নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাসঃ গোপনে সে আমায় ভালোবাসে-পর্ব-২-নুরুন নাহার লিলিয়ান

২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:০৬




আসাদ কিছুক্ষণ আগে আমার ক্লাস নাইনে পড়া মেয়েটাকে বেধম পিটিয়েছে। তাঁর অবশ্য শাসন করার যৌক্তিক কারন আছে৷ সে ও তো মেয়েটার বাবা!
কিন্তু ক্লাস নাইনে পড়া মেয়েটাকে এমন করে পেটানো কি ঠিক হয়েছে?

আমি নিজেও আসাদের হাতে অনেক মার খেয়েছি। সেই বিশ বছর আগে আমি আসাদের কব্জায় বন্দি পাখি। যখন যেমন মনে হয়েছে আমার সাথে ঠিক তা তা করেছে। যদি সবটা ডায়েরির পাতায় লিখতে যাই সাদা পাতা গুলো রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে। উফ রক্তের কথা মনে পড়ল।

আমার মেয়ে নুশমার পিরিয়ড চলছে৷ এই অবস্থায় কেউ গায়ে হাত তুলে? আমার স্বামী আসাদ তুলতে পারে। সে যখন রেগে যায় তখন অন্য একটা দানব মানুষে পরিনত হয়৷ হাতের সামনে যা পায় তা দিয়েই পেটায়।
আমাকে কারনে অকারনে অনেক মেরেছে।খুব ছোটবেলা বিয়ে হয়েছিল তো! স্বামীর হাতে মার খেয়েই বড় হয়েছি।

আসাদ শুধু আমার পেট বাঁচিয়েছে। কোনদিন আমার শরীর বুঝেনি। মন বুঝেনি।বিশ বছর আগে অল্প বয়সে বিয়ে করে সংসারি হয়ে গেলেও সেসময়ে অনেক কিছুই বুঝতাম না। আমার মেয়েটা নুশমা ক্লাস নাইনেই কতো কিছু জানে। কতো কিছু বুঝে।

দিনের পর দিন আমরা একই ছাদের নিচে বসবাস করি। রাতের পর রাত আমরা একই বিছানায়।
অথচ পাশাপাশি শুয়ে থাকি শরীরে শরীর ছুঁয়ে থেকেও বিচ্ছেদ রঙে স্বপ্ন আঁকি।

যা বলছিলাম আসাদ খুব নির্বিকার স্বার্থপর মানুষ। সমাজে তাঁর ভাল অবস্থান আছে। লোকজন তাঁকে সৎ ও ধর্মভীরু মুসলমান হিসেবেই জানে। বাইরের অবয়বে পোশাক, চাল চলনে সে বেশ ভদ্র ও বিনয়ী।
অথচ দিন শেষে আমার মতো নিরীহ বউও পেটায়। যখন নির্বিকার ভাবে পেটায় তখন তাঁর এমন মানসিকতা থাকে যেন কিছুই হয়নি। এটাই স্বাভাবিক।

একবার মনে আছে আমার কি যেন ভুল হয়ে গিয়েছিল। ঠিক মাগরিব নামাজের পর। ওহ। হ্যাঁ মনে পড়েছে খাবার নিয়ে খোটা দিয়েছিল।

আমি দুধ চা খেতে খুব পছন্দ করতাম৷চুলায় চা বসিয়ে দিয়ে মাগরিব নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। এই ফাঁকে আমার চা পাতিল সহ পুড়ে প্রায় ছাই। আসাদ সে কি ধমক আমাকে। তখন মনেহয় বছর তিনেক হবে আমার আর আসাদের সংসার। আমার খাবার দাবার বেশি অপচয় করি। আলুর খোসা পাতলা করে ছাড়াতে পারিনা, তরকারিতে লবন বেশি দেই, কাঁচা বাজার আনলে ফ্রিজে সহজে রাখিনা, অযথা রান্না করা খাবার ফেলে দেই। বিনা কারনে খাবার নষ্ট করি।
আসাদ নাকি বাজার করে কুলাতে পারেনা৷ আমি নাকি এতো খাবার নষ্ট করি।

আমার বাবা মা ধরে গালি দিয়েছিল। ঠিক মনে পড়ছে না৷ তবে এটা মনে আছে। আসাদ এটা বলেছিল... ঘরে বসে শুয়ে শুয়ে খাবার পাও তো। তোমার বাবা তো আর বাজার পাঠায় না। পাঠালে বুঝতে বাজারের মর্ম।
আমারও রাগ উঠে গেলো।আমি পোড়া গরম পাতিলটা চুলা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিলাম। মুহুর্তেই আসাদ এসে আমার চুলের মুঠি ধরে পেটাতে লাগল। একটানা দশ পনেরোটা চড় আর লাথি৷ আমি হাউমাউ করে কেঁদে ছিলাম৷

আমি যতো জোরে কাঁদি আসাদ আমাকে আরো জোরে মারে৷ বাসায় একটা স্টিলের স্কেল ছিল।
সেই স্কেলটা তাঁর ডিজাইনের কাজে লাগতো। সেই সাথে আমাকে পেটাতেও পারতো। আমি প্রায়ই স্টিলের স্কেল গুলো নদীতে ফেলে দিতাম।

ওহ। সেসময় নদীর পাশেই আমাদের সংসার শুরু। আমার আর আসাদের প্রথম সংসার শুরু হয় মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের ঘোড় দৌড় নামের এলাকায় এলজিআরডির সরকারি বাসায়। সেখানে দু'তলা করে ষোলটা বিল্ডিং ছিল। পরবর্তীতে আটটা বিল্ডিং পদ্মায় বুকে বিলীন হয়ে। আমি নিজের চোখে বিলীন হতে দেখেছি।

আমাদের বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে পদ্মার ঢেউ দেখা যেতো।দুপুরে ছাদে কাপড় রোদ দিতে গেলে সেখানে মাঝিদের নানা রকম কাজকর্ম চোখে পড়তো। কেউ কেউ নৌকার ভেতরে প্রেম করতো সেটাও চোখে পড়তো। সে প্রেম দেখে দেখে প্রহর কেটে যেতো।
আমার দু’চোখে তখন পদ্মার জলোচ্ছ্বাসে এসে আঘাত করে যেতো।

আমার মতো সুন্দর একটা মেয়ের জীবনে এমন উথাল পাথাল প্রেম থাকার কথা৷ অথচ সে জীবনে শুধু অবহেলা আর তিরস্কার পেয়ে যাচ্ছে। আমি নিচে গেলে নদীতে স্কেল ফেলতাম আর অভিনন্দন কে ভাবতাম।
আসলে অভিনন্দন আমার ভাবনায় সব সময় মিশে থাকে। সে যে বুকের গভীর প্রকোষঠে নিভৃতে বসবাস করে। আমার সমগ্র শরীরে অভিনন্দনের গায়ের রক্ত ও মিশে আছে।

আমি তখন মুন্সিগঞ্জ সরকারি হরগঙগা কলেজে ভর্তি হয়েছি। বাবা মায়ের মধ্যে শীতল ঝগড়া। কোন ভাবেই বনিবনা হচ্ছে না। মা কে কথায় কথায় দাদী কথা শোনায়। বাবা গায়ে হাত তুলে। যখন তখন রাগ উঠলেই মাকে মারে।

বাবা আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উন্মাদ হয়ে গেছে। আমি ক্লাসে মন দিতে পারতাম না। ঠিক মতো খাবার খেতাম না। ওই অতোটুকু বয়সে আমার প্রেশার লো হয়ে গেলো। একদিন কলেজে ক্লাস শেষে বাসায় ফিরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ সবার সামনেই মাথা ঘুরে পড়ে যাই। সবাই আমাকে কলেজের পাশের হাসপাতালে নিয়ে যায়। কি যেন আরও সমস্যা হয়েছিল। আমাকে রক্ত দিতে হবে।আমার তখন ভাল করে জ্ঞান ফিরেনি। আমার সহপাঠীরা কানাঘুষা করছে। রক্তের যোগার নিয়ে সবাই বলাবলি করছে।

তখনতো এখনকার যুগের মতো ফেসবুক, টুইটার, ইন্সট্রাগ্রাম ছিল না। সহজেই ব্লাড পাওয়া যেত না। এখন তো ফেসবুকে অনেকের প্রোফাইলে লেখা থাকে ব্লাড ডোনার । তখন তো এতো এতো ব্লাড ডোনার ছিল না। লোকজনকে দৌড়াদৌড়ি করতে হতো। তখন তো ল্যান্ড ফোনের দিন।

আমাদের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টের হেড আশফাক মাহমুদকে সবাই জানাল। স্যার ছাত্রছাত্রীদের সাথে ভীষণ রকম বন্ধুবৎসল। তাঁর বন্ধু যুক্তিবিদ্যা বিভাগের স্যার অতনু ঘোষ আমার বিপদে এগিয়ে এলেন।আমার অবস্থার কথা আশফাক মাহমুদ স্যারের ফোন থেকে সবাইকে জানানো হল। আমাদের বাসায় ও আব্বার অফিসে জানানো হলো। রক্ত কোন ভাবে যোগার হচ্ছিল না।

আমি অজ্ঞান থাকলেও সবার কথা অস্পষ্ট ভাবে কর্ণকুহুরকে স্পর্শ করে। ঠিক তখন অভি নামের একটি ছেলে আসে। আমাকে রক্ত দেয়। চোখ খুলে বিস্মিত হয়ে যাই। কি অদ্ভুত সুদর্শন একটা ছেলে আমার পাশের বেডে। তাঁর চেহারাটাও রক্তিম আভায় ঘেমে উঠা। সে অবস্থায় আমার বুকের ভেতর চিন চিন করে কি যেন ঘটে গেলো। আজও অবধি অভি যেন আমার সমগ্র অস্তিত্ব জুড়ে।
আমার দেহে বেড়ে উঠা সন্তান গুলো অভিনন্দনের না হলেও আমার রক্ত কনায় মিশে আছে তাঁর সমগ্র অস্তিত্ব।
ওর কথা মনে হলে নাওয়া খাওয়া ভুলে যাই। সে যে গোপনে ভালোবাসতো আমি তখনও জানতাম না।আমি জানবইবা কিভাবে।তখন তো মাথা নিচু করে স্কুলে কলেজে যেতাম আর বাসায় ফিরে আসতাম। আমার দিকে কে তাকাল। কে ভেংচি কাটল তা দেখার কোন সুযোগই ছিল না। তারমধ্যে বাবার ছিল তিরিক্ষি মেজাজ।
বাবা আমার মায়ে গায়ে হাত তুললেও আমার গায়ে কখনও হাত তুলেনি। কখনও না। তবে দুই একবার বকা দিয়েছে। সেটাও সামনাসামনি না। পাশের রুমে মাকে বকে বকে আমাকে বুঝানো হয়েছিল। আগের সময়ে বাবাদের অন্তত এতোটুকু সংযম ছিল। ছোট বয়সে কন্যাদের গায়ে হাত তুললেও উঠতি বয়সী কলেজ পড়ুয়া মেয়ের গায়ে হাত দিত না।
আর সে বয়সে তো আমি আসাদের সংসারেই চলে এসেছি। কোন মতের বিরোধী কাজ করার সুযোগই পাইনি।
যা বলছিলাম সেদিন সন্ধ্যায় যখন আসাদ আমাকে এমন বেধম পেটালো আমার শরীরটা সইতে পারলো না। রাতে একশ তিন চার ডিগ্রী জ্বর চলে এলো।
রাতের দিকে এক সপ্তাহ আগেই আমার পিরিয়ড হয়ে গেলো। আমার না সে সময়ে নুশমার মতে অনেক রাগ ছিল।যে কোন অন্যায় হলে প্রতিবাদী মনটা জেগে উঠত। সে মার খেয়ে আমার পনেরো দিন জ্বর ছিল।
অবশ্য আসাদ চুপচাপ সংসারটা চালিয়ে নিয়েছে।

সকালে সে মোড়ের দোকানের খাবার নিয়ে আসতো। দুপুরে শিরিন বুয়া এসে আমাকে সহযোগিতা করতো। জ্বর নিয়েও আমি রান্না করতাম। মনে মনে ভাবতাম বেশি রাগারাগি করলে যদি ডিভোর্স দিয়ে দেয়। ডিভোর্সটা কতো ভয় পেতাম। সে ভয়টা বিশ বছর পরও আমার বুকের ভেতর থেকে যায়নি।

নুশমাকে পেটানো থেকে বাঁচাতে গিয়ে আমিও কয়েকটা চড় খেয়েছি। আসাদের হাত দুটো যেন লোহা দিয়ে তৈরি। শরীরের যে জায়গায় আঘাত করে সেটা একটা লাল অথবা নীলাভ হয়ে যায়। গোধূলি যখন রাতকে স্পর্শ করার আকাশে যেমন রঙ হয় ঠিক তেমন। তারপর সেই ক্ষত নিয়ে আমি আমার বুকে চেপে অন্ধকারে জীবন খুঁজে ফিরি।
আসাদ কে দেখলে কিংবা কথা বললে কেউ বুঝবে না সে কেমন মেয়ে মানুষ পেটাতে ওস্তাদ। মুখোশধারী মানুষদের চেহারায় যদি চরিত্র বুঝা যেত!

তারঁপর অদ্ভুত নিয়তির খেলায় এমন সব মানুষের সাথেই শুধু একটু বেঁচে থাকার লোভে মৃত্যুর সাথে বসবাস করতে হয়।উনারা একদিন পাল্টে যাবে, ভাল হয়ে যাবে, এসব অর্থহীন স্বপ্ন দেখতে হয়।

কথায় বলে না কতো মন মুখোশে হারায় চোখের জলেও জীবন বেঁচে থাকা খুঁজে বেড়ায়।
চলবে......
#গোপনে সে আমায় ভালোবাসে
#পর্ব-২
#নুরুন নাহার লিলিয়ান

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: ক্লাশ নাইনে পড়া মেয়েকে কেউ মারে??
ছিঃ

২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:০৩

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: ছিঃ আসলেই ! চারপাশে এমন ঘটনা বহু আছে রে ভাই । কয়জন শেয়ার করে । এক আপুর জীবন থেকে হাল্কা অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা শুরু করলাম । ধন্যবাদ পড়ার জন্য ।

২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৩৬

কালো যাদুকর বলেছেন: দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে পরলাম। এরকম যেন না সত্যি হয়।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৫৮

ফয়সাল রকি বলেছেন: একজন নির্যাতিতার গল্প পড়লাম। সামনের পর্ব গুলোতে নিশ্চয় প্রতিবাদ দেখা যাবে। এভাবে সহ্য করে যাবার কোনো মানে হয় না।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মনোমুগ্ধকারী লিখনী । শুভেচ্ছা সতত ।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৮

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৫| ২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৫৩

শেহজাদী১৯ বলেছেন: আসাদকে শেষ করে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে।

২৭ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৩:০৬

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: হা হা হা এমন চরিত্র বহু আছে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.