নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোন্দকার মেহেদী আকরাম এর ব্লগ

নাটশেল

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। যতদিন ভালো লাগে ততদিন লিখে যাবো।

নাটশেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভার্জিন গ্যালাকটিক বিধ্বস্ত: একটি স্বপ্নের মৃত্যু হাজার স্বপ্নের শুরু!

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:২৬



গত রাতে বিবিসি ফোরে প্রফেসর ব্রায়ান কক্স এর উপস্থাপনায় 'হিউম্যান ইউনিভার্স' নামে ধারাবাহিক একটা ডকুমেন্টারি প্রোগ্রাম দেখছিলাম। সেখানে ব্রায়ান কক্স তার সত্তর দশকের গোড়ার দিকের শৈশব স্মৃতির কথা বলছিলেন। তার সংগ্রহে রাখা ১৯৭২ সালের একটা মহাকাশ বিজ্ঞানের পত্রিকা দেখিয়ে বলছিলেন যে সত্তর দশকে মানুষের স্বপ্ন ছিল তারা মঙ্গল গ্রহে যাবে ২০১৫ সালে! হ্যা, মানুষ হয়ত এখনো মঙ্গলে যেতে পারেনি; তবে তাতে কি? ভার্জিন গ্যালাকটিক নামের যে বিশেষ এক মহাকাশ যান তৈরী করা হয়েছে তাতে করেই সাধারণ মানুষ যাবে মহাকাশে ২০১৫ এর জানুয়ারিতে- এমনই সব পাকা পোক্ত প্ল্যান ভার্জিন গ্যালাকটিক এর মালিক ব্রিটিশ ধনাঢ্য ব্যবসায়ী স্যার রিচার্ড ব্রানসনের! মহাশুন্যে যাওয়ার অগ্রিম টিকেটও বিক্রি হয়ে গেছে। ২,৫০,০০০ ডলারে টিকেট কিনেছে ৭০০ এর অধিক আগ্রহী মানুষ; এদের মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত অভিনেতা টম হ্যাঙ্কস, সেনসেশনাল পপ গায়ক জাস্টিন বিবার সহ আরো অনেক সেলিব্রেটি। সবারই একই স্বপ্ন- মহাকাশ ভ্রমনে যাবে টুরিস্ট হয়ে।

কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত: এ স্বপ্ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেল ৩১ অক্টোবরের এক মাঝ দুপুরে যখন ভার্জিন গ্যালাকটিক এর মহাকাশ যান 'স্পেসশিপ-টু' ৫০ হাজার ফুট উপরে পরীক্ষা মূলক উডডয়নের সময় বিধস্ত হয়ে যায় চোখের নিমিষে! এ দুর্ঘটনায় নিহত হয় কো-পাইলট, কিন্তু ভাগ্য ক্রমে বেঁচে যায় প্রধান টেস্ট পাইলট যে বর্তমানে চিকিত্সারত আছেন। 'স্পেসশিপ-টু' পূর্বেও কয়েকবার টেস্ট ফ্লাইটে আকাশে উড়েছে। তবে এবার এমন কি হলো যে কারণে স্পেস শিপটি মাঝ আকাশে ভস্মিভূত হয়ে গেল? তাহলে কি নতুন ভাবে ডিজাইন করা এই বিশেষ মহাকাশ যান এ বড় ধরনের কোনো 'ডিজাইন ত্রুটি' রয়ে গেছে? নাকি যে নতুন ধরনের 'রকেট জালানী' ব্যবহার করা হয়েছে তা নিরাপদ না? দুর্ঘটনার পর এ দুটো প্রশ্নই এসেছে সবার আগে। যদি এ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে এ দুটির যে কোনো একটি কারণে, তাহলে সাধারণ মানুষের টুরিস্ট হিসেবে বানিজ্যিক ফ্লাইটে মহাকাশ ভ্রমন স্বপ্ন পূরণে সময় লেগে যাবে হয়ত আরও পঞ্চাশ বছর! তবে এ দুর্ঘটনা যদি অন্য কোনো ছোটো খাট কারণে ঘটে তাহলে হয়ত অচিরেই, হয়ত বা দু-তিন বছরের ভেতরেই, মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হবে, অর্থাত প্লেনে ভ্রমণের মত মানুষ অহরহ মহাকাশেও ভ্রমন করবে!

ভার্জিন গ্যালাকটিক এর মহাকাশ যানটির সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক মহাকাশ যান। আমরা সাধারনত দেখি রকেটের মাধ্যমে মহাকাশ যান বা স্পেস সাটেল ভূমি থেকে মহাশুন্যে পাঠানো হয়। আমেরিকা এবং রাশিয়া নিয়মিত এ ধরনের মহাকাশ যান মহাশুন্যে পাঠাচ্ছে। মানুষ চাঁদে গিয়েছে এ ধরনের রকেট চালিত মহাকাশ জানে করেই। তবে সনাতন এ ধরনের রকেট চালিত মহাকাশ যান অত্যাধিক ব্যায় বহুল তাই এ ধরনের মহাকাশ যান দিয়ে বানিজ্যিক ভাবে মহাকাশ ভ্রমণের সেবা দেয়া সম্ভব নয়। এ কথা বিবেচনায় এনেই ভার্জিন গ্যালাকটিক কোম্পানিটি ডিজাইন করেছে সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক মহাকাশ যান। মহাকাশ যানটির দুটি প্রধান অংশ। একটি হলো বিশাল আকৃতির এক ক্যারিয়ার এরো প্লেন 'হোয়াইট নাইট-টু' এবং আরেকটি অংশ হলো 'স্পেসশিপ-টু' যেটি মূলত যাত্রী বহন করে মহাকাশে নিয়ে যাবে। 'স্পেসশিপ-টু' টি 'হোয়াইট নাইট-টু' এর সাথে সংযুক্ত থেকে। ভূমি থেকে 'হোয়াইট নাইট-টু' স্পেস শিপটিকে বহন করে নিয়ে যাবে ৫০,০০০ ফুট উপরে। সেখান থেকে 'স্পেসশিপ-টু' আলাদা হবে এবং স্পেসশিপ- এর সাথে সংযুক্ত থাকা রকেটের মাধমে ৩,৬০,০০০ ফুট (৭০ মাইল) উচ্চতায় পৃথিবীর নিন্ম-কক্ষপথে (Sub-orbit) গিয়ে পৌঁছাবে। মহাশুন্যে স্পেসশিপটি থাকবে ৫ মিনিট যেখানে মহাশূন্য ভ্রমনকারী যাত্রীরা শুন্য গ্রাভিটি'র (Zero Gravity) বা ভর শুন্যতার স্বাদ গ্রহণ করবে! ৫ মিনিট পর 'স্পেসশিপ-টু' যাত্রী নিয়ে ফিরে আসবে পৃথিবীতে এবং ভাসতে ভাসতে অবতরন করবে মাটিতে। এই গোটা পথ পরিভ্রমনে সর্বসাকুল্যে সময় লাগবে ২ ঘন্টা ত্রিশ মিনিট।

স্পেস শিপের এই অবতরণের পদ্ধতিটিকে বলে 'রি-এন্ট্রি'। স্পেসশিপ-টু এর রি-এন্ট্রি পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। রি-এন্ট্রির সময় স্পেসশিপটি একধরনের বিশেষ মেকানিজম ব্যবহার করে যাকে বলে 'ফেদাড়িং' (Feathering) মেকানিজম। সাধারণ বাংলায় বলা যেতে পারে যে রি-এন্ট্রির সময় স্পেসশিপটি পালকের মত ভাসতে ভাসতে নেমে পরে। এই 'ফেদাড়িং' এর জন্য পাইলট সুইচ এর মাধমে স্পেসশিপটির পেছনের দিকের ডানা বা 'টেইল-বুম' কে ৬০ ডিগ্রী কোনে ভাজ করে ফেলে। নিয়ম হচ্ছে স্পেসশিপটি যখন মাক স্পিড ১.৪ (ঘন্টায় ২,৫০০ মেইল বেগ) এ উড়বে তখন এই 'ফেদাড়িং' মেকানিজমকে সক্রিয় করতে হবে। কিন্ত এবার দুর্ঘটনার সময় কো-পাইলট যা করেছে তা হলো 'ফেদাড়িং' মেকানিজমটি সে সক্রিয় করেছে নির্ধারিত সময়ের আগেই যখন যানটি উড়ছিল মাক স্পিড ১ তে! কেন এ ভুল হলো তা এখনো জানা যায়নি।

আশার বিষয় হচ্ছে যে স্পেসশিপ-টু এর প্রধান পাইলট এখনো বেঁচে আছেন। তিনি সুস্থ হয়ে উঠলে হয়ত তার কাছে থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। ক্যালিফোর্নিয়ার মোজাভি মরুভূমিতে স্পেসশিপটির যে ধ্বংসাবশেষ পওয়া গেছে তা থেকে পরিষ্কার যে জালানি ত্রুটির কারণে স্পেসশিপটি বিস্ফোরিত হয় নি। এটা অবশ্য আসার সংকেত। এবং পূর্ববর্তী বেশ কয়েকটি টেস্ট ফ্লাইটে স্পেসশিপটির 'এরো ডায়নামিক' ডিজাইনেও কোনো ত্রুটি ধরা পরেনি। আপাত দৃষ্টিতে যা মনে হচ্ছে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে 'পাইলট এরর' বা অন্য কোনো ছোটো কারণে যেটা সহজেই সংশোধন করা সম্ভব। সেদিক বিচারে মানুষের মহাশূন্য ভ্রমণের স্বপ্ন হয়ত বেঁচে যাবে এ বেলায় এবং হয়ত দু-তিন বছরের ভেতরেই মানুষ প্লেনে ভ্রমণের মত করেই মহাশুন্যে ভ্রমন করবে। জয় হোক আমাদের অসীম স্বপ্ন। প্রাণী জগতে আমরা মানুষেরাই একমাত্র যারা স্বপ্ন দেখি এবং তা বাস্তবায়ন করি। আর এ কারনে আমরা মানুষেরাই শ্রেষ্ট!

[লেখাটিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে: বিবিসি নিউজ, দি গার্ডিয়ান, স্পেস ডট কম এবং ডেইলি মেইল থেকে]

খোন্দকার মেহেদী আকরাম
শেফিল্ড
৫ নভেম্বর ২০১৪

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৪১

খেলাঘর বলেছেন:

টেকনোলোজীর জন্য এটাই স্বাভাবিক পথ।

২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১১

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: সফলতার পিছনে কিছু বিফলতা থাকবেই । তবুও মানুষ চেষ্টা করেই ।

October sky মুভি প্রসঙ্গ মনে আসলো এখন । ওদের চেষ্টা ।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৫

নাটশেল বলেছেন: মুভিটা দেখা হয় নাই, দেখতে হবে।

৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৪২

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
স্বপ্নের মৃত্যু হয়না, বেঁচে থাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ...

৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৩

খেলাঘর বলেছেন:

"পেশায় আমি একজন চিকিত্সক এবং গবেষক। বর্তমানে পোস্ট-ডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কাজ করছি শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি'র রেসপিরেটরি মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট এ। "


-ভালো, দেশের মানুষের চিকিৎসা করার কোন ভাবনা চিন্তা আছে মনে?

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৫

নাটশেল বলেছেন: দেশে ভালো চিকিত্সকের অভাব নেই। আর এ কারনেই আমার স্বশরীরে দেশে উপস্থিত থাকার তেমন একটা প্রয়োজনীয়তা নেই! তবে দেশের সাথে সবসময়ই আত্মিক ভাবে জড়িয়ে আছি।

৫| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৭

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালোই লিখেছেন ভ্রাতা ।

শুভেচ্ছা :)

৬| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৮

খেলাঘর বলেছেন:


মানুষ ভারত ও থাইল্যান্ড যায় কেন?

প্রেসিডেন্ট কেন মাউন্ট এলিজাবেথে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.