নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মকথনঃ আব্বার হাতের এক গ্লাস পানি-নুরুন নাহার লিলিয়ান ।

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৩



#আব্বার হাতের এক গ্লাস পানি :
#নুরুন নাহার লিলিয়ান।

আমরা বাবাকে আব্বা বলেই ডাকি। সেই ছোট বেলা থেকে মা কে তুমি বললেও আব্বা কে আপনি বলি। কিন্তু মায়ের মতো আব্বাও অনেক বেশি বন্ধুর মতো।যদিও একটা সময়ে ভীষন রাগী ছিলেন। আমরা চার ভাই বোন বাঘের মতো ভয় পেতাম।
আব্বা যখন বাসায় ফিরতো আমরা ভাই বোনেরা যাই করি না কেনো। হাতে বই নিয়ে আব্বা কে দেখানোর জন্য পড়া শুনার ভান করতাম।এটাও সত্যিই প্রতিযোগীতা থাকতো পরিক্ষায় কে কতো ভাল করতে পারে।আর
সে কারনেই হয়তো আমরা প্রতিটা ভাই বোন মেধাবী ছিলাম। আর যাই করি না কেন পড়াশুনা ঠিক রেখেই করতাম।
সবাইকে এক সাথে পড়তে দেখলে আব্বা একটা হাসি দিয়ে মা কে বলতো এই দৃশ্যটা আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য।
সদা হাসোজ্জল এক সূদর্শন তরুন বাবা কে দেখতে দেখতে এক বৃদ্ধ বাবায় পরিনত হলো। আমার চোখের সামনে এতো রোগ শোক নিয়ে অসহায় বাবার দিন দিন শারিরীক শক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আজও সেই জীবন যুদ্ধে সাহসী মানুষটার মনের জায়গাটা আগের মতোই আছে।
ছোট বেলায় মফস্বলের আবাসিক এলাকা গুলোতে সবার সাথে সবার মানসিক দিক থেকে আত্মীয়ের মতো সম্পর্ক ছিল । যদি ও এখন দেশে বিদেশে গ্রামে ,মফস্বলে আর শহরে সবাই ক্লোজ ডোর সোসাইটি মেইনটেইন করে । তার পেছনে অবশ্য অস্থির সময় আর সেই সাথে মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন । মানুষের মধ্যে দায়িত্বহীনতা , লোভ আর অন্যকে ছোট করার প্রবনতা এখন অনেক বেশি । অন্যকে ছোট ভাবা আর নিজেকে শো করা ,অন্যের অনুভূতি কে তুচ্ছ করা হাল ফ্যাশন । অথচ একটা সময়ে আইসক্রিম ওয়ালা এলে আমরা একটা আইস্ক্রিম খেলে আব্বা সব বাচ্চাদের কিনে দিতো । সেই থেকে শিখেছি খাবার শেয়ার করে খেতে হয় । আর এখন অনেক বাবা মা সন্তানদের শেখায় নিজে খাও অন্যকে দেখিয়ো না । নিজেকে নিয়ে ভাবো । পার্থক্য করা শেখায় । আত্মকেন্দ্রিক , স্বার্থপরতা আর অন্য কে ছোট ভাবার বিকৃত আনন্দ অনুভূতি ছোট বেলা থেকেই কেন জানি আধুনিক মা বাবা গুলোই সন্তানদের শেখায় । রাতে বেলা আমরা সব কয়টা ভাই আব্বা না ফেরা পর্যন্ত খেতাম না । এক সাথে ভাত খাওয়ার আনন্দ একদম আলাদা । এই পারিবারিক স্পন্দন আর সুখ গুলো কেন জানি অনেক জ্ঞানী গুণী মানুষরাই অনুভব করে না ।
একটা সংসারে কতো রকমের উত্থান পতনের গল্প থাকে। স্বপ্ন,সফলতা আর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থাকে। জীবন কে ভালোবেসে। পরিবেশ আর মানুষকে আপন করে। সব কিছুকে সহজভাবে দেখে জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। আমরা আজও কোন পরামর্শ কিংবা ভুল হলে আব্বা কে জানাই।
ছোট বেলায় স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে আব্বা আমাকে মুন্সিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি করে দেয়।
তারপর শিশু একাডেমী, সংগীত একাডেমী, ঘাসফুলের হয়ে আমি আর ছোট ভাই সব সময়ে সংস্কৃতির জড়িত ছিলাম। প্রতিটা ভাই বোনকে সে নতুন স্বপ্ন আর আধুনিক চিন্তা করতে শিখিয়েছে। বড় বোন দুটোর অনেক আগে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তাই অনেকটা সময় জুড়ে আমি আর ছোট ভাই তার আবেগ অনুভূতির আশ্রয়স্থল।
আশে পাশের আন্টিদের কাছে শুনেছি। আমরা তিন বোন ছোট বেলায় খুব সুন্দর শিশু ছিলাম। আব্বা নাকি সবাই কে এক এক করে সাবান দিয়ে ভালো করে গোসল করাতেন। তারপর সারিতে সারিতে দাঁড়া করিয়ে স্নো পাউডার দিয়ে দিতেন। মাথা আচড়ে আর জামা কাপড় পড়িয়ে রোদে বসিয়ে দিতেন। অনেকে নাকি দুষ্টামি করে বলতো মেয়েগুলোকে সাবান দেওয়ার দরকার কি। ওরা তো এমনি সুন্দর। এদের এতো আদর করছেন সব তো পরের সংসারে চলে যাবে।
আব্বা ভাব আবেগ নিয়ে বলতেন বাবার ভালোবাসা চিরন্তন।সব সংসারেই এক।পরের সংসারে যদি আদর যত্ন না পায় তাই আগেই একটু বেশি করে আদর দিয়ে দিচ্ছি ।
ছোট বেলা থেকে আমার শুধু রোগ হতো। ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড কি নেই। কতো যে কষ্টে রেখেছি বাবা মা কে।বড় হওয়ার পর ও আমরা ঘুমিয়ে গেলে মশারি টানিয়ে দিতেন । এক গ্লাস দুধ নিয়ে আমাদের পিছনে পিছনে ঘুরতেন ।আমার একটা খারাপ অভ্যাস আছে গ্লাসে দুধ দিয়ে গেলে সারা রাত চলে যেতো আমি অংক করতে করতে ঘুমিয়ে যেতাম । এই জন্য গরম দুধ যতক্ষণ না ঠাণ্ডা হয় দাড়িয়ে থেকে খাইয়ে যেতেন । কারন প্রায় দিন বাসি মশা মাছি সহ গ্লাসের দুধ ফেলতে হত ।
স্কুলে পরিক্ষা গুলো বাবার হাত ধরে দিতে যেতাম।পরিক্ষা আর পজিশন নিয়ে এতো বেশি সিরিয়াস থাকতাম। সে প্রভাব আব্বার উপরেও পড়তো।আমার বান্ধবিদের মা বাবারা ও আব্বার বন্ধুর মতো ছিলেন । সবার কি যে সন্তানদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা । মা বাবাদের সেই মূল্যবোধ আর ভালোবাসা গুলো ছিল বলেই আমাদের সাথে সবাই আজ প্রতিষ্ঠিত যার যার অবস্থানে থেকে ।
আমার একটা বদ অভ্যাস আছে । ভাত খেতে বসলে রাজ্যের সব চিন্তা মাথায় ঘুরে । খাওয়া দাওয়ার পর ও পানি না খেয়ে প্লেট নিয়ে বসে থাকা । খুব বাজে অভ্যাস । আমার আব্বা এই অভ্যাস দেখে দেখে ক্লান্ত ।আমার খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকতো ।
নিজের ভাত খাওয়ার পর এক গ্লাস পানি আমার সামনে ঢেলে রাখতেন । সব সময় ।
এখন নিজের এই জীবনে সময় ফুরালে ও আমার । না ফুরালে ও আমার । চুপ চাপ এক গ্লাস পানি ঢেলে রাখার কেউ নেই । যা শুধুই বাবারা পারে ।
আব্বার অনেক স্বপ্ন ছিল আমি যেন আইন বিষয় নিয়ে পড়ি।কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলাম অর্থনীতিতে।
বিষয় পরিবর্তন করা যেতো। কিন্তু আমি আর করিনি। আব্বা নতুন স্বপ্ন মনে বোপন করে দিলেন।আমি যেন পিএইচডি করি। কিন্তু কোন বাস্তবতার কারনে নাকি নেহায়েত ভাগ্য আজ ও জানি না । আমার আইন বিষয়ে পড়া হয়নি । আর পিএইচডি ও করতে পারিনি । মানুষের জীবনে কিছু ব্যাখ্যাহীন অমোখ নিয়তি থাকে । ইচ্ছে করলেই মানুষ তাঁর নিজের অস্তিত্বের তাগিদে সেই নিয়তির বিপরীতে দাড়াতে পারে না ।
কিন্তু আব্বার সেই স্বপ্ন পূরন করেছে আমার একমাত্র ছোট ভাই।

সবাইকে একদিন একটা কঠিন সুন্দর সিদ্ধান্ত নিতে হয় ।
কোন এক সময় আমার স্বপ্ন আর ভাগ্যের কাছে নিজের একান্ত চিন্তা ভাবনা গুলো অসহায় ছিল । কঠিনের চেয়েও কঠিন একটা সিদ্ধান্ত ঝোঁকের বসে নিয়ে ফেলে ছিলাম । আব্বা শুধু ভয়াবহ বাস্তবতা গুলোর কথা আমাকে তুলে ধরেছিলেন । কিন্তু আমার সিদ্ধান্ত কে অমর্যাদা করেননি কখন ও। তাই একা গভীর নিঃসঙ্গ দ্বীপে বা অজস্র জটিল মানবের ভিড়েও আমি নিজেকে নিরাপদ সুখী ভাবতে পারি। আমি জানতাম আমার মাথার উপর আব্বা নামের সুবিশাল আকাশটা আছে। আমি কোথাও নিজেকে হারাতে পারবো না।তিনি তার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আমাকে আগলে রাখবেন।
সৃষ্টিকর্তা যেন আমার আব্বাকে যেন শত বর্ষ হায়াত দান করেন।

বাবা নিয়ে এতো স্মৃতি চোখ ঝাপসা করে দিচ্ছে।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৫

বলেছেন: [img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/Leaf/Leaf-1536344077-da8295c_xlarge.jpg

পিতা-মাতা সন্তানের জন্য সব চেয়ে বড় মূল্যবান সম্পদ। তাদের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টিতে সন্তানের জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারণ হয়। সহীহ বুখারী

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫০

কাউছার হোসেন বলেছেন: ভালো থাকোক পৃথিবীর সকল বাবা।

পোস্টটি অনেক ভালো লাগলো।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৪২

দপ্তরবিহীন মন্ত্রী বলেছেন: বাবাকে নিয়ে লেখা ভালো লেগেছে।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৪| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমিও আব্বাকে আব্বা বলে ডাকি।
বাবাকে নিয়ে সুন্দর লিখেছেন।
আসলে সব বাবাদের গল্প একই রকম।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৫| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৭

প্রথমকথা বলেছেন: খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন, সত্যি বাবারা অনেক অনেক অসাধারণ হয়। আমারও বাবাকে খুব মনে পড়ে।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৬| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪২

আহমেদ জী এস বলেছেন: নুরুন নাহার লিলিয়ান ,




বাবার হাতের একগ্লাস পানি অমৃত সমান ।

বাবাকে নিয়ে এমন লেখা হয়তো অনেকের বাবার সাথেই মিলে যাবে । প্রার্থনা,এমন বাবারা যেন সন্তানের সাফল্য দেখে আত্মতৃপ্তি নিয়ে শতবর্ষ পার করে দিতে পারেন ।


০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ । পৃথিবীর সকল বাবারা ভাল থাকুক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.