নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার গল্পটা হোক পৃথিবীর সেরা গল্প ।কারন আমি হতে চাই একজন সত্যিকারের জীবন শিল্পী ।

নুরুন নাহার লিলিয়ান

নুরুন নাহার লিলিয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস\' গোপনে সে আমায় ভালোবাসে \' পর্ব -৩ -নুরুন নাহার লিলিয়ান

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৫৭



#গোপনে সে আমায় ভালোবাসে
#পর্ব-৩
#নুরুন নাহার লিলিয়ান

মেয়েটা বাবার কাছে মার খেয়ে নিজের ঘরে ঢুকেছে। আসাদ মেয়েটাকে মেরে কিছুক্ষণ বারান্দায় বসেছিল।অনেকক্ষণ ঝিম ধরে বসে থেকে কি যেন ভাবছিল। আমাকে কিংবা ছেলে মেয়েকে মারার পর সে সব সময় ঝিম ধরে কোথাও বসে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর উঠে এক গ্লাস পানি খায়। অনেকক্ষণ সে কারও সাথেই কথা বলে না। এই কথা না বলে থাকা ব্যাপারটা দুই এক দিনও চলে। তারপর সংসারের প্রয়োজন কিংবা নিজের প্রয়োজনে কথা বলে।

আজকেও তাই ঘটেছে। তবে আজকে কতোক্ষণ কিংবা আবার কবে কথা বলবে আমাদের কারও জানা নেই।ড্রয়িং রুমে যেতে ছোট্ট করিডোর আছে। আমি সেখানেই চুপচাপ বসে আছি।আমার পুরো শরীর থর থর করে কাঁপছে। আসাদের সাথে অনেক ধস্তাধস্তি হয়েছে। আমার শরীরের ভেতরের কাঁপুনি কোনভাবেই থামছে না। আমি নিজেকে মানসিক ও শারিরীক ভাবে স্বাভাবিক রাখতে পারছিনা।
বাইরে আযান দিচ্ছে।

আমি আঁড়চোখে দেখি। এশার আযানের পর টুপি নিয়ে মসজিদে গেল। মেয়েটা অংকে খারাপ রেজাল্ট করেছে। স্কুলে কিছু বান্ধবী হয়েছে তাদের সাথে মেসেঞ্জারে কথা বলে।এটা আসাদের পছন্দ না। তারমধ্যে অংকে সত্তর পেয়েছে। আসাদের স্বপ্ন তাঁর মেয়েকে সে ইঞ্জিনিয়ার বানাবে৷ আসাদের ভাষ্য অনুযায়ী সে স্বপ্ন নাকি পথে বসেছে!

মেয়েকে শাসন করা দরকার। কিন্তু এভাবে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে? আমি মা হিসেবে এতো নিম্ন মানের কেন? মা হিসেবে আমি কেন এতো অসহায়? আমার ভেতরে ঝড় উঠে৷ আমি কিছুতেই নিজের ভাগ্যকে মেনে নিতে পারিনা। সঠিক ভাবে সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ ও করতে পারিনা। নিজের কাছেই প্রশ্ন করি৷ কিন্তু উত্তরটা কি কোন ভাবে আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব?

নুশমার সব বান্ধবিদের আমি চিনি। আমার সামনেই কথা বলে। বরং আমি এসব এ্যাপস ব্যবহার করতে জানিনা বলে ওরা আমাকে বন্ধুর মতো শেখায়।
নুশমার বান্ধবিদের বেশির ভাগ মায়েরাই সোস্যাল সাইট ব্যবহার করে।যদিও ক্লাস নাইনে ফেসবুক, মেসেঞ্জার সহ কোন সোস্যাল সাইট ব্যবহার করা ঠিক না৷ কিন্তু পরিবর্তনশীল নিয়মে পৃথিবীটা পাল্টে গেছে অনেকখানি।পৃথিবীর পাল্টে যাওয়া গল্পে আমাদের ভুমিকা ও আছে।
জগত যেভাবে চলে সে পথে হাটতে না চাইলেও জীবনের অসহায়ত্ব গুলো আমাকে বাধ্য করে।

প্রযুক্তির উৎকর্ষতা মানুষকে পাল্টে যেতে বাধ্য করেছে। আমি সাধারণ একজন নারী৷ কিন্তু বই পড়তে, মানুষ দেখতে আর পৃথিবী নিয়ে ভাবতে ভাল লাগে।আসাদ যখন বাসায় থাকেনা আমি পুরনো আমলের সিনেমা মনোযোগ দিয়ে দেখি।ঘেঁটে ঘেঁটে অনলাইনে বই পড়ি। বাচ্চাদের পড়াই। আবার নিয়মিত নামাজ ও পড়ি। দিন শেষে এই নশ্বর ভূখণ্ড ছেড়ে চলে যেতে হবে সেটা ভেবে শংকিত হই।

আমার মনে পড়ে না নামাজে কোন দিন আমি আসাদের নামে কোন প্রার্থনা করেছি।অথচ আসাদের কাছ থেকে পাওয়া দুটো সন্তানের জন্য আমার সব প্রার্থনা।একজন অত্যাচারি ও সবার্থপর স্বামীকে স্ত্রী ঘৃণা করতে পারে। কিন্তু একজন মা সন্তানদের ভালোবাসহীন রাখতে পারে না। মা প্রকৃতির নিয়মেই সন্তানকে ভালোবাসে।
আসাদকে আমি প্রচন্ড ঘৃণা করি৷ আবার আসাদের অনেক কিছু আমি পছন্দ ও করি।
সে তাঁর সন্তানদের গভীরভাবে ভালোবাসে। কিন্তু শাসনের ধরনটা ভীষণ রকম বিব্রতকর।
অভিনন্দন কে মনে মনে ভালোবেসে আসাদের ঘর করি। হয়তো অনেকেই আমার মনের কথাটা জেনে গেলে আমাকে প্রতারক ভাববে।
অভিকে ভালোবাসাটা যে আমার বেঁচে থাকা। খুব অল্প সময়ে অভিনন্দন আমার সমগ্র অস্তিত্বে বেঁচে থাকার সাহসী স্বপ্ন বপন করে গেছে।সারা জীবন থাকলেও হয়তো আসাদ সে জায়গাটায় যেতে পারবে না। কোনদিন আমার হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারবে না।
আমার অভির জন্য প্রতি মুহুর্তে খারাপ লাগা কাজ করে। একবার দেখার জন্য, একবার কাছাকাছি বসবার জন্য, পাশাপাশি হাঁটার জন্য, একটুখানি স্পর্শের জন্য। অথচ বছরের পর বছর একই ছাঁদের নিচে একই বিছানায় আসাদের সাথে থাকার পরও কখনও এতোটা গভীরভাবে তাঁকে অনুভব করিনি।

আমার মনের জগতের পুরোটা জুড়ে শুধু অভির ভালোবাসা। সেই ভালোবাসার সমুদ্রে আমার বিক্ষিপ্ত মন ডুবে থাকে। এক বিশাল দিশেহারা সমুদ্রে আমি প্রতিনিয়ত হাবুডুবু খাই।ডুবতে ডুবতে নিজেকে ভাসিয়ে রাখি। ভেসে থাকা ঢেউয়ের ভাঁজে নিজের জীবন খুঁজে বেড়াই।

নদী পাড়ের মেয়ে আমি। নদীর বহমান স্রোত আমার সমগ্র ধমনীতে। শিরা উপশিরায় ঢেউয়ের দুলনি নিয়মিত দোল খায়। পৃথিবীর সব আগুন আমার মতো নদীর কাছে এসে বিলীন হয়।বিয়ের পর আসাদের সাথে যেখানে গিয়েছি সবাই আমার বাহ্যিক ও অন্তরের সৌন্দর্য অনুভব করেছে। আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা ও বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়েছে।
অথচ আসাদ আমায় দমিয়ে রাখে প্রতি পদক্ষেপে। ওর পরিবারটাই অন্যের অনুভূতির মুল্য কম দেয়।
তাঁরা নিজেদের বানানো দুনিয়ায় নিজেরাই রাজা রানী। বাকি পৃথিবীর সবাই তাঁদের অধিনস্ত প্রজা। আসাদের যুক্তিহীন অহংকার আর স্বেচ্ছাচারিতা পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। তারপরও কিছু কিছু সময়ে আসাদ নমনীয় হয়। হয়তো তাঁর মনের ভেতরের জগতের কোন হিসেব নিকাশের কারনে। হয়তো তাঁর নিজের ভেতরেও কোন অসহায়ত্ব আছে। কিংবা হতে পারে পারিবারিক ও সামাজিক চাপ। সে কখনও কখনও আগ্নেয়গিরির রূপ ধারণ করে। আবার নিজে নিজেই হঠাৎ ধেয়ে আসা মেঘের মতো আকাশে মিলিয়ে যায়।

আসাদের মনের মিথ্যা দাম্ভিকতার আগুন নেভে আমার ধৈর্য্যের জলের স্পর্শে। আসাদ জানে সে যতো নিষ্ঠুর হোক আমি তাকে ছেড়ে যাব না৷ কারন আমার যাওয়ার জায়গা নেই। হয়তো আমি ইচ্ছে করলেই তাকে ছেড়ে যেতে পারিনা। কিংবা আসাদকে ছেড়ে আমার কোথাও চলে যাওয়ার ইচ্ছেটাও মরে গেছে।

শুনেছি মানুষ যেখানে জন্মায় সেখানকার প্রকৃতি ও পরিবেশ তাকে প্রভাবিত করে। আমার আর আসাদের জন্ম একই জায়গার মাটিতে। অথচ আমাদের বেড়ে উঠা, চিন্তা, পছন্দ সব কিছু যেন যোজন যোজন দূরত্ব।

মুন্সিগঞ্জ শহরের ভূখণ্ডকে তিনটি নদী আগলে রেখেছে।
চারিদিকে অথৈ জল।থৈ থৈ জলঘেরা জীবন আমাদের। আমার যতো বয়স তারচেয়েও বেশি সময় ধরে আমি ধলেশ্বরী নদী পার হয়েছি। কত শত বার যে ধলেশ্বরীকে আমি বুকে ধারন করেছি।তাই সহস্র ধলেশ্বরী আমার বুকে জমাট বাঁধা।সব সময় চোখের কোনায় একটা বিশাল নোনা সমুদ্র লুকিয়ে থাকে। সবাই তা দেখতে পায় না।কিন্তু অভিনন্দন বুঝতে পারতো।

আমাদের আর অভিনন্দনদের বাসা খুব বেশি দূরে ছিল না। তাই আমাদের ছোট ছোট নিত্যদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা কিংবা দূর্ঘটণা গুলো গভীর ভাবে লেপ্টে আছে মনের গহীনে। আর মফস্বল শহরের গল্প গুলো মানুষের মন থেকে সহজে মুছে ফেলা যায় না৷
মফস্বলের ক্লান্ত জীবন যুদ্ধের সাথে বেঁচে থাকায় একটা নীরব স্বপ্ন থাকে। স্বপ্নটা একান্ত বুকে নিয়ে মানুষ গুলো এগিয়ে যায়।
অভি এক সময় ডাক্তার হতে চাইতো। কিন্তু সে আমার স্বামী আসাদের মতোই সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হয়েছে।
কি অদ্ভুত একই প্রফেশনে দু'জন ভিন্ন মানসিকতার মানুষ।
মুন্সিগঞ্জ হরগঙগা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের তুমুল মেধাবী ছাত্র ছিল অভিনন্দন। আমার ক্লাস মেট ছিল।তবে এতো ছেলে মেয়ের মাঝখানে সবাইকে চেনা কঠিন।আমি বিজ্ঞান বিভাগের মাত্র কয়েকজনকে চিনতাম। অভিনন্দন মেট্রিকে বোর্ড স্ট্যান্ড করেছিল। তারপরও তাঁর বাবা তাকে ঢাকা পড়তে পাঠায়নি। বাবার চাকরি সূত্রে তাঁরা মুন্সিগঞ্জেই ছিল।
মুন্সিগঞ্জ শহরে সরকারি হরগঙগা কলেজের সেই সময় বেশ নাম ডাক আছে।ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক বিষয় বিবেচনায় হরগঙগা কলেজ ঢাকার কোন বিখ্যাত কলেজের চেয়ে কম ছিল না।অভিনন্দনের বাবা মনে করতেন প্রকৃত শিক্ষার্থী পৃথিবীর যেকোন জায়গা থেকেই সে জ্ঞান আহরণ করতে পারে। নির্দিষট একটা বয়স পর্যন্ত সন্তান বাবা মায়ের কাছেই থাকা ভাল। আর এক জীবনে পরিবারের সবাই একসাথে সুখে দুঃখে কাটানো ও অনেক বড় বিষয়। তারপর জীবন ও জীবীকার প্রয়োজনে মানুষকে পরিবারের কাছ থেকে দূরে যেতেই হয়।

অভিনন্দন ও ঠিক ছিল বাবার মতো বাস্তববাদী আর আর্দশবান।
এখনও ওর কথা মনে হলে চেহারটা কেমন চোখের সামনে ভাসতে থাকে।

আমি নিজের ভেতরের জটিলতা আবিষ্কার করতে পারিনা। আমার সংসারে কিছুক্ষণ আগে একটা ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাস এসেছিল। অথচ কি নির্বিকার ভাবে আমি অভিনন্দনের কথাই ভেবে যাচ্ছি।কেউ কখনও আমার মনের জগতটা জেনে গেলে কি যে ভাববে!
কি ভাববে? আমি চরিত্রহীন! আমি ঘরে স্বামী রেখে আরেকজনকে ভালোবাসি। আমি প্রতারক কিংবা মানসিক রোগী।
যদি বলি আমার ভেতরে বেড়ে উঠা একটা অদ্ভুত অসুখের নাম অভিনন্দন। যে অসুখটা আমার মনের মধ্যে ঠাঁই করে নিয়েছে বলেই দেহটা বেঁচে আছে।
এই পৃথিবীতে কে কিভাবে বেঁচে থাকে সবাই কি সবার খবর জানে। আজকে ঢাকা শহরের পনেরো তলা ভবনের এগারো তলায় আমাদের বসবাস। এই বিলাসবহুল ভবনে কতো মানুষ জন থাকে থাকে। কয়জন আমরা পরস্পরের খবর রাখি। কয়জন জানি কে কিভাবে বেঁচে আছে।

দিন শেষে সূর্যের আলো যেমন রাতের অন্ধকারে মিশে যায়। সব সময় ব্যস্ত কিংবা সুখী মানুষটিও কোটির মানুষের ভিড় ঠেলে একা হয়ে যায়।
মানুষের সবচেয়ে বন্ধু তাঁর ভেতরে লুকিয়ে থাকা একা মানুষটা। যে মানুষটা তাঁর সবটুকু দেখতে পারে, বুঝতে পারে কিংবা অনুভব করতে পারে।
আমার মনের ভেতরের মানুষটা আমার
সমস্ত কষ্ট গুলো অনুভব করতে পারে বলেই অভিনন্দন কে অদৃশ্য করে রাখে। সে যে নিমগ্ন প্রেম। নীরব প্রার্থনা। প্রশান্তিময় বেঁচে থাকা।
প্রকৃত প্রেমের অনুভূতিময় সমুদ্রের স্পর্শ যে পায়নি সে কোনদিন আমার এই দহন গল্প বুঝবে না।
যাই মেয়েটাকে ঘর থেকে বের করি। কষ্ট পেয়ে কিছু করে ফেলতে পারে।
চলবে.......

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: মুন্সিগঞ্জ শহরকে যে তিনটি নদী আগলে রেখেছে, সেই তিনটি নদীর নাম কি?

আমার বাড়িও মুন্সিগঞ্জ। কিন্তু আমি তিনটি নদীর নাম জানি না। আমি জানি শুধু পদ্মা।

০৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৫৭

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: পদ্মা , মেঘনা ও ধলেশ্মরী নদী । আমি মুন্সিগঞ্জকে অনেক ভালোবাসি ।

২| ০৫ ই মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৩৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুপাঠ্য লেখা ।

১৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০০

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ ।

৩| ০৭ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:০৫

মোঃমোজাম হক বলেছেন: এই প্রথম আপনার লেখা পড়লাম এবং এক নাগাড়ে ---
বেশ লাগলো

১৫ ই মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ।

৪| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:০৯

অক্পটে বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন। ১ম ও ২য় পর্বের লিংক খুঁজে পেলাম না।

২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:২১

নুরুন নাহার লিলিয়ান বলেছেন: কয়েকটা পোস্ট নিচে । বইটি ঘরে বসেই অনলাইন বুক শপ থেকে কম মুল্যে সংগ্রহ করতে পারেন । ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.