নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনটা বড়ো বর্ণচোরা। সে নানা রকম বর্ণ ধারণ করতে খুব পটু। এই রঙ হলুদ,নীল, বেগুনী কিংবা আকাশী নয়, অদৃশ্য কিছু হাজার রকম রঙের ছুড়োছুড়ি এ মনে।।ফেসবুকের: অদ্ভুত মানুষ

মধ্যবিত্তের ছেলে

একজন অদ্ভুত মানুষ

মধ্যবিত্তের ছেলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপূর্ণতা

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:৩৪

অফিস থেকে সোজা সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ডের দিকে রওনা দিয়েছি। সাজেক ভ্যালি যাচ্ছি ভার্সিটির সব সহপাঠী নিয়ে। অনেকদিন যাবৎ যাব যাব বলে যাওয়া হচ্ছিল না। এর মূল কারণ হিসেবে প্রায় সকলেই চাকরিজীবী, ছুটি ম্যানেজ করাটা আসলে সত্যিই কষ্টকর। ভার্সিটিতে থাকাকালীন প্রত্যেকেই বলেছিলাম চাকরিতে ঢুকেই কিন্তু সবাই মিলে একটা জম্পেস পার্টি হবে। কারো বিয়ে-শাদি হয়ে গেলে বউ-বাচ্চা নিয়ে হলেও পার্টিতে যাওয়া চাই। বলতে গেলে একটা বাধ্যতামূলকই ছিল। এতদিন পরে ৭-৮ জন বন্ধু-বান্ধবী মিলে একসাথে সাজেক ভ্যালি যাচ্ছি বিষয়টা সত্যিই রোমাঞ্চকর মনে হচ্ছে। এর প্রথম কারন মনের মধ্যে সেই ভার্সিটি পড়ুয়া মনোভাবটা বার বার কাজ করছে, আর দ্বিতীয়ত বান্ধবীগুলো প্রায় সবগুলোরই জামাই নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টা রোমাঞ্চকরের সাথে সাথে আনন্দ উপভোগেরও।

আমার জন্য টিকিট কেটে নিয়েছে আগে থেকেই। বাস ছাড়ার ঠিক ১০ মিনিট আগে গিয়ে পৌঁছেছি। পৌঁছাতেই সে কি ঝাড়ি!! কেন আরোও আগে আসলাম না? এখনোও এত বেখেয়ালি!? আরোও আগে রওনা দিলে কি হতো"?? ব্লা ব্লা ব্লা। এক কথায় সরি বলে বাসে উঠে পরলাম। ঘন্টাখানেক আমোদ-প্রমোদ চলল। আসলে সবাই এতো ক্লান্ত যে কিছুক্ষন পরেই ঘুমিয়ে গেছে। আমার আবার একটা বদঅভ্যাস, বাসে করে কোথাও গেলে আজোও শান্তিতে ঘুমিয়ে যেতে পারলাম না। অথচ, আশে পাশে যারা বসে তারা আমার মতো শান্তি-অশান্তি খুঁজে না। এক কথায় বাসে উঠেই দেয় ঘুম। আর ঠিক গন্তব্যে পৌঁছতেই যেন তাদের ঘুম ভাঙে।

বাসে বসে ঘুমাতে না পারার আরেকটা কারণ হলো, আমার কাছে মনে হয়, আমার সাথে ঘটে যাওয়া যতসব পুরনো অতীত আছে তা একটার পর একটা চোখের সামনে ভাসতে থাকা। এসব চিন্তা ভাবার সাথে সাথে এয়ো ভাবি যে, এই ভাবনাগুলো মুছে ফেলা যায় না। ঠিক যেমন এখন বাসের জানালায় মুখ ফিরিয়ে বাইরের ঝুম বৃষ্টি হওয়ার দৃশ্যটা আমাকে যেন হুট করেই টাইম ট্রাভেলের মত চার বছর আগে নিয়ে চলে গিয়েছে। ওই চার বছর আগে একটা প্রেমের কাহিনী ছিল। আমার প্রেমের কাহিনী। তখন ভবিষ্যতে কিছু একটা করতেই হবে এই ভেবে সাওদাকে পুরোপুরিভাবে নিজের করে পাওয়ার জন্য পণ করে সম্পর্ক গড়েছিলাম এখন কিন্তু এরকম কোনো সম্পর্ক নেই।

জাহাঙ্গীরনগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসে তাদের প্রায় প্রত্যেকেই সংসপ্তক বইয়ের সাথে পরিচিত। আর প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার সময় ভর্তিচ্ছুদের নিয়ে ক্যাম্পাসের ভিতরেই একটা ক্যাম্পেইন করা হয়। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকাকালীন ওই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমেই সাওদার সাথে আমার পরিচয়টা গাঢ় হয়। অর্থাৎ আগে থেকে চেনা জানা ছিল অথচ কথা হতো না। এই ক্যাম্পেইনটার মাধ্যমে মূলত এই ব্যবধানটা কেটে গেছে। ক্লাস শেষেও মাঝে মাঝে তার সাথে দেখা হতো, কথা হতো। কাকতালীয়ভাবে ভার্সিটির বাসে করে আসা যাওয়ার সময়ও দেখা হয়ে যেতো।

সম্ভবত ৪র্থ সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা হচ্ছিল। আমি প্রতিবারের মতো শেষ বাসটা ধরেই বাড়ি ফিরতাম। শেষ বাসে করে বাড়ি যাওয়ার পিছনে একটা শান্তি কাজ করতো। শান্তিটা হচ্ছে বাসে তেমন ভীড় থাকে না। আরোও ভীড় থাকে না যখন গ্রীষ্মের মৌসুমে বৃষ্টির হয়। সেদিও বৃষ্টি হচ্ছিল। দৌড়ে এসে বাসের দোতলায় উঠে একটা সিটই খালি ছিল সেখানে বসে পরি। হাত দিয়ে মাথা থেকে বৃষ্টির পানি ঝড়াচ্ছিলাম। পাশ থেকে মেয়েটা ক্ষেপে গিয়ে বলল-
- কি ব্যপার ফাহাদ! একে তো আমার পাশে বসেছো অথচ আমার সাথে কথা বলছো না। তার উপর জানালায় মাথা রেখে বৃষ্টিটা উপভোগ করছিলাম মাথার পানি ঝেড়ে দিয়ে মনোযোগটা নষ্ট করে দিলে। সমস্যাটা কি বলো তো!??
(আমি হা করে সাওদার বকবক শুনছিলাম)
চশমাটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, এভাবে কোনো মেয়ের দিকে তাকিয়ে হা করে থাকলে চশমার মতো অনেক কিছুই হারায় ফেলবা, বুঝছো?
- আআ.......। হ্যা, তাই তো। ( সামনের সাড়ির দাঁতগুলো বের করে দিয়ে বললাম, সরি।) একটা শয়তানি হাসি নিয়ে আবার এটাও বললাম, আর পানির ছিটে দিব না, চাইলে আবার মনোযোগ দিতে পারো।
- এখন চাইলেও পারব না, ওই ফিলটাই আর আসবে না।
- আহহা...। এবার আমি সত্যিই দুঃখিত।
- তো, তোমার এত দেড়ি হলো কেন?
- দেড়ি বললে ভূল হবে। আমি প্রতিদিনই শেষ বাসটা ধরে বাড়ি যাই।
- হুম, বুঝলাম।
- আরে, তুমিও দেখি বৃষ্টিতে ভিজে গেছো। ঠিকই তো আবার আমার উপর চড়াও হয়ে গেলে।
- হ্যা। পুরোটা ভিজি নাই কিন্তু ভিজেছি বলেই রাগ হচ্ছে।
- আর সেই রাগটা আমার উপর....
- হ্যা, তোমার উপর ঝেড়ে দিয়েছি।
- কারন?
- দেখো, আমরা ভার্সিটির বড় ভাইদের কতই না সম্মান দেই। আর ওই সম্মানের ফিরতিটা আজকে পেয়ে গেলাম। বৃষ্টির জন্য লাইব্রেরির সামনে দাঁড়াব ভেবেছিলাম গিয়ে দেখি সেখানে অন্যরা দাঁড়িয়ে আছে। সামনে যেখানেই দাঁড়াব ভাবছি সেখানে এক ইঞ্চি যায়গা পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না, এই ভেবে ভিজে যখন গিয়েছি তখন একবারে বাসেই উঠে যাই। বাসে উঠতে যাব, গেটের সামনে দেখি তোমাদের সম্মানিত রাজনীতিবীদ বড় ভাই সোহেল সাহেব দাঁড়িয়ে আছে। আমার দিকে কেমন চোখে যেন তাকিয়ে ছিল। আমি সালাম দিয়ে উপরে উঠছিলাম তখন পিছনে থেকে বলতে শুনেছি..
- কি বলতে শুনেছো??
(আমি বুঝেছি, কোন ধরনের কথা হতে পারে, তারপরেও জানতে চেয়েছি)
- বলেছে, মেয়েরা বৃষ্টিতে ভিজলে নাকি অনেক কামময়ী দেখতে লাগে। অসম্মানিত হয়ে এখানেই তুমি আসার আগ পর্যন্ত বসে রয়েছি।
( আমি হাফ ছেড়ে বললাম, আর বলতে হবে না)
- রাগ কমেছে কিছুটা?
- অল্প। কিন্তু এখনোও আছে।
- ঝাড়বা আমার উপর?
- বেশি ঝেড়ে ফেললে আবার একটা অধিকার টাইপ ব্যবহার চলে আসবে।
- হা হা হা। যাই বলো নে কেন, আজকে তোমার কথার সূর সত্যিই রাগন্বিত। চোখ দুটো যেন একেবারে আগুনের গোলার মত। আর চেহারাটা একেবারে লাল টমেটোর মতো।
- হেসো না। মাঝে মাঝে তোমার হাসি দেখলে আমার প্রচন্ড গা জ্বলে।
( এবার মুখ চেপে ধরে কিছুক্ষন হেসে নিলাম)
- আচ্ছা একটা কথা বলি। তুমি রেগে গেলে কি করো?
- রাগ ঝাড়ি!
- আরে না। বলছি, রাগ কমানোর জন্য কি করো?
- আমার রাগ খুব ধীরে ধীরে কমে।
- হ্যা, তাই তো দেখছি। আচ্ছা তাহলে আরোও বেশি রাগ উঠাও। টাইম পাস হয়ে যাবে আর কি।
( এই কথা শুনে মেয়ে দেখি রেগে ফুলে উঠছিলো)
ছোটবেলায় আমি রাগ করলে আম্মা আমাকে জোড় করে টেনে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলতেন, দেখ তোর রাগের চেহারা কেমন দেখা যায়! আর আমি নিজের রাগের চেহারা আয়নায় দেখতেই হেসে দিতাম। এই মুহুর্তে হাতের কাছে আয়না না পেয়ে মোবাইলের সেল্ফি ক্যামেরাটা ওপেন করে সাওদার মুখের সামনে ধরে দিয়ে বললাম,
- এই দেখো তোমার রাগের চেহারা। ঠিক যেন হ্যালোইনের মিষ্টি কুমড়ার মতো।
মেয়েটা দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে হাসতে হাসতে যেন গড়াগড়িই দিয়ে দিবে! বুঝেছি যে, জোড়ে হাসতে পারছে না। তাই বললাম,
- তুমি জোড়ে হাসতে চাইলে হাসো, আমি ক্যামেরাটা মুখের সামনে ধরব নে। তখন নিজের হাসিটাও দেখে নিও। আমার আবার অনেক দিনের শখ তোমার হাসিটা ভিডিও করে রেখে দেওয়ার।
- কেন কেন? আমার হাসি কি জোকারের মতো যে আমার হাসি দেখে তুমিও হাসবা!!
বাসের হেলপার গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে নামার জন্য ডাকছিল। আমার বাসা বাস স্ট্যান্ডের সামনেই। সাওদার কথার উত্তরটা বাস থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলেছি-
- তোমার হাসিটা হার্লি কুইনের মতো। যে হাসি একবার দেখলে মন ভরবে না বরং আরোও দেখার ইচ্ছা জাগাবে। মন ছুয়ে যাওয়ার মতো হাসি।
(কথাগুলো একনাগাড়ে বলছিলাম। বৃষ্টির ফোঁটাগুলা চোখ মুখে এসে পরছিল। ঠিকমতো সাওদার দিকে তাকিয়েও বলতে পারছিলাম না। মিটমিট করে তাকাচ্ছিলাম। একটুপর ঝাপসা চোখে দেখলাম সাদা কি যেন একটা আমার মুখের উপর এসে পরছে। ভাবতে দেড়ি হয়নি। সত্যিই একটা সাদা কাগজ বলের মতো বানিয়ে আমার মুখের উপর ঠিল মেরেছে। কাগজটা হাতে নিয়ে ভাবছি, সত্যিই তো, মনোযোগ দিয়ে কোনো কিছু উপভোগ করার সময় হঠাৎ কিছু একটা এসে মনোযোগ নষ্ট করে দিলে মেজাজটা বিগড়ে দেয়। আর এইদিকে আমার রোমান্টিক মুহুর্তের সময় মুখে কাগজের বল ঠিল মারার দৃশ্য দেখে বাসের নিচতলার ছাত্র-ছাত্রীরা হাসতে হাসতে যেন কোনো উপায় পাচ্ছে না। বাস ছেড়ে চলে গেছে, আমি কিছুক্ষন ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম, দেখার চেষ্টা করলাম সেও কি দেখছিল কিনা।)
বাসায় এসে আম্মার প্রায় একশ বকা খেয়েছি বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার কারনে। আম্মাকে বললাম, আরে, এসব কিচ্ছু না। কিছু হবে না। আম্মা বলে, ঘন্টা খানেক পর কি হবে না হবে নিজেই টের পাবি। কিসের আর ঘন্টাখানেক, ১০ মিনিট পর থেকেই ঠান্ডা লাগা শুরু হয়ে গেছে। একটার পর একটা হাঁছি দিয়ে যাচ্ছি। আর আম্মা রান্নাঘর থেকে বলছে, কিরে তর কিছুই হয় না, তাই না?
মেজাজটা আরোও বিগড়ে গেলো। কাঁথামুড়ি দিয়ে দিলাম এক ঘুম। রাত ১ টার দিকে ঘুম ভাঙে। মেসেঞ্জার অন করে দেখি সাওদা ২ ঘন্টা আগে একটা মেসেজ দিয়েছে। লেখা ছিল- কালকে দেখা করতে। কিছু কথা আছে। আমি "ঠিক আছে" লিখে রিপ্লাই দিয়ে দিয়েছি।
পরদিন ভার্সিটি গিয়েছি ১০১° জ্বর নিয়ে। কেন যেন মনটা খুব বেশি টানছিল জ্বর থাকা সত্ত্বেও। কেন্টিনে বসে অপেক্ষা করছিলাম। একটু পরেই সে চলে এসেছে। আমার আরোও ৪-৫ টা বন্ধুকে নিয়ে এসেছে। ভাবছিলাম, গণপিটুনি খেয়েই যাবো কিনা! নাহ, তেমন কিছুই না। সাওদার প্রথম কথাই ছিল এটা- তোদেরকে সামনে রেখে আজকে একটা announcement করে দিচ্ছি। আমরা চাকরি পাওয়ার ১ বছরের ভিতর একটা ট্যুর দিব আর ট্যুরের পর ফাহাদ আমাকে বিয়ে করবে। আর আজকে সে আমাকে প্রপোজ করবে।
(তার কথাগুলো শুনে যেন আমার জ্বরের মাত্রা ১০১° থেকে ১১০° হয়ে যাবে এমন অবস্থায় গিয়ে পরবে।) জ্বরের ঘোরে সাওদার দিকে তাকিয়ে বললাম-
- আরে গতকালই ত প্রপোজ করতে চেয়েছিলাম। বাসটা একটু দেড়ি করে গাবতলী আসলে ঠিকই তোমার পাশে বসে প্রপোজ করে দিতাম।
- হয়েছে হয়েছে। এবার সবার সামনে বলে দেখাও।
কয়েকবার ঢোক গিলে চারদিকে তাকিয়ে শেষমেষ ওকে বলে দিয়েছি- সাওদা তোমাকে ভালবাসি। আর হ্যা, বেঁচে থাকলে চাকরির এক বছরের ভিতরই তোমার ইচ্ছা পূরণ হবে।

দীর্ধ তিন বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতেই সাওদার উপর বিয়ের একটা চাপ আসা শুরু করে। আর ক্রমাগত আসতেই থাকে। এই চাপের কিছু অংশ আমাকেও দিয়েছে। যেমন, বার বার আমাকে বলত তার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে। এবং আমি বরাবরের মতোই বলতাম যে, এখন তো সম্ভব না। বিয়ের সময় টা আসতে দাও, তারপরই না হয় আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করি। আমার এসব কথা শুনে মেয়েটাও একটা কথার পুনরাবৃত্তি করত, "ঠিক আছে, তাহলে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করে তোমার বিয়ের দাওয়াত খেতে আসব।" বত্রিশখানা দাঁত বের করে দিয়ে বলতাম, অবশ্যই। আমার বিয়েতে একটা দামি গিফট নিয়ে আসবা কিন্তু। তা নাহলে নষ্ট খাবার খেতে দিব।

২০১৬ এর নভেম্বরে আমার একটা ব্যাংকের চাকরির এপয়েন্টমেন্ট লেটার আসে। তারিখটা ঠিক মনে নেই তবে এটা মনে আছে সামনের মাসে প্রথম সপ্তাহে জয়েনিং ডেট। আমার এই খুশিটার কিছু অংশ সাওদাকে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা সামনা সামনি দেওয়াটাই যে উত্তম হবে তা ভাবতে আমার দেড়ি হয় নি। তবে আমার ফোন দেওয়ার আগে সে নিজেই দেখা করতে চেয়েছে। ফিটফাট হয়ে সোজা চলে গেলাম রমনা পার্কে। হাতে হলুদ খামটা নিতেও ভুলি নি। ও আমার পাশে এসে কিছু না বলে চুপচাপ বসে ছিল, একটু পর যখন মুখ খুলল,
- তোমাকে দেখে এত হাসিখুশি দেখে আমার খুব বেশি রকম হিংসে হচ্ছে।
- ওবা!! এর আগে ত কখনো আমার হাসি মাখা মুখ দেখে এমন কথা কখনো বল নি! বলেছ শুধু গা জ্বলে! গা জ্বলা আর হিংসে হওয়া ত এক নয়। আজকে হঠাৎ কেন বলছ?? ও, এই ২/১ দিন কোনো কথা বলি নি, এ জন্য?? আরে, এ এমন কিছু না। একটু ব্যস্ত ছিলাম আর কি।
- হ্যা, তোমার ব্যস্ততা তোমাকে আজকে হাসি দিচ্ছে আর আমাকে অন্য কারো বউ হতে সাহায্য করেছে।
(এবার সত্যিই হাসিটা মলিন হয়ে গেলো। বুকের মাঝখানে কেমন একটা চিনচিনে ব্যথা হচ্ছিল, তাও কষ্ট করে বললাম)
- ঠিক বুঝলাম না।
- আমার এনগেজমেন্ট হয়ে গেছে গতকাল রাতে।
- তুমি মিথ্যা বলছ, তাই না? তোমাকে এর আগে কতবার বলেছি আমাকে এসব বিষয় নিয়ে মিথ্যা কথা বলে নিজে মজা নিও না। তাও কেন করো!!?
কথাগুলো বলে আমি তার দিকে তাকিয়ে ওর নিঃশব্দ কান্না দেখছিলাম। এটা ভাবছিলাম যে, কখনো কখনো নিজের কান্নার কষ্ট থেকে প্রিয় মানুষের কান্নার দৃশ্যটা আরোও বেশি ব্যথা দেয়। কিছুক্ষন পর সে যখন চলে যেতে চাইলো আমি তাকে ডাক দিয়ে বলছি,
- আমার সুখের দিনে যে তোমাকে কাঁদতে হবে তা ভেবে আসি নি। একবারোও যদি অনুমান করতে পারতাম আজকে তোমার বিদায়ের দিন তাহলে এখানে আসতাম না। অন্য কোথাও একা চলে যেতাম। কি আর করার আছে। এসেই যখন গিয়েছি তাহলে একটা উপহার দিয়ে যাই।
(লম্বা হলুদ খামটা তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছি। এপয়েন্টমেন্ট লেটারের পেছনে ইংরেজিতে একটা লেখা লিখেছিলাম, "I LOVE YOU BECAUSE THE WAY YOU ARE WITH ME.")
এর পর আর কখনো দেখা করার চেষ্টাও করি নি। আসলে দেখা করার প্রশ্নই আসে না।

(আমি সাওদার একটা কথা রেখেছি, তা হলো চাকরি হওয়ার এক বছরের ভিতর একটা ট্যুর দিতে হবে সবাই মিলে, আর অন্যদিকে শুধু বিয়ে করার কথাটা রাখতে পারি নি। হ্যা, এই ট্যুরে সেও আছে। তবে আমার হয়ে না, অন্য কারোর হয়ে। আড় চোখে চেয়ে দেখছিলাম তাকে। মাঝে মাঝে চোখাচোখিও হয়ে গেছে। এটা বুঝতে পেরেছি সেও আমার মতো বৃষ্টি উপভোগ করছে। এদিকে ফজরের আযান দেওয়ার আগেই খাগড়াছড়ি চলে এসেছি। ওরা বলছিল, এখনো দিনের আলো হয়নি। তাই কাউন্টারেই অপেক্ষা করি।


#কাল্পনিক

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৯:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: গল্প বলতে হয় আস্তে ধীরে। এত তাড়াহুড়া কেন??

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩২

মধ্যবিত্তের ছেলে বলেছেন: এরপর থেকে ইনশাআল্লাহ আস্তে ধীরেই হবে।

২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১০:১৮

মা.হাসান বলেছেন:
দু এক জায়গায় খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম, সেটা মনে হয় আমারি সমস্যা। মোটের উপর আমার ভালো লেগেছে।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৩

মধ্যবিত্তের ছেলে বলেছেন: হে হে হে, আমারও এমন হয়।

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আপনার লেখা ভালো লেগেছে । আপনি কি একবারে লিখে ফেলেন ?

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩২

মধ্যবিত্তের ছেলে বলেছেন: ধন্যবাদ স্বপ্নবাজ সৌর। বেশিরভাগ সময় একবারই লিখি। মাঝে মাঝে ব্যস্ত থাকলে বাকিটুকু পরবর্তীতে লিখে শেষ করি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.