নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস " মারিজুয়ানা" পর্ব ১৬ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮



#উপন্যাস "মারিজুয়ানা" পর্ব ১৬
#নুরুন নাহার লিলিয়ান

মারিজুয়ানার পাশে বসেছে গুঞ্জন । মুখোমুখি সোফায় বসা ডঃ নেশাম এবং প্রফেসর ফজলুল হাসান ।পাশেই কার্পেটের উপর দুটো ছোট সাত আট বছরের বাচ্চা খেলছিল । আর কিছুক্ষন পর পর এ ঘর ও ঘরে দৌড়াচ্ছিল । মিসেস ফজলুল হাসান রুমে ঢুকেই কেমন অদ্ভুতভাবে গুঞ্জনের পা হতে মাথা পর্যন্ত দেখলেন । বিষয়টা ভীষণ অস্বস্তিকর । তার এমন বিবেচনাহীন চাহনিতে গুঞ্জন অপ্রস্তুত হয়ে নড়ে চড়ে বসল ।বুকের ওড়না সরে গিয়েছে কিনা । গায়ের জামা ঠিকঠাক আছে কিনা আরও একবার দেখে নিল । গুঞ্জনের গায়ে হাল্কা সুতির ফতুয়া ,চাপা ব্লু জিন্স আর গলায় লাল টকটকে ওড়না । মিসেস ফজলুল হাসান যে আটপৌরে শিক্ষিত নারী বুঝতে সময় লাগল না । একটা টিপিক্যাল অভিব্যক্তি তার মুখায়বে । অল্প সময়ের মধ্যেই জানা গেল তিনি ও সরকারী কলেজের শিক্ষক ।গুঞ্জন মনে মনে ভাবল কিছু মানুষ আজও কাগজে কলমে শিক্ষিত হলেও তাদের মস্তিস্কের চিন্তার জগতটা নির্দিষ্ট কিছুর মধ্যেই ঘুরপাক খায় । এর বাইরের বিশাল পৃথিবীটা তাঁরা জানতে চায়না । অথচ জ্ঞান চর্চার প্রধান উদ্দেশ্য চোখ খুলে দুনিয়া দেখো । রহস্যময় পৃথিবীকে নতুন করে আবিস্কার কর । গুঞ্জন আড় চোখে দেখল
মহিলা আবার ভেতরে চলে গেলেন ।
প্রফেসর ফজলুল হাসান বেশ আন্তরিকতা নিয়ে তাঁর স্ত্রী কে বললেন ," ভাবিদের মিষ্টি দাও । "
ডঃ নেশাম বলল ," আরে ভাই কিছু দিতে হবে না । আপনার আন্তরিকতার জন্যই হঠাৎ আসতে হল ।সবার সাথে পরিচয় হল । ভাল লাগল ।"
প্রফেসর ফজলুল হাসান বললেন ," আরে কি বলেন । আপনার রিসার্চ জার্নাল পড়ে আমি এতো মুগ্ধ। আপনি এতো অল্প বয়সে যে মৌলিক আবিস্কার গুলো করেছেন সত্যি প্রশংসনীয় । বাংলাদেশে বিজ্ঞান কিংবা বিজ্ঞানীদের জগতটা ততোটা উন্নত না । আপনি সব জেনে বাংলাদেশে ফিরেছেন আর কাজ করছেন অনেক ভাল লেগেছে ।অনেকদিন ধরে ভেবেছি আপনার সাথে দেখা করব । আজ হয়ে গেল । ভালই হল ।"
ডঃ নেশাম বলল ," সময় থাকলে আপনার ল্যাবটা ঘুরে দেখে যেতাম । "
খুব আন্তরিকতা নিয়ে প্রফেসর ফজলুল হাসান বললেন," আরে চলেন তাহলে খুলনা ইউনিভার্সিটিটা ঘুরে দেখে আসি ।যদিও দিনের বেলা হলে ভাল হতো। "
ভেতর থেকে মিসেস ফজলুল মিষ্টি আর কিছু ফল নিয়ে এলেন । মিষ্টি প্লেটে তুলে দিতে দিতে মারিজুয়ানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ," উনি কে ? উনাকে তো চিনলাম না ।"
গুঞ্জন সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল ," আমাদের সাথেই এসেছেন ।এই ভাবিরা আমাদের বাসার কাছে থাকে।আমাদের সঙ্গে নিয়ে এসেছি।"

মনে হল মিসেস ফজলুলের চোখে মুখে অনেক কৌতূহল আর জিজ্ঞাসা ।মারিজুয়ানা এবং গুঞ্জন দুজনেই বিষয়টা বুঝতে পারল ।গুঞ্জন ফিস ফিস করে মারিজুয়ানাকে জিজ্ঞেস করল , " ভাবি বুঝতে পেরেছেন মহিলার চাহনি?"
মারিজুয়ানা ও ফিসফিস করে উত্তর দিলেন ," হুম । আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি উনি আমাদের ড্রেস পছন্দ করছেন না । চলেন চলে যাই । "
তারপর গুঞ্জন বার বার নেশামকে ইশারা করছিল যেন তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে ।কোন রকমে নাস্তা করে বিদায় নিল ।বিদায় নেওয়ার সময় ও মিসেস ফজলুল কেমন করে যেন মারিজুয়ানা আর গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে রইল ।
ড্রাইভার সিদ্দিককে নিয়ে সবাই খুলনা ইউনিভার্সিটি ঘুরতে বের হলেন । সাথে প্রফেসর ফজলুল হাসান ও আছেন । খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সবাই খুলনা ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছে গেলেন । বেশ গুছানো ছিমছাম ক্যাম্পাস । রাতের সৌন্দর্য আলাদা । এর মধ্যে রাত আটটা বেজে গেল । অন্ধকারে যতোটুকু দেখা যায় গাড়িতে বসেই ক্যাম্পাস দেখা হল ।

রাত নয়টার মধ্যে হোটেলে ফিরল । তখন শফিক নাতালিকে নিয়ে ফিরেনি । স্টাফ টনি এল চিকেন গ্রিল , চিকেন মাসালা ,আর নান নিয়ে । মারিজুয়ানা জিজ্ঞেস করল ," টনি তোমার স্যার কোথায় ?আর এই নাস্তা কে আনতে বলেছে ?"
টনি উত্তর দিল ," ম্যাডাম ,আমাকে শফিক স্যার মোবাইল করে বলেছেন ।"
মারিজুয়ানা জিজ্ঞেস করল ," রাতের ডিনার কি এগুলোই থাকবে ?"
টনি বলল ," জি ম্যাডাম ।"
মারিজুয়ানার রুমে গুঞ্জনের সামনেই তারা কথা বলছিল । গুঞ্জন একটা বিষয় লক্ষ্য করল । টনির কণ্ঠস্বর অনেকটা মেয়েদের মতো চিকন ।গুঞ্জনের কেমন যেন হাসি পাচ্ছিল ।তবে এটা বুঝা গেল ছেলেটি বেশ সহজ সরল ।
কিছুক্ষন পর শফিক ফিরে এল । নাতালিকে দেখে মনে হচ্ছে বেশ খুশি । গুঞ্জন জিজ্ঞেস করল ," ড্রেস কিনেছ ?"
নাতালি বাংলায় বলল ," হুম । এখানে সালোয়ার কামিজের কোয়ালিটি ভাল না ।তাই এক সেট সালোয়ার কামিজ কিনেছি ।"
শফিক জিজ্ঞেস করল ," ভাবি আপনারা ডিনার করেছেন ? ভাই কোথায় ?"
গুঞ্জন উত্তর দিল ," ভাইয়া আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।নেশাম আমাদের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে "
শফিক বলল ," ঠিক আছে সবাই একসাথে ডিনার করা যাবে । "তারপর জাপানি ভাষায় নাতালি কে কিছু একটা বলল । নাতালি ওর রুমে চলে গেল । গুঞ্জন ও উঠে ওদের রুমের গেল ।শফিক ধীর পায়ে রুমে ঢুকল । মারিজুয়ানা প্রচণ্ড রেগে আছে শফিকের উপর ।কারন তাকে ছাড়া সে শুধু নাতালি কে নিয়ে মার্কেটে গিয়েছে । এমনকি তার জন্য কিছু কিনে ও আনেনি । শফিক বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে মারিজুয়ানাকে বলল , " টেবিল থেকে পানির বোতলটা দাও ।"
মারিজুয়ানা কোন উত্তর দিল না। শুনেও না শোনার ভান করে পেছন ফিরে বসে রইল ।শফিক কয়েকবার ডাকার পর ও মারিজুয়ানা কোন উত্তর দিল না । এবার খুব জোরে ধমক দিয়ে বলল ," ঢং শুরু করছো কেন ?সমস্যা কি হয়েছে ?"
মারিজুয়ানা ঘাড় ঘুরিয়ে শফিকের মুখোমুখি বসে । তারপর চিৎকার করে বলে ," কেন আপনি বুঝেন না ?নাকি বুইঝা ও না বুঝার নাটক করেন ! আপনার তামাশা দেখতাছি । "
শফিক কঠিন কণ্ঠে বলে ," নাটক বাদ দাও । এইটা ভদ্র সমাজ ।"
মারিজুয়ানা আরও চিৎকার করে বলে ," ভদ্দলোকের বসবাস । একটা মদ খোরের আবার ভদ্দলোকি সমাজ ।বউ রুমে রাইখা বাদল বুড়া মদ খোরটাকে নিয়া যা করতাছেন ! অন্য কেউ হইলে পুলিশ ডাইকা অপমান করতো । খালি আমারে পাইয়া যা খুশি কইরা যাইতাছেন ।আল্লাহ্‌ আপনের বিচার করব । "
শফিক চরম ভাবে রেগে উঠে ।মানুষের একান্ত দুর্বল জায়গায় আঘাত করলে পৃথিবীর সবাই রেগে যায় । অথবা মন খারাপ করে ।দুজনের কথিত চলিত শুদ্ধ ভাষা এক সময়ে ভয়ংকর খাটি বাংলায় পরিনত হয় । শফিক মারিজুয়ানার মুখের সামনে তর্জনী দেখিয়ে বলে ," এই সাবধান । গলাবাজি করবি না ।"
মারিজুয়ানা ও আরও কঠিন কণ্ঠে বলে ," কেন কি করবেন ?"
শফিক উত্তর দেয় ," তোর বাপ যে মদ গাজা পাচার কইরা জেল খাটছিল মনে আছে । আমি শফিক কোটি পতি । থানায় গেলে পুলিশরা সালাম দিয়া দাঁড়াইয়া যায় । "
মারিজুয়ানা বাঁকা ভাবে বলে ,"হ ।দেখা আছে । তাইলে সিদ্দিক ড্রাইভাররে দিয়া আড়াল কইরা বোতল আনেন কেন ?
শফিক আরও ভয়ংকর হয়ে উঠে । তারপর মারিজুয়ানার থুঁতনি চেপে ধরে চোখে চোখ রেখে বলে ," আর একবার বলতেছি ।গলা বাজি করবি না । একদম গলাবাজি করবি না । "

এই কথা বলেই পানির বোতলটা টেবিল থেকে নিয়ে রুমের পেছনের বারান্দায় গিয়ে বসে । তারপর রাগে ক্ষোভে পানি খেতে খেতে একা একা বলে ," শালা পটুয়াখালীর অশিক্ষিত ফকিন্নি । কোটি টাকার ফ্ল্যাটে রাখছি তো ।মুখে বুলি ফুটছে । এক লাথি দিয়া পটুয়াখালী পাঠাইয়া দিমু । "
মারিজুয়ানা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে । বেশ অনেকটা সময় যায় । এমন সময় দরজায় নক হয় ।
বেশ কয়েকবার নক হওয়ার পর মারিজুয়ানা দরজা খুলে ।
অপ্রস্তুত হয়ে গুঞ্জন বলে , " সরি ভাবি । ডিনার করবেন না । খাবার গুলো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে । আর রাতও হয়ে যাচ্ছে । "
মারিজুয়ানা নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বলে ," আমার আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না । "
গুঞ্জন আন্তরিকতা নিয়ে বলে ," আরে আসেন তো । আমাদের বারান্দায় নাতালি অপেক্ষা করছে । এক সবাই ডিনার করি চলেন । "
মারিজুয়ানা বলল ," আচ্ছা ।আপনি যান । আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসি । "
গুঞ্জন চলে যাওয়ার পর মারিজুয়ানা ওয়াস রুমে গিয়ে আরও এক দফা কান্নাকাটি করল । কলের পানি ছেড়ে দিয়ে জোরে জোরে হেচকি তুলে কান্না করল । তারপর কিছুটা সময় নিয়ে চোখে মুখে বেশি করে পানি দিল ।কিছু সময় আয়নায় নিজের অসহায় চেহারাটার দিকে নিস্পলক চেয়ে রইল । তারপর নিজে নিজেই ভাবতে লাগল । ঠিকই তো বলছে শফিক । মারিজুয়ানার বাবা চোরাকারবারি করতো , মদ গাজা পাচার করতো । সংসারে সারা বছর অভাব লেগে থাকতো । অভাবে পড়েই না ভাগ্যের কাছে জীবন সঁপেছে ।আর ও কয়েক ফোঁটা ভারী নোনা জল গাল বেয়ে পড়ে ।

অনেকটা সময় ধরে নিজেকে গুছিয়ে নেয় । তারপর গুঞ্জনদের রুমে যায় ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: বেশির ভাগ মেয়েরা ওয়াশরুমে গিয়েই কান্না করে।
মেয়েরা খুব কাঁদে। এক জীবনে তাদের অনেকবার কাঁদতে হয়।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: জি ভাইয়া মেয়েদের কাঁদতে হয় । অনেক বার কাঁদতে হয় । ধন্যবাদ ।

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫০

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।+

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.