নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোন্দকার মেহেদী আকরাম এর ব্লগ

নাটশেল

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। যতদিন ভালো লাগে ততদিন লিখে যাবো।

নাটশেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাস্তিকতার মৌলবাদিতা বনাম বিজ্ঞগণের আস্তিকতা!

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১১



হিন্দু শাস্ত্র মতে এখন যে কাল চলছে তা হলো 'কলি কাল'। আর সাধারণের মাঝে এ' কাল পরিচিত 'আধুনিক কাল' হিসেবে। আমার কাছে অবশ্য আধুনিক কাল বলে কোনো কাল নেই! আপেক্ষিকতার বিচারে আমরা কালকে ভাগ করি: অতীতকাল, বর্তমান কাল এবং ভবিষ্যত কাল হিসেবে। আর নিজেদের অস্তিত্বকে সর্ব শ্রেষ্ট বলে জাহির করতে আমরা আমাদের 'বর্তমান কালকে' বলি আধুনিক কাল! কিন্তু একটু চিন্তা করলে এটা সহজেই অনুমেয় যে আজ থেকে ২,৪০০ বছর আগে সক্রেটিস অথবা প্লেটো তাদের জীবদ্দশায় কখনোই ভাবেন নি যে তারা অতীত কালে বসবাস করছেন অথবা অনাধুনিক কোনো সমাজে তারা পান্ডিত্য করছেন। কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও অথবা নিউটন কি ভেবেছিলেন যে তারা অনাধুনিক কোনো সমাজে বসবাস করছেন? অথবা বর্তমান সময়ের নওয়াম চম্স্কি-ই বা কি ভাবছেন? উনি কি ভাবছেন উনি আধুনিক সময়ের দার্শনিক আর ভুতপুর্বগন সবাই ছিলেন অনাধুনিক? যাই হোক, সময়-কাল নিয়ে কথা বলার কোনো ইচ্ছা আজ আমার নেই। আজ কথা বলছি ভিন্ন এক প্রসঙ্গে।



ইদানিং প্রায়ই একটা কথা শোনা যায়, এমন: "আপনি একজন আধুনিক মানুষ, বসবাস করছেন আধুনিক বিশ্বে; আপনি কিভাবে ধর্মে বিশ্বাস করেন?" অথবা এই রকম: "শিক্ষিত হয়েও আপনি আল্লাহ/গড/ভগবান বিশ্বাস করেন; তাহলে 'ভুত-প্রেত' বিশ্বাস করতে দোষের কি?" কিছুদিন আগে ব্রিটিশ টিভিতে একটা অনুষ্ঠানে দেখলাম বিশিষ্ট জীব বিজ্ঞানী এবং স্বনামধন্য লেখক রিচার্ড ডকিন্স অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালের স্কলার বিশিষ্ট সাংবাদিক মেহেদী হাসান কে প্রশ্ন করছেন, এই রকম: "মি: হাসান, আপনার মত একজন শিক্ষিত মানুষ কিভাবে গড, এন্জেল ইত্যাদি বিশ্বাস করে আমার মাথায় আসে না!"-- এখানে আমি শুধু কয়েকটি উধারণ দিলাম মাত্র। গোটা অবস্থাটা এমন যে ধর্মে বিশ্বাস করাটাই যেন এখন এক বড় 'নির্বুদ্ধিতা'! এ যেন গো-দুদ্ধে এক ফোটা চোণা পড়ার মত অবস্থা। আপনার সকল শিক্ষা, জ্ঞান, প্রজ্ঞা সবই বৃথা যদি আপনি বিশ্বাস করেন সৃষ্টিকর্তা অথবা অনুসারী হোন কোনো ধর্মের। এই তথাকথিত আধুনিক সমাজের আধুনিক শিক্ষিত মানুষের কাছে শিক্ষিত অথবা অশিক্ষিত ধর্ম বিশ্বাসীরা সবাই এক বিশেষ এলিয়েন 'স্টেরিওটাইপ'! কথা বাড়ানোর আগে রিচার্ড ডকিন্স কে পরিচয় করিয়ে দেই। অনেকেই অবশ্য তাকে চিনেন। উনি আমার এক প্রিয় লেখক। আমি খুব বেছে বেছে বই পড়ি। তবে ওনার বহুল আলোচিত ‘Selfish Gene’, ‘The Greatest Show on Earth’, 'The God Delusion' বই গুলো আমার সংগ্রহে আছে। খুবই থট-প্রভোকিং লিখা লিখেন তিনি। উনি একজন স্বনামধন্য নাস্তিকও বটে। তিনি নিজেকে বলেন 'De facto atheist', অর্থাত তিনি শতভাগ নিশ্চিত না যে সৃষ্টি কর্তা আছে কি নেই! তবে প্রব্যাবিলিটির বিচারে তিনি মনে করেন সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা খুবই কম, আর সে কারণেই তিনি de fecto ateist. এখানে প্রাসঙ্গিক কারণে বলে রাখি যে, 'কট্টর নাস্তিক' বা ‘Strong atheist’ বলে আরেকটি গ্রুপ আছে, যারা ১০০ ভাগ নিশ্চিত যে সৃষ্টি কর্তা নেই! মজার ব্যাপার হলো যে সমস্ত কট্টর নাস্তিক 'ডকিন্স, ডকিন্স' করে চিল্লা পাল্লা করে তাদের গুরুই de fecto ateist--যার 'অবিশ্বাসের (disbelief)' মধ্যে রয়েছে কিছুটা অনিশ্চয়তা! যাই হোক, এখন প্রসঙ্গে আসা যাক। তার আগে বলে রাখি, আজকের লিখাটা কোনো বিশেষ ধর্মকে ঘিরে নয়। আজকের প্রসঙ্গ হলো এটা বিশ্লেষণ করা যে: 'সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস একজন মানুষের জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং শিক্ষার সাথে কতটুকু সাংঘর্ষিক?'



অনেক নাস্তিকের মত রিচার্ড ডকিন্সও সবসময় 'সৃষ্টিকর্তায়-বিশ্বাসীদের' প্রতি তার বক্তব্য এবং লিখার মাধ্যমে অবজ্ঞা প্রকাশ করে থাকেন। তিনি সর্বদায়ই বলে বেড়ান যে: ধর্মের মত একটা ভ্রান্ত বিষয়ে শিক্ষিত মহল কিভাবে বিশ্বাস স্থাপন করেন, অথবা ধর্মের জন্য সময় এবং অর্থ ব্যয় করেন! ধর্মকে দুষার জন্য তিনি সংখ্যালঘু গুটিকয়েক 'ধর্মীয় মৌলবাদীদের' কু-কর্ম গুলোকে সামনে টেনে আনেন। সাধারণ ধর্ম বিশ্বাসীদের তিনি গণ হারে মৌলবাদীদের কাতারে ফেলতেও দ্বিধাবোধ করেন না! এ ধরনের ব্যবহার সম্প্রতি আমরা দেখেছি বাংলাদেশী তথাকথিত 'ব্লগার' নাম ধারী গুটি কয়েক 'কু-শিক্ষিত' শ্রেনীর মধ্যে। আমি তাদের নাম উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করি না। আমি তাদেরকে ঘৃনা করি এই জন্য নয় যে তারা নাস্তিক; আমি তাদের ঘৃনা করি কারণ তারা কু-শিক্ষিত। কু-শিক্ষিতদের বহি:র্প্রকাশ সবসময়ই নোংরা এবং দুর্গন্ধ যুক্ত হয়। প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমার প্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হলো আইনস্টাইন আর, আরেক জন হলো রিচার্ড ফাইনম্যান। এই দুজনেই কিন্তু নাস্তিক। কিন্তু তারা সুগন্ধের সুবাস ছড়িয়ে দিয়েছেন চার দিকে; তাদের জ্ঞানের আলোতে আলোকিত করেছেন সারা বিশ্ব। আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ যে বলেছেন যে তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন সর্বশ্রেষ্ট হিসেবে; এই আইনস্টাইন এবং রিচার্ড ফাইনম্যান হলো তার দুটো জলন্ত উধারণ। যাই হোক প্রসঙ্গে ফিরে আসি।



রিচার্ড ডকিন্স এর ঢালাও ভাবে সকল ধর্ম বিশ্বাসীদের 'মৌলবাদী' আখ্যা দেয়াটা শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী সমাজ যে ভালো ভাবে গ্রহণ করেনি তা ২০১৩ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরুস্কার বিজয়ী ব্রিটিশ বিজ্ঞানী প্রফেসর পিটার হিগস এর উক্তি থেকেই বোঝা যায়। আমি ওনার উক্তিটি সরাসরি তুলে দিচ্ছি:



Higgs said, "What Dawkins does too often is to concentrate his attack on fundamentalists. But there are many believers who are just not fundamentalists." He added, "Fundamentalism is another problem. I mean, Dawkins in a way is almost a fundamentalist himself, of another kind."



(Source: The Guardian, 26 December 2012)



পাঠকগণ, হিগস এর এই উক্তি দেখে আবার এটা ভেবে বসার কোনো কারণ নেই যে হিগস সাহেব একজন 'আস্তিক' মানুষ, তাই তিনি নাস্তিকদের হেও করার জন্য উপরের উক্তিটি করেছেন। পিটার হিগস একজন পুরোদস্তুর নাস্তিক। তবে তিনি বিশ্বাস করেন 'ধর্ম' এবং 'বিজ্ঞান' পরস্পর অ-সাংঘর্ষিক এবং খুব ভালো ভাবেই সহাবস্থান করতে পারে। যাইহোক, প্রসংগে ফিরে আসি, উপরের উক্তিটি থেকে এটা পরিষ্কার যে রিচার্ড ডকিন্স এর কথায় হিগস এক বিশেষ মৌলবাদিতার গন্ধ পেয়েছেন। আমার মতে এটা হলো 'নাস্তিকতার মৌলবাদিতা'। মৌলবাদিতা জিনিসটাই খারাপ- আলকায়দা খারাপ, বোকো হারাম খারাপ, মৌলবাদী নাস্তিকতা খারাপ। Ignorance এবং intolerance থেকে জন্ম নেয় মৌলবাদিতা বা fundamentalism. আর এ কারনেই কোরান স্পষ্টভাবে এই দুটো 'দুষ্ট-গুন' কে পরিহার করতে বলেছে। এই দুটো ‘দুষ্ট-গুন’ ধর্ম এবং অধর্ম উভয়কেই দুষিত করে, -পরস্পরকে দাড় করায় এক অনাকাঙ্খিত সাংঘর্ষিক অবস্থানে। তৈরী করে চরম অশান্তি, যা সৃষ্টি কর্তা এবং আমরা কেউই চাইনা।



এখন দেখা যাক শিক্ষিত, দার্শনিক এবং বিখ্যাত বিজ্ঞানীগণ ধর্ম বা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন কি না। তার আগে বলে নেই, অনেক অশিক্ষিত এবং অজ্ঞ লোক ধর্ম বা সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস করে না, এবং এদের মধ্যে অনেকেই জানে না কেন তারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী নয়! এই শ্রেণী সম্পর্কে আমার কোনো আগ্রহ নেই, তাই কোনো বক্তব্য ও নেই। তবে আমি এখন কয়েক জনের নাম উল্লেখ করব, পাঠক গণ হয়ত এদের অনেক কেই চিনে থাকেবন। প্রথমেই যাদের নাম করব, তারা হলেন: সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল; এই তিন মহা দার্শনিক যাদের জীবনাবসন ঘটেছে যিশু খ্রিস্টের জন্মের বহু পূর্বে, এদের সৃষ্টি কর্তা সমন্ধে দর্শন কি ছিল? সক্রেটিস সমন্ধে তেমন বিশদ জানা যায় না; তার পরও বিশিষ্ট দর্শন শাস্ত্রের অধ্যাপক জোসেফ ওয়ালিগর (Joseph Waligore) এর গ্রিক দর্শন গবেষণা পত্র থেকে এটা জানা যায়, যে সক্রেটিস ছিলেন Divinity (স্বর্গীয় বিষয়াদি) তে বিশ্বাসী। তিনি নিয়মিত উপাসনা করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন সৃষ্টিকর্তা বলে কেও আছেন, যিনি জ্ঞানী এবং সকল ভালো কিছু তারই অবদান। জোসেফ ওয়ালিগর গবেষণা পত্র থেকে এ প্রসঙ্গে আমি কয়েকটি চরণ তুলে দিচ্ছি পাঠকদের জন্য:



“……the assumption that “gods know all things” (Memorabilia, 1.1.19) and are truly wise. (Apology, 23a) As he (Socrates) thought wisdom and virtue was the same thing, this meant the god was completely good and virtuous. He also thought all good things came from god. (Euthyphro,15a; Republic, 379c).”



সক্রেটিস এর ছাত্র, আরেক মহা জ্ঞানী এবং দার্শনিক, প্লেটো অনেকাংশেই সক্রেটিস এর 'ভাবধারা'র ব্যাপ্তি ঘটিয়েছেন। সক্রেটিস এর মত প্লেটোও Divinity তে বিশ্বাসী ছিলেন, এবং ভাবতেন সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন সকল ভালো'র উত্স। এখন দেখি এরিস্টেটল এর ধারণা কি ছিল সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে। এরিস্টেটল এর মতে সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন সর্ব শক্তিমান এবং তার ভাষায় ‘Unmoved mover'। এই সৃষ্টিকর্তাই সবকিছু চালিত করছেন কিন্তু সৃষ্টিকর্তা নিজে 'অনড়' যা এরিস্টেটল এর ভাষায় 'Unmoved'. বিশিষ্ট পন্ডিত এবং দর্শন শাস্ত্রের অধ্যপক এনরিকো বার্তি (Enrico Berti) এরিস্টটলের ধর্ম-দর্শন সমন্ধে বলেন এই রকম (আমি সরাসরি কয়েকটি লাইন তুলে দিলাম):



“Aristotle's God has not the sufficient characters to be exactly the God of the Bible. But the characters he has, i. e. transcendence, intelligence, infinite power, are necessary for being the God of the Bible, in the sense that they are the necessary conditions for a creator God.”



সুতরাং, উপরের আলোচনা থেকে এটা পরিষ্কার যে সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল এই তিন দার্শনিকই সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী ছিলেন; অর্থাত তারা ছিলেন আস্তিক। বাংলাদেশের অনেক পন্ডিত আরজ আলী মাতব্বরকে সম্বোধন করে থাকেন 'বাংলাদেশের সক্রেটিস' বলে। আরজ আলী মাতব্বর ছিলেন স্বশিক্ষিত এবং খুবই প্রতিভাবান একজন লেখক। তিনি ছিলেন নাস্তিক। তার লেখনীর মধ্যে দিয়ে তিনি আমাদের সামনে অনেক গুলো প্রশ্ন রেখে গেছেন, যেগুলো সয়ং সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকে চ্যালেজ করে! আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়ি তখন আরজ আলী মাতব্বরের কয়েকটি বই পরেছিলাম। এখন ও আমার সংগ্রহে তার 'রচনা সমগ্র -১ এবং 'রচনা সমগ্র -২' আছে। আমি জোর গলায় বলতে পারি, আরজ আলী মাতব্বরের লেখনীতে যে 'জীবন' আছে তার বিন্দু মাত্র জীবন ঐসমস্ত কু-শিক্ষিত তথাকথিত ব্লগারদের মধ্যে নেই যারা সারাক্ষণ 'আরজ আলী, আরজ আলী' বলে চিত্কার চ্যাচামেচি করে আর খোদা-নবী-ধর্মকে অকথ্য গালিগালাজ করে। সে যাই হোক, মজার ব্যাপার হলো: বাংলার সক্রেটিস ছিলেন একজন নাস্তিক আর আসল সক্রেটিস ছিলেন আস্তিক! কু-শিক্ষিত তথাকথিত ব্লগাররা কি তাহলে এখন বলবে যে সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল ওরা সবাই ছিল 'অনাধুনিক' আর তাই তারা 'আস্তিক'? সেলুকাসই জানে এর উত্তর!



এতক্ষণ আমি যাদের কথা বললাম, তারা সবাই প্রাক-খ্রিস্টীয় সময়ের। এখন আমি বলব তাদের নাম যাদের জন্ম খ্রিস্টাব্দ সময়ে। প্রথমেই আনবো কোপার্নিকাস এবং গ্যালিলিও এর নাম। এ দুজনই আধুনিক জোতির্বিদ্যা এবং পদার্থ বিদ্যার প্রবর্তক। কোপার্নিকাস ছিলেন একজন ধার্মিক এবং বিশ্বাস করতেন যে সৃষ্টিকর্তাই এই মহা বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। গ্যালিলিও ও সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করতেন এবং ছিলেন খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী। তিনি তার বোন কে পাঠিয়েছিলেন চার্চে, 'নান' হওয়ার জন্য! কোপার্নিকাস এবং গ্যালিলিও এর তত্ব এবং আবিষ্কার বাইবেল এর সাথে সাংঘর্ষিক হলেও বিজ্ঞানিদ্বয়ের জ্ঞান বা প্রজ্ঞার সাথে তাদের ঈশ্বর-বিশ্বাসের কোনো সংঘর্ষ ছিল না। ঠিক একই ভাবে জোহান কেপলার, মাইকেল ফ্যারাডে, রবার্ট বয়েল, ম্যান্ডেল, প্যাসকেল, ইউলিয়াম থমসন কেলভিন প্রভূত বিজ্ঞানীরা সবাই ছিলেন মূলত আস্তিক, সবাই বিশ্বাস করতেন সৃষ্টিকর্তা আছেন। আমরা অনেকেই Quantum Theory এর নাম শুনেছি। Quantum Theory সৃষ্টি যার হাত ধরে তিনি হলেন ম্যাক্স প্ল্যান্ক। আর এই ম্যাক্স প্ল্যান্ক ও বিশ্বাস করতেন সৃষ্টিকর্তা এবং ধর্মে। ১৯২০ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি চার্চ ওয়াড্রেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন!



এখন আমি যে বিজ্ঞানীর কথা বলব তার নাম শুনে নাই এমন কোনো শিক্ষিত ব্যক্তি এই পৃথিবীতে নেই! তিনি হলেন মহা বিজ্ঞানী নিউটন। সর্ব সম্মত ভাবে এটা বলা হয় যে এ পৃথিবীতে এ যাবত যত বিজ্ঞানী এসেছেন নিউটন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। নিউটনের হাত ধরেই জন্ম নিয়েছে আধুনিক পদার্থ বিদ্যা এবং ক্যালকুলাস। গতি বিদ্যা, অভিকর্ষ, আলোক বর্ণালী এ সবই তার অবদান। এই নিউটন ও ছিলেন একজন আস্তিক এবং পুরোদস্তুর খ্রিস্টান ধার্মিক। ১৬৭০ থেকে মৃত্যর আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ৩০ বছর তিনি অধ্যায়োন করেছেন বাইবেল এর অদ্দপান্ত। বাইবেল এবং স্রষ্টা সম্পর্কে তিনি লিখে গেছেন ৩০ লক্ষ্যাধিক শব্দের পান্ডুলিপি! তিনি আবিস্কার করেছেন গাণিতিক ক্রম অনুসারে বাইবেল পড়ার পদ্ধতি। বাইবেল এ বর্ণিত সময়-ক্ষণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হিসেব কষে তিনি নির্দিষ্ট করে গেছেন যে, ২০৬০ এর আগে কেয়ামত বা আর্মাগেডন হবে না! কিন্তু তিনি কখনোই বাইবেলের 'হোলি ট্রিনিটি' ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেন নি। তার মতে স্রষ্টা একজনই। যিশু কোনভাবেই স্রষ্টা নয়। তত্কালীন সময়ে 'হোলি ট্রিনিটি' তে অবিশ্বাস এক গর্হিত অপরাধ। আর এ কারনে প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কায় নিউটন তার ধর্মীয় গবেষণা বিষয়ক পান্ডুলিপি তার জীবদ্দশায় কখনোই প্রকাশ করেন নি! নিউটনের মৃত্যর ৩০০ বছর পর তার রেখে যাওয়া এই পান্ডু লিপি জন সমুক্ষে উম্মোচিত হয়। এখন ‘The Newton Project’ নামে একটা আন্তদেশীয় প্রজেক্ট এর মাধ্যমে এই পান্ডুলিপির উপর গবেষণা চলেছে। অন্য একদিন সময় পেলে হয়ত নিউটনের ধর্ম বিষয়ক গবেষণার বিষয় বস্তু নিয়ে আলোচনা করা যাবে। তাহলে কি দাড়ালো? মহাবিজ্ঞানী নিউটনও আস্তিক! তার মত শিক্ষিত, প্রজ্ঞাময়, চৌকস বিজ্ঞানীও সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করত?



এ সমস্ত দেখে বিরক্ত হয়ে রিচার্ড ডকিন্স বলেন যে, উনবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীরা আস্তিক ছিল তার কারণ হলো গবেষনার জন্য ফান্ডিং। তার মতে উনবিংশ শতাব্দীর চার্চ নিয়ন্ত্রিত সমাজ ব্যবস্থায় সৃষ্টিকর্তাতে বিশ্বাস না আনলে বিজ্ঞানীগণ গবেষনার জন্য ফান্ডিং পাবে না, আর এই ভয়েই উপরেল্লখিত বিজ্ঞানীগণ আস্তিক ছিলেন! তার মানে রিচার্ড ডকিন্স এর এই কথা কি এটা বলছেনা যে উনবিংশ শতাব্দির বিজ্ঞানীগণ 'হিপোক্রেট' ছিলেন? তারা বিশ্বাস করত এক আর কার্যকারণ করত আরেক? আমার মনে হয় না এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীগণ তাদের বিশ্বাস এবং সত্বা বিকিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র গবেষনার জন্য মিথ্যেমিথ্যি আস্তিকতার লেবাস গায়ে জড়িয়ে রাখত। আর তাছাড়া আমরা তো অনেকেই জানি যে কোপার্নিকাস এবং গ্যালিলিও চার্চের পাদ্রী দ্বারা কতটা যন্ত্রণা ভোগ করেছে তাদের গবেষনার জন্য। রিচার্ড ডকিন্স এর ধারণা যে সঠিক না তা প্রমানের জন্য কয়েক টি উদহারণ দেয়া যাক।



উইলিয়াম ড্যানিয়েল ফিলিপস, যুক্তরাষ্ট্রের পদার্থবিদ, উনি পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পুরুস্কার পেলেন ১৯৯৭ সালে। তিনি একজন পুরোদস্তুর আস্তিক লোক এবং “International Society for Science & Religion” সংস্থার এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য! তার একটা সুন্দর উক্তি আছে তা হলো: "Rubidium is God's gift to Bose–Einstein condensates." এখন তাকাই আরেক জার্মান বিজ্ঞানী জেরহার্দ এরটল (Gerhard Ertl) এর দিকে, তিনি রসায়ন শাস্ত্রে নোবেল পুরুস্কার পেলেন ২০০৭ এ। আপনি কি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী? এর উত্তরে জেরহার্দ বলেন, “"Translated from German: Oh, yes, I believe in God. I am a Christian and I try to live as a Christian. I read the Bible very often and I try to understand it." সব শেষে, ফ্রান্সিস কলিন্স (Francic Collins) এর কথা না বললেই নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত "National Institutes of Health (NIH) " এবং Human Genome Project এর পরিচালক। এছাড়াও তিনি Institute of Medicine এবং National Academy of Sciences এর নির্বাচিত সদস্য। বিজ্ঞানে অবদান রাখার জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে Presidential Medal of Freedom এবং National Medal of Science দিয়ে। এই ফ্রান্সিস কলিন্স একজন খ্রিস্টান এবং পূর্ণ ভাবে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী। তার লেখা “The Language of God: A Scientist Presents Evidence for Belief” বইতে তিনি বলেন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হচ্ছে, তার ভাষায়, "opportunity to worship". সুতরাং, উপরের উদহারণ গুলো থেকে এটা পরিষ্কার যে বর্তমান সময়ের শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গও ধর্ম বা সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস করে। পরিশেষে, যুক্ত রাষ্ট্রের রাইস বিশ্ব বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এলিন হাওয়ার্ড এক্ল্যান্ড (Elaine Howard Ecklund) এর ‘Science vs. Religion’ গবেষণা পত্রের সারসংক্ষেপ তুলে দিচ্ছি পাঠকদের জন্য:



এলিন হাওয়ার্ড এক্ল্যান্ড বলেন: “Science vs. Religion presents the findings from the first systematic study of what scientists actually think and feel about religion. In the course of my research, I surveyed nearly 1,700 scientists and interviewed 275 of them. It turns out that most of what we believe about the faith lives of scientists at elite universities is wrong. Nearly 50 percent of them are religious. Many others are “spiritual entrepreneurs,” seeking creative ways to work with the tensions between science and faith outside the constraints of traditional religion. And a number of scientists are searching for “boundary pioneers” to cross the picket lines separating science and religion. Only a small minority are actively hostile to religion.”



শেষ কথা না লিখে বিবেচনার ভার রেখে দিলাম পাঠকদের জন্য। সৃষ্টি কর্তায় বিশ্বাস কি মানুষকে বোকা বানায় এটা বোঝার ভার ও পাঠকদের। যে সমস্ত নাস্তিক গণ মনে করেন সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করা মানে নির্বুধিতা, অনাধুনিকতা তাদের জন্যও আমার এই লেখা। এই পৃথিবীতে যে দুষ্ট, নোংরা আস্তিকও বসবাস করে সেটাও স্বীকার করে আমার লেখাটি শেষ করলাম।



খোন্দকার মেহেদী আকরাম

শেফিল্ড,

৬ ডিসেম্বর ২০১৪



[Modified version: Re-post. First posted here on 10th June 2014]

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৩৩

খেলাঘর বলেছেন:


আপনার মগজ কাজ করছে তো?

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:২৮

পাগলাগরু বলেছেন: চুলকায়?

৩| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬

মো্ মনির হোসেন বলেছেন: 1000 like

৪| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩০

শরীফ িবিড বলেছেন: Thanks for your article. Now we are in time where faith, trust are demolishes by some Hippocratic people who say that they are atheist but actually they are not. It very difficult to become an atheist rather than theist as theism is internally build up in human mind that is the uniqueness than other being.

Human development

৫| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: নাস্তিকতার ভেক কারা ধরে?

যারা ধর্মের নৈতিক বিধি বিধানের কারণে স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপন করতে পারেনা!
যারা ধর্মের মৌলিক রস আস্বাদন করতে পারে না।!
যারা জ্ঞানের মাত্র একপিঠ দর্শন করেই ভাবে মুই কি হনুরে!!!

তারা অনেক জ্ঞানী ভাব ধরে- কিন্তু ধার্মিকের দোষ বা অজ্ঞতা যে ধর্মের দোষ বা অজ্ঞতা নয়- এই সাধারন সত্যটুকু বোঝেনা বা বুঝেও নিজেদের স্বার্থের ইগনোর করে।

তাদেরকে ছেড়ে দিন! আল্লাহর ঘোষনা মতো- আমি তাদের দিয়েছি নিদির্ষ্ট সময়! এরপর যখন তাদের পাকড়াও করব তখন তারা বুঝতে পারবে সত্য কি?

তাদের ব্যাপারেই আরও বলা আছে-
যদি আমি আসমান থেকে সিড়ি নামিয়ে দিই- আর তারা তা দিয়ে উর্ধারোহসও করতে থাকে- তারা বলবে যে আমরাতো মাহবিষ্ট বা যাদুগ্রস্থ!!!

তারা কখনোই বিশ্বাস করবে না। কারণ তাদের হৃদয় মোহরাঙ্কিত!!

দারুন পোষ্টে +++

৬| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯

ইমরান আশফাক বলেছেন: অন্য একদিন সময় পেলে হয়ত নিউটনের ধর্ম বিষয়ক গবেষণার বিষয় বস্তু নিয়ে আলোচনা করা যাবে।

অপেক্ষায় থাকলাম।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:০৯

নাটশেল বলেছেন: একদমই সময় করতে পরছিনা! সময় পেলে লেখার ইচ্ছা আছে। সাথেই থাকবেন। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.