নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস" মারিজুয়ানা" পর্ব ২০-নুরুন নাহার লিলিয়ান

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৩৫



#উপন্যাস "মারিজুয়ানা" পর্ব ২০
#নুরুন নাহার লিলিয়ান

নাতালিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইন্সিটিউটে বাংলা বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে ।কিন্তু এখন ও ক্লাস শুরু হয়নি । ডিপার্টমেন্ট থেকে বলা হয়েছে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হবে ।কিন্তু ক্লাস শুরু হওয়ার আগে শিক্ষক মাঝে মাঝে ক্লাসে যেতে বলেছে । ক্লাসমেট সবার সাথে ভাল বোঝাপড়া হওয়ার জন্য ।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেকের সাথেই নাতালির ভাল সম্পর্ক হয়ে গেছে । বেশ কিছু বাংলাদেশি ছেলে মেয়ের সাথে ও তাঁর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠে । এর মধ্যে আসফি নামের মেয়েটার সাথে তাঁর একটু বেশি ভাল বন্ধুত্ব হয়েছে ।বেশ কিছুদিন ধরে নাতালির সাথে বাসায় ও আসছে ।মাঝারি উচ্চতার ছিমছাম গড়নের শ্যামলা দেখতে । কিন্তু চোখ দুটো ভীষণ চঞ্চল । চেহারায় আলাদা আকর্ষণ আছে । আসফি জাপানি ভাষা শিখছে । মুটামুটি ভাল জাপানি ভাষা জানে ।নাতালির সাথে জাপানি ভাষায় বেশ ভাল যোগাযোগ করতে পারে ।

কিন্তু কোন একটা বিশেষ কারনে মারিজুয়ানার এই মেয়েটিকে একটু ও পছন্দ হচ্ছে না । এই মেয়েটা আসার পর থেকে নাতালি কেমন জানি মারিজুয়ানার সাথে নীরবে আরও কঠিন আচরন করে । প্রথম দিকে মারাজুয়ানাকে নাতালি একদম সহ্য করতে পারতো না । তারপর নিত্যদিনের মানবিক প্রয়োজন আর এক সাথে বসবাসের কারনে একটা সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল । কিন্তু ইদানিং সেটা ও নষ্ট হওয়ার পথে কেমন যেন তাকে বুঝতে অনেক কষ্ট হচ্ছে । নাতালির একটাই অভিযোগ যে তাঁর বাবার কারনেই তাঁর মা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন । নাতালির মায়ের সাথে শফিকের ডিভোর্স হওয়ার পর থেকেই সে মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন । এটা কিছুতেই মানতে পারে না নাতালি । তাঁর মা তাকে বিশ বছর কষ্ট করে মানুষ করেছে ।

প্রায়ই শফিকের সাথে টাকার জন্য খারাপ ব্যবহার করে ।নাতালি এটা বুঝে গিয়েছে যে শফিক তাকে অন্ধের মতো ভালোবাসে । শফিক তাঁর পিতৃত্বের কাছে পরাজিত । আর সেই সুযোগটাই সে নেয় । প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি টাকা সে শফিকের কাছে দাবি করে । প্রতিদিন বাইরে বের হলে যতোটুকু টাকা দরকার তারচেয়ে অনেক বেশি সে শফিকের কাছে চায় । আর না দিলেই ক্ষেপে যায় ।নাতালি রাগ হলে প্রায়ই বলে শফিক কে সে পুলিশে দিবে ।

বিশ বছর সে তাঁর ভরণ পোষণ করেনি । তাঁর মা কে অবহেলা করেছে । নাতালির ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় এমন হুমকি গুলো কেমন অদ্ভুত ভাবে মারিজুয়ানার কানে লাগতো । একটা বিপদজনক হতাশা মারিজুয়ানাকে ঘিরে ধরতো। শফিক কে প্রতি রাতেই মারিজুয়ানা এসব বলে । আর নাতালিকে জাপান পাঠিয়ে দিতে বলে ।এই চাপা মানসিক অশান্তি মারিজুয়ানা আর বহন করতে পারছে না ।শফিক ও প্রতি রাতে মারিজুয়ানার উৎপীড়ন সহ্য করতে পারছে না ।

এদিকে আসফি ও ভেঙ্গে যাওয়া এক বিচ্ছিন্ন পরিবারের মেয়ে । মা -বাবা আলাদা হয়েছে অনেক দিন । সে ঢাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে আরও তিন জন বান্ধবির সাথে থাকে ।অল্প কয়দিনে সে নাতালিকে ভালই পটিয়ে ফেলেছে । ঝগড়া লাগলেই শফিক কে সে বলে আসফিরে সাথে গিয়ে থাকবে । বিষয়টা শফিকের কাছে একদম ভাল লাগছে না । তাই ক্লাসের যাওয়ার সময় শফিক নিজে ড্রাইভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়ে আসে । কিন্তু একটা মেয়েকে সব সময় চোখে চোখে রাখা সম্ভব নয় ।

তাই দুই এক সময় নাতালি বাইরে যেতে চাইলে মারিজুয়ানা ও সাথে যায় ।নাতালি কে এমন করে নিয়ন্ত্রন করাটা সে একদমই পছন্দ করছে না। দুই বছর আগেই একটা ভয়াবহ দূর্ঘটনায় এদেশে অনেক গুলো দেশি বিদেশি নাগরিকের মর্মান্তিক জীবন যায়। তারপর থেকে বেশ অনেকটা সময় বিদেশী প্রবেশ এবং তাদের অবাধ চলাচলে নানাবিধ সচেতনতামূলক নিয়ম কানুন আরোপ করা হয়।

২০১৬ সালের ১জুলাইয়ে গুলশানের হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলায় বেশ কয়েকজন জাপানি নাগরিক ও নিহত হয় । সেই ঘটনার পর থেকে বিদেশিদের বাংলাদেশ ভ্রমনে অনেক জটিলতার তৈরি হয় । এতো কিছুর মধ্যে ও শুধু মেয়ের প্রতি ভালোবাসার কারনে শফিক নাতালিকে বাংলাদেশে এনেছে । সেই সাথে নিজের ব্যবসা ও সম্পদ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য ।তাছাড়া বাংলাদেশে নাতালির কোন কিছু হলে ওর জাপানি মা ইউরি সিমাহাতা শফিকের বিরুদ্ধে কঠিন কোন সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করবে না ।

ইউরি সিমাহাতার সাথে শফিকের হঠাৎ পরিচয় হয় । খুব অল্প সময়ে প্রেম রূপ নেয় পরিনয়ে । বছর পাঁচেকের মধ্যে শুরু হয় সংসারে অশান্তি । ইউরি ছিল প্রচণ্ড মাদকাসক্ত আর স্বেচ্ছাচারী । সাংসারিক মায়া ,মমতা আর ত্যাগ স্বীকার করার মানসিকতা ছিল না । সব সময় চেষ্টা করতো শফিক কে নিয়ন্ত্রন করতে । একজন বাঙ্গালি পুরুষ হিসেবে ইউরির এতো সব স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন ছিল ।

ঝগড়া লাগলেই সে শফিক কে গরীব বাঙালি বলে গালি দিত । বাংলাদেশ কে গালি দিত । সংসারের জিনিস পত্র ছুড়ে বাইরের বাড়ির কাছের নদীতে ফেলে দিত । কোন ভাবেই সহজে তার রাগ থামানো সম্ভব হতো না । এমন কি কখন ও ঝগড়ার দুঃখ প্রকাশ ও করতো না । তাই একদিন দুই বছরের নাতালি কে নিয়ে শফিক ইউরির বাসা ত্যাগ করে ।

নাতালির জন্য কেস করে ইউরি । জাপানে প্রায় অনেক মাস জেল ও খাটে শফিক। তারপর শর্ত সাপেক্ষে বের হলে ও নাতালির খোঁজ নিতে ভুলেনি । কিন্তু ইউরির পরিবার নাতালিকে দেখতে দিত না । সেই ছোট্ট বেলা থেকে নাতালিকে শফিক প্রচণ্ড ভালোবাসে ।নাতালি নামটা ও শফিকের দেওয়া । প্রথম যৌবনে নাতালি নামে এক ফরাসি মেয়ের প্রেমে পড়েছিল শফিক । সে প্রেমটা আর হয়ে উঠেনি । কিন্তু নাতালি নামটা গভির এক মায়ার দাগ রেখে গিয়েছিল । তাই কন্যার জন্মের পরই সে জাপানি মেয়ের ফরাসি নাম রাখে । এতে নাতালির মা কোন বাঁধা দেয়নি । বরং মেয়ের সুন্দর নামের জন্য শফিক কে ধন্যবাদ দিয়েছে।

কিন্তু কেমন করে জানি শফিক আর ইউরি সিমাহাতার গভীর প্রেমটা বিষাদে রূপ নেয় । নাতালির জন্ম ও তাদের এক করে ধরে রাখতে পারেনি । ইউরি সিমাহাতা এখন ও শফিক কে প্রচণ্ড ঘৃণা করে ।কিংবা শফিক ও হয়তো ইউরি সিমাহাতাকে ঘৃণা করে ।
আজ দুজন দুই দিকে দুই জীবনে সুখ কিংবা দুঃখ নিয়ে জীবন যাপন করছে ।ইউরি সিমাহাতা বিয়ে না করলে ও একটা মধ্য বয়স্ক বয় ফ্রেন্ড আছে । এদিকে শফিক ও মারিজুয়ানাকে বিয়ে করে জীবনটা চালিয়ে নিচ্ছে ।

মারিজুয়ানাকে নিয়ে শফিক সুখী কিংবা দুঃখী তা আবিস্কার করা ভীষণ কঠিন । শফিক আর কোন জীবন সঙ্গী হারাতে চায়নি । তাই খুব গরীব দেখে অল্প পড়াশুনার মেয়ে যে কিনা শহরের জটিলতা দেখেনি । শহর থেকে অনেক দূরের পটুয়াখালীর এক গ্রামের মেয়ে মারিজুয়ানাকে বিয়ে করে। বিয়ের দিনই শফিক বুঝতে পারে মারিজুয়ানার বড় ভাই আর ভাবি তার কাছে তাদের বোন বিয়ে দিয়েছে শুধু টাকার জন্য । মারিজুয়ানার বড় ভাই প্রচণ্ড লোভী লোক । দেন মোহর পাঁচ লক্ষ টাকা ছাড়া ও আলাদা পাঁচ লক্ষ টাকা সে নেয় গোপনে ।যা হয়তো মারিজুয়ানা ও জানে না ।

আর সব সময় সে মারিজুয়ানাকে তার কাছ থেকে টাকা আদায় করার বুদ্ধি দেয় ।নয়তো জাপানে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে । শফিক জানে মারিজুয়ানা গরীব ঘরের অল্প পড়াশুনার হলে ও তাকে সুযোগ দিলে সে উড়াল দিবেই । শফিক খুব ভাল করেই জানে সে পঞ্চাশের উপরে বয়স্ক এক পুরুষ । মারিজুয়ানার সাথে তাঁর বয়সের বিস্তর ফারাক । রূপ কিংবা যৌবন কিছুই নেই । আছে শুধু ব্যবসার টাকা ।দেশে বিদেশে থাকা তাঁর স্থাবর অস্থাবর সম্পদ । মারিজুয়ানার মতো ভরা যৌবনে থাকা নারী কে খুশি করার মতো সামর্থ্য সে অনেক আগেই হারিয়েছে ।

মারিজুয়ানাকে সে ভালোবাসে কিন্তু বিশ্বাস করতে পারে না । বিশ্বাস করার মতো সে আস্থা মারিজুয়ানা কিংবা তার পরিবারের কেউ অর্জন করতে পারেনি ।পৃথিবীতে সবাইকে মানুষ হিসেবে ভালোবাসা যায় কিন্তু কিছু মানুষকে বিশ্বাস করা যায় না । তাদের বিশ্বাস করা কঠিন । যখন ব্যবসার কাজে সে জাপান যায় দামী হিরের গহনা ,মুক্তোর গহনা আর নানা ধরনের পোশাক সবই নিজের পছন্দ মতো কিনে আনে । যে দেশেই যায় সব সময় লাগেজ ভরে সে জিনিস পত্র নিয়ে আসে মারিজুয়ানার জন্য । কিন্তু নিজ নজরের বাইরে যেতে দেয় না ।কারন জীবনের এই প্রহরে মারিজুয়ানা ছাড়া শফিকের কাছে থাকার আর কেউ নেই ।সত্যি কেউ নেই । তাই সে কোন কিছুর বিনিময়ে মারিজুয়ানাকে হারাতে চায় না ।

বিকেল থেকেই শফিক অফিস রুমে বসে কাজ করছে আর ভাবছে নিজের জীবন নিয়ে । অফিস রুমের দরজায় এর মধ্যে কয়েকবার নক করা হয়েছে । খুব হাল্কা স্বরের কোন তরুণীর । হয়তো মারিজুয়ানার হবে ।কিন্তু মারিজুয়ানার কন্ঠ খুব কর্কশ বিশ্রী রকমের ।এখন এতো বেশি সুমধুর লাগছে কেন ! বিকেল থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত তিনটা রেড ওয়াইনের বোতল শেষ । শফিকের বিশ্বাসের জগতটা সামনে রাখা মদের শূন্য বোতলটার মতো শূন্য । নিজের জীবনের অসহায়ত্ব গুলোকে আজ লাল মদের নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে। জীবন ঘিরে থাকা যুদ্ধ আর কষ্টের কথা ভেবে শফিক হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে ।আর কান্নার গভীর সমুদ্রে ধিরে ধিরে তলিয়ে যেতে থাকে ।

দরজায় এবার খুব জোরে কেউ নক করে ।

আগের পর্ব ১৯
http://www.somewhereinblog.net/blog/nurunnaharlilian/30245271

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৩৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আগের পর্ব ১৯ .।।।http://www.somewhereinblog.net/blog/nurunnaharlilian/30245271

২| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:২৭

লাবণ্য ২ বলেছেন: ভালো লাগল।

১১ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ।

৩| ০৫ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: আগামী বই মেলায় বই আকারে হাতে পাবো তো?

১১ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: জি ইনশাআল্লাহ্‌ । শিখা প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হবে । ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.