নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোন্দকার মেহেদী আকরাম এর ব্লগ

নাটশেল

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। যতদিন ভালো লাগে ততদিন লিখে যাবো।

নাটশেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৃষ্টি জগতে মানুষের অস্তিত্ব কি নিতান্তই তুচ্ছ?

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:১১

এই মহাবিশ্বের প্রেখ্যাপটে আকৃতিগত দিকদিয়ে মানুষ হিসেবে আমাদের অবস্থান কোথায়? এক বাক্যে হয়ত সবাই উত্তর দিবে আমরা মানুষেরা খুবই ক্ষুদ্র। কিন্তু কন্তটুকু ক্ষুদ্র? আমাদের থেকেও তো কত ক্ষুদ্র প্রাণীর অস্তিত্ব রয়েছে চার পাশে এই পৃথিবীতেই। যে সব প্রাণী আকৃতিগত দিক দিয়ে ছোটো তাদের আমরা মানুষেরা কোন দৃষ্টিতে দেখি? একটা পিপড়ের জীবন নিয়ে আমরা কতটুকু উদ্বিগ্ন হই? আমরা মানুষেরা যখন আমাদের চেয়েও আকৃতিতে বড় এবং হিংস্র বন্য প্রাণীদেরকে পোষ মানাই তখন অহংকার করে নিজেদেরকে অনেক বড় ভাবি! আমরা নিজেদেরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দাবি করি। আমরা আসলে এই জগত সংসারে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ?

সাগর তলের ওই অতি ক্ষুদ্র অনুবিক্ক্ষণিক প্ল্যাঙ্কটন প্রানিকুল যদি বিলীন হয়ে যায় কোনদিন তাহলে এই পৃথিবীর সর্ববৃহত প্রাণী নীল তিমিও বিলুপ্ত হয়ে যাবে! কেননা নীল তিমি যে বেঁচে থাকে ওই অতিক্ষুদ্র প্ল্যাঙ্কটন খেয়েই। আমরা মানুষেরা যদি একদিন বিলুপ্ত হয়ে যাই এই পৃথিবীর বুক থেকে তাহলে কি হবে? শক্তিশালী ডাইনোসরও তো সব বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তাতে কি কোনো ক্ষতি হয়েছে আমাদের ইকো সিস্টেম বা বাস্তু জগতের? আমরা মানুষেরা কি বাস্তু জগতের কোনো অপরিহার্য অংশ, নাকি এই সৌরজগত টিকে থাকার জন্য আমাদের কোনো প্রয়োজন আছে?

জৈব বিবর্তনে আমরা মানুষেরাই কি শেষ ধাপ নাকি কালের বিবর্তনে জৈব বিবর্তন ও এগিয়ে যাবে এবং একদিন আমাদের থেকেও আরো চতুর কোনো প্রাণীর আবির্ভাব হবে এই পৃথিবীতে? তখন ওই নব বিবর্তিত প্রানিকুল কি আমাদেরকে নিন্ম শ্রেনীর কোনো প্রাণী ভাববে, যেমনটি আমরা ভাবি ইথুপিয়া পাহাড়ের ওই বেবুন সম্প্রদায়কে? জৈব বিবর্তনের তত্ব অনুসারে যারা আমাদের পূর্বপুরুষ!

আমাদের দৈহিক আকৃতি একটা পিপড়ের দৃষ্টি সীমার বাইরে; সম্ভবত পিপড়ে সম্প্রদায়ের কাছে মানুষই সর্ববৃহত প্রাণী! আমাদের কাছে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে সবচেয়ে ক্ষুদ্র জীব, কেননা মাইক্রোস্কোপ ছাড়া খালি চোখে ওদেরকে আমরা দেখতে পাইনা। এই পৃথিবীতে মানুষেরা দানব আর ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া হলো নগন্য ক্ষুদ্র কোনো জৈবিক অস্তিত্ব। হাবল টেলিস্কোপ দিয়ে যখন পৃথিবীর ছবি তোলা হয় তখন কিন্তু পৃথিবীর বুকে আমাদের অর্থাত মানুষের বিচরণ দৃষ্টি গোচর হয় না। পৃথিবীর স্বাপেক্ষে আমরা হয়ে পরি অতি ক্ষুদ্র নগন্য। আবার, এই পৃথিবী কিন্তু মিল্কিওয়ে নামক এক গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের বাসিন্দা। আর এই ছায়াপথের স্বাপেক্ষে পৃথিবীর আকৃতি অতি ক্ষুদ্র অনুবিক্ষনিক- অনেকটা আমাদের কাছে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার আকৃতি যেমন। তাহলে ছায়াপথের স্বাপেক্ষে মানুষের আকৃতি কতটুকু হবে? আমাদের জানা মহাবিশ্বে শত শত কোটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ রয়েছে। আর এই মহাবিশ্বের স্বাপেক্ষে আমাদের নিজস্য ছায়াপথ মিল্কিওয়ের আকৃতি হবে অতিশয় ক্ষুদ্র! তাহলে এই মহাবিশ্বে র স্বাপেক্ষে আমাদের আকৃতি কতটুকু? বিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয় মানুষের আকৃতি ও অবস্থান এই মহাবিশ্বে নেগলিজিবল বা নগন্য অথবা তুচ্ছ!



অবস্থানগত এই দীনতার সত্বেও আমাদের রয়েছে দর্শনতত্ব, বিজ্ঞানতত্ব এবং ধর্মতত্ব- যা নিয়ে আমরা বড়াই করি এবং নিজেদেরকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক অস্তিত্ব রূপে দাড় করাই। আমরা আমাদের এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ভাবি যে আমরা বলি সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং নিজে তার সকল ফেরেস্তাকুল নিয়ে ব্যস্ত আমরা কে কি করছি তা দেখার জন্য! আমরা খুনোখুনিতে লিপ্ত হই এই সৃষ্টি কর্তাকে কেন্দ্র করেই! সৃষ্টি কর্তার কি অন্য কোনো কাজ নেই? বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয় ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে আর আমাদের এই পৃথিবীর বয়স ৪.৫ বিলিয়ন বছর। এই ভূপৃষ্ঠে মানুষের আবির্ভাব ঘটে মাত্র ৪.৪ মিলিয়ন বছর আগে। এই মহাবিশ্বে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে আমাদের অস্তিত্বের আবির্ভাবের পূর্বে। প্রায় ১৩ বিলিয়ন বছর সৃষ্টিকর্তা ব্যস্ত ছিলেন তার সৃষ্টি কর্ম নিয়ে। তিনি এখনো ব্যস্ত আছেন ক্রম বর্ধমান তার এই সৃষ্টিজগত তদারকিতে। আমার ধারণা সয়ং সৃষ্টিকর্তার কাছেও আমরা অতি তুচ্ছ নগন্য। মানুষের অস্তিত্ব সম্পর্কে বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং একবার বিবিসি'র এক সখ্যাত্কারে বলেছিলেন:

‘We are such insignificant creatures on a minor planet of a very average star in the outer suburbs of one of a hundred billion galaxies. So it is difficult to believe in a God that would care about us or even notice our existence.’

এই মহাবিশ্বে আকৃতিগত দিক থেকে হতে পারি আমরা অতি তুচ্ছ নগন্য অপ্রয়োজনীয় এক জৈবিক অস্তিত্ব। কিন্তু বৈচিত্রের দিক দিয়ে আমরা মানুষেরা কি এক বিস্ময়কর প্রাণী নই? আমরাই তো একমাত্র প্রাণী যারা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে গান রচনা করি, অথবা সাগর পাড়ে দাড়িয়ে লিখে ফেলি পাতার পর পাতা কবিতা। আমাদের মাঝেই তো জন্ম নেয় রবীন্দ্র-নজরুল-সুকুমার। সেক্সপেয়ার লিখে ওথেলো অথবা জন্ম দেয় রোমিও-জুলিয়েটের! বিথোফেন বাঁধে সুর। আমরা মানুষেরাই তো ভালবাসি,- ভালোবাসার জন্য মৃত্যুকে বরণ করি হাসি মুখে। আমরা মানুষেরাই তো যৌনতাকে উপভোগ করি চুম্বন অথবা বৈচিত্রময় সঙ্গম লীলায়। আমরা মানুষেরাই তো মাতৃভাষার দাবিতে বুক পেতে দেই বন্দুকের সামনে। আমরা মানুষেরাই তো কেও হই নেলসন ম্যান্ডেলা অথবা মাদার তেরেসা। আমরাই তো সেই মানুষ, যে তার শরীর কেটে অঙ্গ দান করে আরেক মানুষের জন্য। আকৃতিগত সকল তুচ্ছতাকে ছাপিয়ে আমাদের মাঝে এবং এই মহাবিশ্বে আমরাই শ্রেষ্ঠ, এবং অতি তাত্পর্যপূর্ণ এক মহৎ স্বত্বা।

খোন্দকার মেহেদী আকরাম
শেফিল্ড
৯ অক্টোবর ২০১৪

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭

কাব্য পূজারি বলেছেন: ভালো লিখেছেন। এস্ট্রোনমি বিষয়ে আরও কিছু লিখলে সাগ্রহে উপভোগ করব।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৬

নাটশেল বলেছেন: ধন্যবাদ। জেনে ভালো লাগলো যে লেখাটি আপনার পছন্দ হয়েছে!
কিছুদিন আগে আমার ব্লগে অ্যাস্ট্রোনমি রিলেটেড কিছু লিখেছিলাম। কিন্তু লিখাগুলোতে কিছুটা ধর্মীয় বিশ্লেষণ রয়েছে। জানি আপনার কেমন লাগবে। তবে পরে দেখতে পারেন। ধর্ম মানুব জীবন এবং সভ্যতার বাইরে নয়!

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৩৫

কাব্য পূজারি বলেছেন: আমি বুঝলাম না "কেমন লাগবে" বলে কি বুঝাতে চাচ্ছেন?

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

নাটশেল বলেছেন: দুখিত, টাইপ এ ভুল হয়েছে! আমি বলতে চেয়েছিলাম "জানিনা আপনার কেমন লাগবে"। অনেকেই ধর্ম এবং বিজ্ঞানকে এক করা পছন্দ করে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.