নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাঙ্গালী। বাংলা আমার অহংকার।

অচেনা হিমালয়

কোনটা বাস্তব, কোনটা কল্পনা, কোনটা আলো, কোনটা হতাশা, কোনটা ছায়া, কোনটা মরিচিকা......। অচেনা হিমালয়ের জগতে সব মিলে-মিশে একাকার......!!

অচেনা হিমালয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের আতঙ্ক মালিটোলার নাদের গুণ্ডা

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫১


মালিটোলার নাদের গুণ্ডা
মালিটোলার নাদেরের কথা জানেন আপনারা ? আমি নিশ্চিত ২০০ থেকে ৩০০ এর বেশী জন জানেন না এই অসম সাহসী মানুষটির বীরগাঁথা। না, নাদেরের কোন রাষ্ট্রীয় পদক নেই, নাদের ছিল নাদের গুন্ডা। মালিটোলার বিখ্যাত নাদের গুন্ডা। স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশের গুন্ডা-মাস্তান’দের আভিজাত্য ছিল বৈকি। ছিল পরমত সহিষ্ণুতা। ছিল মুরুব্বিদের প্রতি অন্তর থেকে সম্মান। বর্তমানের ছ্যাঁচড়া, লুম্পেনদের সাথে নাদের গুন্ডাকে মেলাবেন না কেউ। নাদের হল ঢাকা কেন্দ্রিক গেরিলা যোদ্বাদের মাঝে সবচেয়ে কম পরিচিত নাম। আমাদের ইতিহাসে নাদের গুণ্ডার ঠাই হয়নি। নাদেরের তাতে বয়েই গেছে। নাদের গুন্ডা দেখিয়েছিল এই দেশের জননীরা কাপুরুষ জন্ম দেয়না, জন্ম দেয় নাদেরের মতো দুঃসাহসী বীর।


মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের আতঙ্ক নাদেরের অসীম বীরত্বগাথা আজ খুব কম লোকেরই জানা। বংশালের বয়োবৃদ্ধ প্রাচীন লোকেরও ভাসা ভাসা মনে করতে পারেন সেই সময়ের কাহীনি। সুসজ্জিত পাকিস্তানী আর্মি ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে শহীদ নাদেরর অসম লড়াইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন দুলু গুন্ডা (চিত্র নায়ক ফারুক )।২৫ মার্চের রাতে পাকি জানোয়ার বাহিনী যখন ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙ্গালীর ওপর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে তখন ঢাকার মানুষের পালাবার রাস্তাও ছিলনা।
কিন্তু ব্যতিক্রম ছিল নাদের। চারিদিকে গুলি, কামান আর মর্টারের গোলাগুলিতে নাদের বুঝতে পারে কি ঘটছে সাথে সাথে সে নিজের মতো করে তৈরি হয়ে যায়। পাকি আর্মির কনভয় বংশালে ঢোকার সাথে সাথে নাদের একটি দেশী বন্দুক নিয়ে ছাদ টপকে টপকে ঈসা ব্রাদার্সের ছাদে গিয়ে পজিশন নয়। বন্দুকের রেঞ্জের মধ্যে আসার সাথে সাথেই নাদেরের গুলিতে লুটিয়ে পড়ে কয়েকজন পাক আর্মি। অবিশ্বাস্য এই আক্রমণে পাক আর্মি তৎক্ষণাৎ ফিরে যায়। নাদেরর আক্রমণে হায়েনার মতো ক্ষিপ্ত পাকি আর্মিরা শক্তি সঞ্চয় করে ঝাপিয়ে পড়ে বংশাল, নয়াবাজার, আবুল হাসানাত রোড, কাজী আলাউদ্দিন রোডের বিভিন্ন বাড়িতে।

প্রথম দিকে তাদের টার্গেট শুধু হিন্দু বাড়ির প্রতি হলেও প্রতিরোধের সম্মুখীন হওয়ায় তারা নির্বিচারে বাড়ি ঘরে আগুন দিতে থাকে। সে যাত্রা নাদের পালিয়ে গেলেও পুরান ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বন্ধু বান্ধব আত্নীয় স্বজনের সহায়তায় তার গেরিলা অপারেশন অব্যাহত রাখে। নাদেরর অস্ত্রের যোগানদাতা ছিলা সংগ্রাম নামে এক পাঞ্জাবী। অর্থের বিনিময়ে এসব অস্ত্র সংগ্রহ করে দিত।

ইতোমধ্যে শান্তিকমিটির দালালরা সংঘটিত হওয়ায় এলাকায় ঘোরাফেরা সমস্যা হয়ে দাড়ায়। মে মাসের শেষের দিকে আরমানীটোলায় পাকিস্তানী দালালদের প্রধান খাজা খায়েরউদ্দিনের সভায় আক্রমনেরর প্রস্তুতি নেয় নাদেরর দল। এই সভায় আক্রমনের জন্য দরকার অনেক অস্ত্র। সংগ্রাম অস্ত্র সাপ্লাইয়ের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং সেমতে নাদের তার বাহীনি নিয়ে আর্মেনীয় চার্চে অবস্থান নেয়। যথাসময়ে সংগ্রাম হাজির হয় অস্ত্রের চালান নিয়ে । কিন্তু নাদেরের ওয়াচ গার্ডরা দেখতে পেল অস্ত্র নিয়ে আসছে সংগ্রামের লোকজন নয়, পাক আর্মিরা। সাথে সাথে নাদের সংগ্রামকে গুলি করে মেরে ফেলে।
ততক্ষনে পাক আর্মীরা চারিদিক দিয়ে ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে। নাদের তার বাহীনী নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে। নাদের-হারুণ দুই সহোদর এবং বন্ধু সোহরাব পাক আর্মীর ওপর গুলি চালিয়ে বাকীদের কভার দেয়। একপর্যায়ে হারুণ ও সোহরাবকে গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়তে দেখে নাদের সড়ে পড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু দেয়াল টপকানো অবস্থাতেই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয় সে। আহত নাদের আশ্রয় নেন বেচারাম দেউড়ির বস্তিতে।
চারিদিকে চিরুনী অভিযান করতে করতে পাক আর্মিরা বস্তিতে হাজির হয়। বস্তির লোকজন জানের ভয়ে আহত নাদেরকে ধরিয়ে দেয়। নাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। পাক আর্মির বর্বর নির্যাতনের মুখেও নাদের নিজের ও সহযোগীদের পরিচয়ের বিষয়ে মুখ খোলেনি। তারপরই বংশালের আরেক রংবাজ শান্তি বাহিনীতে যোগ দেয়া খুনি গেদা গুন্ডাকে নেয়া হয় ক্যান্টনমেন্টে। সেখানে গেদা সনাক্ত করে নাদেরকে। সেনারা উল্লসিত হয়, পৈশাচিকভাবে গেদার সামনেই হত্যা করে নাদেরকে যার বিবরণ পুরা বংশাল জুড়ে প্রচার করে গেদা। এভাবেই সমাপ্তি ঘটে পুরানো ঢাকার পাকি আর্মি ও রাজাকারদের আতঙ্ক নাদেরের।
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম গেরিলা শহীদ নাদের কিন্তু তার ভাগ্যে বীরত্বের জন্য কোনো খেতাব জোটেনি। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায়ও তার নাম নেই। কোন বিজয় উতসবে ধ্বনিত হয়না নাদেরর নাম। কিন্তু নাদেররা নামের মোহে সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়নি। ৭১ এর মার্চের আগেও যে নাদের পাপী, গুন্ডা, বদমাশ ছিল অথচ তার স্মৃতিতে এখনও পুরান ঢাকার অনেক মানুষের চোখ আদ্র হয়, ঋণী মনে করে, এটাই নাদেরের বড় পাওয়া।
আপনার আজকের প্রার্থণায় নাদেরের নামটি রাখুন, নাদেরের নামের আগে শহীদ ব্যবহার করুন। বিশ্বাস করুন নাদের কিছু পাবার আশায় যুদ্ধে যায়নি, নাদের আপনার জন্য, আমার জন্য, আমাদের জন্য, এই দেশের আপামর নারীপুরুষের জন্য, এই দেশের ঐ প্রানপ্রিয় পতাকার জন্য গিয়েছিল।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


আগে জানা ছিলো না, জেনে ভালো লাগলো

২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০২

রাজীব নুর বলেছেন: এই যোদ্ধার ব্যাপারে আগে কিছুই জানতাম না।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩২

অচেনা হিমালয় বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: স্যালুট শহীদ নাদের ।
আল্লাহ উনার বেহেশত নসীব করুন ।

আপনাকে ও ধন্যবাদ চমৎকার সুলিখিত এই লেখার জন্য ,ছবি গুলো ও ।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৩

অচেনা হিমালয় বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

৪| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৩

অর্ক বলেছেন: খুব ভালো লাগলো মুক্তিযুদ্ধেরর আরেক মহান বীর নাদের গুণ্ডা সম্পর্কে জেনে! দুঃখ পেলাম সেভাবে তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেয়া হয়নি দেখে। অত্যন্ত দুঃখজনক! তাঁর নামে সড়ক ও স্থানীয় কোনও বড় সরকারি স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করার জন্য সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ রইলো। যেমন ক'দিন আগে শহীদ বাকী'কে নিয়ে জনৈক ব্লগারের অনুরূপ একটি পোস্ট দেখেছিলাম। আমি খিলগাঁওয়ে তাঁর নামে মিলনায়তন, লাইব্রেরি ও বোধহয় একটি সক্রিয় ক্লাবও দেখেছি। এভাবে শহীদ নাদের গুণ্ডা'কেও যথাযথ মর্যাদায় মূল্যায়ন করা হোক, এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি। করতেই হবে!

আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

"বীরের মৃত্যু নেই"। বীর অমর।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৩

অচেনা হিমালয় বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

৫| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: শহীদ নাদেরের প্রতি শ্রদ্ধা। আল্লাহ তাকে বেহেশতে নসীব করুন, এই দোয়া করি।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৪

অচেনা হিমালয় বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৮

শাহিন-৯৯ বলেছেন: এরকম হাজারো অজানা নাদের আমাদের মহানায়ক, স্যালুট তাদের একটি মানচিত্র উপহার দেওয়ার জন্য।

৭| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৪৯

চানাচুর বলেছেন: শ্রদ্ধা রইলো শহীদ নাদেরের প্রতি। আল্লাহ্‌ নিশ্চয়ই উনাকে অনেক ভাল রেখেছেন।

৮| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:০১

নূর-ই-হাফসা বলেছেন: জেনে অনেক ভালো লাগল । আগে জানা ছিল না ।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৪

অচেনা হিমালয় বলেছেন: ধন্যবাদ

৯| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:০২

আহমেদ জী এস বলেছেন: অচেনা হিমালয় ,




জানা ছিলোনা । জানা হলো ।
কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকে গেলো , এমন একজন নির্ভিক মানুষের আত্মত্যাগের কথা এতোদিন আমরা কেন শুনিনি ! ( হয়তো আমি শুনিনি )
শহীদ নাদেরের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই প্রশ্নটি মনে এলো ।

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করে শহীদ নাদেরের আত্মত্যাগের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৫

অচেনা হিমালয় বলেছেন: ধন্যবাদ

১০| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৯

ইলি বলেছেন: শ্রদ্ধা রইলো শহীদ নাদেরের প্রতি।।। ধন্যবাদ আপনাকে।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩৫

অচেনা হিমালয় বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

১১| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: কত বীর সেনানীর বীরত্বগাথা থেকে যায় অগোচরে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.