নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস"মারিজুয়ানা " পর্ব-২৮ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৮



#উপন্যাস"মারিজুয়ানা" পর্ব ২৮
#নুরুন নাহার লিলিয়ান

নিভৃতে মারিজুয়ানার নিজের সৃষ্টিশীল কাজ গুলোর সাথে ভালই বন্ধুত্ব হয়।নতুন নতুন কাজ করা তাঁর নেশায় পরিনত হয় । ইদানিং যেন তাঁর শফিকের প্রতি রাগ ক্ষোভ আর অভিমানের কোন অভিযোগ নেই । পুরোটা মনোযোগ যেন তাঁর কাজের মধ্যে ।

অনলাইনে যতো রকম রান্না বিষয়ক দেশি বিদেশি চ্যানেল আছে দেখতে থাকে । একটা সময়ে মারিজুয়ানা হিন্দি চ্যানেল গুলোর সিরিয়াল দেখতো আর নিরবে চোখের পানি ফেলতো ।নিজের জন্য কিংবা পরিবারের জন্য কিছু একটা করার কোন পথই সে খুঁজে পেতনা ।

আর এখন তার পেছনে তাকানোর সময় নেই । বিভিন্ন ম্যাগাজিন এবং পত্রিকা গুলোর রান্নার পাতায় রেসিপি পাঠায় ।
কিছু না বুঝলে গুঞ্জন কে মেসেঞ্জারে কল দিয়ে জেনে নেয় । গুঞ্জন ও আন্তরিকতার সাথে মারিজুয়ানাকে মানসিক ভাবে সাহায্য করে ।গুঞ্জনের যতো পরিচিত আছে সব জায়গায় মারিজুয়ানার সৃষ্টিশীল কাজ গুলোর কথা প্রচার করে ।

যদিও একটা অদ্ভুত কথা প্রচলিত আছে "নারীরাই নারীর ক্ষতির কারন ।" অথচ পৃথিবীতে যে কোন অসহায় নারী চোখের পানি ফেললে সবার আগে আরেক জন নারীই এগিয়ে আসে তাঁর চোখের পানি মুছে দিতে ।গুঞ্জন ও চায় মারিজুয়ানার চোখের পানি মুছে দিতে । তাই তার ব্যক্তিগত ওয়েব সাইটেও মারিজুয়ানার কাজ গুলো তুলে ধরে । গুঞ্জনের স্বামী ডঃ নেশাম অনেক ব্যস্ত থাকায় অবসরে মারিজুয়ানার সুখ দুঃখ শোনা কিংবা তার পাশে থাকার মধ্যে ও এক ধরনের শান্তি খুঁজে পায় ।

সব কিছু সুন্দর ভাবেই চলছিল । তবে গুঞ্জন মা হওয়ার পর থেকে মারিজুয়ানার ভেতরেও মাতৃত্ব ভীষণ করে জাগ্রত হয় । শফিক কে বার বার বলে এই বিষয়ে রাজি করানো যায় না । মারিজুয়ানার দুই এক বার বাচ্চা কনসিভ করলে ও তা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল । গুঞ্জনের কাছে গেলেই মারিজুয়ানার ভেতরের মাতৃত্ব আর সন্তান লাভের আকাংখা যেন জলোচ্ছ্বাসের মতো জেগে উঠে ।

শফিক কে বুঝাতে গেলে সে কিছুতেই গুরুত্ব দেয় না । তাঁর নিজের একটা অভিমত হল এখন বাচ্চা লালন পালন করার মতো সময় এবং বয়স নেই । তাঁর আগের বিবাহিত জীবনে দুই ঘরে দুই ছেলে মেয়ে আছে । তাদের মা হওয়ার জন্য মারিজুয়ানা কে বলে ।তার কাছে সব কিছু তো ভালই চলছে । শফিকের বয়স পঞ্চাশের উপরে । মাদকাসক্ত এবং অন্য সব শারীরিক জটিলতার কারনে শফিকের বাচ্চা উৎপাদন করার ক্ষমতা কমে গেছে। ভাল চিকিৎসা ছাড়া এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব না ।

কিন্তু নিজের ভেতর নিজ অস্তিত্বের আরেকটা অংশকে মারিজুয়ানা ভীষণ ভাবে চায় । অনেক আপন করে চায় । যাকে ঘিরে মারিজুয়ানা নতুন করে বাঁচতে পারে ।বেঁচে থাকার অবলম্বনটুকু সে শফিকের কাছে ভিক্ষে চায়। কোন আবেগের জায়গা যেন শফিকের কাছে নেই ।কোন কিছুতেই যেন শফিকের মন গলে না । পৃথিবী নড়ে গেলে ও শফিক তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরবে না ।

শফিকের যেমন শারীরিক অক্ষমতা আছে তেমনি নতুন করে বাবা হওয়ার ইচ্ছে ও নেই । শফিক যখন শুধুই নিজেরটা ভেবে স্বেচ্ছাচারিতা করে মারিজুয়ানার তখন বুকের ভেতরটা চৌচির হয়ে যায় । ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাস আসে দু'চোখ ছাপিয়ে। আর কতোটা কষ্ট সঞ্চারনশীল হলে সে মানুষ হিসেবে মর্যাদা পাবে । আর কতোটা সময় ধরে এক মহাসাগর নীল কষ্ট বুকে চেপে রাখলে সে বেঁচে থাকতে পারবে । প্রায়ই একদম চুপ হয়ে যায় মারিজুয়ানা ।

কখনও কখন ও মারিজুয়ানা যখন একদম চুপ হয়ে যায় শফিক সেটা খেয়াল করে। মাঝে মাঝে তখন কিছুটা দায়িত্বশীল ও হয় । তবে সব সময় না । একজন উচ্চ পর্যায়ের মাতালরা যেমন হয় । সমাজ কে দেখাতে ও তারা বেশ ভাল মানুষের রূপ ধারন করতে পারে।

গুঞ্জন আর নেশামের বাচ্চা হওয়ার পর থেকে নিয়মিত মারিজুয়ানা অনুনয় বিনয় করে শফিক কে রাজি করানোর চেষ্টা করে ।সে কিছুতেই ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না । শফিকের মানসিকতা বুঝা অনেক কঠিন । কারন সে কোন কথায় বা কাজে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া করবে তা কারও পক্ষে বুঝা সম্ভব না । মাতাল লোকের সাথে সংসার করা আর জীবিত ফাঁসির রশিতে ঝুলে থাকা একই কথা । না পারা যায় জীবন থেকে পালিয়ে যেতে । না জীবন কে মেনে নেওয়া যায় ।

বর্তমান পৃথিবীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মোট জনসংখ্যার ৮-১০ ভাগ দম্পতি কোনো না কোনো ভাবে বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছে । বাংলাদেশে যদি ও এর সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হয় এই সংখ্যা এমনই হবে ।
বন্ধ্যাত্বের কারণগুলো বিশ্লেষণ করে জানা যায় ৪০% ক্ষেত্রে স্ত্রী, ৩৫-৪০% ক্ষেত্রে স্বামী এবং ১০-২০% ক্ষেত্রে উভয়েরই সমস্যার জন্য গর্ভধারণ হয় না। বাকি ১০% ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্বের কোনো সঠিক কারণ কারও জানা নেই ।তাই নারী পুরুষ দুজনের শারীরিক সব ধরনের পরীক্ষা অত্যাবশ্যক ।

অনেক অনুরোধের পর মারিজুয়ানা গত সপ্তাহে শফিককে নিয়ে ধানমন্ডির একটা বিখ্যাত ক্লিনিকে যায় । খুব ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করেই ডাঃ কানিজ ফাতিমা তাদের দুজনের চেক আপ করেন । বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দেয় ।

পুরুষের জন্য সিমেন পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। সিমেন যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে স্বামীর কোনো সমস্যা নেই ।প্রকৃত পক্ষে সিমেনে উপযুক্ত পরিমাণে গতিশীল স্পার্মের অভাবই পুরুষের বন্ধ্যাত্বের প্রধান কারণ। যদি সিমেন পরীক্ষায় ইনফেকশন থাকে তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা দরকার হয়। এছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল হতে বিরত থাকা, ওজন কমানো, ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ রাখা ইত্যাদি খুব জরুরি ।

দুজনের বয়স বেড়ে যাওয়া ছাড়া ও দুজনের শরীর অস্বাভাবিক মোটা হলে মানসিক কারণে শারীরিক মিলনে লজ্জা বা ভয় বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। বৈবাহিক জীবনে অশান্তি বা দ্বন্দ্বের জন্য শারীরিক সম্পর্ক অনিয়মিত বা সময়মতো না হলে গর্ভসঞ্চার নাও হতে পারে।
সর্বোপরি সুস্থ জীবন-যাপন বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
পৃথিবীতে নতুন নতুন সমস্যা যেমন আছে । তেমনি বিজ্ঞানের আবিস্কারও পিছিয়ে নেই । ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে দুজনেই অনেক কিছু জানতে পারল ।
সেই সাথে শফিকের কিছু শারীরিক সমস্যা ও ধরা পড়ল । অতিরিক্ত মাদক সেবনে শফিকের স্পার্মে সমস্যা পাওয়া যায় । ডাক্তার তাদের বাচ্চা নেওয়ার ব্যাপারে বেশ কিছু পরামর্শ দিলেন ।

স্পার্মে শুক্রাণুর সংখ্যা তুলনামুলক কম থাকলে ওটও একটি প্রচলিত পদ্ধতি আছে। তবে এই পদ্ধতিতে ডিম্বাণু নিঃসরণের সময়ে জরায়ুর ভেতরে স্বামীর বীর্য বিশেষভাবে প্রসেসিংয়ের পর সূক্ষ্ম ক্যাথেটারের মাধ্যমে দিয়ে দেয়া হয়।

তবে শুক্রাণুর সংখ্যা ৫ মিলিয়নের নিচে বা শুক্রাণুর গঠনগত ত্রুটি থাকলে বা নড়াচড়া কম থাকলে ইকসি (ICSI) দরকার হয়। ইকসি পদ্ধতিতে একটি ডিম্বাণুর মধ্যে একটি সুস্থ শুক্রাণু ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করিয়ে ডিম্বাণু নিষিক্ত করা হয়। যেসব পুরুষের ক্ষেত্রে বীর্যবাহী নালিতে বাধা থাকে তাদের বেলায় সার্জিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে (MESA, TESA, PESA-এর মাধ্যমে) শুক্রাণু সংগ্রহ করে ইকসি করা যায়। পুরুষের বন্ধ্যাত্বের ক্ষেত্রে ইকসি অত্যন্ত উন্নত ধরনের চিকিৎসা এবং এই চিকিৎসাব্যবস্থা সব সেন্টারে থাকে না।

সব শেষে ডাক্তার দুজনের মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক দূরত্ব কমিয়ে নিজেদের লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করতে বলে ।
অথচ ক্লিনিক থেকে বের হয়েই শফিক ঝগড়া শুরু করে দেয় ।কারন শফিক কোনভাবেই বাচ্চা জন্মদানের এই নতুন জটিলতার মুখোমুখি হতে চায় না । সে মারিজুয়ানাকে কঠিন কণ্ঠে বলে দেয় মা হতে চাইলে তাঁর আগের ঘরের সন্তানদের মা হতে হবে । তা না হলে শফিকের সাথে তাঁর সংসার করার চিন্তা বাদ দিতে পারে ।

সারা রাস্তা সে শফিকের পাথর শব্দে ক্ষত বিক্ষত হয় । হৃদয়ে রক্ত ক্ষরণ হলে ও কোন একটি শব্দ ও মারিজুয়ানার মুখ দিয়ে বের হয় না। একদম নিস্তব্ধ হয়ে যায়।

বাসায় ফিরে নির্বাক নিজের বেড রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুয়ে থাকে । আর শফিক নিজের অফিস রুমে ঢুকে নিজের পছন্দের মাদকে নাক ডুবায় ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: অন্যান্য পর্বের চেয়ে এই পর্ব টা একেবারে অন্য রকম। পর্ব টি আমার কাছে বেশ লেগেছে।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:২৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ ভাই ।

২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:২৬

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: ভালো লেগেছে।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:২৯

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ।

৩| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:৫১

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: আপু আন্তরিকভাবে অনেক খুশি হতাম যদি আপনি একটি বার আমার ব্লগ ঘুরে আসতেন। ধন্যবাদ।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৪১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অবশ্যই আপনার ব্লগে আসছি। ধন্যবাদ ।

৪| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৭

সনেট কবি বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৪১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.