নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতি কথনঃ পানি আতংক

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৩৪


( জাপান সাগরের কাছে আমি )

#পানি আতংক
#নুরুন নাহার লিলিয়ান

পানিতে পড়ে মৃত্যু কিংবা সলিল সমাধি যে কতো ভয়ংকর তা কেবল জানে যারা এমন সব মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরেছে । আর যারা ফিরতে পারেনি তাদের প্রিয়জনেরা জানে পানি/জল শুধু তৃষ্ণা মেটায় না কখন ও জীবন ও কেড়ে নেয় ।বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গিয়ে ভৈরবের পানিতে নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু । অন্যদিকে চকরিয়ায় পাঁচ স্কুল ছাত্রের মৃত্যু সত্যি দুঃখজনক । টিভিতে খবর গুলো কেমন মনে ঝড় তুলে । চোখে অশ্রু ঝরায় ।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে নদী , সমুদ্র এমন কি পুকুর ও ভয় পাই ।
খুব ছোট বেলায় দুই তিন বার পুকুরে পড়ে মরে গিয়ে ও বেঁচে আছি । পানিতে হাবুডুবু খাওয়ার ভয়ংকর অভিজ্ঞতা কিছু হলে ও আছে ।
আমার বড় দুই বোন ভাল সাতার জানে । অনেক আগে আমাকে সাঁতার শেখানোর চেষ্টা করলে ও আমার আর সাতার শেখা হয়নি । দুইটা স্মৃতি একদম মনে আছে । এখন ও চোখের সামনে ভাসে কিভাবে আমি তলিয়ে যাচ্ছিলাম ।একটু বেঁচে থাকার জন্য ছোট্ট শরীরটা ভাসিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম ।
ভরা বর্ষা মৌসুম । ছেলে মেয়েরা পুকুরের পানিতে সাতার কেটে খেলে । আমরা মুন্সিগঞ্জের জমিদার পাড়ায় থাকি । জমিদার পাড়ায় ঢুকতেই খুব সুন্দর একটা পুকুর আছে ।কথিত আছে এই পুকুরটার সংযোগ ছিল ধলেশ্বরী নদী আর মেঘনা নদী । যাইহোক বড় বোন আমাকে কোলে নিয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিত । এমন এক বর্ষায় পুকুরে শাপলা ফুলের অভাব নেই । বড় বোন এবং তার কিছু ডান পিটে এলাকার বন্ধু বান্ধব ডাক দিল পুকুরে সাঁতার কাঁটা প্রতিযোগিতা খেলবে । আমার বড় বোন আমাকে কোলে নিয়ে বেশ কয়েকবার ডুব দিল । তারপর একটু দূরে সবার সাথে যাওয়ার জন্য আমাকে পাড়ের কিছু সামনে রেখে গেল । ও ভেবেছিল আমি কোন সিঁড়িতে দাড়িয়েছি । আসলে আমার পায়ের নিচে পুকুরের কোন সিঁড়ি ছিল না । আর স্রোত আমাকে হাত ধরে বড় বোনের মতো টেনে টেনে পুকুরের মাঝে নিয়ে গেল ।
কিছু দুরেই ওরা খেলছিল । সবাই ভাবছিল আমি হয়তো সাঁতার পেরে গেছি । যখন ডুবে যাচ্ছিলাম সবাই তখন টানাটানি করে তুলে আনে ।আমার তখন যায় যায় প্রান । আমার আব্বু বড় আপুকে খুব বকে ছিল ।

আরেক বার আমি আর মেঝ বোন পুকুরের শ্যাওলা আর কচুরি দিয়ে রান্না বান্না খেলতাম । দুই জনে ভর দুপুরে পুকুরে গেলাম শ্যাওলা আনতে । পুকুর পাড়ের একটা শ্যাওলা আমি পেয়ে চিৎকার দিলে মেঝ বোন দেয় ধাক্কা । সে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে আবার আত্ম অপরাধ স্বীকার করে গগন বিদারী চিৎকার দিয়ে ।
পুকুরের অপর পারেই পোষ্ট অফিস , মসজিদ , আর রেজিস্ট্রি অফিস । আগে মফঃস্বলে দুপুরে সবাই খেয়ে ঘুমাত । আমাদের মতো দুষ্ট বাচ্চারা ছাড়া ।
আমাদের প্রতিবেশী ছিল আমার ছোট বেলার বান্ধবি হ্যাপিদের পরিবার । তখন হ্যাপির মায়ের একটা ছেলে হয়েছে কয়েক দিন হয় । সে অবস্থায় মহিলা আমার বোনের চিৎকারে পুকুরে লাফ দেয় । আমাকে তুলে আনে । অর্ধ জীবিত অবস্থায় পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করা হয় ।
আল্লাহ্‌ জানে মৃত্যু কিভাবে হবে । তবে অনেক বার জলে স্থলে আর আকাশ পথে মৃত্যু কে দেখেছি খুব কাছ থেকে । সত্যি পানিতে ডুবে মৃত্যু ভীষণ ভয়ংকর ।ছোটবেলায় ধলেশ্বরী নদীতে অনেক লঞ্চ ডুবে মানুষ মারা যেতো । আমাদের অনেক পরিচিত বান্ধবি ছিল তাদের পরিবারের কেউ না কেউ নদীতে ডুবে মারা গেছে । সেই সময় নিয়ম করে লঞ্চ ডুবে মানুষ মারা যেতো । আর মৃত্যুর কান্না আকাশে বাতাসে ভাসতো ।
এতো ভয় আতংক নিয়ে ও এই ধলেশ্বরী পার করেছি কতকাল । জাপান সাগর আর প্রশান্ত সাগরের মাঝে থেকে এলাম কয়েক বছর । পানি ছাড়া কি আর জীবন হয় । গত বছর সেন্টমারটিন ঘুরতে গিয়েছিলাম । টেকনাফে ফেরার সময় বঙ্গোপসাগরের মাঝে আমাদের জাহাজ বিকল হয় । সে এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা । আরেকটি জাহাজ আমাদের জাহাজ কে টেনে আনে । যখন প্রচণ্ড ঢেউ হচ্ছিল আর দুটো জাহাজ ধাক্কা খাচ্ছিল তখন জাহাজের সবাই জোরে জোরে আল্লাহ্‌র নাম নিচ্ছিল । মনেহচ্ছিল এই বুঝি জীবন শেষ । যাইহোক জীবন মৃত্যুর খেলা দেখতে দেখতে আমরা তীরে পৌঁছে যাই ।

ডিপ ওয়াটার নামে একটা মুভি দেখেছিলাম । যখন মানুষ ডুবে যায় আর শেষ নিঃশ্বাস টুকু ও ধরে রাখতে পারে না তা কতোটা হৃদয় কে ক্ষত বিক্ষত করে । আর টাইটানিক মুভির কথা তো সবাই জানে ।
পানি কে কখন ও তুচ্ছ ভাবা ঠিক না । জোয়ার ভাঁটার কোন হাত পা নেই । যে কোন সময়ে সে আপনাকে টেনে নিতে পারে ।পানি বিষয়টার যে কতো ক্ষমতা এর বিপদজনক অবস্থার খুব কাছে গেলেই তা বুঝতে পারবেন । তাই পানিকে গুরুত্ব দিতে হয় । হয় তা খাল বিলের কিংবা মহা সমুদ্রের পানি ।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৩৫

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:


পানি সর্বত্র জীবনের অস্তিত্ববাচক এক অনুভব! যেখানে পানি নেই সেখানে জীবন কত কঠিন তাহা সর্বজনবিদিত। তবুও পানি যে মরণের অপর নাম আপনার পোষ্টে তাহার অনুভবে শিহরণ বয়ে গেল! আমিও একদা পানিতে ডুবিতে বসেছিলাম। আমি জানি ইহা কতটা মর্মান্তিক!

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:০৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৫৪

স্রাঞ্জি সে বলেছেন: পানির অপর নাম যেমন জীবন

তেমনি পানি আবার মরণও ডেকে আনে।

তাই সবার উচিত পানি থেকে সতর্ক থাকা।

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:০৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৩| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৩:০৭

জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: পানি জীবন, পানিই মরন। সুতরাং অবহেলা নয়। অন্তত সাঁতারটা শেখা উচিৎ সবারই।

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:০৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৪| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:০২

পবিত্র হোসাইন বলেছেন: ভালো লাগলো

২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৫| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:২০

রাজীব নুর বলেছেন: গতকালও যমুনা নদীতে নটরডেম কলেজের ছাত্র মারা গেছে।
বাংলাদেশে নদীতে প্রতিদিন কেউ না কেউ মরছে।
ছোটবেলায় আমি পুকুরে ডুবে মরতে বসে ছিলাম, কোনো রকমে বেঁচে গেছি।

খুব সুন্দর লিখেছেন।

২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৬| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৫

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: পানি গুরুত্বপূর্ণ এতে কোন সন্দেহ নে ই । সাতার শেখাটা খুব জরুরি। স্থলভাগে হাটা শেখা আর জলভাগে সাতার শেখা সমান জরুরী । সুন্দর পোস্ট।

২০ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.