নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস"মারিজুয়ানা" পর্ব ২৩ - নুরুন নাহার লিলিয়ান

২১ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:১৫



#উপন্যাস"মারিজুয়ানা" পর্ব ২৩
#নুরুন নাহার লিলিয়ান
শফিক বাসা থেকে বের হওয়ার সময়ে নাতালির দরজার দিকে কঠিন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিল । মারিজুয়ানা বিষয়টা লক্ষ্য করল । কিন্তু কিছু বলতে পারল না । কারন কোন কিছু বললেই শফিক রেগে যাবে । সে নাতালির পক্ষ হয়ে অনেক গুলো কাঁটা যুক্ত বাক্য শুনিয়ে দিবে ।আর সে কাঁটা অনেক দিন মনের কোথাও আঘাত করতে থাকে । আঘাত করতে করতে এক সময়ে রক্তস্রোতে ভাসিয়ে দেয় ।
শফিকের ছোট ভাই এবং তাঁর বউ আজ শফিকের সাথে ময়মসিংহ চলে গেল । কিন্তু মমতাজ খালার সাথে রয়ে গেছে তাঁর ছোট বোন কাকলি । চরম বিরক্তিকর একটা চরিত্র ।
কাকলি এখন ও নাস্তা করেনি । সে সব কিছুর মধ্যে অনেক দোষ ধরে ।শফিক কে বিদায় জানিয়ে মারিজুয়ানা টেবিল গুছাতে লাগল । কাকলি একা একা কি যেন বলতে বলতে এগিয়ে এল ।
কাকলি পুরো টেবিল ভাল করে দেখল । তারপর মুখ বাকিয়ে মারিজুয়ানাকে বলল ," কি ভাবি দানা পানি কি পেটে দিতে দিবেন না?কতো বেলা হইয়া গেছে ! "
মারিজুয়ানা বলল ," বসে পড়ো । কলা ,পাউরুটি আছে ।জেলি দিয়ে ব্রেড খাও । আমি কফি নিয়ে আসি ।"
কাকলি আবার মোচর দিয়ে বলল ," আমি কলা রুটি বানরের খাওন খাই না ।"
মারিজুয়ানা বলল ," আচ্ছা তোমাকে তাহলে নুডুলস করে দেই ।"
কাকলি আবার বিরক্ত নিয়ে বলল ," এই সকালে তেল আর ঝাল পেটে দিমু !না গো অন্য কিছু নাই ?"
মারিজুয়ানা বলল ," বুয়া আটার রুটি ও করেছে । সাথে সবজি আর ডিম ও আছে । "
কাকলি আবার ও হেয়ালি ভাব নিয়ে বলল ,' সেই একই তো তেল আর ঝাল! আর কিছু নাই ?"
মারিজুয়ানা বলল ," তাহলে দুধ সেমাই করে দিব?"
কাকলি ঠোঁট বাকিয়ে বলে," ওম্মা! খালি পেটে মিষ্টি দিমু?"
মারিজুয়ানা এবার ধৈর্য হারিয়ে ফেলল ।মনে মনে প্রচণ্ড রাগ উঠে গেল । কিন্তু কিছুই বলতে পারল না । মনের ভেতর ঝড় বইতে লাগল ।মাথার ভেতরে রক্ত গরম হয়ে ফুটতে লাগল । তারপর ও মারিজুয়ানা কখন ও ভীষণ রকম ভাবে সব ঠাণ্ডা মাথায় সহ্য করতে পারে । কাকলির সাথে তেমন কোন কথা বাড়াল না । কারন টেবিলে যথেষ্ট পরিমান খাবার আছে । তারপর ও কাকলি খাবার নিয়ে একটা করে উছিলা খুঁজছে কিভাবে মারিজুয়ানাকে কষ্টে রাখা যায় ।
মারিজুয়ানা ও বুদ্ধিতে কম যায় না । সে কাকলির দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বলল ," টেবিলে অনেক ধরনের খাবার আছে । যেটা মন চায় খেয়ে নিও । আমার অনেক কাজ আছে । ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দিতে হবে ।"
কাকলি ঠোঁট মুখ বাঁকাতে বাঁকাতে খাবার খেতে লাগল । মারিজুয়ানা কাপড় গুছিয়ে এনে রাশেদা বুয়া কে দিল ওয়াশিং মেশিনে দেওয়ার জন্য ।এই রাশেদা বুয়া আরেক চিজ । তাকে সব কাজ বার বার দেখিয়ে দিতে হয় । কাজ দেখাতে দেখাতে সব কাজ তো হয়েই যায় । ড্রাইভার সিদ্দিকের সাথে তাঁর একটা গোপন গল্প আছে । দারোয়ান , স্টাফ সহ সবাই জানে । রাশেদার জামাই নেই । আর সিদ্দিক মিয়ার বউ বাচ্চা আছে । পরিবার থাকে ময়মনসিংহ । মারিজুয়ানা আড়াল চোখে চুপচাপ খাবারের টেবিলের দিকে তাকাল । কাকলি বেশ আরাম করেই সব খাবার খেয়ে নিচ্ছে । এই দৃশ্য দেখে মারিজুয়ানা মনে মনে মুখ টিপে হাসে ।
এই ফাকে মারিজুয়ানা ও নাস্তা করে নিল । মমতাজ খালা এবার উঠে গিয়ে নাতালির রুমের দরজায় ধাক্কাতে লাগল ।মারিজুয়ানা না করল । তারপর ও মমতাজ খালা কথা শুনে না । মারিজুয়ানা পড়েছে মহা বিপদে । এদিকে খালার কারনেই উল্টা শফিক এসে মারিজুয়ানাকেই বকবে । অন্য দিকে নাতালি ও কাজটা ঠিক করছে না । একটা ফ্লাটে এমন একজন অসুস্থ মানুষ আছে । মেয়েটার ভেতরে বিন্দু মাত্র মানবিকতা নেই । একটা রুম তো একাই দখল করে আছে ।
বাইরে এতো ঝামেলা যায় নাতালির ভেতরে কোন রিয়েকশন দেখা যায় না । সে যতোটা সময় বাসায় থাকে । নিজের রুমেই থাকে । মোবাইলে গান শুনবে । নয়তো জাপানি বয়ফ্রেন্ড ওয়াকিতার সাথে কথা বলবে ।
কবে যে এই সমস্যা শেষ হবে । মাঝে মাঝে মারিজুয়ানা ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে মনে মনে অভিশাপ দিতে থাকে ।শফিকের মা যখন অসুস্থ হয় পুরো বাসাটা নরকে পরিনত হয় ।
কবে যে এই সমস্যা শেষ হবে । মাঝে মাঝে মারিজুয়ানা ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে মনে মনে অভিশাপ দিতে থাকে ।শফিকের মা যখন অসুস্থ হয় পুরো বাসাটা নরকে পরিনত হয় । শাশুড়ির সাথে মানুষ গুলো মারিজুয়ানাকে পাগল করে ছাড়ে ।
মাঝে মাঝে নিজেকে এতো বেশি তুচ্ছ মনেহয় ! নিজের বলে কিছুই নেই এই সংসারে ।কিছু কিছু মুহূর্ত আসে যখন আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না । কিছু বেঁচে থাকা ।অনেকটা না বেঁচে থাকার মতোই ।নর্দমার কীটেরও একটা নিজস্ব ভুবন থাকে । মারিজুয়ানার সেই একান্ত একটা ভুবন ও নেই । সামনের টেবিলে থাকা ডিমের কুসুমে দু'ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ে । নিজের একটা বাচ্চা ! বেঁচে থাকার অবলম্বন ও নেই ।
শফিক কে অনেক বার বলার পর ও বাবা হতে আগ্রহী সে না ।কেন জানি কোন এক অদ্ভুত কারনে সে আর বেবি নিতে চায় না । প্রথম দিকে শফিক কে বাচ্চার কথা বললেই রেগে যেতো । বলত আমার তো দুই ছেলে মেয়ে আছেই ।বুড়া বয়সে বাচ্চা নিয়ে ঝামেলা বাড়াতে চাই না ।
প্রচণ্ড রাগ হতো শফিকের উপর । এক যুগ পর এতো এতো তুচ্ছ তাচ্ছিল্য হওয়ার পরও মারিজুয়ানা বাচ্চার জন্য যুদ্ধ করে গেছে । নিজে নিজেই ডাক্তারের কাছে গিয়েছে । মায়ের মাধ্যমে পটুয়াখালী থেকে কবিরাজি ওষুধ আনিয়েছে ।পবিত্র কুরআন পড়ে নিয়মিত আল্লাহ্‌র কাছে ফরিয়াদ করেছে । কোনভাবেই ভাগ্যটা নিজের মতোই জেদ ধরে আছে ।
আর ও কয়েক ফোঁটা নোনা জল মারিজুয়ানার খাবারে গিয়ে পড়ল । মুখে এক নলা খাবার । কিছুতেই যেন গলা থেকে নামছে না । পেটের ভেতরটা কেমন কুট কুট করছে ।
ভাগ্য তাকে সন্তান দিয়ে ও নিয়ে গেছে । এখন ও মনে পড়লে বুকের বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠে ।
শফিকের মা কে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে ।মাঝে মাঝে বুড়ির মুখের শেষ পানিটুকু ও কেড়ে নিতে ইচ্ছে করে । কিংবা মুখে বালিশ চেপে মেরে ফেলতে ।
তখন বিয়ের ছয় মাস । বিয়ে করার পর পরই শফিক কে ব্যবসার কাজে জাপান চলে যেতে হয়েছিল । তারপর দুই মাস ফিরে এসে এক টানা বেশ কয়েক মাস বাংলাদেশেই ছিল ।মারিজুয়ানার সাথে শফিক নিয়মিত থেকেছে । সব কিছু ভাল চললে ও শাশুড়ির যন্ত্রণা তাকে বিষিয়ে রাখত ।
শফিকের মা মারিজুয়ানাকে দিয়ে একটা কেনা দাসীর চেয়ে ও বেশি কাজ করাত ।মহিলা কেন জানি শুরু থেকে আজ ও সেই দাসীর মতোই আচরন করে । সেই কুরবানি ঈদটা মারিজুয়ানা কোনদিন ভুলতে পারবে না ।
এখন ও মনে পড়ে ঠিক কুরবানী ঈদের চার দিন পর । মধ্য রাত থেকেই তল পেটে কেমন ব্যথা হচ্ছিল । সংসারের অনেক কাজ করতে হয়েছিল । এমনি শরীরটা ভীষণ ক্লান্ত ছিল । বার বার মনে হচ্ছিল কিছু একটা দলা পাকিয়ে শরীর থেকে বের হয়ে যেতে চাইছে । সেদিন অনেক কাপড় কাঁচতে হয়েছিল । ঠিক মধ্য দুপুরে । ছাদে বিভিন্ন জায়গায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ।বাড়ির পেছনেই ঈদে গরু কুরবানি হয়েছিল । শফিকদের এক তলা ছাদে মারিজুয়ানা ভেজা কাপড় শুকাতে দিতে গিয়েছিল ।
ছাদে জায়গায় জায়গায় রক্তের দাগ দেখে প্রথম ভেবেছিল হয়ত মানুষের পায়ে পায়ে কুরবানির রক্ত ছাদের ফ্লোরে লেগে আছে । হঠাৎ মারিজুয়ানা খেয়াল করল আসলে সে নিজে জায়গায় হেঁটেছে । ঠিক সে জায়গায় গুলোতেই রক্ত । নিজের শরীরের কোন জায়গা থেকে বেরিয়ে আসা রক্ত । অদ্ভুত রকমের রং । মনে হয় রক্তে মারিজুয়ানার চোখের নোনা জল মিশানো ।
মাথার উপর ভয়াবহ জুন মাসের তপ্ত আগুনমুখা সূর্য । মাথাটা কেমন ঘুরছিল ।ব্যাপারটা বুঝতে বুঝতেই একটা বড় রক্তের দলা ভেজা শরীর বেয়ে নেমে এল ।মারিজুয়ানা বসে পড়ল ।
পুরো পৃথিবীটা যেন ঘুরছিল ।মারিজুয়ানা জেন রক্ত সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছিল । একটা অনাগত শিশুর চিৎকারে ,তাকে বাঁচাতে সে রক্ত সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছিল ।কোথাও শিশুটিকে খুঁজে পাচ্ছিল না । কিন্তু অনাগত শিশুর চিৎকার তাকে দিগভ্রান্ত করে তুলে ছিল । সে শুধু বাচ্চাটিকে খুঁজতে খুঁজতে রক্ত সমুদ্রে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল।
আর গভীর থেকে গভীর তল দেশে ডুবে যাচ্ছিল ।
এরপর দুই দিন অজ্ঞান ছিল ।
আজকে সকালে সেই রক্তাক্ত স্মৃতি মারিজুয়ানাকে উদ্ভ্রান্ত করে তুলল । ডিম রুটি মুখে নিয়ে সে হাউ মাউ করে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল । তার ভেতর থেকে উঠে আসা গভীর নোনা জল যেন জলোচ্ছ্বাস বইয়ে দিল ।
মমতাজ খালা নাতালির রুমের দরজার সামনে থেকে নির্বাক স্তব্ধ হয়ে মারিজুয়ানার দিকে তাকিয়ে রইল ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: মারিজুয়ানা এগিয়ে যাক।

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫২

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.