নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমিয় উজ্জ্বল

অমিয় উজ্‌জ্‌বল

অর্থ নয় কীর্তি নয় সফলতা নয় আরো এক বিপন্ন বিস্ময় অন্তর্গত রক্তের ভেতর খেলা করে।

অমিয় উজ্‌জ্‌বল › বিস্তারিত পোস্টঃ

শূন্য বৃক্ষের জলপাই

২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৪৭

- স্যার , এর নাম হারুন অর রশিদ । আমাদের সিকিউরিটি গার্ড। বাট, সে বেসিক্যালি একজন কবি। সিরিয়াস ধরনের কবি। এই বইমেলায় তার বই বেরিয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে সুপারভাইজার জাকির সাহেব পরিচয় করিয়ে দিলেন কবি-কাম-সিকিউরিটি গার্ড হারুন অর রশিদের সাথে।
পরিচয় পর্ব শেষ হতেই হারুন অর রশিদ সালাম দিল।
- স্যার স্লামালিকুম।
এতক্ষণ হারুন অর রশিদের দুই হাত ছিল পেছনে। এবার ডান হাত বাড়িয়ে ধরলো আমার টেবিলে। হাতে একটি বই। কবিতার বই।
বইয়ের নাম “শূন্য বৃক্ষের জলপাই”।
জলপাই রংয়ের প্রচ্ছদ। নামের সাথে মিলিয়ে প্রচ্ছদের রং।
হারুন অর রশিদ নিজে থেকেই বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা খুলে একটা কলম নিয়ে লিখতে শুরু করলো। মনে হচ্ছে অটোগ্রাফ। তার হাত উত্তেজনায় কাঁপছে।
সুপার ভাইজার জাকির সাহেব বললেন “স্যার হারুনের কবিতার বই আজকেই বের হলো। আমরা সবাই মিলে হেল্প করেছি। ডাইরেক্টর স্যার প্রকাশককে বলে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। চিন্তা করে দেখলাম প্রতিভার মূল্যায়ন হওয়া দরকার স্যার।”
তা তো অবশ্যই।
-স্যার সবাই একটা করে বই কিনছে। দাম ১৩০। আপনিও স্যার একটা নিবেন, এটা আমাদের দাবী।
-অবশ্যই।
কবি হারুন অটোগ্রাফ শেষ করে আমার হাতে বই তুলে দিলেন । নতুন বইয়ের কাচা গন্ধ। পেস্টিংও শুকায়নি বলতে গেলে। বই উল্টে পাল্টে দেখছি। দুই একটা লাইন পড়লাম। মন্দ নয়। আবেগ আছে।
ইনার ফ্ল্যাপে লেখকের সংক্ষিপ্ত জীবনী। একটা ছবি আছে সেখানে কবি হারুন অর রশিদ উদাস হয়ে কিঞ্চিত উপরের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছেন। জীবনীতে লেখা কবি হারুন অর রশিদ ছোটবেলা থেকেই কবিতা লিখেন।
আমার হাসপাতালের একজন স্টাফ সিরিয়াসলি কবিতা লেখে ভাবতেই ভাল লাগছে। ভাবলাম একটু গল্প করি। জাকির সাহেবকে বিদায় করলাম।
কবি সাহেব আপনার বাড়ি কই? (এই বয়সের অন্য সিকিউরিটিদের তুমি করে বলি। তবে হারুনকে আপনি করে বললাম। এটা কবির জন্য সম্মান। )
-স্যার কুমিল্লা।
কবিতা নিয়ে আপনার স্বপ্ন কি?
- আমি স্যার নিরন্তর কাব্য চচ্চার মাধ্যমে বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির কবি হইতে চাই। সেই সাথে এই দেশের সাহিত্্যকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে বসাইতে চাই। আমি আমার দ্যাশের জন্য কিছু করতে চাই।
কবি হারুনের চোখে মুখে দৃঢ়তা। বুঝলাম সে ডিটারমাইন্ড।
আমি প্রচ্ছদে লেখা বইয়ের ণামটি আবারো পড়লাম "শুন্য বৃক্ষের জলপাই "। বাহ সুন্দর তো!
হারুনের কবিতার বই আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালের প্রতিটি চেম্বারে, ডিউটি ডক্টরস রুমে, সার্জন দের চেইঞ্জ রুমে শোভা পেতে লাগল। আমরা সময় পেলে কবিতা উল্টেপাল্টে দেখি। কবিতা খারাপনা ভালই।
***************************************
হারুনের কাব্য চর্চা ও সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি চলতে লাগলো। মাঝে মাঝে গেটের সামনে দেখা হয়। হারুন সামরিক কায়দায় স্যালুট দেয়। গাড়ির দরজা খুলে দেয়। আমার অস্বস্তি লগে। হারুনেরও মনে হয় মেনে নিতে কষ্ট হয়। কবির কাজ মনের দরজা খুলে দেয়া, কারো গাড়ির দরজা না।
হারুনের সাথে অল্পদিনেই বেশ ভাল সম্পর্ক হয়ে গেল। মাঝে মাঝেই সে আমার ডেস্কে আসে। গল্প গুজব করে।
গল্পের নমুনা.....
কবি সাহেব খবর কি?
-এই তো স্যার।
-লেখালেখি কেমন চলছে?
-জ্বি স্যার ভালই।
- নতুন কি কবিতা লিখছেন?
- নতুন একটা লিখছি স্যার, ‘ বুকের মধ্যিখানে’ ।
- বাহ ভাল। কবি সাহেবের বাড়িতে কে কে আছেন?
-বাপ মা আছেন।
বিয়ে করেন নাই?
বিয়ে স্যার করেছিলাম। সেপারেশন হয়ে গেছে।
-সো স্যাড। আমি একটু আহত হওয়ার ভঙ্গি করলাম। কবিকে মনে হল বেশ দৃঢ়চিত্ত। যেন বউয়ের সাথে সেপারেশন হওয়া একটা বিরাট অর্জন।
-আমার সাথে বনিবনা হয় নাই। মনের মিল নাই স্যার। মনের মিল না থাকলে সংসার হয়না। আমি তারে বললাম তোমার আর আমার পথ ভিন্ন….
আমি আর কথা বাড়াই না। কবিও চুপ করে থাকে। ভেতরের ভাঙ্গনটা হালকা উকি দেয় দুই চোখে।
**********************************************************
অনেকদিন পর কবি হারুন অর রশিদের সাথে দেখা হাসপাতালের পাশের আবাসিক এলাকার গলিতে। সাধারণ পোশাকে হাটাহাটি করছে। ওকে দেখে মনে হল অনেকদিন পর দেখলাম।
-আরে কবি সাহেব , অনেকদিন পর দেখলাম মনে হচ্ছে।
কবি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন ,
-স্যার আমার তো চাকরি চলে গেছে।
-কেন কি হয়েছে?
-তিন দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছিলাম স্যার। ফিরছি ২৫ দিন পর।
-কেন? কোন সমস্যা হয়েছিল?
-তেমন সমস্যা না স্যার , বাড়িতে আমার একটা জলপাই গাছ ছিল। গাছটা ছোট। আমার বউ লাগাইছিল। বউয়ের স্মৃতি। এবার বাড়িতে গিয়া দেখি গাছটা মরে মরে অবস্থা। যত্ন করার লোক নাইতো স্যার। কয়েকদিন গাছটারে যত্ন করছি। এখন একটু পোক্ত হইছে। টিকে যাবে আশা করি । জাকির স্যারকে ঘটনাটা বললাম। উনি বললেন আমাকে আর জয়েন করতে হবেনা। আমাকে দিয়ে নাকি সিকিউরিটির চাকরি হবেনা।
- জাকির সাহেবকে আমি বলে দেব। আপনি ওনার সাথে দেখা করবেন। বলবেন এরকম আর হবেনা।
- আপনার মেহেরবানী। চাকরিটা খুব দরকার ছিল স্যার। তবু আমি যাবনা। আমার খুব দুঃখ লাগছে। এতদিন চাকরি করলাম……। জাকির স্যার আমার সমস্যাটা বুঝলনা। আমি অন্য জায়গায় চাকরি খুজব স্যার।
-জলপাই গাছটা টিকবে তো?
কবি একটা সরল হাসি দিল।
মনে পড়লো কবি হারুন অর রশিদের বইয়ের নাম “শূন্য বৃক্ষের জলপাই”। এতদিন এর মানে বুঝিনি। আজ বুঝলাম।




-কবির মন, বড়ই রহস্যময়। কবির কাধে হাত রেখে বললাম।

- কবি, এই মন তোমাকে জ্বালাবে রে।
এই প্রথম কবি হারুন অর রশিদকে ‘তুমি’ করে বললাম। (এটা কবির জন্য ভালবাসা)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৫৪

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: কবির সম্পর্কে জেনে ভালো লাগলো । বইয়ের নাম শুনেই বুঝতে পারছি তার কবিতায় আবেগ আছে ।
++++++++++
ভালো থাকবেন আপনিও :)

২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৩৯

তুষার কাব্য বলেছেন: কবি মন বোঝা খুব মুশকিল... ;) :D ভালো লেগেছে..

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:০৩

ফারুক৭ বলেছেন: :D ;) ;)

৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:২০

কলমের কালি শেষ বলেছেন: মনমুগ্ধকর ঘটনা । পড়ে খুব ভাল লাগল । :)

৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার লেখা।

কবির কাজ মনের দরজা খুলে দেয়া, কারো গাড়ির দরজা না।


দারুণ বলেছেন।

৬| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৭

আজমান আন্দালিব বলেছেন: -কবির মন, বড়ই রহস্যময়। কবির কাধে হাত রেখে বললাম।

- কবি, এই মন তোমাকে জ্বালাবে রে।

ভালো লেগেছে।

৭| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:০২

ডি মুন বলেছেন: কবি সাহেব আপনার বাড়ি কই? (এই বয়সের অন্য সিকিউরিটিদের তুমি করে বলি। তবে হারুনকে আপনি করে বললাম। এটা কবির জন্য সম্মান। )


- কবি, এই মন তোমাকে জ্বালাবে রে।
এই প্রথম কবি হারুন অর রশিদকে ‘তুমি’ করে বললাম। (এটা কবির জন্য ভালবাসা)



গল্প ভালো লেগেছে। শুভেচ্ছা।

৮| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০৭

অমিয় উজ্‌জ্‌বল বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.