নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস " মারিজুয়ানা" পর্ব ৮ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৭:২৭



শফিক খুব ধীর পায়ে নাতালির কাছে এসে দাড়াল।বেশ কিছুটা সময় চুপচাপ কাছে দাড়িয়ে রইলো। তারপর মাথায় হাত রেখে বলল,” চলো আমাদের ফিরতে হবে। এই জায়গাটা নিরাপদ নয়। ”
নাতালি শফিকের হাতটা নামিয়ে দিল। তারপর বলল, ” আর অল্প কিছু সময় থাকি”
শফিক বলল,” তোমার ইচ্ছে। তবে সন্ধ্যের আগেই ফিরতে হবে। ”
কথাটা বলেই শফিক চলে গেল । এরপর সবাই এক সাথেই মাইক্রোবাসে উঠলো। ড্রাইভার সাহেব এতোক্ষন কোথায় ছিল কে জানে। কিন্তু উনার পান চাবানো এবং ফুরফুরে মেজাজ দেখে মনে হচ্ছে বেশ আনন্দেই ছিল। এতো মশলা দিয়ে পান খেয়েছে যে সে সুগন্ধে পুরো এলাকা ভরে উঠেছে। অবশ্য এই গন্ধটা গুঞ্জন একদম সহ্য করতে পারে না। পান, সিগারেট, বিড়ি এই জাতীয় কোন কিছুই গুঞ্জনের পছন্দ নয়।কিন্তু কেন জানি মারিজুয়ানার পছন্দ । প্রায় দিন মুখে পান না দিলে কেমন যেন লাগে । হরেক রকমের মশলায় ভরা এবং সুগন্ধিতে মোহ মোহ করা পান মারিজুয়ানার ভীষণ প্রিয় । কখন ও মন খারাপ হলে ধানমন্ডির পান সুপারি দোকানে গিয়ে ১০০ টাকা দামের একটা মিষ্টি পান মুখে দিয়ে সোজা ধানমন্ডি লেকের দিকে হাটতে থাকে । নিজের সম্পর্কে এমন করেই বলে যাচ্ছিল মারিজুয়ানা। গুঞ্জন মনোযোগ দিয়ে শুনছিল । এদিকে নাতালি একদম চুপচাপ । সিটে মাথা এলিয়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে । গুঞ্জন অপাঙ্গে তাকাল নাতালির দিকে । কেন জানি গুঞ্জনের নাতালির উপর রাগ হতে লাগল । কিছুক্ষন আগে তিন জন মানুষের মনের উপর দিয়েই ঝর বয়ে গিয়েছে । দুজন ঝরের তাণ্ডব কে আপন করে নিয়ে আবার স্বাভাবিক । কিন্তু যথেষ্ট পরিপক্কতা থাকা সত্ত্বেও সে যেমন করছে এটা একদম মানায় না । জাপানি সমাজে বহু প্রেম আর সম্পর্কের জটিলতা , কিংবা সম্পর্কে নষ্ট হওয়া খুব চেনা গল্প। তারপর ও কেন নাতালি এতো রাগ দেখাচ্ছে ঠিক বোধগম্য নয় । ড্রাইভারের নাম সিদ্দিক । নেত্রকোনায় বাপ দাদার ঠিকানা হলেও ময়মনসিংহ থাকে বউ বাচ্চা নিয়ে ।
শফিক যতোটা পারে নিজের ব্যবসা বানিজ্যে নিজের এলাকার লোকজন রাখতে । অনেক বছর ধরেই শফিকের অফিস এবং বাসার গাড়ির ড্রাইভিং করছে সিদ্দিক । সিদ্দিকের ভেতরে অন্য সব ঝামেলা থাকলেও সে শফিকের বিশ্বাসী ।
গাড়ি ড্রাইভ করা অবস্থাতেই সিদ্দিক জিজ্ঞেস করল , স্যার এরপর কই যাইবেন ?
শফিক বলল , আশেপাশে কোন চায়ের দোকানে থামাও । চা খেতে ইচ্ছে করছে । কে কে চা খাবে ?
কথাটা বলেই শফিক নাতালির দিকে তাকালো । নাতালি বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে ।
কোন কথা বলছে না । এরপর খুব ব্যক্তিগত অথবা সাধারন কথাই জাপানি ভাষায় মেয়ের সাথে বলল । তারপর যেন নাতালি কিছুটা স্বাভাবিক হল ।
গুঞ্জন দেখল মারিজুয়ানা কেমন বিরক্তি নিয়ে নাতালির দিকে তাকিয়ে আছে । কেন জানি বিষয়টায় গুঞ্জন মজা পেল । কি অদ্ভুত ভাবে আমরা অনেক অপছন্দের মানুষের সাথে কি পছন্দমত জীবন যাপন করি । কখন ও সেচ্ছায় কিংবা কখন ও একেবারেই বাধ্য হয়ে । মারিজুয়ানা এবং নাতালি কে গুঞ্জনের ভেতরে অনেক জিজ্ঞাসা ঘুরপাক খায় । কিন্তু কোন উত্তর খুঁজে পায় না । নাতালি শব্দটা জাপানি নয় । যদি ও সুজুকি শব্দটা জাপানি । জাপানে সুজুকি শব্দটা ফ্যামিলি নাম হিসেবে খুব প্রচলিত । হঠাৎ মনের অজান্তেই শফিক কে গুঞ্জন জিজ্ঞেস করল , আচ্ছা ভাইয়া নাতালি নামটা কি আপনি রেখেছেন? সুজুকির সাথে নাতালি কেন? এটা কি জাপানিজ নাম ?
শফিক পেছনে বসা গুঞ্জনের দিকে হাসি মুখ নিয়ে তাকাল । তারপর কিছু একটা চিন্তা করে বলল , জি ভাবি । নাতালি ফরাসি নাম ।ভাবি এটার পেছনে ছোট্ট একটা গল্প আছে । পরে একদিন বলব।
গুঞ্জন বলল , ঠিক আছে ভাইয়া ।
মারিজুয়ানা কানে কানে ফিস ফিস করে বলল , উনার প্রাক্তন প্রেমিকার নাম ছিল নাতালি । কতো দেশে যে উনার কতো গুলো বউ আর প্রেমিকা আছে উনি নিজেই জানে না ।
গুঞ্জন বলল , সত্যি ।আমার কাছে তো তা মনে হচ্ছে না ।
মারিজুয়ানা চুপ হয়ে যায় । তারপর চোখের পলক ফেলে আত্মবিশ্বাসের সাথে ইশারায় বুঝায় এটাই সত্য।
কথা বলতে বলতে গাড়ি চায়ের দোকানের সামনে থামল ।ঝির ঝির হীম হাওয়া আর চারপাশের গাছেদের নাচন কেমন উৎসব মুখর পরিবেশ । গুঞ্জন শাড়ি ঠিক করতে করতে গাড়ি থেকে নামল । মারিজুয়ানা এবং নাতালি ও পেছনে নামল । হঠাৎ দেখা গেল নাতালি ওড়না গাড়িতে রেখে এসেছে । মারিজুয়ানা নাতালির দিকে তাকিয়েই জিভে কামড় দিল । সিদ্দিক কেমন করে তাকাতে লাগল নাতালির দিকে । মারিজুয়ানা কিছু দূর যেতেই ফিরে গিয়ে গাড়ি নাতালির ফেলে আসা ওড়না আনতে গেল । আজকে নাতালি লাল সবুজের সাথে সরষে ফুলের রঙে সালোয়ার কামিজ পরেছে । ধব ধবে সাদা জাপানি গায়ের রঙে নাতালি কে বাঙালি সালোয়ার কামিজে ভীষণ সুন্দর লাগছে । তাঁর ও ভীষণ আগ্রহ আছে বাঙালি সংস্কৃতি কে জানার । খুব মনোযোগ দিয়েই সে বাংলাদেশের যাবতীয় জীবন আচরন গুলো রপ্ত করে নিচ্ছে । যা দেখার মতো । অনেক মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে। সব দিক ভাল হলেও কিছু বিষয় একদম সহ্য করার মতো নয় । মেয়েটার মধ্যে কেমন যেন একটা দ্বিমুখী ভাব তার চাল চলন আর আচার আচরনে লুকিয়ে আছে
কিছু বিষয় খুবই বিরক্তিকর । শফিক এবং নেশাম সামনে এগিয়ে গেল খাবারের খোঁজ খবর নিতে ।মারিজুয়ানা গাড়ি থেকে ওড়না নিয়ে এসে নাতালির বুকে ভাল করে কামিজের সাথে সেফটিপিন দিয়ে সেট করে দিল ।
মারিজুয়ানার চোখে মুখে কিছুটা বিরক্তি । ওড়না কামিজে সেট করে দিতে দিতে বলল , এই পোশাক পড়তে চাইলে তোমাকে এই ওড়না গলায় বা বুকে ভাল করে সেট করে নিতে হবে।
নাতালি নির্বিকার ভাবে বলল , ‘কিন্তু কেন এটা পড়তেই হবে ? এটা তো এক টুকরো কাপড় ।’
মারিজুয়ানা বলল , এই দেশে এই পোশাকের সাথে ওড়না খুব গুরুত্বপূর্ণ । নয়তো ছেলেরা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবে ।
নাতালি লাজুক হেসে দিল ,’ সত্যি!সত্যি ছেলেরা তাকিয়ে থাকে?’
মারিজুয়ানা ও হাসি মুখে বলল ,’ জি । সত্যি তাকিয়ে থাকে । ওই দেখো চায়ের দোকানের ছেলেরা কেমন করে তাকিয়ে আছে । ‘
গুঞ্জন হো হো করে হেসে দিল ।ওর হাসির সাথে মারিজুয়ানা এবং নাতালি ও হেসে দিল । কারন সত্যি সত্যি চায়ের দোকানের ভেতরের ছেলেরা ভীষণ উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে ।
গুঞ্জন হাসতে হাসতে বলল , ‘ আপনি ও বিষয়টা লক্ষ্য করেছেন। আমি অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলাম । ‘
মারিজুয়ানা বলল ,’ ড্রাইভার সিদ্দিক মামা কেমন করে বার বার বাজে দৃষ্টি দিচ্ছিল দেখেছেন ?’
গুঞ্জন বলল ,’ হুম । আমি ও দেখেছি । আপনারা যদি কিছু মনে করেন তাই কিছু বলিনি।’
মারিজুয়ানা বলল ,’ না না । মনে করব কেন? বাংলাদেশের নোংরা বাস্তবতা।’
গুঞ্জন সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল ,’ ভাবি শুধু বাংলাদেশ নয় । দক্ষিন এশিয়ার সব দেশেই প্রায় একই দৃশ্য দেখবেন । কেন জানি নারী শরীরের উপরের বিশেষ অংশে পুরুষ অতি বেশি আগ্রহী ।’
মারিজুয়ানা বলল ,’ মাঝে মাঝে খুব কষ্ট লাগে ‘।
গুঞ্জন বলল ,’ আসলেই ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে । এখন সমাজের মানুষের মধ্যে বেশি বিকৃতি চর্চা চলে এসেছে । ‘
মারিজুয়ানা বলল ,’ কি আর করা । নিজেদেরই ঠিক ঠাক হয়ে থাকতে হবে ।’
গুঞ্জন বলল ,’ না । এটা কেন হবে ? মেয়েদের স্বাধীনতা থাকবে না ? আর মানুষ কেন এমন হবে ?
মারিজুয়ানা বলল , ‘ মানুষ এমনই হয় ভাবি । কিছুই করার নেই । বিচিত্র মানুষ নিয়েই পৃথিবী ।’
গুঞ্জন বলল ,’ ঠিক বলেছেন ।”
সামনের একটা দোকান থেকে শফিক এবং নেশাম সবাইকে ডাকল । ড্রাইভার সিদ্দিক ও এই দিকেই আসছে গাড়ি সঠিক জায়গায় রাখার জন্য । সবাই সেদিকেই যেতে লাগল । আশ্চর্য এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ । টং দোকানের বাইরে গাছের নিচে চেয়ার এনে দিল ।রাস্তার কাছেই চেয়ারে সবাই বসল ।রাস্তার দুই ধারে সারি সারি নাম না জানা অনেক ধরনের সুশোভিত গাছেদের মেলা। সেই গাছেদের সংস্পর্শে শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ । আর বিচিত্র সব সাধারন মানুষের ভিড়ে নিজেকে উপলব্ধি করতে বেশ লাগছিল গুঞ্জনের । পৃথিবীর কিছু সৌন্দর্য কাগজে কলমে যথাযথ ভাবে প্রকাশ করা সম্ভব না । সৌন্দর্য গুলোর খুব কাছাকাছি যেতে হয় ।তাদের মুখোমুখি হতে হয় । তারপর তা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয় । কি আশ্চর্যজনক ভাবে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা মানুষের । মনের অজান্তেই জীবন মানিয়ে নেয় সব কিছুর সাথে।
কিছুক্ষন আগেও নাতালি এবং মারিজুয়ানার ভেতরে কষ্ট এবং হৃদয়ে রক্ত ক্ষরনের ঝরো হাওয়া বইছিল । এখন কি দিব্ব্যি বন্ধুত্ব । এই বন্ধুত্বের দৃশ্যটা দীর্ঘস্থায়ী হলে মন্দ হতোনা ।
একান্ত নিজের মনে গুঞ্জন ভেবে যাচ্ছিল । এর মধ্যেই ড্রাইভার গরুর দুধের চা সবাইকে দিল । চা খেতে খেতে শফিক জিজ্ঞেস করল ,’রাতে কে কি খেতে ইচ্ছে ?’
নেশাম বলল , ‘হাল্কা ডিনার করলেই হবে । এখানে ভাল রেস্তোরাঁ দেখছিনা ।’
শফিক বলল ,’ সিদ্দিক কে পাঠিয়ে নান এবং গরুর মাংস ,কাবাব ,চিকেন টিক্কা জাতীয় কিছু নিয়ে রুমে খাওয়া যায় ‘
হঠাৎ গুঞ্জন বলল ,’ ভাইয়া রুমে না খেয়ে বাইরের বারান্দায় সবাই এক সাথে বসে খাওয়া যাবে না ?’
মারিজুয়ানা সাথে সাথে বল্ল,’ জি ভাবি ।খুব ভাল হয় ।দোতলায় বারান্দায় বাগান বিলাস গাছের ঝোপের সামনে খুব সুন্দর একটা জায়গা আছে ।”
শফিক হেসে দিয়ে বলল ,’আরে বাবা তোমরা জায়গা ও ঠিক করে ফেলেছো ।তাহলে নাতালি বাংলা গান গাইবে । ‘
নাতালি লাজুক ভঙ্গিতে বলল ,’ আমি এখন ও ভাল বাংলা গান শিখিনি ।’
গুঞ্জন বলল ,’ সমস্যা নেই । আমরা বুঝে নিব । তুমি গাইলে আমরা সবাই খুব খুশি হব ।’
সবার প্রানবন্ত আড্ডা আর গরম গরুর দুধের স্বাদে ভিন্ন এক বিকেল দেখতে দেখতে সন্ধ্যে হয়ে এল । অল্প আলোয় মংলা বন্দরের বাজারটা নানা রকম মানুষে মুখরিত হয়ে উঠল । যা শহুরে জীবনের মতো হলেও অনেক আলাদা জীবনের যাপনের পটভূমি আঁকে মানুষের চিন্তায়।প্রকৃতির স্পর্শে থাকা এই মংলা বন্দর সবার আকর্ষণীয় হলেও রাত যাপনের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাব আছে । সেই সাথে আছে নিরাপত্তাহীনতা । সে কথা ভেবেই সবাই খুব দ্রুত হোটেলে ফিরে গেল ।

চলবে .।।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:০৮

অনন্য দায়িত্বশীল আমি বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো। তবে একটু ছোট করলে সবাই পড়ার সুযোগ পাবে।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৪৩

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ।

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমার বাবার গাড়ির ড্রাইভারের নামও সিদ্দিক।
শরীরের উপর মানুষের প্রাকৃতিক ভাবেই একটা আকর্ষণ থাকে।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৪৩

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.