নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোন্দকার মেহেদী আকরাম এর ব্লগ

নাটশেল

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। যতদিন ভালো লাগে ততদিন লিখে যাবো।

নাটশেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আধুনিক সৌরজগতের বৈজ্ঞানিক ধারণার সাথে কোরান এর বর্ণনা সম্পূর্ণ অ-সাংঘর্ষিক

০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:১৮

পবিত্র কোরানে বেশ কয়েকটি আয়াতে আমাদের এই বিশ্বব্রমান্ড সৃষ্টি রহস্য এবং এর স্বরূপ সমন্ধে ধারণা দেয়া হয়েছে। দিন রাত চন্দ্র সূর্য তথা গোটা নক্ষত্ররাজি এবং মহাজাগতিক বিষয়গুলো কোরানে উঠে এসেছে অনেক বার। যেমন ২১ নাম্বার সুরা'র ৩৩ নাম্বার আয়াতটির কথাই বলা যাক।

Chapter 21, Verse 33: (God is) the One Who created the night, the day, the sun and the moon. Each one is travelling (floating) in an orbit with its own motion.

আয়াতটির বাংলা অর্থ দাড়ায় এমন: আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন দিন রাত চন্দ্র এবং সূর্য। এবং এদের প্রতিটি (চন্দ্র এবং সূর্য) তার নিজ নিজ কক্ষ পথে প্রদক্ষিনরত। এ আয়াতটিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি হচ্ছে فَلَكٍ (ফালাকিন) যার ইংরেজি অর্থ অরবিট (orbit) বা বাংলায় আমরা যাকে বলি কক্ষপথ। ‘ফালাকিন’ শব্দটি বিশেষ্য হিসেবে কোরানে এসেছে মাত্র দুইবার। উপরোল্লিখিত আয়াতটি ছাড়াও ৩৬ নাম্বার সুরার ৪০ নাম্বার আয়াতে ‘ফালাকিন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে একই অর্থে: অর্থাত চন্দ্র এবং সূর্যের কাক্ষিক প্রদক্ষিন বোঝাতে। তবে ৩৬:৪০ আয়াতটির বিশেষ বৈশিষ্ট হচ্ছে এই আয়াতটি পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করছে যে সূর্য এবং চন্দ্র এই দুই মহাজাগতিক বস্তুর কক্ষপথ ভিন্ন, অর্থাত তারা নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তিত। আয়াতটির ইংরেজি অনুবাদ আমি নিচে তুলে দিচ্ছি।

Chapter 36, Verse 40: The sun must not catch up the moon, nor does the night outstrip the day. Each one is travelling in an orbit with its own motion.

আয়াতটির প্রথমাংশ পরিষ্কার ভাবে বলছে যে 'সূর্য কখনোই চন্দ্রের সাথে মিলিত হবে না......' বাকি অংশের অর্থ অনেকাংশেই ২১:৩৩ আয়াতটির সমার্থক।

এই আয়াত দুটি যখন নাজিল হয় তখন নিকোলাস কোপার্নিকাসের জন্মও হয়নি! পবিত্র কোরান নাজিলের ৯০০ বছর পরে জন্ম নেই এই বিজ্ঞানী কোপার্নিকাস, যিনি সৌর জগতের প্রাচীন ধারনাকে ভেঙ্গে দিয়ে প্রস্তাব করেন যে সূর্য পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে না বরং পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহই সূর্যকে কেন্দ্র করে তাদের নিজ নিজ কক্ষপথে প্রদক্ষিন করছে। খ্রিষ্ট জন্মের অনেক আগে থেকেই সৌরজগত সম্পর্কে মানুষের ধারণা ছিল যে পৃথিবী হলো আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিতি এবং এই পৃথিবীকেই কেন্দ্র করে সূর্য চন্দ্র এবং অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ তাদের কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে! মহা মনীষী এরিস্টটলও ভাবতেন পৃথিবীকে কেন্দ্র করেই সূর্য সহ অন্যান্য সকল গ্রহ আবর্তিত হচ্ছে। এরিস্টটল সৌরজগতের যে মডেল প্রস্তাব করেন তার ছবিটি নিচে দেয়া হলো। এই মডেলটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় জিয়সেন্ত্রিক মডেল (Geocentric Model) বলে।



পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতেই এরিস্টটল অবশ্য এই মডেলটির প্রস্তাব করেন। আপাত দৃষ্টিতে সাধারণ ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আমাদের সবার কাছেই এমন মনে হবে যে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সকল গ্রহ নক্ষত্র আবর্তিত হচ্ছে। এরিস্টটলের এই সৌর মডেল যে ভুল ছিল এটা প্রমান করতে মানব সভ্যতার সময় লেগেছে ২০০০ বছর। ষোরশ শতাব্দীতে প্রথমে কোপার্নিকাস এবং পরে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও প্রমান করলেন যে এরিস্টটলের সৌর মডেলটি ভুল। তারা প্রমান করলেন যে সূর্য আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্র অবস্থিত এবং এই সূর্যকে কেন্দ্র করেই সকল গ্রহ উপগ্রহ নিজ নিজ কক্ষ পথে আবর্তিত হচ্ছে। এই নতুন মডেলটিকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে হেলিওসেন্ত্রিক মডেল (Heliocentric Model)। এই হেলিওসেন্ত্রিক সৌর মডেলটিই আধুনিক বিজ্ঞানে গৃহীত আমাদর সৌরজগতের শুদ্ধ মডেল। হেলিওসেন্ত্রিক সৌরজগতের একটি ছবি নিচে দেয়া হলো।



প্রাচীন কালে আমাদের সৌরজগতটাকেই ভাবা হতো গোটা মহাবিশ্ব! সে ক্ষেত্রে সূর্যকে তো কোনো কিছুকে কেন্দ্র করে এক নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তিত হওয়ার কথা নয়। তবে কোরান যে বলছে সূর্য একটা নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তিত হচ্ছে! তাহলে কোরান কি ভুল? যারা আধুনিক বিজ্ঞান সমন্ধে অজ্ঞ তারা অবশ্য তাই মনে করে। কিন্তু বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে বিংশ শতাব্দিতে এটা প্রমানিত হয় যে আমাদের সৌরজগত হলো মিল্কিওয়ে নামক গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। এই মিল্কিওয়েতে আমাদের সৌরজগতের মত আরো কয়েকশ কোটি সৌরজগত রয়েছে।

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিক পর্যন্ত এই মিল্কিওয়ে ছায়াপথকেই ভাবা হত একমাত্র মহাবিশ্ব। এমনকি মহা বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনও এমনটি ভাবত! তবে মহাকাশ বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং টেলিস্কোপের প্রভূত উন্নতির সাথে সাথে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে এটা প্রমানিত হলো যে মিল্কিওয়েই একমাত্র মহাবিশ্ব নয়, বরং এই মিল্কিওয়ে হচ্ছে প্রকৃত পক্ষে বিস্তৃত মহাবিশ্বের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র! এই মহাবিশ্বে আমাদের মিল্কিওয়ের মত আরো কোটি কোটি গ্যালাক্সি রয়েছে। হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রমানিত হয় যে এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিটি একটি সতন্ত্র গ্যালাক্সি। পূর্বে এন্ড্রোমিডাকে ভাবা হত আমাদের মিল্কিওয়েরই এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বস্তুত: এন্ড্রোমিডা হলো আমাদের সবচয়ে নিকটবর্তী গ্যালাক্সি।

অতি সম্প্রতি আমাদের মিল্কি ওয়ের কেন্দ্রে এক বিশাল ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহব্বরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, বিজ্ঞানীরা এই ব্ল্যাকহোলের নাম দিয়েছে 'সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল'। এই সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল কে কেন্দ্র করেই ঘুরছে মিল্কিওয়েতে অবস্থিত কোটি কোটি গালাক্সী। আমাদের সূর্যও তার সৌরজগতকে নিয়ে সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে ঘুরছে ঘন্টায় ৫১৪,০০০ মেইল বেগে! আমাদের পৃথিবী যেখানে ৩৬৫ দিনে একবার সুর্য্যকে কেন্দ্র করে ঘুরে আসে; সেখানে সূর্য তার কক্ষপথে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় ২২,০০,০০,০০০ বছর!

তাহলে ১৪০০ বছর আগে কোরান যে কথা বলেছে যে সূর্য তার নিজস্য কক্ষপথে প্রদক্ষিন করছে তার প্রমাণ আজ আমরা পেলাম এত বছর পর! নিচের ছবিটাতে আমাদের মিল্কিওয়ে গালাক্সিতে সূর্য্যের অবস্থান এবং লাল কালিতে এর কক্ষপথ দেখানো হয়েছে।



শেষ করার আগে একটি প্রশ্ন! চন্দ্র ঘুরছে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে, পৃথিবী ঘুরছে সূর্য্যকে কেন্দ্র করে, সূর্য ঘুরছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলকে কেন্দ্র করে। আমাদের মিল্কিওয়ে কি কোনো কিছুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অথবা আমাদের গোটা মহাবিশ্ব কি ঘুরছে অন্য কোনো শক্তিকে কেন্দ্র করে? আল্লাহ কেন কাবাকে কেন্দ্র করে মানুষকে প্রদক্ষিন করতে বললেন? আমি বিগ ব্যাং এবং মহাবিশ্বের সম্প্রসারণশীলতা সমন্ধে অবহিত আছি। তবুও প্রশ্ন গুলি করলাম। বিজ্ঞান পরিবর্ধনশীল।

[কোরানের আয়াত এর ইংরেজি অনুবাদ নেয়া হয়েছে নিচের ওয়েব সাইট থেকে:
http://corpus.quran.com/]

খোন্দকার মেহেদী আকরাম
শেফিল্ড,
১ অক্টোবর ২০১৪।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৩৫

ইলি বিডি বলেছেন: বিজ্ঞান পরিবর্ধনশীল। অনেক কিছু জানলাম ধন্যবাদ আপনাকে।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৪৮

নাটশেল বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ, ইলি

২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৪০

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহা মানুষ যদি কোরআনকে বুঝত!!!!

তেলাওয়াতের ১৯ প্রকার অর্থ আছে। মানুষ যদি তেলাওয়াত করত।

পাঠ করা, উপলদ্ধি করা, গবেষনা করা, আবৃত্তি করা, অন্বেষন করা... সবগুলো এই মুহুর্তে মনে নাই।

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৮:১৮

কলমের কালি শেষ বলেছেন: কুরআন হচ্ছে সকল সমস্যার সর্বশ্রেষ্ট সমাধান ।

আপনার লেখাগুলো ভাল লাগলো । :)

০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৫১

নাটশেল বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ

৪| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:০৪

ইমরান আশফাক বলেছেন: আমি বিগ ব্যাং এবং মহাবিশ্বের সম্প্রসারণশীলতা সমন্ধে অবহিত আছি। তবুও প্রশ্ন গুলি করলাম। বিজ্ঞান পরিবর্ধনশীল। [/sb

ঠিক কি বুঝাতে চাচ্ছেন আপনি একটু বুঝায়ে বলবেন কি (উপরোক্ত ব্যাক্যগুলি দ্বারা)? পোস্ট টি ++++++++++++।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৫

নাটশেল বলেছেন: লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ

লেখাটির শেষে আমি একটা প্রশ্ন রেখেছি এই রকম: "আমাদের মিল্কিওয়ে কি কোনো কিছুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অথবা আমাদের গোটা মহাবিশ্ব কি ঘুরছে অন্য কোনো শক্তিকে কেন্দ্র করে?"

আমি ভাবছিলাম এ প্রশ্নটি দেখে কেও কেও হয়ত ভাববে যে আমি বিগ ব্যাং এবং মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ সমন্ধে অজ্ঞ!

আর এ কারণেই পরবর্তী লাইনটিতে আমি লিখেছি: "আমি বিগ ব্যাং এবং মহাবিশ্বের সম্প্রসারণশীলতা সমন্ধে অবহিত আছি।" আধুনিক বিজ্ঞান বলে যে গ্যালাক্সি এবং মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ শীল কিন্তু এরা কোনো কিছুকে আবর্তন করে ঘুরছে না।

আমার প্রশ্ন ছিল, "আমাদের মিল্কিওয়ে কি কোনো কিছুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে অথবা আমাদের গোটা মহাবিশ্ব কি ঘুরছে অন্য কোনো শক্তিকে কেন্দ্র করে?" যার উত্তর আধুনিক বিজ্ঞান মতে 'না'!

তারপর আমি বলেছি "বিজ্ঞান পরিবর্ধনশীল। " ---এটা দিয়ে আমি বোঝাতে চেয়েছি যে আমাদের জানা বিজ্ঞান প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং পরিবর্ধিত হচ্ছে। সুতরাং ভবিষ্যতে যদি আমরা আবিষ্কার করি যে " আমাদের মহাবিশ্বও কোনো এক মহা শক্তিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচ্ছে!" তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কেননা ইতিহাস বলে বিজ্ঞান পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনশীল!

৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৩

ভুং ভাং বলেছেন: ভালো লাগলো ।

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৪ ভোর ৪:৪১

নাটশেল বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.