নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস " মারিজুয়ানা" পর্ব ৯ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৪২



উপন্যাস মারিজুয়ানা পর্ব ৯
নুরুন নাহার লিলিয়ান

রুমে ফিরেই গুঞ্জন একেবারে চুপ হয়ে গেল।যা একেবারেই তার স্বভাব বিরুদ্ধ।একটু ভ্যাপসা গরম লাগতে শুরু করলো। নেশাম ফ্রেস হয়ে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। তারপর আইপ্যাডে অনলাইনে খবর পড়তে শুরু করলো। গুঞ্জন কিছুটা সময় রুমে হাটাহাটি করে ড্রেসিং টেবিলের সামনের চেয়ারে বসে রইলো। তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে রইল এক দৃষ্টিতে । বেশ কিছুটা সময় এমন করেই গেল । হঠাৎ নেশাম বলল , ‘ কি ব্যাপার চুপ কেন ? কি হয়েছে?
গুঞ্জন ঘাড় ফেরাল ।মুচকি হাসি দিয়ে বলল ,’ কে চুপ ? ‘
নেশাম বলল,’ কেন তুমি’
গুঞ্জন বলল ,’ আমি চুপ না থাকলে তুমি এতো মনোযোগ দিয়ে খবর পড়তে পারতে?’
নেশাম বলল,’ হা হা ভালই বলেছো?বিছানায় এসে বিশ্রাম নাও। একটু পর ডিনার করতে হবে । ‘
গুঞ্জন জিজ্ঞেস করল,’ আমরা কাল সকাল কয়টায় সুন্দরবন রওয়ানা করব ?’
নেশাম বলল ,’ ওহ!ভাল কথা জিজ্ঞেস করেছো ? শফিক সাহেব কে জিজ্ঞেস করতে হবে ।’
গুঞ্জন বলল ,’ খুব ভোরে যেতে হলে আগেই ডিনার করা ভাল । ঘুমিয়ে যেতে হবে ।’
নেশাম বলল ,’ তুমি এখানে বিছানায় এসে বসো ।আমি যাই শফিক সাহেব কি বলে শুনে আসি।’
নেশাম বাইরে গেল । গুঞ্জন একবার পেছনের বারান্দার দরজা খুলে নিস্তব্ধ মংলার নিঃসঙ্গতা দেখল । আজ সারাদিন প্রথম বারের মতো যে মানুষ গুলোর সাথে ভ্রমন করল । সে মানুষ গুলো কি অদ্ভুত নতুন অভিজ্ঞতা দিল । আজ এখানে না এলে হয়তো এই জীবন গুলো জানা হতো । কে জানে পৃথিবীর কোন পথে কি লুকিয়ে আছে ।কিছুটা সময় বারান্দায় ঘুরাঘুরি করে রুমে ঢুকেই বিছানায় নেশামের ফেলে যাওয়া আইপ্যাডটা ধরল । একের পর এক মেসেজ আসছে । কিছু মেসেজ ল্যাবের অন্য সহকর্মীদের কাছ থেকে । আর কিছু বন্ধুদের কাছ থেকে । বাকি কিছু ভীষণ রহস্যময় । পুরো কনভারসেশন বুঝতে হলে সময় নিয়ে পড়তে হবে । এখানে ইন্টারনেট এতো এতো স্লো । বার বার ইন্টারনেটের লাইন ও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । একটা করে পড়া শুরু করতেই নেশাম বাইরে থেকে ডাকতে শুরু করল ।
” এই গুঞ্জন বাইরে আসো । ডিনার আনা হয়েছে ।”
গুঞ্জন বলল,” কি ডিনার এনেছে ?”
নেশাম বলল ,’ তন্দুর রুটি , গরুর রেজালা আর সালাদ ।”
গুঞ্জন বলল ,’ বাহ! মজা তো ‘
নেশাম আবার জিজ্ঞেস করল ,’ আচ্ছা রুমে বসে খাবে নাকি বাইরে ?”
গুঞ্জন ফের জিজ্ঞেস করল ,” বাইরে কোথায় বসতে চাইছো ?’
নেশাম বলল ,” দুতলার সামনের বারান্দার বাগান বিলাসী গাছের নিচে । ”
গুঞ্জন উৎফুল্ল হয়ে উঠল । তারপর লাফিয়ে উঠে বলল ,” বাহ! কি রোমান্টিক আয়োজন ! অন্যদের সমস্যা নেই তো !”
নেশাম বলল ,” তাড়াতাড়ি আসো । সবাই এখানেই বসতে চাইছে ।”
আয়নায় নিজেকে একটু দেখে নিয়ে গুঞ্জন বের হয়ে এল ।মানুষের ভাল লাগা গুলো যে কোথায় লুকিয়ে থাকে !এর মধ্যে বারান্দার বাগান বিলাসী গাছের নিচে ছোট মাদুরে নাতালি বসে আছে । শফিক সাহেব আর মারিজুয়ানা কিছু প্লেট আর চামচ হাতে নিয়ে এসে বসল । গুঞ্জন আর নেশাম বসতে বসতে বিদ্যুৎ চলে গেল ।
শফিক সাহেব উঠে গেলেন হোটেল পশুরের স্টাফ ডাকতে । রাতের আঁধারে আধো জোসনা কেমন অন্যরকম পরিবেশ তৈরি । গুঞ্জন উঠে গিয়ে পাশের ছড়ানো বাগান বিলাসী ফুল গুলো ছুঁয়ে দেখতে লাগল । কি সুন্দর পাতলা রঙিন কাগজের মতো । মারিজুয়ানা বলল ,” গ্রামে কিন্তু এই ফুল কে কাগজি ফুল বলে ।”
গুঞ্জন অবাক হয়ে বলল ,” সত্যি? আমি জানতাম না ।”
মারিজুয়ানা বলল ,” গ্রামে উঠানে বা গেটের সামনে লাগায় । অনেকে আবার গেট ফুল ও বলে । ”
গুঞ্জন তাকিয়ে দেখে নাতালি মনোযোগ দিয়ে গাছের ফুল গুলো দেখছে ।
তারপর সাবলীল ভাবে জিজ্ঞেস করল ,” নাতালি এই ফুল গুলো চেনো ?”
নাতালি লাজুক হাসি দিয়ে বলল ,” জাপানে অনেক আছে এই বিদেশি ফুল । বেশির ভাগ সময়ে বাসার সামনে থাকে । বাংলাদেশে এই ফুলের নাম রবীন্দ্রনাথ নামকরন করেছেন । ”
গুঞ্জন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ,’ তুমি জানো ?’
নাতালি উত্তর দেয় ,’ হুম। আমি জেনেছি পাপার কাছ থেকে ।”
গুঞ্জন বলল ,’ বাহ! বেশ তো ।”
নাতালি স্বাভাবিক ভাবে বলল ,” পাপা আর ও ভাল বলতে পারবে ।”
গুঞ্জন মনে মনে ভাবল শফিক সাহেব লোকটা কে যতোটা এলো মেলো মনেহয় ততোটা হয়তো সে না । বাংলাদেশ ,শিল্প সাহিত্য ,বানিজ্য সব বিষয়ে বেশ ভাল ধারনা আছে ।কথা গুলো মনে মনে ভাবতে ভাবতেই শফিক সাহেব চলে আসেন । উনার সাথে হোটেল পশুরের একজন স্টাফ । তার হাতে একটা ট্রে তে অনেক গুলো জলন্ত মোম । কি সুন্দর নিভু নিভু আলো জ্বলছে । দেখে মনে হয় অনেক গুলো জোনাকি পোকা এক সাথে আলোর মিছিল করছে ।স্টাফটা ছাদের এক কোনায় বাগান বিলাসী গাছের নিচে ট্রে টা রাখল । সেই আলোতে বাগান বিলাসী গাছে ফোটা ফুল গুলোর অদ্ভুত দ্যুতি ছড়াচ্ছিল ।মুহূর্তের মধ্যে বিদ্যুৎহীন রাতটা মোমের আলো আর বিলাসী ফুলের স্পর্শে কেমন মায়াময় হয়ে উঠল । একটা ভাল লাগা গুঞ্জনের মনে ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেল । শফিক সাহেব বসতে বসতে জিজ্ঞেস করল,” কি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল ?’
নাতালি বলল ,” পাপা বাগান বিলাসী ফুল নিয়ে ”
শফিক সাহেব জিজ্ঞেস করল ,” কি গাছটা সমস্যা করছে?’
মারিজুয়ানা বলল ,” আরে না ভাবি বাগান বিলাসী গাছের নাম এবং উৎপত্তি নিয়ে কথা বলছিল”
শফিক সাহেব বলল ,” হুম । এটা বিদেশি ফুল । আমাদের দেশে বাগান বিলাসী হিসেবে পরিচিতি থাকলে ও অন্য দেশে এর বিভিন্ন রকমের নাম আছে ।”
নাতালি বলল ,” পাপা এই ফুলের নামকরন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর করে ছিলেন না ?”
শফিক একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বসতে বসতে বলল ,”হুম । এই অনিন্দ্য সুন্দর ফুলের ইংরেজি নাম Bougainvillea .”
গুঞ্জন বলল ,” ইংরেজি নামটা ও কিন্তু সুন্দর তাই না ?”
নেশাম জিজ্ঞেস করল,” এই ফুলের নামকরন রবিন্দ্রনাথ করেছিলেন কোন তথ্য সুত্র বা উৎস জানা আছে কি ?”
শফিক খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল ,” আপনি জানে কিনা । একটা কিংবদন্তী প্রচলিত আছে । ”
গুঞ্জন মজা করে বলল ,” সত্যি ভাইয়া ! ফুলের নাম নিয়ে কিংবদন্তী । মজার তো । বলুন প্লিজ। ”
শফিক সাবলীল ভাবে বলল ,” সে সময়ে কোন এক বিলাসী অভিজাত লোকের বাগানে রবীন্দ্রনাথ প্রথম এই ফুল দেখেন।ফুলের রঙ আর রূপে তিনি বিমোহিত হন । কৌতূহলে ফুলের নাম জিজ্ঞেস করেন । কিন্তু ফুলের নামে তিনি বিরক্ত হন । তারপর তিনি সে ফুলের নাম দেন বাগান বিলাস ।Bougainvillea হয়ে গেল বাগান বিলাস । আর সেই থেকে বাগান বিলাস এই বঙ্গের ফুল ।”
ডঃ নেশাম জিজ্ঞেস করল ,” আচ্ছা এই নাম যে রবিন্দ্রনাথ দিয়েছিলেন কোন প্রমান আছে?”
শফিক সাহেব বললেন,” ইন্টারনেটের প্রকৃতি বা গাছ গাছালি নিয়ে অনেক ব্লগ আছে । এই সম্পর্কে অনেক প্রবন্ধ ও আছে । তার চেয়ে বড় বিষয় অনেক আগে থেকে লোকমুখে প্রচলিত আছে ।”
গুঞ্জন উচ্ছল হয়ে বলল ,” ইস! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ফুল নিয়ে কতো কি ভেবেছেন আর লিখেছেন । সব কি আর মানুষ জানে ।”
মারিজুয়ানা চঞ্চল হয়ে বলল ,” আরে তোমরা সবাই রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আছো । এইদিকে খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে ।”
শফিক সাহেব বলল ,” এই চল চল সবাই খেতে বসো । ”
অন্ধকারে মোমের আলোতে অদ্ভুত মায়াময় পরিবেশ ।রাতের আকাশে অমাবস্যায় খেয়ে ফেলা অর্ধ চাঁদ । কি সুন্দর নিঃসঙ্গ আকাশে ফের পূর্ণিমার প্রহর গুনছে । সামনে দারুচিনি আর এলাচে ভরা জলে জলে গারো মশলায় ডুবানো গরুর মাংস ,মংলা বন্দরের স্থানিয় বিখ্যাত সালাদ ,আর গরম গরম পরোটা নান । মারিজুয়ানা প্লেট সাজাতে লাগল ।হঠাৎ নেশাম আহ্লাদি কণ্ঠে বলল ,” গুঞ্জন একটা গান গাও তো …”
গুঞ্জন আড় চোখে নেশামের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয় । তারপর বলে ,” ভাগ্যিস নাচতে বলোনি । এতো সুন্দর পরিবেশ আমার তো নাচতে ইচ্ছে করছে ।”
নেশাম মজা করে বলল ,” আপাতত গান গাও । নাচার বিষয়টা পরে ভেবে দেখব ।”
নেশামের কথা শুনে সবাই হেসে দিল। গুঞ্জন রবীন্দ্রনাথেরই একটা গান গাইতে শুরু করল …

মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো দোলে মন দোলে অকারণ হরষে।।
হৃদয় ও গগনে সজলও ঘন নবীনও মেঘে রসের ও ধারা বরষে
মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো দোলে মন দোলে অকারণ হরষে।
তাহারে দেখি না যে দেখি না শুধু মনে মনে ক্ষণে ক্ষণে
ঐ শোনা যায় বাজে অলকিত তার চরণে।।
রুনু রুনু রুনু রুনু নূপুর ও ধ্বনি
মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো দোলে মন দোলে অকারণ হরষে।।
গোপনও স্বপনে ছাইলও অপরসও আঁচলেরও নব নীলিমায় উড়ে যায় বাদলের ও এই বাতাসে
তার ছায়াময় এলো কেশ আকাশে সে যে মনও মোর দিলো আকুলি জল ভেজা কেতকীর দূর সুবাসে মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতালো দোলে মন দোলে অকারণ হরষে।।

চলবে …।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: মারিজুয়ানা'ইয় নজর রাখছি।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:১৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ।

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫

আবু আফিয়া বলেছেন: ভাল লাগল, লেখককে ধন্যবাদ

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:২০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আশাকরি পরের পর্ব গুলো আর ও ভাল লাগবে । অনেক ধন্যবাদ

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:০৯

স্পার্টাকাস৭১ বলেছেন:
আপনে গাঁঞ্জা চিনেন কিন্তু মারিজুয়ানা বা উইড চিনেন না, তাই না?

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৪৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ভাইজান কি বলিতে কি বলিয়া গেলেন কিছুই বুঝিলাম না । ধন্যবাদ।

৪| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১:৫০

মনিরুল ইসলাম বাবু বলেছেন: ভালোই লাগছে ।

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৫৩

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.