নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস"মারিজুয়ানা " পর্ব-২৭-নুরুন নাহার লিলিয়ান

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:৩৯



#উপন্যাস" মারিজুয়ানা" পর্ব ২৭
#নুরুন নাহার লিলিয়ান

রাজিবের সাথে টনির বেশ ভাল সময় কাটছিল । তাদের দুজনকেই জাপানি ভাষায় ফাউন্ডেশন কোর্স করতে হচ্ছে । খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রাজিব জাপানি ভাষাটা নিজের করে নিয়েছে । প্রতি শুক্রবার গুলশানের একটি ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাবে জাপানি ভাষা শিখতে যায় ।

খুব অল্প সময়ের মধ্যে দুজনেই জাপানি ভাষায় বেশ ভাল যোগাযোগ করতে শিখে গিয়েছে । অনেক দিন ধরে টনি জাপানের বিশ্ব বিদ্যালয় গুলোতে মাস্টার্সের জন্য চেষ্টা করছিল ।গত সপ্তাহে জাপানের একটি বিশ্ব বিদ্যালয়ে মাস্টার্স কোর্সে টনি সুযোগ পেয়ে যায় ।সে মনে মনে শফিক কে তেমন একটা পছন্দ করে না । তাই চেষ্টা করছিল ভাল কোন সুযোগের । আর সেটা সে পেয়ে ও যায় ।

অন্য দিকে রাজিব ও একটি বেসরকারি সফটওয়্যার ফার্মে চাকরি পায় । কয়েক মাসের মধ্যে দুই তরুনের ভাগ্যের বিশাল পরিবর্তন হয়ে গেল ।মারিজুয়ানার নিঃসঙ্গ জীবনে এই দুই তরুন ছিল নির্ভরতার বট গাছ । দুজনকে দুই গন্তব্যে যেতেই হবে জীবন জীবীকার প্রয়োজনে ।কিন্তু তাঁর কি হবে !
খুব অল্প পড়াশুনা । এই অল্প পড়াশুনা দিয়ে এই নিষ্ঠুর ঢাকা শহরে কখন ও ডেস্ক জব পাওয়া যায়না । অন্য কিছু করার মতো স্বাধীনতা ও নেই ।যে কোন পদক্ষেপে শফিকের অনুমতি নিতে হয় ।বাসা থেকে ইচ্ছে করলেই যখন তখন বের হওয়া যায় না ।সব কিছুতেই সিসি ক্যামেরার মতো শফিকের নজরদারি।

রাজিব বোনকে কম্পিউটারের বেসিক বিষয় গুলো আগেই শিখিয়েছে । নিজের চাকরি হওয়ার পর থেকে মারিজুয়ানা কে ফ্রি লান্সিং এর ধারনা দেয় । এই বিষয়ে কাজ করার উৎসাহ দেয় । বিভিন্ন কাজের উপর ইউটিউব এ অনেক অনেক লেসন আছে । মারিজুয়ানা ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা বাড়াতে ইউটিউব আর গুগল নিয়মিত অনুশীলন করতে থাকে ।

ছোট ভাই রাজিবের পরামর্শে ইউটিউবে একটি রান্নার রেসিপি চ্যানেল খুলে ।নিজের সৃষ্টিশীল ধারনা এবং জ্ঞান গুলোকে আর ও পরিশীলিত করে তুলতে নিয়মিত চর্চা করতে থাকে । অনেক সময়ে শফিক ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে থাকে ।সে সময় মারিজুয়ানা অনেকটা সময় নিজের করে পায় । ইদানিং ডঃ নেশামের সাথে তাঁর একটা রিসার্চ কাজ শুরু হয়েছে । এই কাজের জন্য শফিক কে প্রায় কয়েক মাস পর পর নেশামের সাথে জাপান যেতে হয় ।

এই সময় গুলো মারিজুয়ানা একদম অবহেলা করে না । নিজের সৃষ্টিশীল শক্তিকে জাগ্রত করার চেষ্টা করে ।নিজের মুখের বাংলা এবং ইংরেজি ভাষা বেশি বেশি অনুশীলন করে ।নতুন নতুন রান্নার রেসিপি তৈরি করে । বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের রান্নার প্রতিযোগিতা গুলো দেখে । নিজেকে খুব ধৈর্যের সাথে ধীরে ধীরে তৈরি করে ।
যেভাবেই হোক তাঁর জীবন কে ঘিরে শফিকের তৈরি করা যে দুর্বোধ্য দেয়াল তা ভাঙ্গতেই হবে । সেই কঠিন দেয়াল অতিক্রম করে নিজের জীবন খুঁজে নিতে হবে । শফিকের কাছে তাঁর জীবনটা থাকলে ও সেই জীবনটায় প্রান নেই ।

শফিক কখন ও চায় না মারিজুয়ানা ঘরের বাইরে যাক । সে সব সময় তাকে তাঁর নিজের অধীনে রাখত ।নিজের জীবনের প্রয়োজনে কখন ও যে মারিজুয়ানা তাঁর সাথে যুদ্ধে জড়ায়নি তা নয় । তাদের নিয়মিতই মতামত পার্থক্যে যুদ্ধ হয়। ব্যক্তিত্বের সংঘাত হয় । আর এমন করেই ধানমন্ডির উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল । কিন্তু ক্লাসের সময় হলেই শফিক নানা অজুহাতে তাকে ক্লাস করতে দিত না । শুধু ক্লাস নয় ।

যে কোন কিছুতে মারিজুয়ানা যেন নারী অধিকারের শক্তি খাটাতে না পারে সেদিকে ভীষণ নজর রাখে । শফিক কে ম্যানেজ করা ভীষণ কঠিন । তাই নিজের ইচ্ছে গুলোর কিংবা স্বাধীনতাটুকু লুকিয়ে উপভোগ করতে হয় ।অথচ শফিকএর হাতে সব সময় বই থাকে । নিয়মিত পত্রিকা পড়া । দেশ -বিদেশের খবর রাখা সবই করে । শুধু মারিজুয়ানার ক্ষেত্রেই নিয়ম আলাদা ।

মাঝে মাঝে মারিজুয়ানা ধৈর্য হারা হয়ে যায় । ক্লান্ত হয়ে পড়ে । আবার নিজেকে নিজে টেনে আনে জীবনের কাছে । জীবনটাকে মেলে ধরে আলোর পথে ।নিজেই নিজের শক্তি হয় ।কখন ও জীবন পৃথিবীর সকল সৌভাগ্যের বিপরীতে থাকে । আর মানুষের দায়িত্ব একটু একটু যুদ্ধ জয় করে জীবনকে সেই সৌভাগ্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া ।কম বেশি সব শ্রেণীর মানুষের কাছেই জীবন অভিন্ন রহস্যের নাম ।সবাইকে সেই অনিশ্চিত রহস্যময় পথে চলতে হয় আপন বুদ্ধিবৃত্তিক সচেতনতায় ।

টনি চলে যাওয়ার পর শফিক দুইটা প্রজেক্ট ছোট করে এনেছে ।তাছাড়া এখন তাকে জাপানের বিভিন্ন কাজে তাকে ব্যস্ত থাকতে হয় । রাজিব ও খুব কম সময় পায়। নাতালি চলে যাওয়ার পর শফিকের সাথে মারিজুয়ানার ভাল সময় যাচ্ছিল । বলা যায় কম সাংসারিক সংঘাত হয় । শফিক ও তেমন একটা সময় পায় না ।

শেষ বার জাপান থেকে আসার পর মারিজুয়ানার প্রতি সে অনেকটাই মনযোগী ছিল । একজন পুরুষের ঘরে থাকা নারীটির প্রতি যেমন অধিকার থাকে ।ঠিক সে অধিকারের সব টুকুই যেন শফিক মারিজুয়ানার কাছ থেকে আদায় করে নিতে জানে । তবুও সব ভুলে মারিজুয়ানা স্বামীর কাছ থেকে একটু মমতা আর ভালবাসার আশায় সব করতে রাজি । যখন শফিক বেশি রেড ওয়াইন খেয়ে ফেলে কিংবা মারিজুয়ানা টানে । যখন একদম বেসামাল হয়ে যায় । তখন যেন শফিকের পাশে একমাত্র মারিজুয়ানাই থাকে । তাঁর হাতটা ধরে রাখার মতো আর কেউ থাকে না মারিজুয়ানা ছাড়া ।

রাজিব আর টনি চলে যাওয়ার পর বাসাটায় অন্য স্টাফরা ও তেমন আসে না ।কয়েকটা মাস বাসাটা কিছুটা নিরিবিলিই আছে । শফিকের মন মেজাজ ও বেশ ভাল আছে ।নাতালি চলে যাওয়ার পর বেশ কিছুদিন শফিক একটু চুপচাপ ছিল । এরপর কাজের চাপ আর ব্যক্তিগত জীবনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।নাতালির এই বাসায় থাকা নিয়ে নিয়মিত মারিজুয়ানার সাথে ঝগড়া লাগত । এখন নাতালি নেই । শফিক প্রথম দিকে মিস করলে ও এখন আবার কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে । সংসারে শুধু মারিজুয়ানা কে নিয়েই তাঁর ব্যস্ত জীবন চলছে ।

শফিক আর মারিজুয়ানা বেশ কয়েকটা দিন খুব কাছাকাছি ছিল ।খুব কাছাকাছি থাকলেও শফিকের ভালবাসায় যেমন বিশ্বাস নেই ,তেমনি নির্ভরতা ও নেই । যা আছে হয়তো মায়া , মমতা কিংবা অভ্যস্থতা । ভালবাসাহীন দাম্পত্যে প্রেম অনেক দূরে অবস্থান করে । এক সাথে থাকার জন্য যা কাজ করে তা হল অভ্যস্থতা । জীবনের নিজস্ব প্রয়োজন ।কিংবা ব্যক্তি মানুষগুলোর অসহায়ত্ব ।

মারিজুয়ানার যেমন অনেক ধরনের শারীরিক অসুস্থতা আছে । তেমনি শফিকের ও আছে শারীরিক অসহায়ত্ব ।আর এই সব শারীরিক অসহায়ত্ব গুলোই মানুষের এমনতর ভেঙ্গে যাওয়া সম্পর্ক গুলো টিকিয়ে রাখে । মরে যেতে যেতে ও টিকে থাকে ।

ভালোবাসা না থাকুক । দুজনের জন্য দুজনের বেঁচে থাকার প্রয়োজন তো আছে ।সেই প্রয়োজনে দুজন মানুষ এক সাথে কাটিয়ে সারাটা জীবন ।

সেদিন সন্ধ্যের আগে শফিক অফিস রুম থেকে বের হয়েই এক কাপ ব্লাক কফি চাইল । মারিজুয়ানা শফিকেরটার সাথে নিজের জন্যও এক কাপ কফি বানাল । শফিক কে কফি দিয়ে এসে নিজের কফিটা নিয়ে বারান্দায় দাঁড়াল । চারিদিকে শীতের আগমনী বার্তা ।
কিন্তু এই কালো ধোঁয়ার শহর ঢাকায় একটু দেরিতেই শীত আসে ।
বাইরের আকাশটা ও কেমন মারিজুয়ানার মনের মতো ক্লান্ত আর অবসন্ন ।
কেন যেন মনের বিষণ্ণ গভীর সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাসে চোখের নোনা জলের ঢেউ লাগে । বেশ অনেকটা সময় সে বারান্দায় কাটায় । হঠাৎ শফিক খুব কাছে এসে দাঁড়ায় । পেছন থেকে মারিজুয়ানার দুই গালে ছাই ঘষে দেয় ।
শফিক ছাই জাপানে সাপ্লাই দেয় । জাপানের ফায়ার ওয়ার্কস এর আতশ বাতি তৈরিতে কাজে লাগে । স্যাম্পল হিসেবে অফিস রুমে কিছু ছাই ছিল । সেই ছাই এনে মুখে আর মাথায় ঢেলে দেয় ।
অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন । শফিকের মুখ থেকে বিশ্রী রকমের মাতাল করা মারিজুয়ানার গন্ধ ।শফিক এমন কোন মাদক নেই যা সে সেবন করেনি । তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় মারিজুয়ানা । এটা খাওয়ার পর সে অন্য এক বিকারগ্রস্ত মানুষে পরিনত হয় । শফিকের পাগলামি আর মুখের বিশ্রী মাতাল গন্ধটা যেন মারিজুয়ানাকে ও পাগল করে তুলেছে।

তবু ও শফিকের এমন আপন করে কাছে টানাকে মারিজুয়ানা যেন না করতে পারছে না । বরং নতুন বিস্ময়ে অভিবাদনই জানাচ্ছে । দীর্ঘ দাম্পত্যের একান্ত সম্পর্কে শফিকের সে অনেক বিচিত্র রূপ দেখেছে । আজ যেন অন্য কোন শফিক ।অন্য কেউ ।

গোধূলি শেষে আকাশ ঢেকেছে রাতের আঁধারে । চিরন্তন সত্য সুখ -দুখের সংসারে স্বামী স্ত্রীর অন্তিম আদিমতায় তারা জীবন খুঁজে ফিরে ।আর বাইরের অন্ধকার আকাশের মেঘ গুলো ছুঁটে চলে জীবন রহস্যের আর ও গভীরে ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৮

সৈয়দ ইসলাম বলেছেন:
এখন ঘুমাই, অফিস থেকে আসছি তো, ঘুম থেকে উঠে আপনারটাই প্রথম পড়বো বলে দিলাম। পূর্বের পর্ব ভুলে গেছি :( (অনেকদিন হয়েগেছে তো তাই!) বই দ্রুত বের করার ব্যবস্থা করুন, বইমেলা খুব দূরে না!

সবসময়ের মত ভালই লিখবেন; এটাই আমার বিশ্বাস।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:১৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: জি ঘুমান । ধন্যবাদ ।

২| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৬

তারেক ফাহিম বলেছেন: পূর্বের পর্বে কোন পর্যন্ত জানি আসলাম :`>

মনে হয় পূর্বের পর্বও মিস করছি।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: সমস্যা নেই বই তো বইমেলায় আসছে ভাই । ধন্যবাদ ।

৩| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৪১

সনেট কবি বলেছেন: কিছুটা পড়লাম।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৫

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ধন্যবাদ ।

৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:১২

রাজীব নুর বলেছেন: আমার নামে নাম। আসলে নিজের নাম কোথাও দেখলে ভালো লাগে।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৪

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আপনি এই ধারাবাহিকটির নিয়মিত পাঠক । তাই ভাল একটি চরিত্রের নামে আপনাকে রেখে দিলাম । ইতিহাস হয়ে যাবে । আমাকে নিয়মিত উৎসাহ দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.