছবি তুলে দিল । কিন্তু একবার ও মারিজুয়ানার দিকে তাঁর কোন মনোযোগ নেই । কেমন যেন মারিজুয়ানা কে এড়িয়ে চলা । গুঞ্জন মনোযোগ দিয়ে বিষয়টা লক্ষ্য করছিল । শফিক যতো মারিজুয়ানাকে এড়িয়ে চলে । মারিজুয়ানা ততোই তার কাছ ঘেঁষে থাকে । শফিক ক্যামেরা নিয়ে এল গুঞ্জন আর নেশামের ছবি তুলে দেওয়ার জন্য । বেশ কয়েকটা কাপল ছবি তুলে দিল । কিছুক্ষন পর মারিজুয়ানা খুব মিনতি সুরে শফিক কে বলল ,” আমি আপনার সাথে এই মুহূর্তে একটা স্মৃতি রাখতে চাই । ”
শফিক যেন ভীষণ ভাবে অস্বস্তিতে পড়ল । কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারলো না । গুঞ্জন আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে এল । মোবাইল নিয়ে এসে বলল , ” মংলা বন্দরের সূর্যাস্তের এই ছবি সব সময় পাওয়া যাবে না ।”
নাতালি কেমন মুখে মিথ্যা আন্তরিক হাসি নিয়ে তাদের ছবি তোলা দেখল । গুঞ্জন আড় চোখে দেখল নাতালির মুখায়বে বিষণ্ণতার ছায়া । নাতালি মোবাইলে কি যেন দেখতে দেখতে নদীর পানির কাছে যেতে লাগল ।

চলবে

আগের পর্ব ৫
http://www.somewhereinblog.net/blog/nurunnaharlilian/30235781

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৪

দিবা রুমি বলেছেন: ভালোলাগা উপন্যাসের প্রতি
লেখকের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা।

শুভকামনা নিরন্তর।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৫

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আপনাকে ও আন্তরিক ধন্যবাদ । অফুরন্ত ভালোবাসা রইল ।

২| ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: লেখা বেশ সুন্দর এগুচ্ছে।

০৮ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: রাজিব কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ । এর মধ্যে এই উপন্যাস টি লেখা শেষ । শুধু ব্লগে পোষ্ট দিয়ে যাচ্ছি ।
আশাকরি সামনের পর্ব গুলো আপনাদের মন জয় করবে ।

৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:২২

নিগার তানিয়া বলেছেন: প্রিয় লেখকের প্রিয় উপন্যাস

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ভালোবাসা রইল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.