নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস " মারিজুয়ানা" পর্ব ১৯ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

২৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:০৯



#উপন্যাস: "মারিজুয়ানা " পর্ব ১৯
#নুরুন নাহার লিলিয়ান
প্রায় ঘন্টা খানিকের মতো মুষলধারায় বৃষ্টি হল। ঝম ঝম বৃষ্টি আর সেই সাথে কিছুক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ চমকানি। কেমন যেন এক অদ্ভূত সন্ধ্যা।মারিজুয়ানা আর নাতালি বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠল।আধা ঘণ্টার মধ্যেই কোরাল মাছের ধোয়া উঠানো সাসলিক নিয়ে এল গুঞ্জন। খাবারের সুগন্ধে পুরো বাসা মুহুর্মুহু করতে লাগল। এবার যেন নাতালি আর মারিজুয়ানা বাসায় ফিরে যাওয়ার কথা ভুলেই গেল। এর মধ্যে শফিক দুইবার মোবাইল করেছে।
দুজনেই ধোয়া উঠানো কোরাল মাছের সাসলিক বেশ মজা করে খেল।
তারপর তিনজনে ফেসবুকে সেলফি তুলে আপডেট দিল। নাতালি ফেসবুক কম ব্যবহার করে। ও বেশির ভাগ সময় ইন্সট্রাগ্রাম এ্যাপস ব্যবহার করে।
এই ফাঁকে মারিজুয়ানা খাবারের রেসিপি নিতেও ভুলল না।
কোরাল মাছের সাসলিক:
উপকরণ:
১।কোরাল মাছ,আদা বাটা ,রসুন বাটা, হলুদ গুড়া, মরিচ গুড়া, জিরা গুড়া, ধনিয়া গুড়া, কাঁচা মরিচ বাটা, ধনিয়া পাতা বাটা, ঘি, টমেটোর সস,সয়া সস , পেয়াজ, আলু, গাজর, ক্যাপসিকাম সাসলিক স্টিক।

১.কোরাল মাছ সাইজ মতো টুকরো করে কেটে ভিনেগার অথবা লেবু পানিতে হালকা ধুয়ে নিতে হবে।
২.তারপর মাছের টুকরো গুলো কে সব মশলা এবং লবন পরিমান মতো নিয়ে ভাল করে মাখিয়ে রাখতে হবে । কম পক্ষে এক ঘন্টা মেরিনিয়েট করে ফ্রিজে রাখতে হবে ।
৩। গাজর ,ক্যাপসিকাম , আর পেয়াজ সাইজ মতো কেটে নিয়ে লবন , হলুদ আর মরিচ দিয়ে হাল্কা করে তেলে নেড়ে নিতে হবে । তারপর এগুলো আলাদা পাত্রে রাখতে হবে । ঠিক একই ভাবে মেরিনিয়েট করে রাখা কোরাল মাছের টুকরো গুলো তেলে কম তাপে ভেজে নিতে হবে ।
৪। তারপর ভাজা মাছের টুকরো , বাকি ভাজা সবজি গুলো সাসলিক স্টিকে সেট করে নিতে হবে । গরম ঘি ওয়েল ব্রাস দিয়ে সাজানো সাসলিকের মাছ এবং সবজিতে লাগিয়ে দিতে হবে।
৫। এরপর সালাদের সাথে নিজের মতো ডেকোরেশন করে উপভোগ করুন ।
খুব মনোযোগ দিয়ে মারিজুয়ানা লিখে নিল । তারপর কিছুক্ষন ঝিম মেরে গুঞ্জনের দিকে তাকিয়ে রইল । গুঞ্জন বিষয়টা লক্ষ্য করলে মারিজুয়ানা মুখে হাসি নিয়ে আন্তরিকতা প্রকাশ করল ।
তারপর বলল ," ভাবি আপনি অনেক আন্তরিক এবং সহজ সরল ।রেসিপি চাইতেই দিয়ে দিলেন । অনেকেই কিছু চাইলে কেমন যেন জটিলতা করে । গুঞ্জন আন্তরিকতা নিয়ে বলল ," আরে এ আর এমন কি ! এখন সব কিছু ইউটিউবেই পাওয়া যায় । "
মারিজুয়ানা বলল ," তারপর ও ভাবি হাতে কলমে সব পাওয়া যায়না । আমি বুঝি না ।অনেক কিছুই করতে চাই । কিন্তু কেন জানি পারি না । "
গুঞ্জন আন্তরিকভাবেই কাঁধে হাত দুটো রেখে ভালোবেসে বলল ," আপনি বুদ্ধিমতি । অবশ্যই আপনি চেষ্টা করলে পারবেন ।"

এদিকে বৃষ্টি কমে এল । নাতালিকে নিয়ে মারিজুয়ানা নিজের বাসায় চলে এল । স্যাতস্যাতে বৃষ্টির পানিতে ডোবা রাস্তায় বেশ রোমাঞ্চকর লাগছিল । পুরোটা পথের সময় মারিজুয়ানা আর নাতালি বৃষ্টির পানির সাথে খেলতে খেলতে বাসায় ফিরেছে ।

কিন্তু বাসায় ফিরে মারিজুয়ানার সব ভাল লাগার অনুভূতি গুলো নিমিষেই ফুরিয়ে গেল ।মারিজুয়ানার বেড রুমের সাথেই শফিকের একটা বিজনেস রুম আছে । ব্যবসায়িক সব কাজ কিংবা অতিথিদের মিটিং সে সেখানেই করে । বাদল আর শফিক সেখানে বসে রেড ওয়াইন খাচ্ছে । আর দুজনে নিজেদের মধ্যে পাগলের প্রলাপ বকে যাচ্ছে ।নাতালি নিজের রুমে চলে । শফিকের রুমে মারিজুয়ানা উকি দিয়ে দেখে শফিকের চোখ রক্তাভ হয়ে আছে ।ঢুলু ঢুলু চোখে দুজন যেন মদের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে । মদের গ্লাস হাতে দুজন দুজনকে বকেই যাচ্ছে ।এ যেন দুই মাতালের নিরবিচ্ছিন্ন বিকৃত সুখ ।

মারিজুয়ানা কে দেখে শফিক উঠে এল । তারপর ডান হাত দিয়ে মারিজুয়ানার গালটা চেপে ধরে বলল , " ও এসে গেছো ? যাও গরম গরম ডিনার রেডি কর । বাদল ভাই আজকে এখানেই থাকবে । আমার সাথে থাকবে । "
মারিজুয়ানার প্রচণ্ড মেজাজ গরম হয়ে গেল । সে কি করবে বুঝতে পারছে না । বাদল পেছন দিক দিয়ে এসে অরুচিকর হাসি দিয়ে বলে ," জি ভাবি আমি কিন্তু আজ কোথাও যাব না । আজকে রাতটা আপনার কাছেই থাকব । "

ইঙ্গিতপূর্ণ কথা গুলো বলেই সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে ।মারিজুয়ানার মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকে । দুটো মাতাল কে সে কি একা নিয়ন্ত্রন করতে পারবে ? ভীষণ অসহায় লাগে । শফিকের এমন দায়িত্বহীন আচরন তাকে অনিরাপদ করে তোলে । কেমন করে একজন স্বামী এই ভাবে এক মাতালকে নিয়ে নিজ স্ত্রীর সামনে মাতালামি করতে পারে । শফিকের প্রতি তাঁর কষ্টের অনুভূতির ঢেউ গুলো জলোচ্ছ্বাসে পরিনত হতে থাকে ।

শফিকের অফিস রুমের দরজায় জোরে লাথি মেরে কিচেনে চলে যায় ।
শফিকের মাতলামি সময় মতো থেমে যায় । এখন জাপান থেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল কল । অথবা নিজের গ্রামের বাড়ি থেকে কোন জরুরি খবর । মায়ের অসুখ , ভাই - বোনদের প্রয়োজন ,প্রিয় বন্ধুদের আড্ডায় ডাক । তখন সে সব মাতলামি ভুলে যায় ।

মারিজুয়ানা নিজের মনে রাগে গদ গদ করতে করতেই ডিনার রেডি করার প্রস্তুতি নিল ।কিছু টুকটাক বাজার লাগবে । অফিস স্টাফ টনিকে মোবাইল করল । ধানমন্ডির আগোরা সুপার শপে পাঠাল কাঁটা কোরাল মাছ এবং টুকটাক অন্যান্য জিনিস পত্র আনতে । গুঞ্জনের কাছ থেকে শিখে আসা কোরাল সাসলিক বানানোর প্রস্তুতি নিল ।

বাদল আর শফিক অফিস রুমে মাতলামি করেই যাচ্ছে । কিছু সময় পর পর দুজনে ভয়ঙ্কর ভাবে চিৎকার করে উঠে । এরপর অনেকক্ষন কোন আওয়াজ পাওয়া যায় না । হয়তো মাতলামি করতে করতে দুজন ঘুমিয়ে পড়েছে । এরমধ্যে রাতের জন্য স্মোকি সাসলিক , পরাটা , সবজি , জাপানি সালাদ তৈরি করে টেবিল সাজাল । টনিকে বাজারের সাথে লেবু আনতে বলেছিল । দুই মাতালের লেবুর শরবত করল ।

ঘুম থেকে উঠলে তাদের আগে লেবুর শরবত দিবে । তারপর ডিনার করবে । সব শেষে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুগি চা খাবে । জাপানিরা মুগি চা বললেও এটা আসলে বার্লি চা । শফিক জাপান জীবন থেকে খেয়ে অভ্যস্ত । ঘুমাতে যাওয়ার আগে সে একবার হলেও মুগি চা পান করবে ।

মারিজুয়ানা ডিনার রেডি করার পর ফ্রেশ হয়ে নিজের রুমে গেল ।বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিতেই পটুয়াখালী থেকে মায়ের মোবাইল ফোন ।
মায়ের কণ্ঠটা বেশ ক্লান্ত ।
মারিজুয়ানা জিজ্ঞেস করল ,"কি হইছে আপনের ?শরিলডা ভাল ?"
মা উত্তর দিল," আমার কিচ্ছু হয় নাই । তর ছুডো রাজীবরে তগো লগে নে । হের তো পড়া শেষ । জামাই রে কইয়া দেয় চাকরি দিতে ।"
মারিজুয়ানা বিরক্ত কণ্ঠে বলে ," আমি কইতে পারতাম না । আপনেরা কন । হেয় আমারেই ঝুলা মনে করে । "
ওপাশের মারিজুয়ানার মায়ের কণ্ঠ চুপ হয়ে গেল । অনেকক্ষন মারিজুয়ানা হ্যালো হ্যালো করলেও কোন শব্দ শোনা যায়না ।তারপর লাইনটা কেটে গেল । মারিজুয়ানা বুঝতে পারল হয়তো মা কান্না করছে । একবার ভাবল মাকে মোবাইল কল ব্যাক করবে । আবার কি যেন ভেবে করল না ।

কারন বাসায় দুইটা মাতাল মানুষ । এই অবস্থায় যে কোন সময়ে শফিক এই ঘরে আসতে পারে । কিন্তু মায়ের নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া তাকে ভীষণ রকম কষ্ট দিতে লাগল ।মাঝে মাঝে নিজেকেই নিজের এই সংসারে ভীষণ রকম বোঝা মনেহয় ।আবার ভাইয়ের চাকরির কথা কিভাবে জানাবে । শফিক কি সহজ ভাবে নিতে পারবে ।

পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অসহায়ত্ব হল দারিদ্রতা । আর এই দারিদ্রতা যেন লাউ ডগার মতো তাকে পেচিয়ে রেখেছে । সেই প্যাঁচে তাঁর চিন্তা করার শক্তিটা কোথাও আটকে আছে ।

আগের পর্ব -

http://www.somewhereinblog.net/blog/nurunnaharlilian/30241817

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:১১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: Click This Link

২| ২৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:১৯

শামচুল হক বলেছেন: সুন্দর কাহিনী চলুক সাথে আছি।

২৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:৩২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ।

৩| ২৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:৩৬

লাবণ্য ২ বলেছেন: ভালো লাগল আপু।

২৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:৩৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।

৪| ২৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:৩৮

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: আহা !
কি চমৎকার গল্প।

২৯ শে জুন, ২০১৮ রাত ১০:৫০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: নিয়মিত সব পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল । অনেক ধন্যবাদ ।

৫| ৩০ শে জুন, ২০১৮ রাত ২:০৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: আপু শুভেচ্ছা নেবেন। প্রায় ১ মাস পর নতুন পর্ব পেলাম। বরাবরের মতো ভাল লাগলো। তবে পর্বগুলো এতো গ্যাপ দিয়ে পোস্ট করলে আগের কাহিনী অনেক সময় তালগোল পেকে যায়। সপ্তাহে একটা পর্ব দিলে ভাল হয়।

গল্পে ভাল লাগা। লাইক B-) B-) দিলাম।

৩০ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:০৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: জি কাওসার ভাই অনেক ধন্যবাদ । সময় পাই না । দেখি এবার থেকে নিয়মিত দেওয়ার চেষ্টা করব । এটা শিখা প্রকাশনী থেকে বই আকারে আসছে । ভুলে গেলে সমস্যা নেই বই কিনে পড়বেন ভাই । ভাল থাকবেন ।

৬| ৩০ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১০:০২

রাজীব নুর বলেছেন: অনেকদিন পর মারিজুয়ানার পর্ব নিয়ে এলেন। অনের সব ঘটনা তো ভুলেই গেছি।

৩০ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:১১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: পড়িতে পড়িতে ভুলিবেন । আর ভুলিতে ভুলিতেই শিখিবেন কিংবা জানিবেন । ভাই শিখা প্রকাশনী থেকে বই আকারে আসছে ২০১৯ সালের বই মেলায় । ভুলে গেলে বই কিনে পড়ে নিবেন রাজিব ভাই । ধন্যবাদ ।

৭| ০১ লা জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৪৬

খাঁজা বাবা বলেছেন: কোরাল মাছের সাসলিক- রেসিপি কাজ কাজ করবে তো? খাওয়া যাবে তো?

০২ রা জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৫৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেকে খাওয়ার পর ব্যাপক প্রশংসায় উৎসাহিত হয়ে এখানে যোগ করা হয়েছে । ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.